কিডনি রোগের ঔষধ কি

কিডনি রোগের ঔষধ কি; জানুন ১১টি অব্যর্থ ঔষধের নাম!

মানবশরীরে যতগুলো জটিল রোগ বাসা বাঁধে তার মধ্যে কিডনির সমস্যা অন্যতম। এটি কেবল মানুষকে তিলে তিলে শেষই করে না, বরং প্রতিনিয়ত যন্ত্রণা দেয়। তাই এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে কিডনি রোগের ঔষধ কী তা আমাদের জেনে রাখা দরকার।

সঠিক ঔষধ ও চিকিৎসায় আপনি আমি সকলেই কিডনি রোগের যথাযথ প্রতিরোধ গড়তে পারবো। তাই আর দেরি না করে চলুন জেনে নিই কিডনি রোগের ওষুধ ও আনুষঙ্গিক সব বিষয়াদি।

কিডনি রোগের ঔষধ কি 

আজকের ঔষধের তালিকাটি বেশ বড় হতে চলেছে। তাই একটু ধৈর্য্য নিয়ে বসুন। আর্টিকেলটি নিশ্চয় আপনার ব্যয়কৃত সময়ের পুরোটাই উসুল করে দিবে। 

নিম্নের ঔষধগুলি বিগত কয়েক বছর ধরেই কিডনির চিকিৎসায় পরীক্ষিত ও প্রমাণিত। 

১. মা’জুন কুন্দুর 

কিডনি রোগের চিকিৎসায় মা’জুন কুন্দুর অনন্য একটি নাম। এটি কিডনি, মূত্রথলি, মূত্রনালি ও এসবের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়। মূত্রাধিক্য, শয্যায় মূত্রত্যাগ, ফোটা ফোটা প্রসাব, এসকল ক্ষেত্রেও এই ওষুধ অত্যাধিক কার্যকর। পাশাপাশি এটি স্নায়বিক দূর্বলতাও দূর করে। 

কার্যকারিতা

  • কিডনি বিকলাঙ্গতা রোধ করে
  • মূত্রাধিক্য দূর করে
  • শয্যায় মূত্রত্যাগ বন্ধ করে
  • দ্রুত বীর্যস্খলন প্রতিরোধ করে
  • ফোঁটা ফোঁটা প্রসাব বন্ধ করে
  • স্নায়ুবিক দূর্বলতা কমায়

উপাদান (প্রতি ৫ গ্রামে আছে)

শুকনা ধনিয়া১৫১.৫০ গ্রাম
কালোজিরা১৫১.৫০ গ্রাম
রুমী মস্তগী১৫১.৫০ গ্রাম
কুন্দুর ১৫১.৫০ গ্রাম
ডালিমফুল১৫১.৫০ গ্রাম
সিয়া জিরা ৭৫.৭৫ গ্রাম
জৈন৭৫.৭৫ গ্রাম
বহেরা৪৫.৫০ গ্রাম
হরিতকী৪৫.৫০ গ্রাম
জঙ্গী হরিতকী ৪৫.৫০ গ্রাম
আমলা৪৫.৫০ গ্রাম

সেবনবিধি

দৈনিক ১/২ চামচ অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্ধারিত মাত্রায় সেবনে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

২. জওয়ারিশ যরঊনি

মূত্রতন্ত্র সম্বন্ধীয় সমস্ত গোলযোগের উপশম হলো জওয়ারিশ যরঊনি। এটি মূত্রাশয়ের পাথর ও মূত্রতন্ত্রের অসার পদার্থ অপসারণ করে ও এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। সেইসাথে কিডনির ব্যথা ও পাথর নিরসনে এটি দারুণভাবে কার্যকর। কিডনি রোগের কারণে যেসকল কোমর ব্যথা হয় তা নিরূপণে বিশেষজ্ঞরা জওয়ারিশ যরঊনি প্রেসক্রাইব করে থাকেন। 

