সরিষার তেলের ১২ টি স্বাস্থ্যকর উপকারিতা!

সরিষার তেলের উপকারিতাতীব্র গন্ধ এবং ঝাঁঝালো স্বাদের জন্য সরিষার তেল খুবই পরিচিত। সরিষার তেলের উপকারিতার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য উপকারিতা, চুল এবং ত্বকের উপকার, বডি ম্যাসাজে ব্যবহার।

বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্থানের অনেক অঞ্চলে মানুষ রান্নার জন্য এই তেল ব্যবহার করে। তাছাড়া ভর্তা-ভাজিতে সরিষা তেল ছাড়া কি চলে!

খাঁটি সরিষার তেল অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে!

সরিষার তেলের উপকারিতা

এই তেলে রয়েছে ওমেগা-3 এবং ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিডের এই অনুকূল অনুপাত এবং নিম্ন মাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট। যে কারণে বাজারে থাকা অন্যান্য তেলের চেয়ে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি।

এই তেলের স্বাস্থ্য উপকারিতা, অন্যান্য ব্যবহার ও ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত পড়তে থাকুন।

সরিষার তেলের উপাদান

সরিষার তেলের উপকারিতা আসে এতে থাকা উপাদানগুলোর মাধ্যমে। এই তেলের প্রায় ৬০% মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড। যার মধ্যে ৪২% ইরুসিক অ্যাসিড (erucic acid) এবং ১২% ওলিক এসিড (oleic acid) রয়েছে।

এতে প্রায় ২১% পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে, যা ৬% ওমেগা -৩ আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড এবং ১৫% ওমেগা -৬ লিনোলিক অ্যাসিড এ বিভক্ত। তাছাড়া সরিষার তেলে প্রায় ১২% স্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।

সরিষার তেলের উপকারিতা

সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি এবং এটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। নীচে এই বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণণা করছি।  

হার্ট ভাল রাখে

সরিষার তেলে থাকা মনোআনস্যাটুরেটেড ফ্যাটগুলো এক ধরণের অসম্পৃক্ত চর্বি। এগুলো বিভিন্ন উপকার করে, বিশেষকরে হার্টের। গবেষণায় দেখা যায় এই উপাদান রক্তে থাকা ট্রাইগ্লিসারাইড, শর্করার মাত্রা এবং রক্তচাপ কমাতে পারে- যেগুলো যে কোন হৃদরোগের কারণ। 

তাছাড়া মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটগুলো এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে। এলডিএল হার্টের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর এবং একে নিয়ন্ত্রনের কারণে হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি। তাই নিয়মিত এই তেলের ব্যবহার হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। 

সর্দি-কাশি কমায়

প্রাচীনকাল থেকে সরিষার তেল সর্দি, কাশি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা ছাড়াও অ্যালার্জি প্রশমিত করতে ব্যবহৃত হয়। এটি শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে বেশ ভাল কাজ করে। 

সরিষার তেলের সাথে রসুনের কয়েকটি কোয়া এবং ১ চা চামচ অজোয়াইন গরম করে বানানো একটি মিশ্রণ পায়ে এবং বুকে মালিশ করলে এটি ঠান্ডা এবং কাশি থেকে মুক্তি দেয়। সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও সরিষার তেল ইতিবাচক প্রভাব দেখাতে পারে।

ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাঙ্গাসের বৃদ্ধি রোধ করে

গবেষণায় দেখা যায় সরিষার তেলে শক্তিশালী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট রয়েছে। এটি নির্দিষ্ট ধরণের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া এবং ফাংগাসের বৃদ্ধি রোধ করতে সক্ষম।

ব্যাক্টেরিয়ার প্রজাতিগুলোর মধ্যে ইসচারসিয়া কলাই (Escherichia coli), স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) এবং ব্যাসিলাস সেরেয়াস (Bacillus cereus) অন্যতম। 

অন্যান্য টেস্ট-টিউব গবেষণায় দেখা যায় নির্দিষ্ট ধরণের ছত্রাক এবং ছাঁচের বৃদ্ধি রোধ করতে সরিষার তেলের উপকারিতা রয়েছে। তবে এই বেশিরভাগ গবেষণাগুলো টেস্ট-টিউবের মধ্যে সীমাবদ্ধ, এই ব্যাপারে আরো বিস্তারিত গবেষণা চলছে। 

