ফিজিওথেরাপি কি

ফিজিওথেরাপি কি এবং কেন? ফিজিওথেরাপি কখন, কাদের প্রয়োজন জানুন বিস্তারিত!

ফিজিওথেরাপি কি তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলে আজকের প্রবন্ধটি হবে আপনার জন্য সহায়ক। এটি একটি ইংরেজি শব্দ। ফিজিও মানে শারিরীক আর থেরাপি মানে হচ্ছে চিকিৎসা। অর্থাৎ ফিজিওথেরাপি মানে এক ধরনের শারীরিক চিকিৎসা পদ্ধতি। 

ফিজিওথেরাপি কি একটি স্বতন্ত্র চিকিৎসাব্যবস্থা। যেখানে শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়। প্রধানত বাত-ব্যথা, আঘাত জনিত ব্যথা, স্পোর্টস ইনজুরি, হাড় ক্ষয় জনিত রোগ, প্যারালাইসিস ইত্যাদি সমস্যা সমাধানের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

নিম্নে ফিজিওথেরাপি সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। লেখাটি শেষ হলে আপনি নিশ্চিতভাবে এ সম্পর্কে অজানা অনেক বিষয় জানতে পারবেন। 

ফিজিওথেরাপি কি এবং কেন?

মূলত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নতুন কোনো চিকিৎসা পদ্বতি নয়। প্রাচীন গ্রিসে হিপোক্রেটাস ম্যাসাজ ও ম্যানুয়াল থেরাপি দ্বারা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা ঘটে। 

ফিজিওথেরাপি এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে শারীরিক ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিবন্ধকতাজনিত জটিলতা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। এই পদ্ধতির চিকিৎসকদের ফিজিওথেরাপিস্ট বলা হয়ে থাকে। 

ফিজিওথেরাপিস্টরা মানবদেহের কার্যপ্রণালী উন্নয়ন, ব্যথা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাময় এবং স্থায়ী অক্ষমতা প্রতিকার রোধে কাজ করে থাকেন। এ ধরণের চিকিৎসা পদ্ধতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো  ঔষধ প্রয়োগ ও অস্ত্রোপচারের পরিবর্তে শারীরিক ব্যায়াম, ম্যাসেজ, ও তাপ চিকিৎসার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যথাজনিত রোগ নিরাময় করা। 

সড়ক দুর্ঘটনা, শারীরিক প্রতিবন্ধিতা, বিকলাঙ্গতা, পক্ষাঘাত এবং বড় কোন অস্ত্রোপচারের পর রোগীর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাত, মাথা, ঘাড়, কাঁধ, পিঠ, কোমর ও হাঁটুর ব্যথায় এবং স্পোর্টস ইঞ্জুরিতে ফিজিওথেরাপির ভূমিকা অপরীসিম। 

ফিজিওথেরাপি কখন কাদের প্রয়োজন

দেশে বাত-ব্যাথা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পায় না। ফলে এ সংক্রান্ত সমস্যা বেড়েই চলছে। বাত-ব্যাথা ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে যথাযথ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায়

স্ট্রোক, আঘাত অথবা শল্যচিকিৎসায় অনেককে স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতায় ভুগে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়। এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত রোগীর অনেক সময় শরীর অবশ হয়ে যায়। মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়।  ফলে তাকে পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। রোগীর শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা এবং অস্থিসন্ধি সচল রাখা তখন বড় চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। 

মাংসপেশি ও হাড়ের সমস্যা

অনেক সময় দেখা যায় ভেঙে যাওয়া হাড় জোড়া লাগার পর আঘাতপ্রাপ্ত অংশের মাংসপেশি ও হাড় ঠিকমতো কাজ করে না। সাড় ফিরে পেতে বেশ সময় নেয়। কাজ করার সময় ব্যাথা করে। এক্ষেত্রে আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। 

এছাড়া নানা ধরনের বাত যেমন স্পন্ডিলাইটিস, স্পন্ডাইলোসিস, স্পন্ডিলিস্থেসিস; অর্থাৎ ঘাড়, কোমর ও মেরুদণ্ডের ব্যথায় এই চিকিৎসা বেশ কাজে দেয়। পাশাপাশি অস্থিসন্ধির বাত, হাঁটুর ব্যথা, কাঁধে ব্যথা এবং পায়ের গোড়ালির সমস্যায় আক্রান্তদের ফিজিওথেরাপি দেওয়া হয়। 

পোড়া রোগীদের জন্য

আমাদের দেশে প্রচুর অগ্নিকান্ড ঘটে। ফলে পোড়া রোগীর সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়। পোড়া রোগীর মাংসপেশি দীর্ঘদিন ধরে সংকুচিত হয়ে থাকে। এ অবস্থায় অনেকে স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণের শঙ্কায় থাকেন। তবে যদি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নেওয়া হয় তাহলে স্থায়ীভাবে এই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যায়। 

