বেলের উপকারিতা

বেল খাওয়ার ১৭টি উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে নিন!

এই গরমে নানা রকম ফলের মধ্যে বেল অন্যতম। বেল সকলেরই পরিচিত ও পছন্দের একটি ফল। অন্যান্য পুষ্টিকর ফলের মধ্যে বেল অন্যতম। অতিরিক্ত গরমে প্রাণ জুড়াতে বেলের সরবতের জুড়ি নেই। আর তাই বেলের উপকারিতা এবং এর কিছু অপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করবো। 

বেলের উপকারিতা ও অপকারিতা

বেল পুষ্টিগুনে ভরপুর। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন,পটাশিয়াম, ফ্যাট, শর্করা, ক্যারোটিন, রিবোফ্লাভিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও কার্বোহাইড্রেট সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান যা শরীর সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখতে সহায়তা করে। বেল কাঁচা এবং পাকা উভয় অবস্থাতেই খাওয়া যায়। বেলের উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো। 

বেলের উপকারিতা

১. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেল মহা ঔষধ। বেলে থাকা মেথানল নামক উপাদান ব্লাড সুগার কমাতে সাহায্য করে। তবে ভালো ফল পেতে হলে বেলের সরবত নয়, পাকা বেল এমনতিতেই খেতে হবে। 

২. হজম শক্তি বাড়ায় 

বেল হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পাকা বেলের সরবত গ্যাস, বদহজম, অম্বল, বমি ভাব ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে। তাই গরমের সময় নিয়মিত বেলের সরবত পান করুণ এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। 

৩. শরীর সতেজ রাখতে 

শরীর সতেজ রাখতে বেলের জুড়ি নেই। বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি ও প্রোটিন যা দেহে এনার্জি বৃদ্ধি করতে বিশেষ ভুমিকা রাখে। বেল পেশিকে মজবুত করে ফলে শরীর সতেজ থাকে। তাই গরমের দিনে শরীর কে সতেজ রাখতে প্রতিদিন পাকা বেলের সরবত পান করুণ। 

৪. রোগ প্রতিরোধে 

বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বেল রক্ত পরিস্কার করতে সহায়তা করে ফলে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। এছাড়াও বেল শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয় ফলে শরীর ভেতর থেকে পরিস্কার থাকে। 

৫. গ্যস্ট্রিক ও আলসারের সমস্যায়

বেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যআঁশ যা হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে থাকে। এর ফলে পেটে গ্যাসের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে না। তাই নিয়মিত বেল খাওয়ার ফলে গ্যাস্ট্রিক, আলসার ও গ্যাসের কারণে পেটে যে ব্যথা হয় তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

৬. লিভার সুস্থ রাখে

লিভার ভালো রাখার মূল উৎস হলো বেল। কারণ বেলে রয়েছে বিটাক্যারোটিন যা লিভার ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে থাকা থিয়ামিন ও রাইবোফ্লাভিন উপাদান লিভারের শক্তি বৃদ্ধি করে থাকে। তাই লিভার সুস্থ রাখতে প্রতিদিন বেল খান। 

৭. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে 

বেল কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে থাকে। বেল যেহেতু পরিপাকে সহায়তা করে ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে তা দূর হয়ে যায়। তাই নিয়মিত পাকা বেলের সরবত খাওয়া শুরু করুণ উপকার পাবেন। এছাড়াও কাঁচা বেল খেলে পেটের ব্যথা ও আমাশয় দূর হয়। 

৮. যক্ষা রোগ সারতে

বেলে রয়েছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান যা যক্ষা রোগ সারতে বেশ কার্যকর। এক্ষেত্রে পাকা বেলের সরবতের সাথে মধু মিশিয়ে একটানা ৩০ থেকে ৪০ দিন রাতে শোয়ার আগে খান উপকার পাবেন।  

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

৯. দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করতে 

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি এবং প্রখর করতে বেলের উপকারিতার জুড়ি নেই। বেলে রয়েছে ভিটামিন এ যা চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী। বেল পাতার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে চোখের ছানি কেটে যায়। এছাড়াও যারা নিয়মিত বেল খায় তাদের চোখের বিভিন্ন রোগ হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে। 

১০. ব্ল্যাড প্রেসার কমায়

বেল ব্লাড প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। সাধারণত যেভাবে পাকা বেলের সরবত পান করা হয় ঠিক সেভাবেই নিয়মিত বেলের সরবত পান করুণ আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। 

১১. কিডনি ভালো রাখে

কিডনি সুস্থ রাখতে বেল বিশেষ ভুমিকা পালন করে। কারণ বেলে থাকা উপকারী উপাদান গুলি কিডনিকে ডিটক্সিফাই করতে সহায়তা করে। ফলে কিডনি বিভিন্ন রোগ হতে মুক্তি পায়। আর তাই কিডনি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসকেরা বেল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

১২. ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে 

বর্তমানে ক্যান্সার রোগ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এই রোগ হতে মুক্তি পেতে বেল খান। কারণ বেলে আছে এন্টিপ্রলেফিরেটিভ ও এন্টিমুটাজেন উপাদান। এ দুটি উপাদান টিউমার হতে বাধা সৃষ্টি করে আর এতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। 

১৩. ত্বক সুস্থ রাখতে 

বেল ত্বক ভালো রাখতে সাহায্য করে। বেলে রয়েছে প্রচুর খাদ্য আঁশ যা ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত বেল খেলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে ত্বক মসৃণ হয়।

বেলের অপকারিতা 

বেল সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর হলেও একটানা দীর্ঘদিন পাকা বেল খেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। 

পাকা বেল অতিরিক্ত খেলে অন্ত্রের ছিদ্র হতে পারে। তবে কাঁচা বেলে এ ধরনের বিপদের কোনো আশঙ্কা থাকে না। 

পাকা বেল পেটে দুর্গন্ধ বায়ু তৈরি করে কিন্তু কচি কাঁচা বেল উপকারী যা বায়ু নাশক হিসেবে কাজ করে। 

ডায়েটিশিয়ানদের মতে, বেল শ্বেতসার, প্রোটিন এবং ধাতব লবণ সমৃদ্ধ হলেও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

তবে অপকারিতার চেয়ে বেলের উপকারিতা অনেক বেশি। তাই শুধু বেল নয়, যেকোন ফল পরিমাণের বেশি খেলে হিতে বিপরীত হবে। তাই সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে শুধু ফলই নয়, যেকোন খাবার পরিমাণ মতো খেতে হবে। থানকুনি পাতার ১০টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন!

শেষ কথা 

পরিশেষে বলা যায়, বেল পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। এর ভিটামিন ও পুষ্টি উপাদান থেকে নানাবিধ শারীরিক উপকারিতা পেতে বেলের উপকারিতার জুড়ি নেই। তাই দেহকে রোগ মুক্ত রাখতে এবং  প্রানবন্ত করে তুলতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক গ্লাস পাকা বেলের সরবত অতুলনীয়। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top