কার্যকারিতা 

  • কিডনির ব্যথা সারায়
  • কিডনির পাথর সরায়
  • মূত্রাশয়ের পাথর অপসারণ করে
  • কোমর ব্যথা দূর করে
  • মূত্রাশয়ের সমস্ত সমস্যার সমাধান করে

উপাদান (প্রতি ৫ গ্রামে আছে)

গাজর বীজ১০৩.৪৫ গ্রাম
জৈন১০৩.৪৫ গ্রাম
মৌরি১০৩.৪৫ গ্রাম
খরমুজ বীজ১০৩.৪৫ গ্রাম
জাফরান১৭.২৫ গ্রাম
করসফ বীজ১০৩.৪৫ গ্রাম
পূনর্ণবা১০৩.৪৫ গ্রাম
শসার বীজ১০৩.৪৫ গ্রাম
করসফ মূল১০৩.৪৫ গ্রাম
লবঙ্গ১০৩.৪৫ গ্রাম
গোল মরিচ ১০৩.৪৫ গ্রাম
দারুচিনি ৩৪.৫০ গ্রাম
আগর ৩৪.৫০ গ্রাম
যত্রীক৩৪.৫০ গ্রাম
রুমী মস্তগী৩৪.৫০ গ্রাম
দেশি জৈন১০৩.৪৫ গ্রাম

সেবনবিধি 

দৈনিক ১ থেকে ২ চামচ অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্ধারিত মাত্রায় সেবন করলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৩. সূজার্ন

গণেরিয়া ও মূত্রতন্ত্রের যাবতীয় সমস্যায় সূজার্ন অত্যন্ত উপকারি একটি ঔষধ। ঝিনুক, গন্ধবিরজা ও ছোলার সংমিশ্রণে তৈরি এই ইউনানি ঔষধ প্রসাবের জ্বালাপোড়া, শ্বেতপ্রদর, গণোরিয়া, ও মূত্রথলির দূর্বলতা এবং মূত্রনালির ক্ষত নিরাময়ে বেশ কার্যকর। পাশাপাশি কিডনির চিকিৎসায় ওষুধটি বিশেষভাবে সমাদৃত। 

কার্যকারিতা 

  • শ্বেতপ্রদরের চিকিৎসায় কাজে লাগে
  • প্রসাবের জ্বালাপোড়া কমায়
  • মূত্রনালির ক্ষত নিরাময় করে
  • গণোরিয়া প্রতিরোধ করে এবং 
  • কিডনি রোগের যাবতীয় চিকিৎসায় 

উপাদান (প্রতি ট্যাবলেটে আছে)

গন্ধবিরোজা১৬৬.৬৭ গ্রাম
ছোলা১৬৬.৬৭ গ্রাম
ঝিনুক ভষ্ম১৬৬.৬৭ গ্রাম
অন্যান্য উপাদানপরিমিত

সেবনবিধি 

আহারের পূর্বে ১টি করে ট্যাবলেট দিনে ২ বার। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্ধারিত মাত্রায় সেবন করলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৪. সেলভিন

সেলভিন মূলত যৌন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হলেও এটি কিডনির শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। নির্দিষ্ট কিছু কিডনি রোগে বিশেষজ্ঞরা এই ঔষধটি সাজেস্ট করেন। এছাড়া সাধারণ দূর্বলতা, শুক্রমেহ, মূত্রাধিক্য ও শ্বেত প্রদরে এটি অত্যন্ত কার্যকরি একটি ঔষধ। 

কার্যকারিতা 

  • কিডনির শক্তি বৃদ্ধি করে
  • সাধারণ দূর্বলতা দূর করে 
  • মূত্রাধিক্য কমায়
  • শুক্রমেহ নিরাময় করে
  • শ্বেত প্রদর উপশম করে 

উপাদান

সালাজীত১১৯.৪৮ মিগ্রা 
লাল বামন৬৯.৫৯ মিগ্রা 
কুশতা খুবছুল হাদীদ ৪৬.৩৬ মিগ্রা
কুশতা কলয়ী৪৬.৩৬ মিগ্রা
বাবলা গঁদ ৪৬.৫৮ মিগ্রা 
মুরগীর ডিমের খোসা ভস্ম১১.৬৩ মিগ্রা

