হাশিম আমলা

হাশিম আমলা এ ট্রু মুসলিম

 

হাশিম আমলা -প্রকৃত ধর্মভীরু বলতে যা বুঝায়, যাকে দেখলে শ্রদ্ধা জাগে অন্তরে, যার আছে ইসলামের প্রতি প্রবল বিশ্বাস যিনি রোযা রেখেই বীরের বেশে মাঠে ক্রিকেট খেলতেন তিনি আর কেউ নন তিনি হলেন দক্ষিণ আফ্রিকান হাশিম আমলা।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত প্লেয়ার হাশিম আমলা। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম একজন সেরা ব্যাটসম্যান। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ওপেনারদের একজনও হলেন হাশিম আমলা।

পরিচয়- হাশিম আমলা

হাশিম আমলা

হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে ১৯৮৩ সালের ৩১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। আমলার জন্ম ডারবান থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে টোনগাত নামের ভারতীয় অধ্যুষিত শহরে। তিনি হ্যাশ নামেও পরিচিত। তার উচ্চতা ৬ ফিট। হাশিম আমলারা তিন ভাই বোন। তার বড় ভাই আহমেদ আমলাও ক্রিকেটার। কিন্তু তিনি কখনই দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে সুযোগ পাননি। তাদের একমাত্র বোন ডাক্তার। হাশিম আমলা ছিলেন একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেটার। কিন্তু তিনি শিকড়কে কোনভাবেই ভুলে যান নি। তিনি বলতে পারেন গুজরাটিও ভাষা। তিনি বলেন” মাই ব্লাড ইস গ্রীন”। আমলা বলেন আমি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হলেও আমি একজন দক্ষিণ আফ্রিকান। অর্থাৎ আমলা তো বটেই তার পিতা-মাতাও জন্মগ্রহণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকায় ।

হাশিম আমলার দাদা-দাদীরা এসেছেন ভারতের গুজরাট থেকে। আমলার লেখাপড়া শুরু হয় এক ওয়ালেসিয়ান স্কুলে। তার জীবনটা নতুন বাঁক নেয় ডারবান হাইস্কুলে ভর্তির পর। আর এই স্কুলেই বিকশিত হয় মূলত আমলার ক্রিকেট প্রতিভা। তারপর তিনি অনেক ভালো খেলতে শুরু করলেন। তারপর আমলা ডাকপান দক্ষিণ আফ্রিকার অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলে। তার নেতৃত্বেই ২০০২ সালে অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপে ফাইনালে খেলে প্রোটিয়ারা।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার- ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর

২০০৪ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক হয় হাশিম আমলার। ২০০৪ সালে কলকাতায় ভারতের বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলে তিনি। তখন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার টপ অর্ডারের ভরসার প্রতীক ছিলেন। হাশিম আমলাই একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত হয়েও প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলে ডাক পান। হাশিম আমলার ২০০৮ সালে ওয়ানডে অভিষেক ঘটে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে। ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর

২০০৮ সালে ২০ আগস্ট ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক হয়। হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১২৪ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেন। হাশিম আমলার টেস্ট ইতিহাসে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটের সর্বশেষ খবর তিনিই দক্ষিণ আফ্রিকার একমাত্র ব্যাটসম্যান যিনি টেস্টে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন । টেস্টে তার ইনিংস সেরা স্কোর ৩১১। তার টেস্টে গড় ৪৬.৬১ হাশিম আমলার ওয়ানডে রেকর্ডগুলোছিল অসাধারণ এবং অবিশ্বাস্য। হাশিম আমলার দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৮১ টি ওডিআই ম্যাচ খেলেন। তার দখলে রয়েছে ওডিআই ক্রিকেটে দ্রুততম ২০০০,৩০০০,৪০০০, ৫০০০,৬০০০ ও ৭০০০ রানের রেকর্ড।

হাশিম আমলা

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের অন্যতম ভরসার প্রতীক ছিলেন। তিনি ওডিআইতে সেঞ্চুরি করেছেন সাতাশটি এবং ফিফটি করেছেন ৩৯ টি। তার ওয়ানডে গড় ছিল ৪৯.৪ এবং স্ট্রাইকরেট ৮৮.৪। হাশিম আমলা দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টি-২০ তে মোট ৮৮ টি ম্যাচ খেলেন।

তিনি টি-টোয়েন্টিতে ফিফটি করেন ৮ টি। তার টি-টোয়েন্টিতে গড় ৩৩.৬১। তিনি ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগও খেলেন। তিনি আইপিএলে ১৬ টি ম্যাচ খেলেন। আইপিএল এ দুটি সেঞ্চুরি ও তিনটি ফিফটি করেন। হাশিম আমলা ২০১৩ সালে উইজভেন ক্রিকেটার অফ দা ইয়ার পুরস্কার পান।

তিনি ছিলেন খুবই ধর্মভীরু। তিনি ছিলেন লম্বা দাঁড়ির একজন মনোযোগী ক্রিকেটার। ক্রিকেটের মত ধর্ম টাও তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি একজন ইনোসেন্ট প্লেয়ার। তিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন।

রমজান মাসের যে কয়জন মুসলিম ক্রিকেটার রোজা রেখে ক্রিকেট খেলেন তার মধ্যে হাশিম আমলা অন্যতম একজন। তিনি ক্রিকেটের ২২ গজের বাইরেও ছিলেন আদর্শ ও ধর্মপরায়ন। তিনি একজন ক্রিকেটার তো বটেই বরং একজন সাধারণ মানুষের জন্যও আদর্শ। কারণ হাশিম আমলার অনুপ্রেরণাতেই দাড়ি রেখেছেন বিশ্ব বিখ্যাত আম্পেয়ার আলিমদার ও দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিন বোলার ইমরান তাহির।

হাশিম আমলা ছিলেন অনেক শান্ত এবং ভদ্র একজন ক্রিকেটার। তার সহকর্মীরা কখনোই তাকে কোনদিন উত্তেজিত হতে দেখেনি। হাশিম আমলার জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে মুসলিম বিশ্বের

***লিখেছেন – তারেকুর রাহমান ভূঁইয়া***

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top