পেটের মেদ কমানোর উপায়

পেটের মেদ কমানোর ১৯ টি উপায় সহ জানুন সহজ কিছু ঘরোয়া টোটকা!

ভূমিকা: পেটের অতিরিক্ত মেদ অনেকের জন্যই একটি অস্বস্তিকর বিষয়। পেটের মেদের জন্য নারী কিংবা পুরুষ সবার দৈহিক সৌন্দর্য্য ব্যাঘাত ঘটে। তাই পেটে মেদ কমানোর স্বপ্ন দেখেন অনেকেই। আপনাদের জন্যই আমাদের এই আজকের আর্টিকেল পেটের মেদ কমানোর উপায়।

দীর্ঘ সময় বসে বসে কাজ করা, দৈহিক পরিশ্রম কম হওয়ার কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে। পেটে মেদ বা চর্বি হলে চলা-ফেরায় যেমন কষ্ট হয়, তেমনি নষ্ট হয় সৌন্দর্যও।

বহু পরিশ্রম করেও যাঁদের পেটের মেদ কমার কোনও লক্ষণ নেই। তাঁদের জন্য রইল পেটের মেদ কমানোর সহজ কয়েকটি উপায়

পেটের মেদ কমানোর উপায়

ওজন কমানোর জন্য মানুষ সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে পেটের মেদ কমানোর সময়। শরীরের অন্যান্য অংশের মেদ কমলেও পেটের মেদ সহজে কমতে চায় না। তবে আপনি কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে সহজেই পেটের মেদ ঝরাতে পারবেন। তাহলে আসুন জেনে নিই পেটের মেদ কমানোর উপায়

স্বাস্থ্যকর খাবার

পেটের বাড়তি মেদ কমানোর প্রথম ধাপ হল স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। শরীরে পর্যাপ্ত ফাইবার না থাকলে ওজন বাড়ে। তাই ইচ্ছে করলেই বাইরের ভাজা খাবারের বদলে ফল, ওটস, বাদাম, ডিম, সবুজ শাকসব্জি বেশি করে খান। ওটস এবং অন্যান্য উচ্চ ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রেখে ওজন কমাতে সাহায্য করে।

এছাড়াও প্রোটিন জাতীয় খাবার পেটে চর্বি জমতে বাধা দেয়। প্রোটিনের জাতীয় খাবার হিসাবে আপনি খাদ্যতালিকায় পনির, টকদই, ডিম, লাল মাংস রাখতে পারেন।খাওয়াদাওয়ায় পরিবর্তন আনলে পেটের মেদ ঝরাতে আলাদা করে আর পরিশ্রম করার দরকার হবে না।

মানসিক চাপ কমানো

শরীরের বাড়তি মেদ জমার অন্যতম কারণ কিন্তু মানসিক চাপ। অবসাদে বাড়ে ওজন সাথে মেদ ও। দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপের ফলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। যা ইনসুলিনের মাত্রাও বাড়িয়ে তোলে এবং রক্তে সুগারের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। এছাড়াও উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপে থাকলে চিনিজাতীয় ও ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যায়। তাই বই পড়া, হাটাহাটি, জার্নালিং কিংবা শরীরচর্চার অথবা বন্ধুদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজেকে মানসিক চাপমুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।

প্রচুর পানি পান করা

পেটের মেদ কমাতে সারা দিনে প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার বিকল্প নেই।  পানি খাওয়ার ফলে শরীরের অতিরিক্ত টক্সিন বেরিয়ে যায়। যার ফলে মেদ জমতে পারে না। বেশি পরিমাণে পানি খেলে বারে বারে খিদে পাওয়ার প্রবণতাও হ্রাস পায়। প্রতি দিন কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস পানি খান। তবে অ্যালকোহল, চিনিযুক্ত কোনও পানীয় এড়িয়ে চলুন। এতে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

নিয়মিত ব্যায়াম করুন

পেটের মেদ কমানোর আরও একটি সহজ উপায় হল শরীরচর্চা। অল্প সময় ধরে করুন। কিন্তু তা যেন নিয়মিত হয়। একটি নির্দির্ষ্ট ফিটনেস রুটিন তৈরি করুন। পরিশ্রমসাধ্য কোনও ব্যায়াম করতে হবে এমন নয়। সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, পালাটেস— এর মতো কিছু শারীরিক পরিশ্রম প্রতিদিনের ফিটনেস রুটিনে রাখুন।

