গ্রুপ পর্বের ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হওয়ার পর এবার এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় ভারত। টুর্নামেন্টে দুই দলের ১ম দেখায় বৃষ্টির জন্য মাঠে না গড়ানোয় এই ম্যাচের জন্য ছিল আলাদা রিজার্ভ ডে।
ম্যাচের ১ম দিন টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রোহিত শর্মা। ভারতের একাদশে ফিরেন লোকেশ রাহুল ও জসপ্রীত বুমরাহ। অন্যদিকে, বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় দিয়ে সুপার ফোর শুরু করা পাকিস্তান দলের একাদশ ছিল অপরিবর্তিত।
পাকিস্তান একাদশ: বাবর আজম (অধিনায়ক), ফখর জামান, ইমাম উল হক, সালমান আলি আগাহ, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ইফতেখার আহমেদ, শাদাব খান, ফাহিম আশরাফ, হারিস রউফ, শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ।
ভারত একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, ইশান কিশান, রাবিন্দ্র জাদেজা, শার্দুল ঠাকুর, কুলদীপ যাদব, মোহাম্মদ সিরাজ, জসপ্রীত বুমরাহ।
ম্যাচের ১ম ইনিংস
টসে জিতে ব্যাটিং করতে নামা ভারতের হয়ে দুর্দান্ত শুরু করেন দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে রীতিমতো পাকিস্তানের বোলারদের অতিষ্ঠ করে তুলেন এই দুই ব্যাটার। উইকেটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেও কোনোভাবেই নিজেদের প্রথম সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলনা পাকিস্তানি বোলাররা।
অধিনায়ক রোহিত ও তরুন গিলের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৪ ওভারেই ১০০ রান পূর্ণ করে ভারত। অবশেষে এই দুইজনের ১২১ রানের পার্টনারশিপ ভাঙেন শাদাব খান। হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া রোহিত শর্মাকে ফেরান ৫৬ রানে। রোহিতের পর গিলও বেশিক্ষণ মাঠে স্থায়ী হতে পারেননি। পরের ওভারেই ৫৮ রান করা গিল নিজেও সাজ ঘরে ফিরেন শাহীন আফ্রিদির বলে।
এরপর মাঠে আসেন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়াস আইয়ারের পরিবর্তে দলে জায়গা পাওয়া লোকেশ রাহুল। এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটারদের কল্যাণে ভারতকে আর তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। ২৫তম ওভারে বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় ম্যাচ। পরে বৃষ্টি আর না থামলে ১ম দিনের খেলা আর মাঠে গড়ায়নি।
রিজার্ভ ডে’তে ম্যাচের ২য় দিনে ২৪.১ বল থেকে ভারতের হয়ে পুনরায় ব্যাটিং শুরু করেন কোহলি ও রাহুল। ১ম দিনের ন্যায় নিজেদের স্বভাবসুলভ ব্যাটিং চালিয়ে যান এই দুই তারকা। দু’জনই তুলে নেন ফিফটি৷ অর্ধ শতক পূর্ণ করে চার ছক্কার মধ্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি শতক তুলে নেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটার।
রাহুলকে যোগ্য সঙ্গ দেন কোহলি। ক্যারিয়ারের ৭৭তম এবং ওয়ানডেতে নিজের ৪৭তম সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি স্পর্শ করেন ১৩০০০ রানের মাইলফলক। দুই মিডল অর্ডার ব্যাটারের এমন বিধ্বংসী ইনিংসে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৩৫৬ রানের পাহাড় সমান পুঁজি পায় সাত বারের এশিয়া কাপ জয়ীরা।
ম্যাচের ২য় ইনিংস
৩৫৬ রানের বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে ওপেনিংয়ে ভালো শুরু করতে পারেননি ফখর জামান ও ইমাম উল হক। ৫ম ওভারেই মাত্র ৯ রান করে বুমরাহর শিকারে পরিণত হন ইমাম।
দলের হয়ে ৩নং-এ ব্যাটিং করতে আসেন অধিনায়ক বাবর আজম। তবে দলের হয়ে এবারও ভালো কিছু করতে ব্যর্থ বাবর। ১০ রান করে আউট হন হার্দিক পান্ডিয়ার বলে। এরপর আবার আসে বৃষ্টির বাধা। প্রায় ১ ঘন্টা ম্যাচ বন্ধ থাকার পরও পূর্ণ ৫০ ওভারের ম্যাচ মাঠে গড়ানোর সিদ্ধান্ত দেন আম্পায়াররা।
বৃষ্টির পর মাঠে নেমে আর তেমন সুবিধা করতে পারেনি পাকিস্তান ব্যাটাররা। নিয়মিত বিরতিতে ভারতীয় বোলারদের কাছে উইকেট হারাতে থাকেন মোহাম্মদ রিজওয়ান, সালমান আগাহ ও ফখর জামানরা। পেসারদের পাশাপাশি ভারতীয় স্পিনার কুলদীপ যাদবের কাছে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের মিডল অর্ডার।
ফখর জামান, সালমান আঘাহ, ইফতেখার আহমেদ, শাদাব খান ও ফাহিম আশরাফের উইকেট নিয়ে ৫ উইকেট শিকারের কীর্তি গড়েন এই স্পিনার।
ইনজুরির কারণে হারিস রউফ ও নাসিম শাহ আর ব্যাটিং করতে নামেননি। ফলে, ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৮ রান সংগ্রহ করা পাকিস্তানকে অলআউট ঘোষণা করায় ২২৮ রানের বিশাল জয় পায় ভারত। এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষস্থান দখল করে নিল ভারত। ৯৪ বলে ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।
ম্যাচ স্কোরবোর্ড (Match Scoreboard)
ভারত ৩৫৬/২ (৫০ ওভার)
বিরাট কোহলি – ১২২* (৯৪)
শাদাব খান – ১/৭১ (১০ ওভার)
পাকিস্তান ১২৮ (৩২ ওভার)
ফখর জামান – ২৭ (৫০)
কুলদীপ যাদব – ৫/২৫ (৮ ওভার)
ম্যাচ সেরা: বিরাট কোহলি