ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট

ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট; ওজন কমিয়ে ফেলুন খুব সহজেই

আপনার শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে খুবই চিন্তিত? আসলে ওজনাধিক্য বা অতিরিক্ত ওজন এখন সারা বিশ্বে-ই একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনার এই দুশ্চিন্তার সমাধান পেতে পারেন ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট ফলো করে। 

ভুল ডায়েট চার্ট আপনার স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে। একজাতীয় খাবার একেবারের জন্য  সরিয়ে না দিয়ে পরিমাণে কম হলেও সব পুষ্টি উপাদান রাখার চেষ্টা করতে হবে ডায়েট প্ল্যানে। 

নিন্মোক্ত ডায়েট চার্টগুলো অভিজ্ঞ ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে তৈরি। স্বাস্থ্য ঝুঁকিমুক্ত রেখে ওজন কমানোর টিপস জানতে বিস্তারিত পড়ুন। 

ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট

ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো ডায়েট মেইনটেইন করে চলা । তবে আপনি কি ধরনের ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করবেন সেটা নির্ভর করে আপনি কতটুকু ওজন কমাতে চান তার উপরে । এইখানে ৫ কেজি, ১০ কেজি ও ১৫ কেজি ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ডায়েট প্ল্যান কেমন হওয়া উচিত তা তুলে ধরা হয়েছে । আপনি আপনার ওজন কত কমাতে চান তার উপর ভিত্তি করে ডায়েট চার্ট অনুসরণ করতে পারেন । 

 মাসে ১৫ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

এক মাসের মধ্যেই ১৫ কেজি ওজন কমানো একটা বিশাল পরিবর্তন। তবে এভাবে খাদ্যতালিকা প্রস্তুত করলে সঠিকভাবে ওজন হ্রাস সম্ভব।

মাসে ১৫ কেজি ওজন কমাতে সারাদিনের খাবারের তালিকা –

ম্যাজিক স্লিমিং টি কিনুন আমাদের শপ থেকে…

সকালের নাস্তা: খালি পেটে এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।মিক্সড সবজি ডিম অমলেট ১টি গ্রিন টি ১কাপ
মধ্য বেলার নাস্তা: যেকোনো মৌসুমী ফল ১বাটি 
দুপুরের খাবার: ভাত হাফ কাপকম তেলে রান্না করা যেকোনো শাক/ সবজিমাছ ১পিস
বিকালের নাস্তা: পেস্তা বাদাম ৮-১০ টিগ্রিন টি ১কাপ
রাতের খাবার: ভেজিটেবল স্যুপ ১বাটি /হলুদ দুধ ১গ্লাস

মাসে ১০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট 

আপনি কি এক মাসেই ১০ কেজি ওজন কমাতে চাচ্ছেন ? এক মাসেই ১০ কেজি ওজন কমানোর জন্য আপনার ডায়েট প্ল্যান যেমন হওয়া দরকার –

সকালের নাস্তা: ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ ১টিবা ২টা রুটি সাথে কম তেলে ভাজা সবজিওটস ১ বাটিমৌসুমী ফল
মধ্য বেলার নাস্তা: সালাদ ১বাটি 
দুপুরের খাবার: আটার রুটি ২-৩ টি যেকোনো মৌসুমী সবজি ১বাটি (আলু ছাড়া)ডাল ১বাটি
বিকালের নাস্তা: কলা ১টি /খেজুর ৪/৫ টি ।
রাতের খাবার: ভেজিটেবল স্যুপ ১বাটি /রান্না করা মিক্সড সবজি ১বাটি 

মাসে ৫ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট 

এক মাসে ৫ কেজি ওজন কমালে আপনার শরীরের উপর তেমন চাপ পড়বে না । এক মাসে ৫ কেজি ওজন কমাতে সারাদিনের খাবারের তালিকা –

