কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয় বিস্তারিত তথ্য!

আমাদের মুখে কোন না কোন কারণে ঘা হয়ে থাকে। সাধারণত কোন কারণে ঠোঁট, গলা, জিভ বা তালুতে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তাকে মুখের ঘা বলা যেতে পারে। ভয়ানক ব্যাপার হলো, মুখের ঘা দীর্ঘস্থায়ী হলে মারাত্মক ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।

মুখে ঘা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কী কারণে মুখে ঘা হয় তা জানলে, মুখের ঘা প্রতিরোধ করা সম্ভব। তাই আমাদের জানতে হবে কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়। তাহলে আসুন জেনে নিই বিস্তারিত। 

Table of Contents

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয় :

মুখের ঘা হওয়ার জন্য অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে অন্যতম হলো ভিটামিনের অভাব। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয় ভিটামিন বি১২ এর অভাবে মুখে ঘা হয়। 

এছাড়াও ভিটামিন বি২(VITAMIN B2), রিবোফ্লাভিন, আয়রন(IRON), ফলিক এসিড(FOLIC ACID), জিংক(ZINC) এর অভাবে মুখে ঘা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় ভিটামিন সি এর অভাবে স্কার্ভি রোগে দাঁতের মাড়িতে ঘা হয় ও রক্তক্ষরণ হয়।

কোন কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে কী ধরনের ঘা হয় এবং কী খেলে সেসব ভিটামিনের চাহিদা পূরণ হয় তা সম্পর্কে জানুন বিস্তারিত: 

ভিটামিন ‘বি’ ও ভিটামিন বি১২ এর অভাবে মুখ ও জিহ্বায় যেসকল সমস্যা হয় সেগুলো হলো- 

১. জিহ্বায় প্রদাহ বা গ্লসাইটিস। 

২. অ্যংগুলার স্টোমাটাইটিস বা ঠোঁটের কোনায় ঘা। 

৩. বার বার মুখের আলসার। 

৪. ওরাল ক্যান্ডিডোসিস। 

৫. জিহ্বায় ক্ষত। 

৬. মুখের মিউকাস মেমব্রেন ফ্যাকাসে হয়ে যায়। 

ভিটামিন বি১২ অভাব পূরণে যেসকল খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন:

১. ছোলা

২. চর্বি ছাড়া মাংস

৩. দই

৪. পালংশাক

ভিটামিন ‘বি২’ এর অভাবজনিত মুখের সমস্যা:

১. মুখের কোনায় ঘা বা অ্যাংগুলার চিলাইটিস। 

২. মুখ ও জিহ্বার আবরণের প্রদাহ

৩.মুখের আলসার। 

৪. ফাটলযুক্ত লাল ঠোঁট। 

৫. এট্রফিক ফিলিফরম প্যাপিলা। 

যেসব খাবার ‘বি২’ এর অভাব দূর করে :

১. ভুট্টা

২. ডিম

৩. দুগ্ধজাত পণ্য

৪. মাছ

৫. শিম

৬. বাদাম

ভিটামিন ‘বি৩’ বা নিয়াসিন এর অভাবজনিত  সমস্যাগুলো হলো: 

১. লাল ও ব্যথাযুক্ত মুখের মিউকোসা। 

২. বেশী লালা নিঃসরণ। 

৩. ইন্টারডেন্টাল প্যাপিলার ব্যাথা এবং আলসার। 

৪. অ্যাংগুলার চিলাইটিস বা ঠোঁটের কোনায় ঘা। 

যেসব খাবারের মিলবে ভিটামিন ‘বি৩’ সেগুলো হলো: 

১. সামুদ্রিক মাছ

২. মটরশুঁটি 

৩. মাশরুম 

৪. চিনাবাদাম 

ভিটামিন ‘বি৬’ বা পাইরিডক্সিন এর অভাবজনিত  মুখে যেসব ঘা হয়: 

১. চিলাইটিস বা ঠোঁটের প্রদাহ। 

২. জিহ্বার প্রদাহ হতে পারে। 

৩. মুখের আলসার। 

৪. জিহ্বায় ফোলাভাব। 

ভিটামিন ‘বি৬’ অভাব দূর করতে যেসকল খাবার খেতে পারেন: 

