তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা । বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার!

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। ভেষজ এই ওষুধ সেবনে বিভিন্ন ধরণের রোগ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। তালমাখনাকে তাই অনেক রোগের মহৌষধও বলা হয়। 

মানুষের দেহের বিভিন্ন রোগ নির্মূলে হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথি ওষুধের পাশাপাশি ভেষজ ওষুধও মানুষ অনেক আগে থেকেই ব্যবহার করে আসছে। এগুলো সাধারণত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ামুক্ত বলে ভেষজ ওষুধের উপর মানুষের বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। কার্যকরী এসব ভেষজ ওষুধের মধ্যে অন্যতম হলো তালমাখনা। 

তালমাখনা কী

অত্যন্ত উপকারী একটি ভেষজ ওষুধ হলো তালমাখনা। এই তালমাখনা হলো লতাগুল্ম জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদের এক প্রকার বীজ। তালমাখনার প্রচলিত নাম কুলেখাড়া ও আয়ুর্বেদিক নাম কোকিলাক্ষা। সাধারনত ৫০ সে.মি. থেকে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে এই লতাগুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। 

গাছটি বহু শাখা-প্রশাখাযুক্ত ও ফুল উজ্জ্বল বেগুনী লাল অথবা বেগুনী সাদা বর্ণযুক্ত। তিলের মতো ছোট ও গোলাকৃতির বীজ হয়ে থাকে এবং বীজের রঙ গাঢ় খয়েরী। 

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা

তালমাখনার বীজ উপকারিতার দিক থেকে কার্যকরি। তালমাখনার স্বাদ একই সাথে মিষ্টি ও তিক্ত। এই মহৌষধের বীজে রয়েছে অধিক পরিমাণে ফাইবার এছাড়া এটি লো ফ্যাটযুক্ত। তালমাখনা আপনার বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধানে অত্যাধিক কার্যকরি।

নিচে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

বল বৃদ্ধিতে সহায়ক

তালমাখনা এমন এক ভেষজ ওষুধ যা আপনার শরীরের বল বৃদ্ধি করে থাকে। অর্থাৎ এটি বল ও পুষ্টিবর্ধক। যাদের শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে বা কার্যক্ষমতা কম তারা তালমাখনা খেতে পারেন। 

যৌন সমস্যার সমাধান

যৌন সমস্যায় অনেকেই ভেষজ ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। আর এ সমস্যা সমাধানের মোক্ষম দাওয়াই হলো তালমাখনা। যৌন সমস্যা সমাধানে তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা বলে শেষ করার মতো নয়। সঠিক নিয়মে তালমাখনা সেবনের মাধ্যমে যৌন বল বৃদ্ধি, বীর্য গাঢ়, যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি, বীর্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দ্রুত বীর্যপাত রোধ, এবং যৌন আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।  

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায়

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা খুবই সাধারণ সমস্যায় পরিণত হয়েছে। কমবেশি অনেকেই এ সমস্যায় ভুগে থাকেন। এ সমস্যা সমাধানে আমরা নিয়মিত মুড়ি-মুড়কি মতো ওষুধ সেবন করি যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। এক্ষেত্রে আপনার উপকারে আসতে পারে তালমাখনা। সঠিক নিয়মে এটি সেবনে আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।

হজমের সমস্যায়

অনেকেরই হজমের সমস্যা রয়েছে। যাদের এ সমস্যা আছে তারা অনেক ধরণের ওষুধ-পত্র হয়তো খেয়ে থাকেন। কিন্তু হজমের সমস্যার সহজ সমাধান হলো তালমাখনা। এর বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা হজমের সমস্যা সমাধান করে ও হজমের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

বাতের ব্যথায়

অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাতের ব্যথায় ভুগে থাকেন। বিশেষ করে বয়স্করা বাত ব্যথায় অনেক কষ্ট পায়। বাত ব্যথায় তালমাখনা বীজের তেল খুবই উপকারি। এছাড়া বাতের ব্যথায় তালমাখনার পাতা বেঁটেও প্রলেপ করা যায়। 