সেবনবিধি

দিনে ২ বার ১টি করে ট্যাবলেট (খাওয়ার পরে)। অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৫. এ্যালকুলি

লিভার ও কিডনির ক্ষতিকর পদার্থের অপসারক হিসেবে এ্যালকুলি ঔষধ বেশ পরিচিত। এছাড়াও এটি লিভার সুরক্ষিত রাখে, প্রদাহ দূর করে ও দেহের তাপমাত্রা সঠিক রাখে। মূত্রতন্ত্রের সংক্রমণ, মূত্রস্বল্পতা এমনকি হেপাটাইটিস বি প্রতিরোধেও এটি বেশ কার্যকর। 

কার্যকারিতা

  • লিভারের সমস্যা দূর করে
  • মূত্রকৃচ্ছতা দূর করে
  • জন্ডিস নিরাময় করে
  • কিডনি ও মূত্রথলির ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে
  • জ্বর ও ঋতুবদ্ধতার উপশম হিসেবে কাজ করে

উপাদান (প্রতি ৫ মিলিতে আছে)

কাসনী মূল২৫০ মিগ্রা 
কাসনী বীজ১২৫ মিগ্রা 
মৌরী মূল১২৫ মিগ্রা 
মৌরী বীজ১২৫ মিগ্রা 
খরমুজ বীজ২৫০ মিগ্রা 
গোক্ষুর কাঁটা ১২৫ মিগ্রা 

সেবনবিধি 

  • প্রাপ্ত বয়স্ক: দৈনিক ২-৪ বার, ২-৪ চা চামচ অথবা (১০-২০ মিলি)
  • অপ্রাপ্ত বয়স্ক: দৈনিক ২-৪ বার, ১-২ চা চামচ অথবা (৫-১০ মিলি)

অথবা রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৬. সফূফ আমলা

প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি ও মূত্রথলীর ক্ষত নিরাময়ে সফূফ আমলা বহুল ব্যবহৃত। এতে বিদ্যমান আমলা লিভার ও কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও এটি দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের শক্তিবৃদ্ধিকারক হিসেবে কাজ করে। মূলত এটি দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের ব্যাকটেরিয়ার প্রতিষেধক হিসেবেই বেশি পরিচিত। 

কার্যকারিতা 

  • প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি রোধ করে
  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ কমায়
  • প্রসাবের ব্যথা ও জ্বালাপোড়া দূর করে
  • লিভার ও কিডনি সুরক্ষিত রাখে
  • লিভার ও কিডনির ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে 

উপাদান

আমলকি৭০০ মিগ্রা
বংশলোচন৭০০ মিগ্রা
ধনিয়া৭০০ মিগ্রা
নিশাদল৭০০ মিগ্রা
সোরা ৭০০ মিগ্রা
রুমী মস্তগী৭০০ মিগ্রা
খরমূজের খোসার লবণ৭০০ মিগ্রা

সেবনবিধি 

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৭. পামেট 

মূত্রকারক হিসেবে পরিচিত পামেট ঔষধটি বিশ্বনন্দিত। এটি প্রোস্টেট গ্রন্থির কার্যকারিতা সুসংহত রাখার পাশাপাশি প্রদাহ নিবারণ করে ও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের শক্তিবৃদ্ধি করে। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা কিডনির চিকিৎসায় এই ওষুধটি রেকমেন্ড করে থাকেন। 

কার্যকারিতা 

  • প্রোস্টেট গ্রন্থির আকার স্বাভাবিক রাখে
  • মূত্রনালীর সংক্রমণ কমায়
  • মূত্রস্বল্পতা ও মূত্রবদ্ধতা রোধ করে
  • কিডনির শক্তি বৃদ্ধি ও ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে 
  • দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের অপসারণ করে 

