দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র – মনোরঞ্জনের জন্য আমরা কতরকম খেলায় না খেলে থাকি। কোনোটাতে শক্তির পরীক্ষা দিতে হয় তো কোনোটায় বুদ্ধির। আবার কোনো কোনো খেলায় দুটোতেই বেশ প্রখর হতে হয় সেইসাথে দিতে হয় ধৈর্যের পরীক্ষাও। কোনোটা মাঠে অনুষ্ঠিত হয় তো কোনোটা ইনডোরে। একেক খেলার একেক নিয়ম, একেক সংস্কৃতি।
দাবার নিয়ম কানুন ও সূত্র ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন!
তবে বাংলার জনমানবের সংস্কৃতির সাথে যদি কোনো খেলার মিল পাওয়া যায়, সেটি হলো দাবা। রাজা, রানী, মন্ত্রী, প্রজা, সেইসাথে হাতি, ঘোড়া, নৌকা- এ যেন বাংলাদেশেরই পুরোনো অতীত। দাবা বোর্ডের প্রতিটি ঘুটিই যেন সাক্ষ্য বহন করে প্রাচীন বাংলা জনপদের। তাহলে, এই খেলাটি সম্পর্কে অবগত না থাকলে কী আর চলে?
দাবা খেলার উৎপত্তি যে এই বাংলাতেই হয়েছে তা হলফ করে বলা যায় না ঠিকই, কিন্তু এ’কথা চট উড়িয়ে দেওয়াও যায় না। কেননা, বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন চর্যাপদেই এ খেলার উল্লেখ পাওয়া গেছে। গবেষকেরা এটি অস্বীকার করবেন কী করে?
পাঠক, আজকের প্রবন্ধটি আমরা তৈরি করেছি দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র নিয়ে। এখানে আমরা এই খেলাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করি, দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র সম্পর্কে জানতে এই প্রবন্ধটি আপনার সহায়ক হবে।
Table of Contents
উৎপত্তিস্থলঃ
দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র জানার আগে এর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। দাবা খেলার জন্মলগ্নের ইতিহাসের সাথে এদেশের নামটা যে জড়িয়ে আছে। একটু খোলসা করে বললে আপনারাও বিষয়টি পরিষ্কার হবেন।
একটু রিসার্চ করলেই পাওয়া যায় যে দাবার আদি নাম ‘চতুরঙ্গ’। চতুরঙ্গ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘ঘোড়া’। বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদের নাম আমরা কমবেশি সবাই শুনেছি। এই চর্যাপদেই চতুরঙ্গ নামক একটি খেলার উল্লেখ পাওয়া গেছে। চর্যাপদের রচনাকাল অনুযায়ী পৃথিবীর আর কোথাও কোনো গ্রন্থে এই খেলার উল্লেখ পাওয়া যায়নি। সুতরাং দাবা খেলার উৎপত্তিস্থল যে এই বঙ্গদেশেই তা নিয়ে আর কোনো সন্দেহ নাই।
পরবর্তীতে এ অঞ্চলে বিদেশী বণিকদের আগমণের সুবাদে খেলাটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পর্যায়ক্রমে দাবা খেলা চীন দেশেও পাড়ি দেয়। সেখানে এই খেলার নামকরণ হয় ‘জিয়ানকি’। জিয়ানকি তাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত খেলা- এমনটা চীন দাবি করলেও এর স্বপক্ষে তেমন যৌক্তিক প্রমাণ গবেষকেরা পায়নি। তাই, আপাতদৃষ্টিতে এটি ঘোষিত যে, দাবা খেলার উৎপত্তি আমাদের এই ভারতবর্ষেই।
চতুরঙ্গের চার অংশ
প্রাচীন ভারতে দাবাকে চতুরঙ্গ বলার মূলত একটি কারণ ছিলো। ষষ্ঠ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন খেলাটির সূচনা হয় তখন এর চারটি অংশ ছিলো যথাক্রমেঃ হাতি, ঘোড়া, রথ ও সৈন্য। চতুরঙ্গ থেকে দাবা খেলায় রূপান্তর হওয়ার পথটি ছিলো সুদীর্ঘ। পাড়ি দিতে হয়েছে দেশ থেকে দেশান্তর। ফলে পরিবর্তন হয়েছে দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র। একের পর এক পরিবর্তন ও পরিমার্জনে পর খেলাটি এখন পরিচালিত হয় দাবা ফেডারেশন বোর্ড কর্তৃক নির্দেশিত নিয়মে। বোর্ড কর্তৃক জারিকৃত নিয়ম হুবুহু অনলাইন গেইমে পাওয়া না গেলেও কেউ চাইলেই নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারে।