মূত্রনালির সমস্যা দূরীকরণে

মূলনালির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তালমাখনা নামক এই ঔষধিগুণ সম্পন্ন ভেষজ খুবই উপকারি। প্রস্রাবের সমস্যা যেমন- যদের কম প্রস্রাব হয়, প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া, মূত্রথলির পাথর দূরীকরণে তালমাখনা বেশ উপকারি।

ডায়াবেটিস সমস্যায়

যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তারা তালমাখনা খেতে পারেন। এছাড়া যাদের ডায়াবেটিস জনিত কারণে যৌন সমস্যা দেখা দেয় তারাও তালমাখনা খেতে পারেন। লো-ফ্যাটযুক্ত হবার কারণে তালমাখনার বীজ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারি।

লিউকেমিয়া ও শুক্রমেহ

এ দুটি রোগে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা খুবই প্রচলিত। তবে অনেকেই ভেষজ চিকিৎসাও নিয়ে থাকেন। তালমাখনার বীজ এ দুটি রোগে উপকারি। সঠিক নিয়ম ও পরিমাপে খেলে এসব রোগে তালমাখনা কার্যকরী।

লিভারের সমস্যায়

শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো লিভার। তাই লিভারকে সুস্থ রাখা আবশ্যক। লিভারের বিভিন্ন অসুখ বা পীড়ায় তালমাখনার পাতা বেশ কার্যকর। এছাড়া জন্ডিসে তালমাখনা অনেক উপকারি। লিভারের সমস্যায় সঠিক নিয়মে তালমাখনা খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ত্বকের সমস্যা সমাধানে

শুধুমাত্র শারীরিক সমস্যা নয় ত্বকের সমস্যা সমাধানেও তালমাখনা ব্যবহার করা হয়। ব্রণের দাগ, ত্বকের মলিনতা, বয়সের ছাপ, ত্বকের বলি রেখা দূর করতে তালমাখনার বীজের তেল ব্যবহার করা হয়। 

মেয়েদের সাদাস্রাব জনিত সমস্যায়

মেয়েদের সাদাস্রাব জনিত সমস্যা দূর করে থাকে তালমাখমা। অনেক সময় মেয়েদের সাদা স্রাব থেকে অনেক দূর্গন্ধ আসে। যা তাদের জন্য অস্বস্তিকর। এই গোপন সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে তালমাখনা হতে পারে উপকারি ওষুধ।

মাসিকের সমস্যায়

অনেক মেয়েরায় ইরেগুলার পিরিয়ডের সমস্যায় ভোগেন। অনেক সময় মাসিক বন্ধ থাকলে তালমাখমা খেতে পারেন। আবার অনেক সময় মেয়েদের অনেকদিন যাবত পিরিয়ড হয় না। তখন তালমাখনা সঠিক নিয়মে খেলে পিরিয়ডের সমস্যা দূর হয় ও পিরিয়ড নিয়মিত হয়। 

চুল ঘন করার উপায় হিসেবে

তালমাখনা চুল ঘন করার অন্যতম একটি ভেষজ উপায়। অনেকের মাথায় চুল কমে যায়, হারানো চুল ফিরিয়ে আনতে ব্যবহার করা হয় এই তালমাখনা। আপনার মাথায় যদি চুল কম থাকে বা পাতলা হয়ে যায় বা অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকে তাহলে আপনি চুলে তালমাখনা ব্যবহার করতে পারেন। সাধারণত তালমাখনা ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে  চুলকে ঘন করে করতে সাহায্য করে।

ওজন কমাতে

তালমাখনা ওজন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত তালমাখনা সেবনে পেটের বাড়তি চর্বি কমিয়ে ওজন কমিয়ে ফেলা সম্ভব। তবে এটি সেবনের পর অবশ্যই আপনাকে হাঁটতে হবে। লেবুর সাথে তালমাখনা মিশিয়ে খেলে দ্রুত ফল পাবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা সমাধানে

অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগে থাকেন যা খুবই ভয়াবহ। কোষ্ঠকাঠিন্য বেশি হলে অনেক সময় পায়খানার রাস্তায় প্রচন্ড ব্যথা হয় ও ফুলে যায় ও ব্যথা হয়। তালমাখনা এ সমস্যা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে তালমাখনা সকালে খালি পেটে খেতে হবে। তালমাখনার সাথে সামান্য মিশ্রি যোগ করলে আরও উপকার পাবেন। 

বিভিন্ন রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহার

তালমাখনা এক অসাধারণ ভেষজ উপাদান। ঔষধি গুণসম্পন্ন তালমাখনার গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যায় না। অনেক জটিল ও কঠিন রোগ থেকে মুক্তি মেলে তালমাখনা সেবনে৷ হার্টের পীড়া, দুর্বলতা, পিত্তথলির পাথর, গ্লডারের সমস্যা, মানসিক অবসাদ সহ বিভিন্ন রোগে এই ভেষজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

তালমাখনা খাওয়ার নিয়ম

দুর্বলতা দূরীকরণে, শুক্রমেহ, যৌন দুর্বলতা ও স্নায়বিক দুর্বলতায় তালমাখনার বীজ অত্যন্ত কার্যকর। এবং তালমাখনা খাওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। যা হয়তো অনেকেই জানেন না। এই তালমাখনা আপনাকে অবশ্যই সঠিক নিয়মে খেতে হবে। কারণ সঠিক নিয়মে তালমাখনা খেলে আপনি উপকার বেশি পাবেন। 

তালমাখনা প্রতিদিন সকালে খাওয়া ভালো তাই চেষ্টা করবেন সকালে খেতে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট প্রথমে এটি ভিজিয়ে রাখতে হয়। ভেজানোর ফলে তালমাখনা কিছুটা বড় হবে এবং ফুলে উঠবে। তখন ভিজিয়ে রাখা পানি সহ তালমাখনা খেয়ে নিবেন। 

দুধ বা মধুর সাথেও তালমাখনা মিশিয়ে খাওয়া যায়। সকালে খালি পেটে তালমাখনা খাওয়ার পরে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট পানি ছাড়া অন্য কিছু খাওয়া যাবে না। সম্ভব হলে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট হাটা চলা করবেন যা ওজন কমাতে কার্যকরি। 

তালমাখনার বীজ ছাড়াও পাউডার সেবন করা যায়৷ তালমাখনার পাতা অথবা এর বীজের তেলও ব্যবহার করা যায়।

তালমাখনা কোথায় পাওয়া যায়

বাংলাদেশের বিভিন্ন নিম্নভূমি অঞ্চলে অর্থাৎ যে সব স্থানে বছর কিছু সময়ের জন্য পানি থাকে সেসব স্থানে তালমাখনা গাছ পাওয়া যায়। তাছাড়া যেসব দোকানে গাছ-গাছড়া, ঔষধি গাছ, শিকড়-বাঁকড় বিক্রি করা হয় সেসব দোকানে তালমাখনা পেতে পারেন। 

আবার যেসব পুরাতন মুদি দোকানে গাছ-গাছালি বা শেকড়-বাঁকড় (স্থানীয় ভাষায় যাকে বকাল বলে) বিক্রি হয় সেসব দোকানেও তালমাখনা পাওয়া যায়৷ এবং এখন বিভিন্ন অনলাইন শপে, ই-কমার্স ও ফেসবুক পেইজে আজকাল তালমাখনা পাউডার ও বীজ পাওয়া যায়। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা

তালমাখনা নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করতে হয়। অতিরিক্ত খাওয়া কখনই উচিত নয়। অতিরিক্ত পরিমাণে সেবন করলে পেটে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। 

তাছাড়া যাদের ওজন অনেক কম বা চিকন তাদের তালমাখনা না খাওয়ায় ভালো। কারণ এটি আপনার ওজন আরও হ্রাস করবে। 

উপসংহার

তালমাখনা উপকারি একটি ঔষধি। তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বিধায় বিভিন্ন গোপনীয় ও জটিল রোগেও এটি দারুণ কার্যকরী ভেষজ ওষুধ। তাই জেনে-বুঝে সঠিক পরিমাণে ও সঠিক নিয়মে তালমাখনা খেতে পারেন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে ফোরামে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top