উপাদান

প্রতিটি ক্যাপসুলে ফলের নির্যাস আছে ১৬০ মিগ্রা। 

সেবনবিধি 

দৈনিক ১ থেকে ২ বার একটি করে ক্যাপসুল অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৮. নিমুলেন্ট

কিডনির চিকিৎসায় রক্ত পরিশোধনকারক ও শক্তিশালী অনুজীবনাশক হিসেবে নিমুলেন্ট কাজ করে। বিগত ৫০ বছর ধরে ওষুধটি তার কার্যকারিতার প্রমাণ দিয়ে আসছে। কিডনি সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করতে এটি তাই অনন্য একটি ঔষধ। 

কার্যকারিতা 

  • কিডনির সুস্থতা নিশ্চিত করে
  • ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি নিরাময় করে
  • প্রদাহ ও সংক্রমণ কমায়
  • ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে 

উপাদান

প্রতি ক্যাপসুলে ১৬০ মিগ্রা করে একিনাসি মূলের স্ট্যান্ডার্ড নির্যাস বিদ্যমান। 

সেবনবিধি 

প্রতিদিন ১/২টি ক্যাপসুল অথবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

৯. জাবীন

লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিস, বা জ্বর দূর করতে জাবীন এর ভূমিকা অপরীসিম। এছাড়াও এটি প্রদাহজনিত জ্বালাপোড়া ও মূত্রতন্ত্রের প্রতিবন্ধকতা দূর করে। পাশাপাশি এটি রক্ত পরিশোধন করে ও লিভার সুস্থ রাখতে দারুণ ভূমিকা পালন করে। 

কার্যকারিতা 

  • লিভারের প্রদাহজনিত জন্ডিস নিরাময় করে 
  • লিভারের প্রদাহজনিত জ্বর নিরাময় করে 
  • লিভারের প্রদাহজনিত জ্বালাপোড়া দূর করে 
  • প্রসাবের জ্বালাপোড়া কমায় 
  • রক্ত পরিশোধন করে 

উপাদান (প্রতি ৫ মিলিতে আছে)

কাসনীবীজ১০০ মিগ্রা 
জটামাংসী৩৩৩.৫০ মিগ্রা 
রান্ধুনী বীজ১০০ মিগ্রা
মৌরি১০০ মিগ্রা 
অন্যান্য উপাদানপরিমিত

সেবনবিধি 

দৈনিক ৩ চামচ অথবা ১৫ মিলি করে দুইবার কিংবা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবনে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

১০. আরক বাদিয়ান

আরক বাদিয়ান ঔষধটি মূলত পরিপাকতন্ত্রের গোলযোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রেই বেশি ব্যবহৃত হয়। সেইসাথে পেট ফাপা, পেট ব্যথা ও হজমের উপশম হিসেবে কাজ করে। কিডনির চিকিৎসায় এটি লিভারের প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে ও মূত্র-নিঃস্বারক সহায়তা করে। লিভার ও কিডনির স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে এটি অধিক কার্যকর। 

কার্যকারিতা 

  • পেট ফাঁপা কমায়
  • হজমের দুর্বলতা নিরাময় করে
  • মূত্রকৃচ্ছ্রতা দূর করে 
  • কিডনির ক্ষতিকর পদার্থ অপসারণ করে 
  • পাকস্থলীর নানাবিধ সমস্যার সমাধান করে 

উপাদান

প্রতি ৫ মিলি আরক বাদিয়ান সিরাপে আছে ৬২৫ মিগ্রা মৌরি

সেবনবিধি 

৪/৬ চামচ দিনে দুইবার অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবনে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। 

১১. অরেঞ্জিন 

এটি আমাদের কিডনি ওষুধের দীর্ঘ তালিকার সবশেষ ওষুধ হলেও এর কার্যকারিতা সীমাহীন। পাকস্থলীর গোলযোগ থেকে শুরু করে লিভারের প্রতিবন্ধকতা ও মূত্রতন্ত্রের অস্বাভাবিকতা সমস্ত কিছুই এটি অত্যন্ত সুরক্ষিতভাবে নিরাময় করে। এতে বিদ্যমান বিশেষ উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো কমলালেবুর ঘনীভূত রস ও শাপলা ফুল, যা একে বিশেষরূপে বিশেষায়িত করে।

