দাবায় ইলো সিস্টেম ও গ্র‍্যান্ডমাস্টার

দাবায় ইলো সিস্টেম ও গ্র‍্যান্ডমাস্টার কি? বাংলাদেশে দাবার ইতিহাস জানুন!

দাবা খেলার উৎপত্তি কোথায় সেটা নিয়ে অনেক মতবাদ থাকলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিকগন মনে করেন দাবা খেলা প্রথম শুরু হয় ভারত উপমহাদেশে। আবার অনেকে মনে করেন চীন বা পারস্য দাবার জন্মস্থল।

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে মিশরে এক ধরনের খেলা প্রচলিত ছিল যার নাম শতরঞ্জ। এই খেলা অনেকটা দাবার মতো। তবে ভারতবর্ষে চতুরঙ্গ নামে দাবা খেলার সূচনা হয় ষষ্ঠ শতাব্দীর আগেই। কিন্তু চতুরঙ্গ খেলাটি দাবা হয়ে উঠতে সময় লেগেছে অনেক, ঘুরতে হয়েছে অনেক দেশ। পাড়ি দিতে হয়েছে সমুদ্র। 

দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন

পারস্যের ব্যবসায়ীরা সেকালে ভারতে আসতো ব্যবসা কাজে। তাদের চতুরঙ্গ খেলাটি পছন্দ হয় এবং অতি উৎসাহের সাথে শিখে যায়! পারস্যে থেকে খেলাটি যায় স্পেনে। তখন স্পেনে মুসলিম শাসনামল চলে। মুসলিমদের খুবই পছন্দ হয় খেলাটি। ইসলাম ধর্মের প্রচারের সাথে সাথে দাবা ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে। 

দাবা সারা বিশ্বে নানা নামে পরিচিত পেয়েছিল তখন কিন্তু বর্তমান নাম চেজ। ফারসি শব্দ ‘échecs’ থেকে এটার জন্ম। যার অর্থ চেক। ইউরোপে দাবার অনেক পরিবর্তন হয়। যুক্ত হয় বিশপ ( হাতি), পরে যুক্ত হয় কুইন (রানী)। 

ষোড়শ শতকে প্রথম সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত ক্রীয়া হিসেবে দাবা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ব দাবা প্রতিযোগীতায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৮৮৬ সালে প্রথম শিরোপা পান উইলিয়াম স্টেইনজ। বর্তমান মুকুট রয়েছে নরওয়ের ম্যাগনাস কার্লসনের মাথায়। 

ইলো রেটিং সিস্টেম

দাবায় খেলোয়াড়দের স্কিল অনুযায়ী তাদের রেটিং দেওয়া হয় একে বলা হয় ইলো রেটিং সিস্টেম (Elo rating system)। এটির নামকরণ করা হয়েছে এর উদ্ভাবক আরপ্যাড ইলো (Arpad Elo)  -এর নামানুসারে।

এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রেটিং অর্জন করেছেন ম্যাগনাস কার্লসেন। তার সর্বোচ্চ রেটিং ২৮৮২। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেটিং ২৮৫১গ্যারি কাসপারভের। 

গ্র্যান্ডমাস্টার সিস্টেম 

দাবায় সর্বোচ্চ ভালো প্লেয়ারদের গ্র্যান্ডমাস্টার টাইটেল দেওয়া হয় ওয়ার্ল্ড চেজ অর্গানাইজেশন ফিদে (FIDE) থেকে।  গ্র্যান্ডমাস্টার হলো দাবার সর্বোচ্চ টাইটেল । অধিকাংশ গ্র্যান্ডমাস্টারই পুরুষ। মাত্র ৩৯ জন নারী গ্র্যান্ডমাস্টার টাইটেল অর্জন করেছে ২০২১ সাল পর্যন্ত। 

গ্র্যান্ডমাস্টার টাইটেল অর্জন করার জন্য ইলো রেটিং থাকতে হবে ২৫০০+ এবং জিএম নর্মস পেতে হবে। জিএম নর্মস পেতে হলে কমপক্ষে তিনজন গ্র্যান্ডমাস্টারকে হারাতে হবে যারা প্রত্যেকে ভিন্ন ভিন্ন দেশের এবং সর্বনিম্ন ৯ রাউন্ড খেলতে হবে। যেখানে ১২০ মিনিট এর বেশী সময় ম্যাচ চলতে হবে। প্রায় ১৫০০ জনের মতো গ্র্যান্ডমাস্টার রয়েছে সারা পৃথিবীতে। 

বাংলাদেশে দাবা

গ্র্যান্ডমাস্টার এর পর আছে সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার। খুবই অল্প সংখ্যক প্লেয়ারই সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার টাইটেল পায়। সুপার গ্র্যান্ডমাস্টার টাইটেল পেতে হইলে ইলো রেটিং হতে হয় ২৭০০ এর অধিক।নিয়ে বাংলাদেশের দাবার কথা বলতে গেলে সর্বপ্রথম যার নাম আসে উনি হলেন কাজী মোতাহার হোসেন। তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন দাবা খেলোয়াড়। 

কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন কাজী নজরুল ইসলামের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলার একক চ্যাম্পিয়ন ছিলেন তিনি ১৯২৯ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের দাবা খেলায় তার অবদান প্রচুর। তার অবদানের কথা স্মরণ করে বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের উদ্যোগে কাজী মোতাহার হোসেন স্মৃতি আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত হয়। 

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান নিয়াজ মোরশেদ। নিয়াজ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন এবং খুব ছোট থেকেই সাহচর্যে দাবার প্রতি তার গভীর অনুরাগ জন্মায়। তৎকালীন জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জামিলুর রহমানও তাকে দাবা শেখায় সাহচর্য দেয়। 

নিয়াজের প্রথম. সাফল্য ১৯৭৮ সালে যৌথ ভাবে ১ম হয়ে ট্রাইব্রেকারে ৩য় হন।  পরে ১৯৭৯ থেকে টানা ১৯৮২ সাল পর্যন্ত চারবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হন। 

আরও জানুনঃ দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র । উৎপত্তিস্থল,ইতিহাস সহ বিস্তারিত!

বেলা ক্রোভা ওপেনে নিয়াজ মোরশেদ প্রথম নর্ম অর্জন করেন ১৯৮৪ সালে।  ১৯৮৬ সালে অর্জন করেন দ্বিতীয় নর্ম। ১৯৮৭ সালে বিশ্ব দাবা সংস্থা নিয়াজকে গ্র্যান্ডমাস্টারের মর্যাদা দেয়।  এতে তিনি হন দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার এবং এশিয়ার ৫ম গ্র্যান্ডমাস্টার। 

বাংলাদেশের দাবায় তার বিশাল অবদানের জন্য ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন। 

বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাম পান ২০০২ সালে। বাংলাদেশী দাবাড়ুদের মধ্যে তার ইলো রেটিং কেউ টপকাতে পারেনি। জিয়াউর রহমানের সর্বোচ্চ ইলো রেটিং হলো ২৫৭০। 

রিফাত বিন সাত্তার বাংলাদেশের ৩য় গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব প্রাপ্ত খেলোয়াড়। উনি গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব পান ২০০৬ সালে। তার সর্বোচ্চ ইলো রেটিং ২৪৯২ (আগস্ট ২০০৫)

বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা দাবা মাস্টার হলেন রাণী হামিদ। ১৯৮৫ সালে তিনি ফিদে (FIDE) আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পান। ব্রিটিশ মহিলা দাবা প্রতিযোগীতায় তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তিনি।

 সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top