পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি? জানুন প্রয়োজনীয় সকল তথ্য!

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই মতের বিভেদ দেখা যায়। তবে আজ জেনে নিন আসল সমাধান। পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া রোধ করতে পারে খাবার স্যালাইন। এক্ষেত্রে এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন আধা লিটার পানিতে গুলিয়ে রোগীকে খাওয়াতে হবে। 

খাবার স্যালাইন ছাড়াও কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আছে যা গ্রহণের মাধ্যমে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক পাতলা পায়খানা হলে যেসব ঘরোয়া পদক্ষেপ আপনি গ্রহণ করতে পারেন। 

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি?

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া সাধারণত দূষিত পানি পান করা, বাইরের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার খাওয়া, অরিচ্ছন্ন জীবন যাপন, সঠিক উপায়ে হাত না ধোয়া ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। আসুন তাহলে জেনে নিই কী খাবার গ্রহণ করলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। 

১. খাবার স্যালাইন

পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি কম বেশি হলেও সকলেই জানেন খাবার স্যালাইনের কথা। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর এক প্যাকেট খাবার স্যালাইন বা আধা লিটার খাবার স্যালাইন খেতে হবে। স্যালাইন না থাকলেও ঘরোয়া পদ্ধতিতে খাবার স্যালাইন তৈরি করে নিতে হবে। এছাড়াও ডাবের পানি, চিড়া ভেজানো পানি এবং ভাতের মার লবণ দিয়ে খেতে পারেন। 

২. পানি

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া জনিত সমস্যায় শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। এজন্য সারাদিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করুণ। কারন পানি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ এবং ব্যাক্টেরিয়া বের করতে সাহায্য করে। 

৩. ফলের রস

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে যে কোন ফলের রস ঘনঘন খেতে থাকুন। এতে শরীরে পানি শুন্যতা দূর করবে এবং দেহে শক্তি জোগাবে। 

৪. মধু

মধু একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা পাতলা পায়খানা রক্ষা করার একটি কার্যকর প্রতিকার। এক্ষেত্রে এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে এক চা চামচ খাঁটি মধু এবং সমপরিমাণ দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে খান। পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে দিনে দুই বার এই প্রতিকার ব্যবহার করুন। 

৫. কলা

পাতলা পায়খানা স্বাভাবিক করতে কাঁচা এবং পাকা কলা দুটোই উপকারী। এক্ষেত্রে পাকা কলা ও টকদই একত্রে ব্লেন্ড করে খাওয়া যেতে পারে। এমনকি কাঁচা কলা সেদ্ধ করে চটকে ভর্তা করে খাওয়া যেতে পারে এবং তার সাথে লেবুর রস ও লবণ মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। 

৬. জিঙ্ক ট্যাবলেট

পাতলা পায়খানা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী জিঙ্ক ট্যাবলেট খাওয়াতে পারেন। কারন গবেষণায় দেখা গেছে, জিঙ্ক ট্যাবলেট খেলে পাতলা পায়খানা এক-চতুর্থাংশ কমিয়ে আনতে পারে। 

৭. লেবু পানি 

লেবুর রসে রয়েছে এ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে বেশ কার্যকর। তাই পাতলা পায়খানা হলে লেবু- পানি খেতে পারেন। 

একটা লেবু থেকে রস বের করে তার সাথে পরিমাণ মতো পানি, এক চা চামচ লবণ এবং এক চা চামচ চিনি মিশিয়ে সরবত তৈরি করুন। পাতলা পায়খানা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এই সরবত কিছুক্ষন পর পর পান করতে থাকুন।  

৮. দই

দই প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে। তাই পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে সরাদিনে দুই থেকে তিন কাপ দই খান। 

৯. মেথি বীজ 

মেথি বীজের এ্যান্টিফাঙ্গাস বৈশিষ্ট্য পাতলা পায়খানার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। দুই চা চামচ মেথি বীজের গুড়ো এক গ্লাস পানিতে গুলিয়ে সকালে খালি পেটে খান, পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পাবেন। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

১০. সরষে বীজ 

পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সরষে বীজ দারুন উপকারী। কারন সরষে বীজে রয়েছে এ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান। পরিমাণ মতো পানিতে ১ থেকে ৪ চার চা চামচ সরষে বীজ পানিতে এক ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন।

পাতলা পায়খানা থেকে মুক্তি পেতে এই পানি দিনে দুই থেকে তিন বার পান করুন। ওপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায় গুলোর পাশাপাশি কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। যেমন: 

  • নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। 
  • মল ত্যাগের পর এবং খাবার আগে দুই হাত সাবান বা হ্যান্ড ওয়াস দিয়ে ভালো ভাবে পরিস্কার করুন। 
  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন। 
  • নিয়মিত গোসল এবং নখ কাটুন। 
  • পরনের কাপড় পরিস্কার রাখুন। 

যেহেতু পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়ার পর শরীর অত্যন্ত দূর্বল হয়ে পড়ে তাই পুরোপুরি বিশ্রাম নিন।

বড়দের ডায়রিয়া হলে করনীয় কী? 

