জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় – জ্বর হলে প্রায়শই রোগীর কাঁপুনি দেখে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে উল্টাপাল্টা পরামর্শ অনুযায়ী এমন কিছু কাজ করে ফেলেন যাতে সমস্যা আরো তীব্র হয়। ভয়কে দূরে রেখে আসুন জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো সম্পর্কে জানি এবং অনুসরণ করি। এর মাধ্যমে জ্বর সমস্যার সমাধান অনেক সহজ এবং দ্রুত হবে।
Table of Contents
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়
আমাদের অনেকে জ্বর হওয়ামাত্র নিজেদের অভিজ্ঞতা বা ধারণা অনুযায়ী বিভিন্ন ঔষধ খাওয়া শুরু করে দিই, যেগুলো সবসময় ভাল ফল বয়ে আনে না। জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলো স্বাস্থ্যসম্মত এবং যথেষ্ট কার্যকর। নীচে বেশ কয়েটি পদ্ধ্যতির বর্ণণা দেওয়া হলো।
হাইড্রেটেড থাকুন:
জ্বর হলে সহজেই পানিশূন্যতা হতে পারে, বিশেষ করে শিশুদের। কারন এই সময় খাবার বা পানি পানের কোন আগ্রহ থাকে না, বা অনেকসময় খাওয়া সম্ভব হয় না। এমন হওয়ার কারণ শরীর অসুস্থতার বিরুদ্ধে শক্তি ব্যবহারে ব্যস্ত থাকে এবং খাবার হজমের মতো কাজে শক্তি ব্যয় করতে চাই না।
ক্ষুধা না থাকলে জোর করে খুব বেশি কছিু খাওয়ার দরকার নেই, তবে প্রচুর তরল পান করতে হবে। প্রচুর পরিমান পানি ও ভেষজ চা পান করুন। সম্ভব হলে বাষ্পযুক্ত শাক সবজি, স্যুপ ইত্যাদি খান। শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ব্যলান্স ঠিক রাখার জন্য নারকেলের পানি একটি আদর্শ উপাদান। এগুলোর কোনটি খাওয়া বা পান করা সম্ভব না হলে বরফের চিপ বা পপগুলো চোষার চেষ্টা করুন।
>> এই গরমে পানিশূন্যতা দূর করার উপায় জেনে নিন!
গোসল:
এটি জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষ অনুসরণ করে আসছে। কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যাবে। তবে অনেকে ভুল করে গোসলে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করে। এতে বরং উল্টা ফল আসে, ত্বক ঠান্ডা হয়ে রোগীর কাঁপুনি শুরু হয়ে যায়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম:
অসুস্থতা থেকে পরিত্রানের জন্য ঘুম সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাকৃতিক পদ্ধতি। শরীরকে জ্বরের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য যে শক্তি প্রয়োজন তা আপনার পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রামের মাধ্যমে শরীর অর্জন করে। আপনার নিয়মিত ঘুম শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করবে এবং সংক্রামক সমস্যা হলে এটি ছড়িয়ে পড়া রোধ করবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান:
কিছু খাবার আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। জ্বর হলে এই সমস্ত খাবার যেমন লেবু, কমলা, মালটা বা এই ধরণের যে সমস্ত খাবারে ভিটামিন সি এর পরিমান বেশি থাকে সেই খাবারগুলো বেশি বেশি খাওয়ার চেষ্টা করুন। এগুলো আপনার উমিউন সিস্টেমকে জীবানুর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে।
আপেল সাইডার ভিনেগার:
এটি জ্বর দূর করতে বেশ কার্যকর একটি উপাদান। এক ভাগ আপের সাইডার ভিনেগারের সাথে দুই ভাগ পানি মিশিয়ে কপালে, পেটে বা পায়ের তলায় লাগাতে পারেন। অথাবা গোসলের উষ্ণ পানিতে এক কাপ আপেল সাইডার ভিনেগার যোগ করতে পারেন।
>> জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত জেনে নিন!
আদা:
এটি ঠান্ডা, ফ্লু (Flu), প্রদাহ, গলা ব্যাথা এবং জ্বরের মতো স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে সহায়ক হিসাবে প্রমাণিত। এর প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিভাইরাল উপাদানগুলো শরীরে সংক্রমনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। এটি জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর একটি উপায়।
এক কাপ ফুটন্ত পানিতে দেড় চা চামচ আদা কুচি মিশিয়ে এটি চায়ের মতো খেতে পারেন। খেতে অসুবিধা হলে সামান্য পরিমাণ মধু মিশিয়ে নিতে পারেন। দিনে তিন থেকে চারবার এই চা পান করুন। অথবা দেড় চা চামচ আদার রস, এক চা চামচ লেবুর রস এবং এক টেবিল চামচ মধু এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন। দিনে দুই থেকে তিনবার এই মিশ্রণটি খাবেন।
>> প্রতিদিন আদা খেলে কী হয়? জেনে নিন আদার গুণাগুণ সহ উপকারিতা!
ভেজা মোজা ব্যবহার:
জ্বর কমাতে ভেজা মোজা ব্যবহার শুনতে আশ্চর্যজনক মনে হলেও ব্যাপারটি ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপ্ত করে এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে তোলার মাধ্যমে জ্বর কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। জ্বর হলে প্রথম দিনেই এই পদ্ধ্যতি অনুসরণ করা ভাল এবং সর্বাধিক ফলাফলের জন্য পরপর কয়েক রাত এটি অনুসরণ করুন।
প্রথমে উষ্ণ পানিতে গোসল করে শরীর ভালমতো শুকিয়ে নিন। একজোড়া তুলোর মোজা ঠান্ডা পানিতে ভেজানোর পরে ভালভাবে এর পানি ঝরিয়ে ফেলুন। ঘুমাতে যাবার আগে এই মোজা পরে এর উপর একটি শুকনো উলের মোজা পরুন। সকালে সাধারণত দেখা যায় এই মোজাগুলো উষ্ণ এবং শুকনো হয়ে গেছে। যদি মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে এবং মোজা শুকনা মনে হয় তাহলে এই একই পদ্ধদির পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।
জ্বর হলে কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন
সবসময় জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করেই কাজ হয়ে যাবে এমন মনে করার কোন কারণ নেই। অনেক পরিস্থিতিতে আপনাকে ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন-
- জ্বর যদি ২-৩ দিনের বেশি স্থায়ী হয়।
- ৩ মাসের কম বয়সী শিশুর যদি 100.4º F এর বেশি জ্বর হয়।
- জ্বর হয়ে যদি পানিশূণ্যতা দেখা দেয়।
- সে সমস্ত ব্যক্তিদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল অথবা কেমোথেরাপি চলতে তাদের জ্বর 104º F এর বেশি হলে কোন প্রকার দেরি না করে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।
- অতিরিক্ত অলসতা বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়।
যদিও বেশিরভাগ জ্বরেই দুঃশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই, তবে জ্বরের সাথে উপরোক্ত সমস্যাস্যাগুলো দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
শেষ কথা
জ্বর সবক্ষেত্রেই এতটা ভয়ঙ্কর নয় যে দিশেহারা বোধ করবেন। বরং জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করুন। অধিকাংশ মানুষই এভাবেই সুস্থ্য হয়ে উঠবেন আশা করা যায়। এরপরেও যদি একান্ত সমস্যা মনে করেন তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।