শিশুরোগের ক্ষেত্রে

আমাদের দেশে বা বিশ্বের নানা দেশে কিছু শিশু জন্মগতভাবে প্যারালাইসিস ও মেরুদণ্ডের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেয়। এ সকল শিশুদের ফিজিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এছাড়াও দেখা যায় অনেক শিশুর হাত, পা বেঁকে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই। 

হৃদ্‌রোগ ও ফুসফুসের সমস্যায়

বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের  ফিজিওথেরপির প্রয়োজন হয়। তাছাড়া  হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচারের আগে ও পরে রোগীর অক্সিজেন ধারণক্ষমতা ঠিক রাখতে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। আইসিইউতে থাকা রোগীদেরও ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হয়।

হাঁটু এবং পায়ের ব্যথার

হাঁটু ব্যথা অনেক কারণে হয়, তবে সবচেয়ে বেশি হয় অস্টিওআর্থাইটিস জনিত। অস্টিওআর্থাইটিস জনিত হাটু ব্যথায় চলাফেরার সমস্যা, সিঁড়ি দিয়ে উঠানামা সমস্যা, দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে সমস্যা হয়। এসকল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফিজিওথেরাপি বেশ ভালো কাজ করে।

বার্ধক্যজনিত সমস্যা

শরীরের বিভিন্ন অংশের ব্যথা ও মাংসপেশিতে ক্ষয়ের কারণে শেষ বয়সে অনেকে চলাচল করার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। বার্ধক্যজনিত মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা বজায় রাখতে ফিজিওথেরাপির বিকল্প নেই। 

এছাড়াও কোমর ব্যাথা, কনুই ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথাসহ নানা সমস্যাতে ফিজিওথেরাপি ব্যবহার হয়।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ফিজিওথেরাপি কীভাবে দেওয়া হয় 

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ফিজিওথেরাপি দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের মেশিন রয়েছে। যেগুলোর সাহায্যে অনেক উন্নত মানের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। অতীতে শুধু ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হতো। বর্তমানে ব্যায়ামের পাশাপাশি  আধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয়। কীভাবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেওয়া হয় তা আপনাদের কাছে তুলে ধরা হলো ।

১. টেনস থেরাপি মেশিনের মাধ্যমে: 

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রধানের জন্য খুব গুরুতপূর্ন ডিভাইস হচ্ছে টেনস মেশিন । মানবদেহের বিভিন্ন ব্যথা দূর করার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। এই ডিভাইসের সাথে ৪ টি পেড থাকে। যেগুলো মূলত ব্যথার স্থানে লাগাতে হয়। ক্যাবলের মাধ্যমে এই পেডগুলি ডিভাইসের সাথে কানেক্টেড থাকে।

২. শক ওয়েভ মেশিনের মাধ্যমে:

শকওয়েভ ফিজিওথেরাপি এমন একধরনের চিকিৎসা যেটাতে কোন ধরনের সার্জারি বা ইনজকেশনের সাহায্য ছাড়াই অনেক ধরনের জয়েন্ট, মাসল, টেন্ডনের ব্যথা, ইরেকটাইল ডিসফাংশন ভাল হয়। শকওয়েভ মূলত একোয়াস্টিক ওয়েবের মাধ্যমে শক্তি উৎপাদন করে। যার ফলে শরীরের অসুস্থ অংশে পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ বেড়ে যায়। দ্রুত শরীরের ইনজুরি টিস্যূগুলো রিকভারী হয়। এবং শরীরের স্বাভাবিক সুস্থ হওয়ার প্রক্রিয়াকে অনেক গুণ দ্রুত করে।  

দীর্ঘদিনের টেন্ডিনাইটিস, প্লান্টার ফ্যাসিআইটিস, টেনিস এলবো, সোল্ডার জয়েন্টের নানা ধরনের ক্রনিক ব্যথা দূর করতে শকওয়েভ থেরাপি বেস্ট সলিউশন। 

৩. আই আর আর লাইট:

এই পদ্ধতিতে ব্যথাযুক্ত স্থানে আলোর তাপ দিয়ে ব্যথা দূর করা হয়। শরীরের গভীরে যে ব্যথাগুলো হয়ে থাকে সেগুলো দূর করার জন্য এই রেডলাইট থেরাপি দেওয়া হয়। এ পদ্ধতিতে ব্যথা দূর হতে কিছুটা সময় বেশি লাগে। তবে এটা অনেক কার্যকরি একটি থেরাপি।

