তুরস্কে ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক অলিম্পিয়াত স্টেডিয়ামে ক্লাবের ইতিহাসের প্রথমবারের মতো ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন এবং ট্রেবল জয়ের লক্ষ্য নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে মাঠে নামে ম্যানচেস্টার সিটি। ফাইনালে তাদের মুখোমুখি হয় তিনবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী ইন্টার মিলান।
ম্যানচেস্টার সিটি ২০২০-২০২১ মৌসুমে ফাইনালে উঠলেও চেলসির সাথে হেরে শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয়। অপরদিকে, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠা ইন্টার এখন পর্যন্ত পাঁচবারের মধ্যে তিনবারই হয়েছে ইউরোপ সেরা।
৩-২-৪-১ এই ফর্মেশনে আর্লিং হল্যান্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা, ইকাই গুন্ডোগানদের নিয়ে নিজের সেরা একাদশকে মাঠে নামান সিটি কোচ পেপ গার্দিওলা। অন্যদিকে, ইন্টার মিলান কোচ সিমিওনে ইনজাগি তার দল সাজান ৩-৫-২ ফর্মেশনে।
উভয় দল ভালো পার্ফম্যান্স ও বড় সব দলকে হারিয়ে ফাইনালে পা রাখলেও শক্তিমত্তার দিক দিয়ে এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল জয়ের জন্য ফেভারিট ছিল পেপ গার্দিওলার দল।
প্রথমার্ধের শুরু থেকেই বল দখলে রেখে নিজেদের স্বভাবজাত “পজেশন গেম” খেলতে থাকে ম্যানচেস্টার সিটি। ফলে মাত্র ৬ মিনিটেই বার্নার্দো সিলভার শটে প্রথম গোলের সুযোগ পাই ম্যান সিটি। কিন্তু, শটটি গোলবার মিস করলে আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি সিটিজেনদের।
এরপর সিটিকে অনেকটা চাপে রাখে ইন্টার মিলান। ২৬ মিনিট পর্যন্ত ম্যান সিটির ডিফেন্স লাইনে পরপর ৪টি আক্রমণ চালায় মিলান ফরোয়ার্ড ও মিডফিল্ডাররা। কিন্তু, সিটি গোলকিপার এডারসনের ১টি সেভ ও বাকি ৩টি শট লক্ষ্য ভ্রষ্ট হলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি সিমিওন ইনজাগির দলের।
প্রথমার্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত বাকি সময় জুড়ে ইন্টার আর কোনো সফল চেষ্টা করতে ব্যর্থ হলেও সিটির হয়ে আর্লিং হালান্ড, কেভিন ডি ব্রুইনা ও ম্যানুয়াল আকাঞ্জি ১টি করে শট নেন। তবে, ইন্টার মিলান গোলকিপার আন্দ্রে ওনানার দৃঢ়তায় আর এগিয়ে যাওয়া হয়নি সিটির। ফলে, গোলশূন্য স্কোরলাইন নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে উভয় দল।
গোলশূন্য স্কোরলাইন নিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করা দুই দলই দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম থেকেই গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ৫৮ মিনিটে লাউতারো মার্টিনেজের শট সেভ করে ইন্টার সমর্থকেদর হতাশ করেন এডারসন। ৬০ মিনিটে ফোডেনের বাড়ানো বলে মাথা ছোঁয়াতে সক্ষম হলেও বল ক্রস বারের উপর দিয়ে গেলে সিটির হয়ে আর গোলের দেখা পাওয়া হয়নি রুবেন ডিয়াজের।
আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে জমে উঠা ম্যাচে ৬৮ মিনিটে এসে সিটির হয়ে ডেডলক ভাঙ্গেন মিডফিল্ডার রদ্রি। মাত্তেও দার্মিয়ানের হারানো বলকে কাজে লাগিয়ে দুর পাল্লার শটে ম্যান সিটিকে এগিয়ে নিয়ে যান এই স্প্যানিশ।
১-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায় ইন্টার মিলান। গোলের দেখা পেতে ৭১ মিনিটে ও ৭৩ মিনিটে ফেডেরিকো দিমার্কো ও রোমেলু লুকাকু ম্যান সিটির গোলপোস্ট অভিমুখে শট নিলেও সমতায় আসা হয়নি নেরাজ্জুরিদের। আক্রমণের ধার আরও বাড়াতে ও সমতায় আসার জন্য সাবস্টিটিউট করে রবিন গোসেন্স এবং রাউল বেল্লানোভাকো মাঠে নামান ইন্টার বস সিমিওন ইনজাগি।
ম্যাচের শেষ দিকে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে থাকা ইতালিয়ান ক্লাবটি আরও দুইটি দূর্দান্ত আক্রমণ করলেও সিটির ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এডারসনের অসাধারণ সেভে এবারও গোল বঞ্চিত থেকে যায় মিলানের দলটি।
নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ হলেও যোগ করা সময়ে নিজেদের শেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যায় নেরাজ্জুরিরা। রোমেলু লুকাকু ও নিকোলো বারেল্লার শট এবং রবিন গোসেন্সের হেডে বল ম্যান সিটির জালে জড়াতে ব্যর্থ হলে ১-০ গোলের হার নিয়ে ম্যান সিটির কাছে শিরোপা হাতছাড়া করতে হয় নীল ও কালো জার্সি ধারীদের।
এই জয়ের মাধ্যমে নিজেদের প্রথম উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি ২০২২/২৩ মৌসুমে নিজেদের ট্রেবল শিরোপা জয়ের স্বপ্ন পূরণ করলো ম্যানচেস্টার সিটি। যেখানে, এই শিরোপা জয়ের মধ্যে দিয়ে নিজের কোচিং ক্যারিয়ারের তৃতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার দেখা পেলেন পেপ গার্দিওলা।