কার্যকারিতা 

  • জ্বর নিবারণ করে
  • প্রস্রাবকালীন জ্বালা-পোড়া কমায়
  • পিত্তাধিক্য দূর করে
  • ক্ষুধামান্দ্য দূর করে 
  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা কমায়
  • লিভার ও কিডনির সঠিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করে 

উপাদান (প্রতি ৫ মিলিতে আছে)

কমলালেবুর রস ২৫০ মিগ্রা
গোক্ষুর কাটা২০০ মিগ্রা
মৌরি মূল১৫০ মিগ্রা
মৌরি১৫০ মিগ্রা
শাপলা ফুল১৫০ মিগ্রা 
অন্যান্য উপাদান পরিমিত

সেবনবিধি 

২ থেকে ৪ চামচ দিনে ২/৩ বার অথবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেব্য। 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করলে এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।

কিডনি রোগের চিকিৎসা কী

উপরে উল্লিখিত ওষুধগুলি মূলত কিডনি রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসার জন্য। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধগুলির প্রভাব রোগ নিরাময়ে কাজে না লাগলে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এক্ষেত্রে ৩টি কার্যকর চিকিৎসা রয়েছে যেগুলি কিডনি রোগ সারিয়ে তুলে। চলুন দেখে নিই কী কী। 

  • হিমোডায়ালাইসিস

হিমোডায়ালাইসিস চিকিৎসায় রোগীর শরীর থেকে সমস্ত রক্ত বের করে পরিশোধন করে তা আবার শরীরে ফেরত পাঠানো হয়। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, দ্রবণ ও টিউবের সমন্বয়ে একটি বৃক্ক গঠন করে এই চিকিৎসা সম্পন্ন করা হয়৷ সপ্তাহে ৩টি সেশনের মাধ্যমে রোগীকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। প্রতিটি সেশন ৩ ঘন্টা করে লম্বা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই চিকিৎসায় রোগীর জীবনযাত্রার মান বেশ উন্নত হয়। 

  • সিএপিডি

সিএপিডি চিকিৎসায় একটি ছোট্ট অপারেশনের মাধ্যমে পেটের ভেতর নল ঢুকিয়ে একটি বিশেষ ধরনের স্যালাইন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আবার যখন স্যালাইন বের করে নেওয়া হয় তখন রক্তের বর্জ্য এর সাথে বের হয়ে আসে। এর পর বাসাতে বসেই রোগী একটি ফ্লুয়েডের মাধ্যমে মাত্র ৩০ মিনিটে এই চিকিৎসা করতে পারেন।

  • ট্রান্সপ্লান্ট 

কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট মূলত কার্যকর এবং শেষ পর্যায়ের একটি চিকিৎসা। এক্ষেত্রে একজন সুস্থ কিডনি দাতার প্রয়োজন হয়। এছাড়াও এই চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিছু মানুষের সম্মতির দরকার পড়ে। চিকিৎসাটি ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দক্ষ চিকিৎসক দ্বারা সম্পন্ন হলে কোনো ভয় নেই। 

কিডনি ভালো আছে কী না বোঝার উপায় কী?

