মিচেল মার্শ

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পরও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আশা জীবিত রইল বাংলাদেশের!

বিশ্বকাপে নিয়মরক্ষার জন্য নিজেদের শেষ ম্যাচে পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া।

ইতিমধ্যে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা অস্ট্রেলিয়ার জন্য ম্যাচের জয়-পরাজয় কোনো প্রভাব না ফেললেও, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিশ্চিতে ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাংলাদেশের জন্য।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের নায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল স্টার্কে বিশ্রামে রেখে একাদশ সাজায় তাসমান পাড়ের দেশটি।

অন্যদিকে, ইনজুরিতে পড়া নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় টাইগাররা।

ম্যাচে মোট ৩টি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে চান্ডিকা হাথুরুসিংহের দল। সাকিব, তানজিম হাসান সাকিব ও শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পান শেখ মাহেদী, নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।

সাকিবের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত টসে হেরে দলের হয়ে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তের দেখা পান।

এবারের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচের পাশাপাশি এই ম্যাচের মধ্যে দিয়ে নিজেদের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড ও পার্ফম্যান্স এ্যানালিস্ট শ্রীনিবাস চন্দ্রশেখরনকে বিদায় জানাবে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশ একাদশ: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, তানজিদ হাসান তামিম, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তাওহীদ হৃদয়, মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মাহেদী, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান।

অস্ট্রেলিয়া একাদশ: প্যাট কামিন্স (অধিনায়ক), ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, মিচেল মার্শ, স্টিভ স্মিথ, মার্নাস লাবুশেন, জশ ইংলিস, মার্কাস স্টোইনিস, সিন অ্যাবোট, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজেলউড।

দুর্দান্ত ব্যাটিং পার্ফম্যান্সে চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ বাংলাদেশের!

সাবেক পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের শক্ত বোলিং লাইনআপের বিরুদ্ধে ওপেনিংয়ে ভালো লড়াইয়ের আভাস দেন তানজিদ তামিম ও লিটন দাস। 

পুরো বিশ্বকাপে রীতিমতো ব্যার্থ হলেও ম্যাচে শুরু থেকেই ভালোভাবে দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার। ৩৬ রানে জুনিয়র তামিমের ফেরার আগ পর্যন্ত এই দুইজনের অনবদ্য জুটি স্থায়ী হয় ৭৬ রান পর্যন্ত। পরে, অ্যাডাম জাম্পার শিকারে নিজেও ৩৬ রানে আউট হন লিটন। 

অধিনায়ক শান্তকে যোগ্য সঙ্গ দেন তাওহীদ হৃদয়। দুজনের দায়িত্বশীল সাবলীল ব্যাটিংয়ে নিয়মিতভাবে রানের চাকা ঘুরতে থাকে বাংলাদেশের। হাফ সেঞ্চুরির ৫ রান পূর্বে রান আউটে কাঁটা পড়েন শান্ত। 

এরপর, মাঠে আসেন এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত টাইগারদের অন্যতম ভরসা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বরাবরের মতো এবারও সমর্থকদের আশার প্রতিদান ভালোভাবেই দিচ্ছিলেন রিয়াদ। তবে, ৩২ রানে শান্তর ন্যায় রান আউটে নিজের ইনিংসেরও ইতি টানতে হয় তার। 

পরপর দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে হারালেও দলের হয়ে অপরপ্রান্তে ঠিকই হাল ধরে রাখেন হৃদয়। মুশফিককে সাথে নিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম অর্ধ শতকের দেখা পান এই তরুণ ব্যাটার। 

শেষে, মুশফিক ২১ রানে জাম্পার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলেও হৃদয়ের ৭৪, মিরাজের ২১ রানের ক্যামিও ইনিংসের উপর ভর করে ক্যাঙ্গারুজদের সামনে ৩০৭ রানের বড় লক্ষ্য দাঁড় করায় টাইগার বাহিনী।

মিচেল মার্শের ব্যাটিং ঝলকানিতে ধরাশায়ী বাংলাদেশ

২ পরাজয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করা অস্ট্রেলিয়া শেষ ৬ ম্যাচে ছিল অপরাজিত। টানা ৭ম জয় নিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখার পূর্বে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় ছিনিয়ে আনতে ৩০৭ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে ওপেনিংয়ের শুরু করেন ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। 

যেখানে, ইনিংসের শুরুতেই হোঁচট খায় অজিরা। ট্রাভিস হেডকে মাত্র ১০ রানে ফিরিয়ে ওপেনিং জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ট্রাভিসের পর ক্রিসে তার স্থলাভিষিক্ত হন মিচেল মার্শ। এরপরের পুরো সময়টাই ছিল মার্শের। 

ওয়ার্নারকে সাথে নিয়ে তাসকিন, মিরাজ, মুস্তাফিজ, নাসুম, শেখ মাহেদী একে একে বাংলাদেশের সব বোলারকে রীতিমতো শাসিয়ে যান তিনি। 

ডেভিড ওয়ার্নারের আগেই নিজের ৫০ পূরণ করেন মার্শ। তার দেখানো পথেই নিজেও হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন ওয়ার্নার। মাঝে ৫৩ রানে ডেভিড ওয়ার্নার সাজ ঘরে ফিরলেও নিজের চার-ছক্কার ফুলঝুরি থামাননি মিচেল মার্শ। 

এরপর, দলের আরেক অভিজ্ঞ স্টিভ স্মিথকে সাথে নিয়ে জয়ের দিকে এগিয়ে যান তিনি। ৮৭ বলে তুলে নেন বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। 

ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নারের উইকেট শিকার করতে সফল হলেও বাকি সময় মিচেল মার্শ ও স্টিভ স্মিথের ব্যাটিং পার্ফম্যান্স দেখতে ব্যস্ত ছিল টাইগার বোলাররা। 

মার্শের ১৫০ রানের কীর্তির পর নিজেও হাফ সেঞ্চুরি করেন স্মিথ। অবশেষে, মিচেল মার্শের অপরাজিত ১৭৭ রান ও স্টিভ স্মিথের অপরাজিত ৬৩ রানের মারমুখী ইনিংসে ৮ উইকেটের সহজ জয় পায় অ্যান্ড্রিউ ম্যাকডোনাল্ড শিষ্যরা। 

৩০৭ রানের টার্গেটে অপরাজিত থেকে একাই ১৩২ বলে ১৭৭ রান সংগ্রহ করা মিচেল মার্শ হয়েছেন ম্যাচ সেরা।  

ম্যাচ স্কোরবোর্ড (Match Scoreboard)

বাংলাদেশ     ৩০৬/০৮ (৫০ ওভার)

তাওহীদ হৃদয় – ৭৪ (৭৯)

অ্যাডাম জাম্পা – ২/৩২ (১০ ওভার)

অস্ট্রেলিয়া     ৩০৭/০২ (৪৪.৪ ওভার)

মিচেল মার্শ – ১৭৭* (১৩২)

তাসকিন আহমেদ – ১/৬১ (১০ ওভার)

ম্যাচ সেরা – মিচেল মার্শ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top