১. দুধ

২. কলা

৩. গাজর

৪. মুরগির কলিজা

ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাবজনিত সমস্যা : ভিটামিন ডি এর অভাবে কি হয়

ভিটামিন ‘ডি’ ক্যালসিয়ামের সাথে কাজ করে হাড়ের মান ও শক্তি বজায় রাখে। শরীরে ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব হলে মুখের চোয়ালের ফ্রাকচারের ঝুকি বেড়ে যায়। এছাড়াও পেরিওডেন্টাল রোগ হতে পারে।

ছোট বাচ্চার ভিটামিন ‘ডি’ এর অভাব হলে তা দাঁতের গঠনে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। দাঁত দেরীতে উঠে। দাঁতের এনামেলে ত্রুটি দেখা দেয়। এবং এনামেলে ক্ষয় দেখা যায়। 

যেসকল খাবারে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় তা হলো : ভিটামিন ডি বেশি খেলে কি হয়

১. ডিমের কুসুম 

২. দই

৩. কমলালেবু 

৪. মাছের তেল

৫. সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি

ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত সমস্যা: 

ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবে মুখের ঘা বা আলসার দেরিতে শুকায়। 

যেসকল খাবার খেলে ভিটামিন এ অভাব হয় না-

১. কুমড়ো 

২. পাকা পেঁপে 

৩. মাখন

৪. মাছ

৫. মাংস

ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবজনিত সমস্যা : ভিটামিন সি এর অভাবে কি হয়

১. মাড়ি ফুলে যেতে পারে। 

২. মাড়ির রং পরিবর্তিত হয়। 

৩. দাঁত ধীরে ধীরে নড়ে যেতে পারে।

৪. পেরিওডেন্টাইটিস হয়ে দাঁত পড়ে যেতে পারে। 

যেসব খাবার খেলে ভিটামিন ‘সি’ অভাব থেকে দূর হয় সেগুলো হলো-

১. লেবু

২. কমলালেবু 

৩. পেয়ারা 

৪. ক্যাপসিকাম

ভিটামিন ‘কে’ এর অভাবজনিত  সমস্যা: 

১. মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে, বিশেষ করে দাঁত ব্রাশ করার সময়। 

২. দাঁত তোলার পর রক্ত জমাট বাঁধতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। 

৩. মুখে ক্ষত বা ঘা হলে আক্রান্ত স্থানে রক্তপাত হতে পারে।

যেসকল খাবার খেলে ভিটামিন ‘কে’অভাব দেখা যায় না তা হলো-

১. সবুজ শাক-সবজি

২. মুরগির মাংস

৩. সোয়াবীন তেল

৪. দুগ্ধজাত 

আয়রণের অভাবজনিত সমস্যা : কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয়

১. মুখ ও জিহ্বার জ্বালাপোড়া। 

২. মুখের ছত্রাক সংক্রমন। 

৩. জিহ্বা লাল এবং ফুলে যেতে পারে। 

৪. মুখের অভ্যন্তরে ঘা এবং টিস্যু ফ্যাকাসে বর্ণ ধারণ করতে পারে। 

৫. মুখের স্বাদ নষ্ট হতে পারে।

যেসকল খাবার খেলে আয়রণের অভাব দূর হবে তা হলো-

১. ডালিম

২. আপেল

৩. মাছ

৪. কলিজা

মুখে ঘা হলে করণীয়

বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় দুই শতাধিক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশ পায় মুখে ঘা এর মাধ্যমে। কিন্তু আমরা এই মুখের ঘা সমস্যাকে খুব সাধারণভাবে দেখে থাকি। তবে এই বিষয়ে অবশ্যই গুরুত্ব দেয়া উচিত। আসুন জেনে নিই মুখে ঘা হলে করণীয় কী

যষ্টিমধু 

মুখের ঘা দূর করতে যষ্টিমধু বেশ কার্যকরী উপাদান। এক টেবিল চামচ পরিমাণ যষ্টিমধু দুই কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। তারপর এটি দিয়ে দিনে কয়েকবার কুলি করুন। মুখের ঘা থেকে কিছুটা হলেও উপকার পাবেন।