বয়স ৪০ পেরোলে অথবা ডায়বেটিস ও রক্তচাপে আক্রান্ত হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার শংকাও বেড়ে যায়। তাই এসময় নিয়মিত পরীক্ষা করা জরুরি৷ কিডনি ভালো আছে কী না জানতে যেসকল পরীক্ষা করা যায় সেগুলো নীচে বর্ণনা করা হলো। 

মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষা 

এটি একটি প্রসাবের রুটিন পরীক্ষা। প্রসাবে আমিষ ও আ্যালবুমিন আছে কী না তা দেখার জন্য এই পরীক্ষা করা হয়। কেননা কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে প্রসাবের সাথে আমিষ ও আ্যালবুমিন নির্গত হয়। মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধরা পড়ে। 

মাইক্রো আ্যালবুমিন পরীক্ষা

মাইক্রোস্কোপিক পরীক্ষায় প্রসাবের আমিষ ধরা পড়লেও অনেক সময় আ্যালবুমিন ধরা পড়ে না। এসময় মাইক্রো আ্যালবুমিন টেস্ট করা হয়৷ যেকোনো সুস্থ মানুষ এই পরীক্ষা করাতে পারেন। 

ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা 

কিডনি বিকল হলে রক্তে সিরাম ও ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। রক্তের ইউরিয়া ও সিরাম পরীক্ষা করতে তাই ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা করা হয়। এতে কিডনির সক্ষমতা সম্পর্কে ভালো ধারণা পাওয়া যায়। 

জিএফআর বা সিসিআর 

কিডনি কতখানি আক্রান্ত হয়েছে তা জানতে জিএফআর অথবা সিসিআর টেস্ট করা হয়। জিএফআর রেট ৯০ হলে আপনার কিডনি সুস্থ। তবে এই রেট ১৫ এর নীচে গেলে এটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। 

আল্ট্রা-সাউন্ড 

আল্ট্রা সাউন্ড মূলত কিডনির আকার, টিউমার, পাথর, সিস্ট, মূত্রতন্ত্র ও প্রোটেস্ট এর অবস্থা ইত্যাদি জানতে করা হয়। এটি অনেক কার্যকর একটি পরীক্ষা। যেকোনো মেডিকেল সেন্টারেই আপনি এই পরীক্ষা করাতে পারেন। 

এছাড়াও রক্তের হিমোগ্লোবিন, ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ইলেক্ট্রোলাইট, শর্করা ও ভিটামিন ডি পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি আপনার কিডনি সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন। 

কিডনি রোগের লক্ষণ

কিডনি রোগের কিছু প্রাথমিক লক্ষণ রয়েছে৷ লক্ষণগুলি আগেভাগে শনাক্ত করে পরীক্ষা করালে বড় কোনো ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তাই কিডনি রোগের লক্ষণগুলি জেনে রাখা আবশ্যক।  

প্রসাবে পরিবর্তন 

কিডনি রোগের প্রধান লক্ষণ হলো প্রসাবে পরিবর্তন হওয়া। এসময় প্রসাব গাঢ় হয় এবং প্রসাবের বেগ বাড়ে অথবা কমে। অনেকসময় প্রসাবের বেগ পেলেও কোনো প্রসাব হয় না। রাতে এই সমস্যা বেশি হতে দেখা যায়। 

প্রসাবের সময় ব্যথা 

প্রসাবের সময় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া করা কিডনির সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের জন্য এমনটা হয়। পরবর্তীতে এটি কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে এবং পিঠে ব্যথা ও জ্বর হয়৷ 

প্রসাবের সঙ্গে রক্ত

কিডনি রোগ হলে প্রসাবে জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি এর সঙ্গে রক্তও আসতে পারে। এটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ। এমনটা হলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

ত্বকে র‌্যাশ 

কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারালে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বাড়ে। এতে ত্বকে চুলকানি ও র‌্যাশ দেখা দেয়৷ এর পাশাপাশি বমি ভাব অনূভুত হতে পারে।

ছোট শ্বাস 

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এবং ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয়। ফলে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। তাই কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে ছোট ছোট শ্বাস নিতে দেখা যায়। 

পিঠে ব্যথা 

পিঠের আশেপাশে ও নীচের দিকে ব্যথা হওয়া কিডনি রোগের লক্ষণ। এছাড়াও শরীরের বর্জ্য পদার্থ ও পানি বেড়ে যাওয়ার ফলে দেহ অনেকাংশে ফুলে যায়। এবং এসময় আক্রান্ত ব্যক্তিকে সবকিছুতে অমনোযোগী হতে দেখা যায়। 

