সাকিব আগলে রাখলেও

বোলিং বিপর্যয়ে বিশাল হার বাংলাদেশের!

চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে আজ দ্বিতীয় বারের মতো মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের হেগলি ওভালে অনুষ্ঠিত উক্ত ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ব্যাটিং করতে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার ফিন এ্যালেন এবং ডেভন কনওয়ে। ব্যাটিংয়ে নেমেই বাংলাদেশ বোলারদের উপরে চড়াও হন ফিন এ্যালেন।  তবে তার তান্ডব খুব বেশীক্ষণ চলতে দেননি শরিফুল ইসলাম। শরিফুল ইসলামের বলে ইয়াসির আলীর হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরেন ফিন এ্যালেন। ১৯ বলে ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটসম্যান। 

ফিন এ্যালেন ফিরলে ক্রিজে আসে মার্টিন গাপটিল। মার্টিনকে সঙ্গে নিয়ে চার ও ছয় এর ফুলঝুরিতে মাত্র ৩০ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ডেভন কনওয়ে। মার্টিন গাপটিল এবং ডেভন কনওয়ে ঝড়ো পার্টনারশিপে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকে কিউরা। 

শেষ পর্যন্ত তাদের পার্টনারশিপ থামায় ইবাদত হোসেন। ইবাদতের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে  নাজমুল হোসেন শান্তর হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে মার্টিন গাপটিল। ২৭ বলে ৩৪ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। এরপর কিউদের পক্ষে ব্যাটিংয়ে নামে গ্লেন ফিলিপস।

দুই উইকেট হারিয়ে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের বোলারদের দিশেহারা করে দেয় ডেভন কোনওয়ে ও গ্লেন ফিলিপস। গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে কোন বোলারই দাঁড়াতে পারছিল না। অপর প্রান্তে ডেভন কোনওয়েও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিলো গ্লেনকে। শেষ পর্যন্ত ১৭তম ওভারে তাদের জুটি ভাঙতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। সাইফউদ্দিনের শর্ট ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গেলে তা বাউন্ডারি যেতে ব্যর্থ হয় এবং আবারও শান্তর হাতে বন্দি হয়। এতে ৫ টি চার ও ৩ টি ছক্কায় ৪০ বলে ৬৪ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে বিদায় নেয় কোনওয়ে। 

কোনওয়ে বিদায় নিলেও গ্লেনের তান্ডব অব্যাহত থাকে। গ্লেনকে সঙ্গ দিতে  মার্ক চাপম্যান ক্রিজে এসে খুব দ্রুতই বিদায় নেয়। একই ওভারে চতুর্থ বলে বোল্ড আউট হয় মার্ক চাপম্যান। ৩ বলে ২ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। 

১৯ বলে হাফ সেঞ্চরি করে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলেছেন গ্লেন ফিলিপস। শেষ পর্যন্ত ২০তম ওভারে ইবাদতের বলে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন গ্যালেন ফিলিপস। ৫ টি ছক্কা ও ২ টি চারের ঝড়ো ইনিংসে ২৪ বলে ৬০ রান করেন গ্লেন ফিলিপস। 

গ্লেন ফিলিপসের ঝড়ো ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২০৮ রান। বাংলাদেশের পক্ষে দুইটি করে উইকেট শিকার করে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও ইবাদত হোসেন। একটি উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম। 

২০৯ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে মাঠে নামে বাংলাদেশ দল। ওপেনিংয়ে ক্রিজে নামে নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লিটন দাস। আস্তে ধীরে ওপেনিং শুরু করে টাইগাররা। ওপেনিংয়ে আশার আলো দেখালেও খুব দ্রুতই তা নিভে যায়। ১২ বলে ১১ রানের ইনিংস খেলে শান্ত বোল্ড আউট হলে দলীয় ২৪ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কিউদের পক্ষে প্রথম উইকেট শিকার করে এডাম মিলনে। 

আরেক ওপেনার লিটন দাস দলকে এগিয়ে নিতে থাকলেও খুব বেশি দূর নিতে পারেনি। ৬ষ্ট ওভারে মিচেল ব্রেসওয়েলের বলে মার্টিন গাপটিলের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে লিটন দাস। ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেয় লিটন।

 লিটন আউট হওয়ার পরে দলকে টানতে শুরু করে সৌম্য সরকার ও সাকিব আল হাসান। তাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে খুব দ্রুত এগোতে থাকে স্কোরবোর্ড। তবে খুব বেশীক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেনি সৌম্য।এডাম মিলনের বলে ট্রেন্ট বোল্টের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। ১৭ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে  আউট হয় সৌম্য সরকার।

এরপর এক প্রান্ত সাকিব আগলে রাখলেও তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো ছিলনা কেউ। অপর প্রান্তে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে ছিল। সাকিবকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামে আফিফ হোসেন ধ্রুব। তবে খুব বেশিক্ষণ সাকিবের সঙ্গ দিতে পারেনি। মিচেন ব্রেসওয়ের  বলে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন এই ব্যাটার। ৪ বলে মাত্র ৪ রান করে আফিফ। 

১১.৫ বলে বাংলাদেশ দলের দলীয় সংগ্রহ ১০০রানে ৪ উইকেট। আফিফ এর পর উইকেট কিপার নুরুল হাসান সোহান ব্যাটিংয়ে নামে। তবে দলীয় সংগ্রহতে তেমন আবদান রাখতে পারেনি।  এছাড়া ইয়াসির আলী রাব্বিও একই ভাবে উইকেট হারায়। 

অন্য প্রান্ত থেকে সাপোর্ট না পেলেও ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে সাকিব আল হাসান। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে টিম সাউদির বলে ডেভন কোনওয়ের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে সাকিব আল হাসান। ৪৪ বলে ৭০ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে আউট হয় এই অলরাউন্ডার। ৮ টা চারসহ ৯ টি বাউন্ডারি ছিল তার ঝুলিতে। 

সাকিবের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ১৬০ রান। এতে ৪৮ রানের বিশাল জয় পায় কিউরা। কিউদের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট নেয় এডাম মিলনে। দুইটি করে উইকেট নিয়েছেন টিম সাউদি ও মিচেল ব্রেসওয়েল। ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন গ্লেন ফিলিপস।

সংক্ষিপ্ত স্কোর 

নিউজিল্যান্ড – ২০৮/৫ (২০) 

ডেভন কোনওয়ে ৬৪

গ্লেন ফিলিপস ৬০ 

মার্টিন গাপটিল ৩৪

মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ২/৩৭

ইবাদত হোসেন ২/৪০

বাংলাদেশ – ১৬০/৭ (২০) 

সাকিব আল হাসান ৭০

লিটন দাস ২৩

সৌম্য সরকার ২৩

এডাম মিলনে ৩/২৪

টিম সাউদি ২/৩৬

মিচেল ব্রেসওয়েল ২/৩৯

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top