বড়দের ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে যা করতে হবে তা হলো-

যেহেতু ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে লবণ ও পানি বের হয়ে যায়, তাই ঘনঘন খাবার স্যালাইন খাওয়ার পাশাপাশি তরল খাবার এবং পুষ্টিকর সকল খাবার খেতে হবে। তবে রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে অতিশীঘ্রই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি

বাচ্চাদের পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে তারা স্যালাইন, সরবত, ডাবের পানি, লেবু পানি ইত্যাদি খেতে দিতে হবে। অবস্থা বেগতিক হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। 

পাতলা পায়খানা হলে কী কী খাওয়া যাবে? 

পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি রোগীকে তরল খাবার দিতে হবে। যেমন: স্যুপ, ডাবের পানি, চিড়ার পানি, ভাতের মার ইত্যাদি।

এছাড়াও স্বাভাবিক সকল খাবার যেমন ভাত, শাকসবজি, গরুর মাংস, মুরগির মাংস, মাছ বা টার্কির মাংস ঝোল করে খাওয়ানো যাবে। 

পাতলা পায়খানা হলে কী কী খাওয়া যাবে না? 

পাতলা পায়খানা হলে যে সমস্ত খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে তা হলো: 

  • ঝাল তরকারি, তৈলাক্ত বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। এতে সমস্যা আরও দিগুণ হতে পারে। 
  • যে সমস্ত খাবারে গ্যাস্ট্রিকের আশঙ্কা থাকে  যেমন মটরশুটি, ব্রকোলি, মটর, কর্ন, কুকিজ বা কেক জাতীয় মিষ্টি খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যাবে। যার ফলে পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া আরও বেড়ে যেতে পারে। 
  • পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে ভাজা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। যে কোন মাংস বা মাছ ভাজা খাওয়া যাবে না। 
  • ডিম এবং দুধ বা দুধের তৈরি কোন খাবার খাওয়া যাবে না।  
  • চিনি দেয়া চা, কফি, বাজার থেকে কেনা ফলের জুস, আঙ্গুর, বেদানা খাওয়া যাবে না। 

এছাড়াও পাতলা পায়খানা হলে এ্যালকোহলযুক্ত পানীয় এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। 

পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটের নাম 

পাতলা পায়খানার ট্যাবলেটের নাম হলো মেট্রিল ও ফ্লাজিল। এর যে কোন একটি ঔষধ সেবন করা যাবে। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ঔষধ সেবন করা উচিৎ নয়। 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি: 

প্রশ্ন: পাতলা পায়খানা হলে কী চিড়া খাওয়া যাবে? 

উত্তর: হ্যা, পাতলা পায়খানা হলে চিড়া খাওয়া যাবে। চিড়া ভালো ভাবে ধুয়ে ভিজিয়ে রেখে সেই চিড়া পানি খাওয়া যাবে এবং ভেজানো চিড়া সামান্য লবণ দিয়েও খাওয়া যাবে। 

প্রশ্ন:পাতলা পায়খানা হলে কী কলা খাওয়া যাবে? 

উত্তর: হ্যা, পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে কলা খাওয়া যাবে। তবে এক্ষেত্রে কাঁচা কলা বেশ উপকারী। কারন কাঁচা কলায় রয়েছে এনজাইম, যা পেটের নানা সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। তাই পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা কাঁচা কলা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

প্রশ্ন: পাতলা পায়খানা হলে মাছ খাওয়া যাবে কী? 

উত্তর: পাতলা পায়খানা হলে মাছ খাওয়া যাবে। কারণ পাতলা পায়খানা হলে শরীর থেকে পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। ফলে শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। আর তাই শরীরে শক্তি যোগানোর জন্য মাছ, ভাত, শাকসবজি ইত্যাদি স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে যেতে হবে।  

সমাপ্তি 

শেষ কথায় বলা যায়, উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলো পড়ে জানা গেল যে, পাতলা পায়খানা হলে করনীয় কী। ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করার সাথে সাথে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা শুরু করাও জরুরি। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top