শীত অনূভুত হওয়া

কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে জ্বর আসে। এসময় গরম পরিবেশেও প্রচন্ড শীত লাগে। কখনো কখনো জ্বর কমে গেলেও শীত অনূভুত হতে থাকে সবসময়। 

কিডনি ভালো রাখার উপায়

কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এর জন্য দরকার আমাদের অল্প একটু সচেতনতা। সেইসাথে রেগুলার চেকাপ ও খাবারে কিছু পরিবর্তন আনা জরুরি। নীচে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হলো। 

  • চর্বিজাতীয় খাবার ও লবণ অল্প পরিমাণে খেতে হবে
  • পরিমিত পানি পান করতে হবে
  • চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে
  • ডায়বেটিস থাকলে রক্তের শর্করা ও প্রসাবের আ্যালবুমিন নিয়মিত চেক করতে হবে
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে
  • ডায়বেটিস ও রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্রির ক্ষেত্রে ৬ মাস অন্তর কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করতে হবে
  • শিশুদের জ্বর, গলা ব্যথা ও চুলকানির দ্রুত চিকিৎসা করতে হবে। কেননা পরবর্তীতে এগুলি কিডনিতে প্রভাব ফেলতে পারে 
  • ডায়রিয়া, বমি, ও রক্তআমাশয় হলে পানিশূন্যতা ও লবণশূন্যতায় ভোগা যাবে না। অতিদ্রুত স্যালাইন পানির ব্যবস্থা করতে হবে 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলী 

প্রশ্ন: কিডনি রোগ কী ভালো হয়?

উত্তর: আকষ্মিক কিডনি সমস্যা অনেকাংশেই নিরাময় করা সম্ভব। তবে সমস্যা যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় সেক্ষেত্রে ৫/১০% রোগীকে অনেকদিন যাবৎ ভোগান্তি পোহাতে হয়৷ তাই প্রাথমিক অবস্থাতেই সঠিক চিকিৎসায় কিডনি রোগ প্রতিহত করা উচিত। 

প্রশ্ন: আনারস কী কিডনির জন্য ক্ষতিকর? 

উত্তর: আনারস মোটেই কিডনির জন্যে ক্ষতিকর নয়। এটি একটি ভুল ধারণা। বরং আনারসকে কিডনিবান্ধব ফল হিসেবে ধরা হয়। তবে কিডনি রোগীদের জন্য ডাব, কলা, টমেটো খাওয়া অনুচিত। কেননা এগুলো শরীরে পটাশিয়াম বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু পেপে, আনারস, আপেল, নাশপাতি, পেয়ারা ইত্যাদি পরিমাণমতো খাওয়া যায়। 

প্রশ্ন: কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো?

উত্তর: ক্রিয়েটিন টেস্টে পুরুষের শরীরের স্বাভাবিক রেঞ্জ থাকা উচিত ০.৭ থেকে ১.৪। এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে তা হওয়া উচিত ০.৬ থেকে ১.২। অতএব ক্রিয়েটিন টেস্টের রেজাল্ট এই পয়েন্ট এর মধ্যে আসলে সেটা ভালো। কিন্তু এই মাত্রা যখন ৬ থেকে ১০ হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে কিডনির স্বাভাবিক ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। 

পরিশেষ 

এতক্ষণে নিশ্চয় কিডনি রোগের ঔষধ কী তা নিয়ে আপনার কিঞ্চিৎ ধারণা এসেছে। কিডনির চিকিৎসায় হামদর্দ এর ওষুধ বহুল পরীক্ষিত ও সমাদৃত। তাই উল্লিখিত লক্ষণগুলি যদি আপনার মধ্যে থেকে থাকে তবে এখনি হামদর্দ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। এবং কিডনি সুস্থ রাখতে আমাদের উল্লিখিত নির্দেশনা মেনে চলুন ও যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top