পান পাতার উপকারিতা

পান পাতার ২১টি উপকারিতা, সঠিক ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিক জেনে নিন!

পান সকলেরই পরিচিত একটি পাতা, যা দৈনন্দিন জীবনে কমবেশি সকলই ব্যবহার করে থাকি। পান পাতার সাথে বাঙ্গালির বহু পুরোনো সম্পর্ক। আজকের প্রবন্ধে পান পাতার উপকারিতা, এর ব্যবহার এবং কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বর্ণনা করব।

পান পাতার উপকারিতা 

আমাদের দেশের অতি পরিচিত একটি খাবার পান পাতা। বহু প্রাচীন কাল থেকেই পান পাতা খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। পান পাতার উপকারিতা কারণে বর্তমানে বানিজ্যিক ভাবে পান চাষ করা হচ্ছে। চুন, সুপারি, জর্দা ও লবঙ্গ ছাড়াও অন্যান্য মসলার সঙ্গে পান চিবিয়ে খাওয়ায় রয়েছে নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন জেনে নিই। 

১. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে 

হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পান পাতার উপকারিতা অনস্বীকার্য। পান পাতায় উপস্থিত এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। ফলে পেটে গ্যাস,অম্বল এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাই  খাবার পর পান খাওয়া শুরু করুণ এতে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 

২. মুখের আলসার ভালো করে 

মুখের আলসার নিরাময়ে পান অত্যন্ত কার্যকর। নিয়মিত পান খেলে মুখের আলসার বা ঘা ভালো হয়। 

৩. ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়  

খাবার পর নিয়মিত পান পাতা খেলে হজম শক্তি বেড়ে যায়। ফলে অম্বল বা গ্যাসের কারণে যে পেট ভার হয়, পেট জ্বলে এবং কোষ্টকাঠিন্য হয় তা দূর হয়ে যায়। ফলে  স্বাভাবিক ভাবেই ক্ষুধা বৃদ্ধি পায়। 

৪. গলা ব্যথা উপশম করে

পান পাতায় রয়েছে ব্যাক্টেরিয়ার সাথে লড়াই করার ক্ষমতা। পান  শরীরের প্রদাহ কমায়। ঠান্ডা জনিত কারণে যে গলা ব্যথা হয়,পান খেলে গলার এই সংক্রমণ কমে যায়। 

৫. মাথা ব্যথা সারতে 

পান পাতা মাথা ব্যথা সারতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। হটাৎ করে মাথা ব্যথা হলে একটি পান চিবিয়ে খান তাতে মাথা ব্যথা সেরে যাবে। নিয়মিত পান খেলে বদহজম এবং মাথা যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

৬. ক্যান্সার রোধে

পান পাতায় বিদ্যমান প্রাকৃতিক এন্টিমিউটাজেনিক, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং এন্টিক্যান্সার উপাদান যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করে। এছাড়াও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি পানের সাহায্যে নেশা ছাড়াতে পারেন। 

৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে 

পান পাতা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। লাল পান পাতা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। পান পাতা এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা অগ্নাশয়ের কোষগুলোকে বর্জ্য পদার্থ হতে মুক্ত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও পান পাতায় থাকা অ্যালকালয়েড রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই নিয়মিত পান পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

৮. গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে 

গ্যাসট্রিকের সমস্যা দূর করতে পান পাতা ওষুধের মতো কাজ করে। পান পাতায় থাকা এন্টিব্যাক্টেরিয়াল উপাদান পেটের অম্বল বা গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং আলসার জাতীয় বিভিন্ন সমস্যা দূর করে থাকে। 

৯. ওজন কমাতে 

কোন কিছু খাবার পর পান খেলে বিপাক ক্রিয়া বৃদ্ধি পায়। ফলে পেট পরিস্কার থাকে যা ওজন কমাতে সাহায্য করে। পান পাতার রস অতিরিক্ত ক্ষুধা কমিয়ে সঠিক মাত্রায় খাদ্য গ্রহণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে ওজন সঠিক নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

১০. দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে 

পান পাতা দাঁত ও দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। কারণ পান পাতায় উপস্থিত এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা মুখের আলসার বা ঘা সারিয়ে তোলে। এছাড়াও পান পাতা মাউথ ফ্রেশনারের কাজ করে। মুখে আলসারের কারণে যে দুর্গন্ধ হয় তা দূর করতে সাহায্য করে। 

১১. ত্বকের যত্নে পান

ত্বকের যত্নে পান পাতার উপকারিতা অতুলনীয়। পান পাতায় থাকা এন্টিফাঙ্গাল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রন, কালো ছোপ দাগ, মেছতা ইত্যাদি দূর করে ত্বক কে মসৃণ ও সুন্দর করে তোলে।

পান পাতার ব্যবহার 

পান পাতা প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ ব্যবহার করে আসছে। পান পাতা কাঁচা অবস্থায় ব্যবহার করা যায়। পান পাতার সাথে সুপারি, চুন, খয়ের, জর্দা, লবঙ্গ দিয়ে চিবিয়ে খাওয়া যায়। 

অনেকে চুন, সুপারির সঙ্গে অন্যান্য মসলা দিয়ে চিবিয়ে খান যা বাজারেই কিনতে পাওয়া যায়। প্রতিদিন খাবার পর যদি একটি করে পান খেতে পারেন তবে এর গুনাগুন বুঝতে পারবেন। 

গোসলের আগে কয়েকটি পান পাতা গরম পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর থেকে ঘামের দুর্গন্ধ দূর হবে। 

গরম পানির সাথে পান পাতার রস মিশিয়ে কুলকুচি করলে গলা ব্যথা দূর হয়। 

দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় পান পাতার রসের সাথে লেবু ও লবঙ্গ মিশিয়ে দাঁত মাজলে অনেক উপকার হয়। 

ত্বকের সমস্যা দূর করতে পান পাতার রসের সাথে পরিমাণ মতো টকদই ও মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বক উজ্জ্বল ও সুন্দর হবে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

পান পাতার ক্ষতিকর দিক

পান পাতা চুন ও সুপারির সঙ্গে চিবিয়ে খেলে ক্যাটেকোলামাইন নামে একটি কেমিক্যাল নিঃসরণ হয় যা নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। আবার অতিরিক্ত পান খেলে মুখে ক্যান্সার হওয়ার জোড়ালো আশংকা থাকে। 

অধিক মাত্রায় পান পাতা খেলে এতে থাকা সাইকো অ্যাকটিভ স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভসকে ক্ষতি করে। পানের সাথে বেশি খয়ের খেলে ফুসফুসে ইনফেকশন হতে পারে। 

গর্ভবতী নারীর জন্য পান ক্ষতিকর। কারণ এতে গর্ভের শিশু বেড়ে ওঠার সময় বিশেষ ভাবে ক্ষতিকারক বলে প্রমাণিত হয়েছে। 

পান পাতায় আসক্ত হলে হটাৎ করে তা ছেড়ে দিলে অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। 

ভিডিওঃ কাঁঠালের অবাক করা উপকারিতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। #shorts

শেষ কথা 

সব শেষে বলা যায়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে পানের প্রয়োজন থাকলেও সঠিক ভাবে ব্যবহার করলে পান পাতার উপকারিতা নিশ্চয়ই বুঝতে পারবেন। পরিমাণ মতো পান খেলে দাঁত, ত্বক, স্বাস্থ্য সবটাই উপকারী হবে। তবে পান খাওয়া শুরু করার আগে একবার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top