সকালের নাস্তা: রুটি ২টিসিদ্ধ ডিমের সাদা অংশ ১টিভেজিটেবল স্যুপ ১বাটিমৌসুমী ফল ১বাটি
মধ্যবেলার নাস্তা: গ্রিন টি ১কাপযেকোনো মৌসুমী ফল
দুপুরের খাবার: রুটি ২টি / ভাত ১কাপসবজি ১বাটি ডাল ১ কাপ
বিকালের খাবার: গ্রিন টি ১কাপ বিস্কিট ২টি পেস্তা বাদাম ৭/৮ টি
রাতের খাবার: রুটি ২টি / ভাত ১কাপভেজিটেবল সালাদ ১কাপমিক্সড ভেজিটেবল ১কাপ 

ডায়েট শুরুর পূর্বে করণীয়

যে কেউ হুট করে চাইলেই ডায়েট শুরু করে দিতে পারে না। সবার শরীরের অবস্থা একই থাকে না। প্রথমে শারীরিক কিছু টেস্ট করিয়ে নেওয়া জরুরি। যেমন ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, হিমোগ্লোবিন টেস্ট করিয়ে নেওয়া জরুরি। তাছাড়া কিডনি এবং লিভার সুস্থ আছে নাকি এটাও টেস্ট করে নেওয়া জরুরি। শরীরে এই ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে সেক্ষেত্রে ডায়েট প্ল্যান ভিন্ন হবে।

মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়

ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে বেশি । ছেলেদের তুলনায় কিছুটা কম পরিশ্রমের ফলে মেয়েদের ওজন বৃদ্ধি পায় দ্রুত। তাছাড়া অনেকে সারাদিন শুয়ে বসে দিন পার করেন। এইসব কারণে ও কিছু হরমোনাল কারণে ওজন বৃদ্ধি পায়। মেয়েদের দ্রুত ওজন হ্রাসের জন্য নিন্মোক্ত বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি। 

  • মিষ্টি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে । 
  • আঁশযুক্ত খাবার ও শাক সবজি খেতে হবে ।
  • সবসময় অল্প কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন ।
  • একসাথে বেশি খাবার খাবেন না ।
  • বেশি সময় ধরে না খেয়ে থাকবেন না । 
  • বেশি বেশি পানি পান করবেন । 
  • অপর্যাপ্ত ঘুম বা অতিরিক্ত ওজন আপনার ওজন বাড়িয়ে ফেলতে পারে । তাই প্রতিদিন কমপক্ষে ছয় থেকে আট ঘণ্টা ঘুমান ।
  • প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন । 
  • সারাদিন শুয়ে বসে না থেকে কিছু টুকটাক কাজ করুন । 

আপনি যদি ডায়েট প্ল্যান অনুসরণ করে সারাদিন শুয়ে বসেই কাটিয়ে দেন এবং বিভিন্ন জাঙ্ক ফুডের অভ্যাস না ছাড়েন , তাহলে এই ডায়েট আপনার কোনো কাজেই আসবে না । তাই ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট অনুসরণ করার পাশাপাশি উপরিউক্ত বিষয়গুলো মেনে চলুন । 

ডায়েটের পাশাপাশি ব্যায়াম

ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট ফলো করার পাশাপাশি ব্যায়াম ওজন লাঘবে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । পুশ আপ ও স্কোয়াট ব্যায়াম ওজন কমাতে সাহায্য করে । এই দুটি ব্যায়ামের সুবিধা হচ্ছে এই দুটি ব্যায়াম-ই ফ্রী হ্যান্ড এক্সারসাইজ । অর্থাৎ এই ব্যায়ামগুলো করতে কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না । তাই ওজন কমাতে প্রতিদিন সকালে এই দুটো ব্যায়াম করতে পারেন । আরেকটি সহজলভ্য তবে কার্যকরী ব্যায়াম হচ্ছে স্কিপিং। 

ওজন কমাতে প্রয়োজনীয় টিপস

আপনার ওজন যেমনই হোক বা আপনার ওজন যতই কমাতে চান না কেন, কিছু সাধারণ টিপস আপনার এই মিশনে সাহায্য করতে পারে । আসুন জেনে নিই ওজন কমানোর কিছু সাধারণ ও প্রয়োজনীয় টিপস: 