প্রবন্ধের নীচের অংশে আমরা ফেডারেশন বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র
দাবা খেলার সর্বোচ্চ সংস্থা FIDE কর্তৃক জারিকৃত নিয়মগুলোই আন্তর্জাতিক নিয়ম হিসেবে ধরা হয়। এখানে এমন কিছু নিয়ম আছে যেগুলো প্রচলিত দাবা খেলায় সংযুক্ত নেই। সুতরাং আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র সম্পর্কে নতুন কিছু জানতে পারবেন।
দাবার বোর্ড
![দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র](https://www.healthd-sports.com/wp-content/uploads/2021/01/দাবা-খেলার-নিয়ম1.jpg)
দাবা খেলার নিয়ম কানুন এবং সূত্র সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আমাদের দাবার বোর্ড সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। দাবা বোর্ডের ৮টি সারিতে ৮টি কলাম মিলে মোট ৬৪টি ঘর থাকে। প্রতিটি ঘর পর্যায়ক্রমে সাদা কালো রঙ দিয়ে আলাদা করা থাকে। দাবার বোর্ড বসানোর সময় একটি জিনিস খেয়াল করতে হয় যে সাদা ঘরটা যেন সবসময় খেলোয়াড়দের ডানদিকে থাকে।
দাবার ঘুটি – দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র
দাবা খেলায় মোট ৩২টি ঘুটি থাকে। ১৬টি সাদা ঘুটি এবং ১৬টি কালো। উভয়পক্ষের ১৬টি ঘুটির মধ্যে ৮টি করে থাকে Pawn অর্থাৎ বড়ে। দুটি করে নৌকা (rook), ঘোড়া (knight), এবং হাতি (bishop) দুইপক্ষের ঘুটিতেই বিদ্যমান থাকে। এবং থাকে ১টি করে রাজা (king) এবং রানী (queen). প্রতিটা ঘুটিরই বৈচিত্র্যময় নিজস্ব চাল (move) আছে। এবং প্রতিটি ঘুটিই প্রথমে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করে। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেগুলো।
ঘুটি বসানোর নিয়ম
- বোর্ডের একপাশে সাদা ঘুটি ও অন্যপাশে কালো ঘুটি রেখে সেগুলোকে সাজাতে হয়।
- দুই দিকের প্রথম সারিতে দুই কোণায় দুটি করে নৌকা বসে।
- এরপর উভয়পাশেই নৌকা দুটির পাশে একটি করে ঘোড়া বসবে।
- ঘোড়ার পাশের ঘুটিটি হবে হাতি।
- এরপর বাকী থাকবে অবশিষ্ট দুটি ঘর। একটি সাদা ও অপরটি কালো। কালো ঘরে কালো মন্ত্রী এবং সাদা ঘরে সাদা মন্ত্রী রেখে বাকী ঘরটিতে রাজাকে বসাতে হবে।
- দ্বিতীয় সারিতে বড়ে গুলোকে পাশাপাশি রেখে সাজাতে হবে। ব্যাস্, এভাবেই দাবা বোর্ডে ঘুটিগুলো ক্রমান্বয়ে সাজাতে হয়।
ঘুটি চালানোর নিয়ম – দাবা খেলার নিয়ম কানুন ও সূত্র
রাজাঃ চারিদিকে যেকোনো এক ঘর যেতে পারে।
মন্ত্রীঃ চারিদিকে নিজস্ব লাইনে সোজাসুজি অথবা কোণাকুণি যতদূর ইচ্ছা যেতে পারে।
হাতিঃ চারিদিকে কোণাকুণি যত ঘর ইচ্ছা যেতে পারে।
ঘোড়াঃ ইংরেজি L অক্ষরের ন্যায় সোজাসুজি দুই ঘর এবং পরে যেকোনো একপাশে এক ঘর যায়। এ অঞ্চলে যাকে আড়াই ঘর বলা হয়।
নৌকাঃ যেকোনো দিকে সোজাসুজি যতঘর ইচ্ছা যেতে পারে।
বড়েঃ প্রথম চালে এক ঘর অথবা দুই ঘর এবং পরবর্তী চালগুলোতে সামনের দিকে একঘর করে যেতে পারে। এবং ঘুটি খাওয়ার সময় কোণাকুণি ভাবে খেতে পারে।
কোনো ঘুটিই এমন কোনো ঘরে যেতে পারবে না যেখানে আগে থেকেই অন্যকোনো ঘুটি অবস্থান করছে। এবং ঘোড়া ব্যতীত অন্যকোনো ঘুটি অপর একটি ঘুটিকে টপকে যেতে পারবে না।
এছাড়াও রাজা ও নৌকার একটি বিশেষ চাল আছে যাকে ক্যাসলিং বলে। এবং বড়ের পদোন্নতিসহ এন প্যাসান্ট নামক আরো একটি বৈচিত্র্যময় চাল রয়েছে যা ‘দাবা খেলার কলাকৌশল’ শিরোনামে অন্যকোনো প্রবন্ধে হয়তো আমরা উল্লেখ করবো।
অতএব, এই ছিলো আমাদের দাবা খেলার নিয়ম কানুন এবং সূত্র সম্পর্কিত প্রবন্ধ। আশা করি, খেলাটি সম্পর্কে আপনারা প্রাথমিক ধারণা পেয়েছেন।
লেখকঃ আরিফুল আবির
আরো পড়ুন-