ফিজিওথেরাপি খরচ কত

ফিজিওথেরাপি কয়েকটি সেশনে ভাগ করে দেওয়া থাকে। যাদের বেশি সমস্যা তাদের বেশি সেশন বা সময় লাগে। প্রতি সেশনে সাধারণত ১ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। তবে বিভিন্ন  ফিজিওথেরাপি সেন্টারে কম বেশি রয়েছে। যার যত সেশন লাগে তার তত বেশি টাকা প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে টাকার পরিমানে কিছু  ভিন্নতা থাকে। 

এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ছাড়া, অপেশাদার অসাধুরা স্বল্প মূল্যে  ৩০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা প্রতি সেশন নিয়ে থাকেন। এগুলোতে কোনো বায়োমেকানিক্স, থেরাপিউটিক প্রিন্সিপাল এবং কন্ট্রেন্ডিকেশন ফলো করা হয় না।

ফিজিওথেরাপি সুবিধা

ফিজিওথেরাপির অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। এতক্ষণে এসম্পর্কে আপনারা নিশ্চয় কিঞ্চিৎ ধারণা পেয়েছেন। তবে চলুন এখন এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাক। 

  • ফিজিওথেরাপি অর্থোপেডিক সমস্যার সমাধান করতে পারে। অর্থাৎ শরীরের হাড়, জয়েন্ট, পেশী, টেন্ডন এবং লিগামেন্ট সম্পর্কিত সমস্যা যা শরীরের মাস্কুলোস্কেলেটাল সিস্টেম নামে পরিচিত তা ভালো করতে পারে। 
  • ফিজিওথেরাপি স্নায়বিক রোগ, অর্থাৎ মস্তিষ্কের ব্যাধি, মেরুদণ্ড এবং শরীরের স্নায়ুরোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। স্ট্রোকের মতো স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত রোগীকে ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার করা হয়। 
  • কার্ডিওপুলমোনারি সমস্যা, অর্থাৎ হার্ট এবং ফুসফুসের সাথে সম্পর্কিত রোগগুলি ফিজিওথেরাপি দ্বারা ভালো হতে পারে। কার্ডিওপুলমোনারি অবস্থা ফিজিওথেরাপি হস্তক্ষেপের জন্য ভাল সাড়া দেয়। 
  • থেরাপিউটিক ব্যায়ামে স্ট্রেচিং এবং ট্রিগার পয়েন্ট থেরাপি (এক ধরণের নিউরোমাসকুলার থেরাপি) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে যা কঠোরতা হ্রাস করে এবং ব্যথা উপশম করে।

ফিজিওথেরাপির অপকারিতা

ফিজিওথেরাপি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। তবে সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, অনেক রোগী অভিযোগ করছেন তারা দীর্ঘদিন এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিয়েও কোনো সুফল পাচ্ছেন না। বরং অনেকের সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

ইলেকট্রোথেরাপি প্রয়োগ করতে গিয়ে অনেকের শরীর পুড়ে গেছে। ট্রাকশন দেয়ার পর ব্যথা তীব্রতর হয়েছে বা প্যারালাইসিস রোগীর সোল্ডার ডিসলোকেশন হয়ে গেছে। এমন অনেক তথ্য প্রতিনিয়ত শোনা যাচ্ছে। এরজন্য  রোগী ও তার স্বজনরাই দায়ী। অনেকেই কম মূল্যে দেশি যন্ত্রপাতি কিনে একটি থেরাপি সেন্টার খুলে বসেছেন। এগুলোতে চিকিৎসা করালে ক্ষতি অনিবার্য। 

ভিডিওঃ ওজন কমাতে সহায়ক ৫ ফল সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।

শেষ কথা

ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একটি বিজ্ঞানসম্মত,  সুপ্রতিষ্ঠিত প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসা নিয়ে অবহেলার সুযোগ নেই। একজন রোগীকে সুস্থ হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই ফিজিওথেরাপি নেয়া উচিত। অনেকেই মনে করেন সাময়িক আরাম পাওয়ার জন্যই ফিজিওথেরাপি দেয়া হয়। কিন্তু ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। 

সাময়িক ব্যথা মুক্তির জন্য আপনি ব্যথানাশক খেতে পারেন৷ কিন্তু ফিজিওথেরাপি কি এর মূল্য উদ্দেশ্য হলো রোগীকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যথা ও ব্যথার কারণ থেকে মুক্ত করা। সাথে প্যারালাইসিসসহ অন্যান্য অচল রোগীর সচলতা ফিরিয়ে দেয়া।

ফিজিওথেরাপি কি তা নিশ্চয় আপনারা এতক্ষণে জানতে পেরেছেন। এছাড়াও আপনার মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top