লোহিত রক্তকণিকা শক্তিশালী করে

সরিষার তেল প্লাজমা, কোষের লিপিড এবং কোষের ঝিল্লির উপাদান হিসাবে বিভিন্ন জৈবিক কার্য সম্পাদনের জন্য আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় সমস্ত ফ্যাটের একটি অন্যতম উৎস। সরিষার তেল কোলেস্টেরল কমায় এবং লোহিত রক্তকণিকার ঝিল্লি গঠন উন্নত করে। 

উদ্দীপক হিসাবে কাজ করে

সরিষার তেল একটি প্রাকৃতিক উদ্দীপক যা আমাদের ঘাম গ্রন্থিগুলিকে উদ্দীপিত করার জন্য পরিচিত। যার কারণে সারা শরীরে রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত হয়। এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।

বাত এবং জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি দেয়

সরিষার তেল দিয়ে নিয়মিত ম্যাসাজ করলে জয়েন্ট এবং মাংসপেশির ব্যথা দূর হয়। আর্থ্রাইটিস রোগীরাও সরিষার তেলের সাথে ম্যাসাজের পর স্বস্তির অভিজ্ঞতা লাভ করে। ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের উপস্থিতি আর্থ্রাইটিসের কারণে সৃষ্ট কঠোরতা এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

সরিষার তেলের ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই এর সর্বোত্তম পরিসর প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ প্রদান করে এবং আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

তাছাড়া ৭% এর নীচে থাকা স্যাচুরেটেড ফ্যাট, উচ্চ পরিমাণ মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, লিনোলিক এবং লিনোলেনিক অ্যাসিডগুলোও রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সরিষার তেলের উপকারিতা রয়েছে। এই তেলে উপস্থিত আলফা-টোকোফেরোলে ভিটামিন ই এর পরিমাণ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে উপকারী প্রভাব ফেলে।

ট্রান্স ফ্যাট ইনসুলিন ব্যর্থতা এবং চর্বির উচ্চ জারণের অন্যতম প্রধান কারণ। সরিষার তেলে ট্রান্স ফ্যাটের অনুপস্থিতি ইনসুলিনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

ম্যাসাজ অয়েল হিসাবে ব্যবহার

সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করার প্রবণতা অনেক পূর্ব থেকেই চলে আসছে, বিশেষকরে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। এই তেল মালিশ করার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালন উন্নত হয় এবং শরীর গরম থাকে।

স্কিনের বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া এবং ছত্রাক এর বৃদ্ধি রোধ করে। এটি পিগমেন্টেশন কমায় এবং হালকা করে, ত্বক পরিস্কার করে। তাছাড়া প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসাবে কাজ করে।

চুলের স্বাস্থের উন্নতি করে

সরিষার তেলে রয়েছে আলফা ফ্যাটি অ্যাসিড যা আমাদের চুলকে হাইড্রেটেড ও প্রাণবন্ত রাখে। তাছাড়া চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সরিষার তেল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ এবং এ, ডি, ই এবং কে এর মতো ভিটামিনের উপস্থিতি চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খুশকি দূর করতেও সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি। 

ত্বকের জন্য উপকারি

সরিষার তেল ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিপূর্ণ। এটি ত্বকের সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা হ্রাস করে। এটি ত্বক থেকে ট্যান দূর করতেও সাহায্য করে।

ফাটা ঠোঁট মেরামতেও সরিষার তেল বিস্ময়কর কাজ করে। তাছাড়া এটি ব্রণের বিকাশ রোধ করে, ত্বক পরিস্কারও উজ্জ্বল রাখে।

সরিষার তেলের ক্ষতিকর দিক

সরিষার তেলের উপকারিতার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও রয়েছে যেগুলো সম্পর্কেও আমাদের সচেতন থাকা দরকার।

এই তেলে থাকা উরুসিক এসিড হার্টের উপর বিষাক্ত প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী প্রয়োগের ফলে ত্বকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, এমনকি ছোট থেকে বড় ফেস্কাও হতে পারে। 

সরিষার তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার রাইনাইটিসের কারণ হতে পারে। তাছাড়া গর্ভবতী মহিলাদের এই তেলের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ এতে কিছু রাসায়নিক যৌগ রয়েছে যা তাদের এবং ভ্রুণের বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ভিডিওঃ তেল খাবেন নাকি খাবেন না?

শেষ কথা

লালচে বাদামী বা অ্যাম্বার রঙের সরিষার তেলের উপকারিতা এর অসুবিধাগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। আমরা রান্না, বা ম্যাসাজ অয়েল হিসাবে বিভিন্ন প্রকার তেল ব্যবহার করি।

এগুলোর পরিবর্তে সরিষার তেলের ব্যবহার আমাদের সু-স্বাস্থ্য নিশ্চিতে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top