হাই প্রেসার কমানোর উপায়

তাৎক্ষণিকভাবে হাই প্রেসার কমানোর ২৪টি উপায় ও প্রয়োজনীয় তথ্য!

হাই প্রেসার কমানোর উপায় : হাই প্রেসার একটি নীরব ঘাতকের নাম। দিন দিন এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষও এই রোগে ভুগছেন। তাই আমাদের উচিত হাই প্রেসার কমানোর উপায় সম্পর্কে অবগত হওয়া। হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন-যাপন করা সম্ভব। 

হাই প্রেসার কমানোর উপায় ও প্রয়োজনীয় তথ্য

মূলত হাই প্রেসার হবার আগেই আমাদের সচেতন হওয়া জরুরি। তবে কারো হয়ে গেলে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন-যাপন করা সম্ভব। হাই প্রেসার কমানোর ও নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়গুলো নীচে তুলে ধরা হলো: 

ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করা

ধূমপান সকল রোগেরই ঘাতক। তাই আপনাকে সবার পূর্বে ধূমপান পরিহার করতে হবে। আবার যদি কারও মদ্যপানের অভ্যাস থাকে তবে তা আরও ভয়াবহ। এ থেকে নানা রোগের সৃষ্টি হয়। তাই হাই প্রেসার কমাতে এ দুটো জিনিস পরিহার অত্যাবশ্যকীয়। 

তৈলাক্ত খাবারকে না বলুন

তৈলাক্ত খাবার আপনার শরীরে নানা রোগ সৃষ্টির কারণ। অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার নিয়মিত খেলে শরীরে বাসা বাঁধে নানা রোগ। রক্তে বাড়তে থাকে ভয়ানক কোলেস্টেরল। এসব তৈলাক্ত খাবার আপনার হাই প্রেশার বাড়াতেও সহায়ক। সেজন্য এসব তেল-চর্বিযুক্ত খাবারকে না বলুন।

ওজন নিয়ন্ত্রণ

হাই প্রেসার কমানোর উপায়গুলোর মধ্যে অতিরিক্ত ওজন কমানো বা নিয়ন্ত্রণ করা অন্যতম একটি উপায়। ওজন বৃদ্ধি অনেক রোগ ডেকে আনে। ওজন বৃদ্ধি বিভিন্ন কারণেই হয়ে থাকে। আমাদের উচিত সেই কারণগুলো খুঁজে বের করা। ওজন নিয়ন্ত্রণ অনেক সমস্যার সমাধানও করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে আপনি হাই প্রেসারকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। 

কায়িক পরিশ্রম করুন

কায়িক পরিশ্রম শরীরের জন্য অন্তত জরুরি। কায়িক পরিশ্রম না করার কারণে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়ে। প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে না। কায়িক পরিশ্রম শরীরকে নিজস্ব ছন্দে ফিরিয়ে আনে। তাই যতটা সম্ভব নিজের কাজগুলো নিজে করুন যেমন- হাঁটা পথ হলে হেঁটে যান, রিক্সায় যাওয়া যায় এমন দূরত্বে হেঁটে যেতে হবে। এতে শরীর ভালো থাকবে। 

নিয়মিত ব্যায়াম

যাদের কায়িক পরিশ্রমের সুযোগ নেই তাদের নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। এতে হৃদপিণ্ড সবল থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ভালো থাকার সাথে সাথে হাই প্রেসারও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। হালকা ব্যায়াম, সাইকেলিং, হাঁটা এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

বসে থাকা থেকে বিরতি নিন

যারা ডেস্ক জব করেন তারা স্থূলতা, হাই প্রেশার, কোলেস্টেরল সহ আরও সমস্যায় আক্রান্ত হন। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে মেদ বৃদ্ধি পায়। তাই বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘ সময়ে বসে থাকা থেকে বিরতি নেবার পরামর্শ দিচ্ছেন। কাজের ফাঁকে অর্থাৎ ১-২ ঘন্টা পরপর ৫ মিনিটের একটা ব্রেক নেওয়া ভালো।

মানসিক চাপ কমিয়ে ফেলুন

মানসিক চাপের কারণে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। মানসিক চাপ আমাদের শরীরের পেশিগুলোকেও চাপের মুখে ফেলে। যে কারণে বেড়ে যেতে পারে আপনার রক্তচাপ। তাই যতটা সম্ভব মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। যেকোনো সমস্যায় ঠান্ডা মাথায় সমাধান খুঁজে বের করুন। 

মনকে সতেজ রাখুন

মানসিক চাপ বা স্ট্রেস শুধু কমালেই হবে না। এক্ষেত্রে মনকে সতেজ রাখাও জরুরি। মন ভালো থাকলে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবেও সুস্থ থাকবেন। যা হাই প্রেশার নিয়ন্ত্রণেও প্রযোজ্য। এজন্য মনকে সবসময় সতেজ রাখুন। 

