ডোপ টেস্ট কি 

ডোপ টেস্ট কি ও কেন? বাংলাদেশে কখন এবং কাদের ডোপ টেস্ট করা হয়!

ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট হলো কোন ব্যক্তির শরীরে মাদক দ্রব্যের উপস্থিতি আছে কি না তা পরীক্ষা করার প্রক্রিয়াকে ডোপ টেস্ট বলা হয়। 

বর্তমান বিশ্বে মাদকাসক্তির প্রকোপ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও ডোপ টেস্ট বাধ্যতামুলক করা হচ্ছে। ডোপ টেস্ট কি এবং ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন। 

ডোপ টেস্ট কি 

আমাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা ডোপ টেস্ট কি এবং ডোপ টেস্ট কেন করা হয় সে সম্পর্কে জানেন না। মাদক সেবনকারীদের সনাক্ত করার পদ্ধতিকে   ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট বলা হয়। 

বর্তমানে কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রায় সকল বয়সী মানুষ মাদকে আসক্ত। মাদকসেবী শুধু পরিবারের জন্য নয়, তারা পুরো দেশের জন্যই হুমকি স্বরূপ। 

মাদকসেবী যে কাজেই নিয়োজিত থাকুক না কেন, সে দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ হন। আর সে কারনেই মূলত ডোপ টেস্ট করানো হয়। 

ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট করার পর কোন ব্যক্তির শরীরে যদি ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসে তবে সেই ব্যক্তি কোন চাকুরীতে প্রবেশ করতে পারবে না, এমন কি চাকুরীরত অবস্থায় যদি ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসে তবে তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হবে।    

মাদকাসক্তির ফলে কিছু ক্ষেত্রে মাদকসেবী নিজের কর্মক্ষমতা নষ্ট করে সমাজের বোঝা হয়ে থাকছে। তাই বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই  বিভিন্ন কারনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করার নিয়ম চালু রয়েছে।

ভিডিওঃ এম আর আই কি কি রোগ নির্ণয় করে জানেন কি?

ডোপ টেস্ট কেন করা হয় 

বর্তমানে মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। প্রায় সকল বয়সের মানুষ পুরোপুরি ভাবে মাদকে আসক্ত হয়ে নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা নিজ পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য বোঝা এবং হুমকির ন্যায়। 

এ সকল কারনেই মূলত ডোপ টেস্ট করানো হয়। এছাড়াও আরও বেশ কিছু কারন আছে, যেগুলোর জন্য একজন ব্যক্তির ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট করানো হয়। যেমন-

১. মাদকাসক্ত কি না তা জানার জন্য 

কোন ব্যক্তি মাদকে আসক্ত কি না তা পরীক্ষা করার জন্য ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট করা হয়। 

২. খেলোয়াড়দের ওপর ডোপ টেস্ট 

অ্যাথলেট বা খেলোয়াড়রা শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের শক্তি বর্ধক ড্রাগ ব্যবহার করে থাকেন। একজন সাধারণ প্রতিযোগীর চেয়ে অধিক শক্তি উৎপন্ন করতে পারে ড্রাগ গ্রহণকারী অ্যাথলেট। ড্রাগ গ্রহণকারী খেলোয়াড় সহজেই অন্যদের হারিয়ে দিতে পারে। এটি একটি অনৈতিক পদ্ধতি। তাই খেলোয়াড়রা ড্রাগ গ্রহণকারী কি না তা সনাক্ত করার জন্য ডোপ টেস্ট করা হয়। 

৩. ট্রাফিক আইনে ডোপ টেস্ট 

কোন গাড়ি চালক যদি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে যান, তবে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট সন্দেহ বশবর্তী হয়ে চালকের ডোপ টেস্ট করতে পারেন। দুর্ঘটনার কারন উদঘাটনের জন্য অথবা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত বা জীবিত চালকের ডোপ টেস্ট করা হয়। 

৪. আইনি জটিলতার জন্য 

আদালতে মামলার রহস্য উদঘাটনের জন্য ডোপ টেস্ট করা হয়। কারন ডোপ টেস্টের ফলাফল দ্বারা মামলার রায় প্রভাবিত হয়।

৫. ফরেনসিক ডোপ টেস্ট 

মৃত্যুর কারন জানার জন্য মৃত দেহের ডোপ টেস্ট করা হয়। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

বাংলাদেশে কোথায় ডোপ টেস্ট করা হয় 

বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই ডোপ টেস্ট ব্যপকভাবে প্রচলিত। উন্নত দেশগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশ সরকার ডোপ টেস্ট করার নিয়ম চালু করেছেন। 

ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বেশ কিছু স্থানে ডোপ টেস্ট সনাক্তকরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সেই স্থান গুলো নাম হলো;

ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, 

চট্টগ্রাম, রাজশাহী, পাবনা, 

দিনাজপুর, রংপুর, পটুয়াখালী, 

ফরিদপুর, নোয়াখালী, যশোর, 

কক্সবাজার, ময়মনসিংহ, বগুড়া, 

গাজীপুর, কুষ্টিয়া, নরসিংদী, টাঙ্গাইল। 

এই সকল জেলা গুলোর মধ্যে মিনিল্যাব বসানো হয়েছে, যেখানে আপনি ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট করাতে পারবেন। 

ডোপ টেস্ট করাতে কত সময় লাগে 

কার্যত ডোপ টেস্টের ফলাফল সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যেই পাওয়া যায়,যদি ফলাফল নেগেটিভ হয় তবে। আর যদি ফলাফল পজিটিভ হয়, তবে এ ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের ফলাফল পেতে কয়েক দিন থেকে এক সপ্তাহ সময় লাগে। 

ডোপ টেস্টের মাধ্যমে কোন কোন মাদক শনাক্ত করা হয় ? 

বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খসড়া অনুযায়ী ডোপ টেস্টে নির্দিষ্ট কিছু মাদক পরীক্ষা করা হবে। যেমন-

কোকেন, হেরোইন, কোডিন

গাঁজা, মরফিন, এলকোহল বা মদরডায়াজেপাম, ফেনসিডিল, টেমাজেপাম

ইয়াবা, ভাংচরস, এল এসডি

লোরাজেপাম, অক্সাজেপাম

সিগারেট খেলে কি ডোপ টেস্ট পজিটিভ আসার সম্ভাবনা আছে ? 

ডোপ টেস্টের ক্ষেত্রে সিগারেট কে মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। সুতরাং যারা নিয়মিত সিগারেট বা ধুমপান করেন, তাদের টেনশন করার কোন কারন নেই। 

বাংলাদেশে কখন এবং কাদের ডোপ টেস্ট করা হয় ? 

বাংলাদেশে যেসমস্ত ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করা হয় তা হলো ;

১. চাকুরীক্ষেত্রে

বাংলাদেশে সরকারি বা বেসরকারি যেকোনো চাকুরীতে জয়েন করার সময় স্বাস্হ্য পরীক্ষার ফলাফলের সাথে ড্রাগ টেস্ট রিপোর্ট জমা দিতে হয়। এমনকি চাকুরীরত অবস্থায় কর্মকর্তা বা কর্মচারীর আচরণ সন্দেহজনক হলে যেকোনো সময় তার ডোপ টেস্ট করা হতে পারে। 

২. শিক্ষাক্ষেত্রে

কোন শিক্ষার্থী যদি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছুক হয়, তবে সেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির সময় ড্রাগ টেস্ট বা ডোপ টেস্টের প্রয়োজন হবে। 

৩. বিদেশ ভ্রমণে 

কোন বাংলাদেশী নাগরিক যদি শিক্ষা, চাকুরী বা গবেষণার উদ্দেশ্যে বিদেশ যেতে চাই, তবে সেই নাগরিকদের মাদক পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিতে হবে। 

৪. ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্য 

ড্রাইভিং লাইসেন্স করার বা নবায়ন করার সময় মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়াও ডোপ টেস্ট সার্টিফিকেট প্রয়োজন হবে।  

৫. অস্ত্রের লাইসেন্স করার জন্য 

মাদক সেবনকারীর কাছে অস্ত্র থাকলে তা সর্বসাধারণের জন্য বিপদ হতে পারে। তাই অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার জন্য ড্রাগ টেস্ট বা ডোপ টেস্ট নিয়ম চালু করা হবে। 

ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে কি হবে ? 

আপনার ডোপ টেস্ট বা ড্রাগ টেস্ট করার পর যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে বাংলাদেশে মাদক বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থাৎ মাদক আইনের ধারা অনুযায়ী আপনাকে শাস্তি প্রদান করা হবে। আর সেই শাস্তি আপনার জরিমানা বা জেল যেকোনো  হতে পারে। 

ডোপ টেস্ট রিপোর্ট কিভাবে পাব

ডোপ টেস্ট করানোর পর ডোপ টেস্ট রিপোর্ট পেতে ভিন্ন ভিন্ন সময়ের প্রয়োজন হয়। কারন আপনার ডোপ টেস্ট রিপোর্ট যদি নেগেটিভ হয়, তবে আপনি ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ডোপ টেস্ট রিপোর্ট পেয়ে যাবেন। 

আর আপনার নমুনা সংগ্রহের পর, ডোপ টেস্ট রিপোর্ট যদি পজিটিভ আসে, তাহলে আপনাকে ডোপ টেস্ট রিপোর্ট পেতে ৭ দিন বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। 

ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায় 

ডোপ টেস্ট কি সে সম্পর্কে জানা থাকলেও অনেকেই জানেন না ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায় কি? জেনে নিন ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায় আছে। আপনি মাদক সেবন করার পর যদি চান, আপনার মাদকের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসুক, তবে আজ থেকেই মাদক সেবন বন্ধ করুন এবং ডোপ টেস্ট থেকে বাঁচার উপায়টি আজ থেকেই ফলো করুন।

আপনি একটানা ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাস মাদক সেবন বন্ধ রাখুন। তিন মাস পর অর্থাৎ ৯১ দিনে ড্রাগ টেস্ট করান। এই টেস্টে আপনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসবে। ফলে আপনি বাংলাদেশ ডোপ টেস্ট থেকে বেঁচে যাবেন।  

শেষ কথা 

পরিশেষে বলা যায়, ডোপ টেস্ট করে একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে খুব সহজেই সনাক্ত করা যাবে। ফলে মাদক সেবন বন্ধ হয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ মাদকমুক্ত হবে। 

আশা করি, আজকের আর্টিকেলে আপনি ডোপ টেস্ট কি এবং ডোপ টেস্ট সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে উপকৃত হলেন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top