অ্যালোভেরা

অ্যালোভেরা জেল বা রস মুখের ঘা কমিয়ে দেয়। অ্যালোভেরা জেল রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপ্টিক উপাদান। যার অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফিংগাল, অ্যান্টিভাইরাল উপাদান মুখের ঘা কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই মুখে ঘা হলে আক্রান্তে অ্যালোভেরা জেল বা রস লাগাতে পারেন।

নারিকেল দুধ

নারিকেল দুধ মুখের ঘা কমিয়ে থাকে। মুখে ঘা হলে এক টেবিল চামচ নারিকেল দুধের সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি দিনে তিন থেকে চারবার ঘায়ের স্থানে লাগান। এতে মুখের ঘায়ের ক্ষত দ্রুত সেরে যাবে।

তুলসি

মুখে ঘা হলে কয়েকটি তুলসি পাতা পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এরপর এই পানি পান করুন। এভাবে দিনে তিন থেকে চারবার তুলসি পানি পান করতে পারেন। তুলসি পানি দ্রুত মুখের ঘা প্রতিরোধ করবে। 

লবণ-পানি

লবণ-পানি মুখের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। মুখে ঘা হলে লবণ-পানি কুলকুচি করতে পারেন। এতে মুখের ঘা কমে যাবে। এর সাথে এক টুকরো লবঙ্গ মুখে দিয়ে রাখুন। অথবা লবঙ্গের রস দিয়ে ক্ষত স্থানটিতে লাগাতে পারেন। উপকার পাবেন।

মুখের ঘায়ের প্রতিকার

কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে আমরা এই মারাত্মক ক্যান্সারমুখী ঘা প্রতিরোধ করতে পারি। তাহলে আসুন জেনে নিই সেই নিয়মগুলো-

  • অতিরিক্ত নোনতা, ঝালযুক্ত, গরম পানীয়, টকযুক্ত, অ্যাসিডিক বা আ্যলার্জি হতে পারে, এমন জাতীয় খাবার পরিহার করা।
  • অতিরিক্ত পরিমাণে কমল পানীয় পান করার পাশাপাশি অ্যালকোহল পান বর্জন করুন।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
  • ধূমপান, জর্দা, গুল ও চুন পরিহার করুন।
  • খাদ্যতালিকায় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট (ভিটামিন এ, সি, ই) সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। যেমন শাকসবজি, সবুজ রঙিন ফল (পেঁপে, আম, গাজর, লেবু, পেয়ারা) ইত্যাদি।
  • আপনার শরীরে আয়রন, ভিটামিন বি-১২ এবং ফলিক অ্যাসিডের অভাব পূরণে কচুশাক, কাঁচা কলা, দুধ, টক দই, চর্বি ছাড়া মাংস খাদ্য তালিকায় রাখুন।
  • নির্দিষ্ট সময় অন্তর দাঁতের পরীক্ষা করুন। অনেকসময় দাঁতের সমস্যা জন্য মুখে ঘা হয়। দাঁতের গোড়ায় প্ল্যাক বা ময়লা বা দাঁতের ক্যারিজজনিত রোগ হলে ডেন্টিস্টের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা।
  • মুখগহ্বর সর্বদা পরিষ্কার রাখতে সকালে ও রাতে দাঁত নিয়মিত ব্রাশ করুন। নরম ও উন্নত মানের দাঁতের ব্রাশ ব্যবহার করা মুখের জন্য ভালো। এবং ব্রাশ তিন মাস পরপর পরিবর্তন করা।
  • ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, কিডনিসহ দীর্ঘমেয়াদি রোগের সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।
  • মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা এড়িয়ে চলতে হবে।
  • মুখের ঘা হলে বারবার ক্ষতে হাত দেওয়া বা পুঁজ বের করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

উপসংহার

কোন ভিটামিনের অভাবে মুখে ঘা হয় কিংবা মুখের ভিতর ঘা হলে করণীয় কি তা নিশ্চয় আপনি এতক্ষণে জেনে গেছেন। তাই মুখের ঘা নিয়ে আর অবহেলা নয়। কারণ মুখের ঘা আস্তে আস্তে মারাত্মক ক্যান্সারের আকার ধারণ করে। 

মুখের ঘায়ের হলে অবশ্যই রেজিস্টার্ড দন্তচিকিৎসকের (বিডিএস) পরামর্শ নিতে হবে এবং পরামর্শমতো চলতে হবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top