নিয়মিত ওষুধ সেবন

মূলত হাই প্রেশার হবার আগে আপনার উচিত সচেতন থাকা। যেনো হাই প্রেশার জাতীয় সমস্যায় আপনাকো না পড়তে হয়। কিন্তু আপনি যদি হাই প্রেশারে আক্রান্ত হন তবে আপনাকে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শে থাকতে হবে৷ আপনার যদি ওষুধের প্রয়োজন হয় তবে আপনাকে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হবে। এক্ষেত্রে সচেতন থাকুন।

হাই প্রেসার এর লক্ষণ

তবে হাই প্রেসারের নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ সেভাবে প্রকাশ পায় না। তবে কিছু কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় এ সকল লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা করা উচিত নয়। যেমন- 

  • উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের মাথাব্যথা খুবই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক। সহজে এই মাথাব্যথা কমে না। 
  • উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের কারণে অনেক সময় বুকে ব্যথা করে। যেমন- বুক ভারী হওয়া, চেপে যাওয়া, বুকে চাপ, বুকে ব্যথা এ ধরণের হয়ে থাকে। 
  • হাই প্রেসার অনেক সময় দৃষ্টিশক্তিকে প্রভাবিত করে। ফলে চোখের রক্তনালিগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। 
  • উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের রোগীরা ক্লান্তি অনুভব করেন। এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। 
  • হাই প্রেসারের আরও একটি লক্ষণ হলো মাথা ঘোরানো এবং মাথা গরম হয়ে যাওয়া৷ এই লক্ষণ দেখা দিলে আপনাকে হাই প্রেশারের বিষয়টিতে নজর দিতে হবে।
  • প্রেসার বেড়ে গেলে অনেকেই বলে থাকেন ঘাড়ে ব্যথা হচ্ছে বা ঘাড় ফেটে যাচ্ছে। এটি হাই প্রেশার বেড়ে যাওয়ার খুবই সাধারণ একটি লক্ষণ। 
  • হাই প্রেসার বেড়ে গেলে অনেক সময় বমি বমি ভাব হতে পারে বা বমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অতিরিক্ত বমি হলে প্রয়োজনে হাসপাতালে যাবারও পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। 
  • উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসারের আরও একটি লক্ষণ হলো অস্থিরতা। শরীরের মধ্যে সব সময় অস্থিরতাবোধ কাজ করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে না থাকলে।
  • অনেকেই অল্পে রেগে যান এ রোগে। সবসময় মেজাজ খিটখিটে থাকে।
  • প্রেসার বেড়ে গেলে শরীরে কাঁপুনি আসে। 

হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত

হাই প্রেসার কমাতে হলে আপনাকে অবশ্যই খাবারের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ খাবার অনেক রোগ সৃষ্টির কারণ। উচ্চ রক্তচাপ বা হাই প্রেসার কমানোর জন্য প্রথমেই আপনাকে লবণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। কারণ লবণের সোডিয়াম রক্তের জলীয় অংশ বাড়িয়ে দেয়, এর ফলে রক্তের আয়তন ও রক্তচাপও বেড়ে যায়। 

অনেকেই পাতে অতিরিক্ত কাঁচা লবণ খান আবার অনেকে লবণ ভেজে খান।  ভাজা লবণ কাঁচা লবণ থেকে ভালো বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু কাঁচা লবণ হোক বা ভাজা লবণ, উভয়ই হাই প্রেসার বাড়িয়ে দেয়। তাই লবণ গ্রহণে লাগাম দিন।

আবার অতিরিক্ত চিনি, তেল, মসলা, মাখন, চর্বি জাতীয় খাবার, ফাস্ট ফুড, লাল মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এগুলো হাই প্রেসার, ওজন, কোলেস্টোরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। সেজন্য এগুলো বাদ দেওয়াই ভালো আর খেলেও খুবই পরিমিত৷ 

নিয়মিত স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন। মাছ, অল্প পরিমাণে মুরগীর মাংস, শাক-সবজি, ডিমের সাদা অংশ, বাদাম, ফল, পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, পানি, ডাল প্রভৃতি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। রান্নায় পরিমিত তেল ও লবণ ব্যবহার করুন। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ রক্তচাপ কমানোর উপায়

উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে গেলে অস্থিরতা কাজ করবে এটা স্বাভাবিক। তবে সর্বপ্রথম আপনাকে জরুরি চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। এম্বুলেন্স কল করুন বা নিজে থেকে কারও সাহায্য নিয়ে হাসপাতালে যান ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  

আর এম্বুলেন্স না আসা পর্যন্ত বা ডাক্তার না দেখানো পর্যন্ত উত্তেজিত না হয়ে আপনাকে যতটা সম্ভব শান্ত থাকতে হবে৷ বাসায় থাকা অবস্থায় সবচেয়ে উত্তম হলো সমান্তরালভাবে শুয়ে থাকা। এছাড়া জরুরি সেবার জন্য অপেক্ষা করুন। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

উপসংহার

যাদের হাই প্রেসার আছে তাদের নিয়মিত প্রেসার মাপতে হবে। আমাদের দেখানো হাই প্রেসার কমানোর উপায় অনুসরণ করে আপনি এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান। অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হাই প্রেসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলো। তাই সচেতন থাকুন ও সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন করুন এবং পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top