  • ওজন কমানোর জন্য অবশ্যই স্টার্চ জাতীয় খাবার (ভাত, আলু, ভুট্টা ইত্যাদি) যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে ।
  •  আঁশযুক্ত খাবার বা আঁশ যুক্ত শর্করা ( শাক, সবজি, ডাল, ঢেঁকি ছাটা চাল , গমের রুটি ইত্যাদি ) 
  • সকালে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি উঠার চেষ্টা করুন । 
  • ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস জিরা পানি পান করুন । জিরা পানি ওজন হ্রাসে খুবই উপকারী পানীয় । 
  • অথবা এক গ্লাস গরম পানিতে লেবু ও এক চামচ মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে পান করুন। 
  • প্রতিদিন সকালে কমপক্ষে ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন ।
  • ফাস্ট ফুড একেবারেই বাদ দিতে হবে ।
  • সারাদিন শুয়ে বসে থাকার অভ্যাস বদলাতে হবে ।
  • বেশি বেশি পানি পান করুন । 
  • বিভিন্ন সফট ড্রিংকস ও কোল্ড ড্রিংকস এর বদলে ডাবের পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন ।

আপনি আপনার ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট যেটা-ই ফলো করেন না কেন, চেষ্টা করুন চিনি একেবারেই পরিহার করার । এছাড়াও আরও যা পরিহার করা উচিত –

  • তেলে ভাজা পোড়া খাবার 
  • প্রসেসড ফুড 
  • প্যাকেটজাত খাবার (যেমন : চিপস)
  • অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার ।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে আপনার অবশ্যই এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত । 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ডায়েটের ক্ষেত্রে কিছু ভুল

ডায়েট অনুসরণ করার ক্ষেত্রে আমরা কিছু ভুল সবসময় করে থাকি। যেমন:

  • কার্বোহাইড্রেট একেবারে বন্ধ করে দেওয়া। যেটা একেবারে অনুচিত।
  • বারবার ওজন মাপা। যেটা মানসিক বিষন্নতা তৈরি করে ।
  • কিছু খাবার একেবারে বন্ধ করে দেওয়া (যেমন: তেল; তেল স্কিন এবং বোনস এর জন্য জরুরি)
  • অনেক বেশি গ্রিন টি বা বাদাম খাওয়া। মনে রাখতে হবে অতিরিক্ত কিছুই ভালো নয়।

মাসে কতটুকু ওজন কমানো আদর্শ?

ওজন হ্রাসের আদর্শ একটি মাপকাঠি রয়েছে। যেই মাপে ওজন কমানো স্বাস্থ্যসম্মত । বিশেষজ্ঞরা এই মাপেই ওজন কমানোকে প্রাধান্য দেয়। তারা বলে, সপ্তাহে প্রায় ০.৫ কি:গ্রা ওজন কমানো আদর্শ। অর্থাৎ মাসিক হিসাবে ২ কেজি ওজন কমানো স্বাস্থ্যসম্মত। আপনি যদি মাসে দেড় থেকে আড়াই কেজি কমাতে চান, সেটিও আদর্শ বলে বিবেচিত। এর চেয়ে বেশি ওজন হ্রাসের জন্য ডায়েট করাকে ক্র্যাশ ডায়েট বলে। 

পরিশেষে

এটা বলা বাহুল্য যে, প্ল্যান অনুযায়ী ডায়েট চার্ট ফলো করার চেষ্টা করতে হবে। যেকোনো ওজন অনুযায়ী ডায়েট চার্ট ফলো করেন না কেনো, হুট করে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। হঠাৎ ডায়েট ছেড়ে দিলে স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব পরতে পারে। মনে রাখতে হবে, সঠিক খাদ্যাভ্যাস সঠিক ওজনের চাবিকাঠি। 

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top