[ঊদ্ধৃতি: স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রশিক্ষক রবারট হার্বস্ট বলেন, “পেটের মেদ কমানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে পুরো শরীরের চর্বি কমানো। শরীরের ফ্যাট কমে গেলেই আস্তে আস্তে পেটের মেদ কমতে থাকবে। ওজন অনুশীলনের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের মেটাবলিজম বাড়িয়ে তুলতে হবে। এটি পেশীকে সচল করে যা ক্যালরি ঝরাতে সাহায্য করে এবং আপনাকে ফিট ও শক্তিশালী রাখে।”] 

নিয়মানুসারে ঘুমানো

রাতে ভালো ঘুম শরীর-মনকে ভালো রাখে। ওজন কমাতেও সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে পেটে মেদ জমতে পারে। দৈনিক ৭-৯ ঘন্টা না ঘুমালে দিনের বেলা উচ্চ ক্যালরিসম্পন্ন খাবার খাওয়ার ইচ্ছা বেড়ে যায়। বিশেষত কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবার যা দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাছাড়া দীর্ঘদিন যাবত ঘুম কম হতে থাকলে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। যা ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ঘুমের রুটিন ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিনি ওজন কমায়

পেটের মেদের হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে চিনি। ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে চিনিমুক্ত খাবার।বাড়তি চিনি খেলে আমাদের শরীর সুগারের মাত্রা কমানোর জন্য ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এই সুগার তখন যকৃতে গিয়ে গ্লাইকোজেনে রূপান্তরিত হয় যা অবশেষে ফ্যাট হিসেবে জমা হয়। পরিশোধিত চিনি খাওয়ার পরিবর্তে খাবার এবং ফলমূল খেতে হবে যেগুলোতে রয়েছে প্রাকৃতিক চিনি। হাতে বানানো লাল চিনি কিনুন আমাদের শপ থেকে!

হাঁটাচলা

আমাদের দৈনন্দিন জীবন-যাপনের কারণেই পেটে চর্বি জমে। যারা দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করেন তাদের ওজন বেড়ে যায় এবং নানান রোগে ভুগেন। সুস্থ থাকতে হলে হাঁটার কোনো বিকল্প নেই। উঠানামায় লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহারের অভ্যাস করতে হবে। শরীরের বাড়তি ক্যালরি ঝরানোর জন্য হাঁটাহাঁটি করা উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। তাছাড়া, হাঁটলে দুশ্চিন্তা কমে।

মেদ কমাতে ডায়েট প্ল্যান

আজকাল সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। বাড়তি মেদ ঝরানোর যুদ্ধে সবাই জয়ী হওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেছে। কেউ সফল হচ্ছেন আর কেউ ভুল ডায়েট প্ল্যানের কারণে অসুস্থদের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন।

রাতারাতি ওজন কমালে সেটা স্থায়ী তো হয়ই না, উল্টো পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। চটজলদি পেটের মেদ কমানোর উপায় গুলো পরিহার করে স্বাস্থ্যকর উপায়ে মেদ কমানোর ডায়েট প্ল্যান ফলো করুন। সবার সুবিধার্থে এমনই একটা ডায়েট মেন্যু দেয়া হলো। মেদ কমাতে ডায়েট প্ল্যান ৪ বেলার জন্য

সকাল

২টি রুটি, কুসুম ছাড়া ডিম সেদ্ধ/পোচ, এক গ্লাস লো–ফ্যাট মিল্ক অথবা টক দই, কমলা অথবা সাইট্রিক অ্যাসিডযুক্ত ফল। রুটির বদলে এক বাটি কর্ণফ্লেক্স অথবা ওটস খেতে পারেন। 

দুপুর

এক কাপ ভাত, দুই পিস মাছ/মুরগির মাংস, এক বাটি ডাল, আলু ছাড়া তরকারি। পারলে শসা, টমেটো, গাজর দিয়ে এক বাটি সালাদ করে যত ইচ্ছা তত খেতে পারেন। শুধু যে এইগুলো দিয়েই সালাদ বানাতে হবে তা কিন্তু নয়। আপনি আপনার পছন্দের উপকরণগুলো দিয়েও বানাতে পারবেন।

