তানজিম হাসান সাকিব

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা বাঁচিয়ে রাখলো টাইগাররা!

বিশ্বকাপের ৩৮তম ম্যাচে দিল্লির অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পরস্পরের মুখোমুখি হয় দুই এশিয়ান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।

ইতিমধ্যে, সেমিফাইনাল স্বপ্ন ধূলিসাৎ হওয়া লঙ্কান লায়ন ও বাংলা টাইগার্সের এবারের টুর্নামেন্টে নতুন মিশন ২০২৫ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত।

১ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে ৯ম স্থানে থাকা বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিত করতে এই ম্যাচে জয় ভিন্ন কোনো বিকল্প ছিল না।

যেখানে, পরের পর্ব অনিশ্চিত হলেও টাইগারদের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে পয়েন্ট টেবিলে ভালো অবস্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করতে বদ্ধ পরিকর ক্রিস সিলভারউড শিষ্যরা।

গত ম্যাচের একাদশ থেকে ১ পরিবর্তন আনে বাংলাদেশ। পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের জায়গায় বিশ্বকাপে নিজের অভিষেক ম্যাচের দেখা পান আরেক পেসার তানজিম হাসান সাকিব।

অন্যদিকে, শ্রীলঙ্কা দলে ২ পরিবর্তনের দিনে চামিকা কারুনারত্নে ও দুশান হেমান্তার পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল পেরেরা।

বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাওহীদ হৃদয়, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ, তানজিম হাসান সাকিব।

শ্রীলঙ্কা একাদশ: কুশল মেন্ডিস (অধিনায়ক), পাথুম নিসানকা, কুশল পেরেরা, চারিথ আসালাঙ্কা, সাদিরা সামারাউইকরামা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, ধনঞ্জয়া ডি সিলভা, মাহিশ থিকশানা, কাসুন রাজিতা, দুশমন্ত চামিরা, দিলশান মাদুশাঙ্কা।

ম্যাচের ১ম ইনিংস (1st innings of the match)

একাদশে পুনরায় সুযোগ পেয়ে শ্রীলঙ্কান নিয়মিত ওপেনার পাথুম নিসানকার সাথে ওপেনিং করেন কুশল পেরেরা। 

তবে, সুযোগ ভালোভাবে কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন এই ব্যাটার। ইনিংসের প্রথম ওভারে ৪ রান করে আউট হন পেরেরা। সঙ্গী কুশল পেরেরার ক্ষতি ভালোভাবেই পুষিয়ে দিতে সক্ষম হন পাথুম নিসানকা। 

অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে সাথে নিয়ে দলের হয়ে হাল ধরেন তিনি। প্রথম পাওয়ার প্লে আর কোনো ক্ষতি ছাড়া শেষ করলেও এরপরেই ঘটে বিপত্তি। 

বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিবের কাছে ধরাশায়ী হন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক মেন্ডিস। মেন্ডিস ফেরার পর তার পথে হাঁটতে ভুল করেননি নিসানকা। ৯ রানে হাফ সেঞ্চুরি অধরা রেখে মাঠ ছাড়েন তিনি। 

তারপর, ক্রিসে ছিলেন সাদিরা সামারাউইকরামা ও চারিথ আসালাঙ্কা। দুইজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বড় সংগ্রহের দিকে এগিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ইনিংসের শুরুতে দ্রুত ৩ উইকেট নিতে সক্ষম হলেও এই দুই ব্যাটারের উইকেট তুলতে হিমশিম খায় টাইগার বোলিং এ্যাটাক। 

পাথুম নিসানকার ন্যায় সামারাউইকরামাও ৪১ রানে আউট হলে অপরপ্রান্তে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করতে ভুল করেননি আসালাঙ্কা। 

সামারাউইকরামার পর ব্যাটিংয়ে নামলেও এক অনন্য ঘটনার সম্মুখীন হন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ব্যাটিংয়ে নেমে বল খেলতে দেরি করায় সাকিবের আবেদনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো টাইম্ড আউটের শিকার হন তিনি। 

সামারাউইকরামার পর আসালাঙ্কাকে যোগ্য দিতে থাকেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। মাঝে ধনঞ্জয়া ৩৪ রানে মেহেদী মিরাজের ও মাহিশ থিকশানা ২১ রানে শরিফুলের শিকারে পরিণত হলেও ঠিকই নিজের শতক পূর্ণ করেন চারিথ আসালাঙ্কা। 

তার ১০৮ রানের অনবদ্য এক ইনিংসে ৫০ ওভার শেষে সব উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সামনে ২৮০ রানের টার্গেট দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা।

ম্যাচের ২য় ইনিংস (2nd innings of the match)

২৮০ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বরাবরের মতো আশার আলো দেখিয়ে আবারও ৯ রানে বিফল হন জুনিয়র তামিম। 

পুরো টুর্নামেন্টে তানজিদ তামিমের রান সংগ্রহের সঙ্গী হতে না পারলেও তার আসা যাওয়ার সঙ্গী হওয়া লিটন এবারও সঙ্গ দিতে ভুল করেননি। দিলশান মাদুশাঙ্কাকে দ্বিতীয় উইকেট দিয়ে ২৩ রানে ফিরেন টাইগার ওপেনিংয়ের শেষ ভরসা। 

দুই ওপেনারকে দ্রুত হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং অধিনায়ক সাকিব আল হাসান৷ দেখেশুনে খেলতে থাকা শান্ত নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন। 

শান্তর পর নিজের ক্যারিয়ারের ৫৬তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিবও। ৮২ রান করা সাকিব, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের শিকার হয়ে সাজ ঘরে ফিরলে শান্ত ও সাকিবের ১৪৯ বলে ১৬৯ রানের অসাধারণ জুটি ভাঙে। 

সাকিবের পর শান্তও আউট হন সেই ম্যাথিউসের বলেই৷ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। মাদুশাঙ্কার শিকার হয়ে মাত্র ১০ রান করে মুশফিকও প্যাভিলিয়নে ফিরেন। 

মুশফিকের ফেরার পরের ওভারে থিকশানার ঘূর্ণিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২২ রানে আউট হলে জয় থেকে কিছু দূরে থাকলেও আবারও শঙ্কায় পড়তে হয় সমর্থকদের। জয় থেকে ১১ রান পিছিয়ে থাকতে তাওহীদ হৃদয়কে সাথে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসতে ব্যর্থ হন মিরাজও। 

তবে, তানজিম সাকিবকে সাথে নিয়ে আর কোনো বিপদে পা বাড়াননি তাওহীদ হৃদয়। ৩ উইকেট ও ৫৩ বল হাতে রেখে শ্রীলঙ্কাকে অফিসিয়ালি বিদায় করে ৭ ম্যাচ পর বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ।

বল হাতে ২ উইকেট ও ব্যাট হাতে ৮২ রানের দুর্দান্ত অলরাউন্ডিং পার্ফম্যান্সে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন টাইগার কাপ্তান সাকিব আল হাসান। 

ম্যাচ স্কোরবোর্ড (Match Scoreboard)

শ্রীলঙ্কা     ২৭৯/১০ (৪৯.৩ ওভার)

চারিথ আসালাঙ্কা – ১০৮ (১০৫)

তানজিম হাসান সাকিব – ৩/৮০ (১০ ওভার)

বাংলাদেশ    ২৮২/০৭ (৪১.১ ওভার)

নাজমুল হোসেন শান্ত – ৯০ (১০১)

দিলশান মাদুশাঙ্কা – ৩/৬৯ (১০ ওভার)

ম্যাচ সেরা – সাকিব আল হাসান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top