বিকেল

মুড়ি, পপকর্ন, ছাতু, টোস্ট বিস্কুট, রঙ চা খেতে পারেন। চিনি ছাড়া চা খাবেন কিন্তু সুইটনার খাওয়ার অভ্যাস করবেন না। এইটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়।

রাত

এক বাটি ঘরে বানানো যেকোনো সুপ বা রুটি, এক বাটি সালাদ, এক গ্লাস লো- ফ্যাট মিল্ক/দই, একটা আপেল। যদি সুপ খেতে ইচ্ছা না করে তাহলে আমরা সাধারণত যে চাইনীজ ভেজিটেবল বানাই সেটা এক বাটি খাওয়া যেতে পারে।

আরো যেসব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হল-

১. লবণ খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে। যার ফলে শরীরে পানি জমে শরীর ফুলে যায়।

২. পেট কখনো খালি রাখবেন না তাহলে গ্যাস্ট্রিকের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ক্ষুধা লাগলেই সালাদ অথবা ফল খেয়ে পেট ভরিয়ে নিবেন।

৩. রাতের খাবার অবশ্যই ৮টার মধ্যে খেয়ে নিবেন।

৪. প্রচুর পরিমানে পানি পান করার অভ্যাস করুন।

৫. ডিপ ফ্রাইড খাবার পরিহার করুন।

৬. ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাবেন। পর্যাপ্ত ঘুম পাকস্থলীর পরিপাকের ক্ষমতা বাড়িয়ে দিবে।

৭. কোন বেলার খাবার বাদ দিবেন না। তাহলে দেখা যায় পরের বেলায় বেশি খাওয়া হয়েই যায়।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

পেটের মেদ কমায় যেসব পানীয়

পেটের মেদ বাড়া নিয়ে অনেকেই চিন্তিত থাকেন। অনেক সময় দেখা যায় যে, শরীর ফিট থাকলেও পেটের মেদ বেড়ে গিয়ে সমস্যা তৈরি করেছে। পেটের মেদ কমানোর উপায়ের পাশাপাশি প্রতিদিন কয়েকটি পানীয় পান করলে এই সমস্যা থেকে খুব সহজে মুক্তি পাওয়া যায়

লেবুপানি

সকালবেলা হালকা গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে পেটের চর্বি গলতে শুরু করে দ্রুত। লেবুতে আছে প্রচুর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পেকটিন ফাইবার যা পেটে জমে থাকা ফ্যাটকে গলিয়ে দেয়। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ও সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে পান করুন। 

জিরা ভেজানো পানি

জিরা যে খাবারের স্বাদ-গন্ধ বাড়াতে কাজে লাগে তা কিন্তু নয়। বরং এটি নানাভাবে আমাদের শরীরের উপকার করে থাকে। জিরা ভেজানো পানি পান করলে তা হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয়। এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত রাখে। একগ্লাস পানিতে এক চা চামচ জিরা সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরদিন সেই পানি ছেঁকে নিয়ে খালি পেটে পান করুন। উপকার মিলবে দ্রুত।

গ্রিন টি

গ্রিন টি আমাদের দেশে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। গ্রিন টিতে আছে ক্যাটেচিন্স নামক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ফ্যাট বার্ন করে এবং মেটাবলিজম বাড়ায়। চিনি ছাড়া পান করলে বেশি উপকার পাবেন। পেটের মেদ কমাতে গেলে সারা দিনে অন্তত ২-৪ কাপ গ্রিন টি পান করতে হবে।

মেথি পান করুন

প্রথমে দুই চামচ মেথি সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে একটি শসা ব্লেন্ড করে মেথির পানির মধ্যে দিন এবং আধা কাপ পানি যোগ করুন। তারপর একটু বিট লবন দিয়ে ভালোভাবে মেশান। তারপর পান করুন। 

উপরোক্ত যেকোনো একটি পানীয় নিয়মিত গ্রহণ করলে উপকার মিলবে।

উপসংহার 

পেটের মেদ কামনোর উপায় জানার পাশাপাশি আমাদের উচিত নিয়ম মেনে পরিমিত ব্যায়াম করা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা। তাহলে পেটের মেদই শুধু নয়, সারা দেহের মেদ কমিয়ে কাঙ্ক্ষিত ফিগার পেতে পারেন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top