পেপের উপকারিতা সম্পর্কে কমবেশি সকলেই জানেন। এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। কাঁচা অবস্থায় পেপে সবজি হিসেবেও খাওয়া যায়।
এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিনারেল এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ এই পেপে রুপ চর্চাতেও দারুণ উপকারী। তাহলে চলুন পেপের অসাধারণ কিছু ১২ উপকারিতা সম্পর্কে জেনে নিই।
Table of Contents
পেপের উপকারিতা
জনপ্রিয় ফলগুলোর মধ্যে পেপে অন্যতম। এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ফাইবারসহ ভিটামিন এ, সি কে, পটাশিয়াম, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম, ও এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। পেপে কাঁচা পাকা দুটোই খাওয়া যায়। চলুন জেনে নিই পেপের ১০টি উপকারিতা।
১. পেপে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
হজম শক্তি বৃদ্ধিতে পেপে খুব উপকারী। হমজ শক্তি কমে গেলে পেটে নানা সমস্যা দেখা দেয়। পেপেতে আছে প্রচুর পানি, দ্রবনীয় ফাইবার ও এনজাইম যা হজমে সহায়তা করে থাকে। যারা হজম সমস্যায় ভোগেন তারা নিয়মিত কাঁচা বা পাকা পেপে দুটোই খেতে পারেন।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে
পেপে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সক্ষম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি ও ই। এই সমস্ত ভিটামিন আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং নানা ধরনের জটিল রোগ হতে মুক্তি দেয়। এতে থাকা ভিটামিন এ আমাদের চোখের জন্য উপকারী।
৩. ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধে
কাঁচা পেপে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা প্রোটিওলাইটিক, এনজাইম এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষকে বাঁধা দেয়। এছাড়াও এতে থাকা বিটাক্যারোটিন উপাদান প্রস্টেট, কোলন এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। তাই পেপে রান্নার পরিবর্তে কাঁচা খাওয়ায় উত্তম।
৪. চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখে
চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পেপে বেশ উপকারী। গবেষণায় দেখা গেছে দৈনিক তিনবার পেপে খেলে চোখের বয়সজনিত সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। পেপেতে উপস্থিত এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন এ, ই ও সি চোখের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫. কোলেষ্টেরল কমায়
পেপে কোলেস্টেরল মুক্ত এবং ফাইবার যুক্ত। তাই যাদের রক্তে কোলেস্টেরল আছে তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেপে রাখুন তাহলে আপনার কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৬. হার্ট সুস্থ রাখে
হার্ট ভালো রাখতে পেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। পেপেতে থাকা ভিটামিন এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। সকালে খালি পেটে কাঁচা পেপে খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশি। তাই যাদের হার্টের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত পেপে খেতে পারেন। এতে হার্টের সমস্যা ভালো হবে।
৭. ব্রণ ও কালো দাগ দূর করে
ত্বকের ব্রণ ও কালো দাগ দূর করতে পাকা পেপে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ পাকা পেপেতে উপস্থিত প্যাপিন নামক উপাদান ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বককে দাগহীন, উজ্জ্বল এবং ফর্সা করে তোলে। এক্ষেত্রে এক টুকরো পাকা পেপে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন ব্যবহার করলেই ফল পাবেন।
৮. হাড় মজবুত করে
পেপে হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। কারণ পেপেতে রয়েছে পটাসিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম এবং ক্যালসিয়াম। নিয়মিত কাঁচা পেপের তরকারি খাওয়ার ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম তৈরি হয় যা হাড় মজবুত করে তোলে।
৯. উচ্চ রক্তচাপ কমায়
উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পাকা পেপের উপকারিতা অনেক বেশি। যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদের জন্য কাঁচা বা পাকা পেপে দুটোই উপকারী। কাঁচা পেপে দেহে সঠিক রক্ত সরবরাহে কাজ করে এবং দেহে জমে থাকা সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে। তাই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে নিয়মিত কয়েক টুকরো করে পেপে খেতে হবে।
১০. ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
পেপে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে। কারণ পেপেতে চিনির মাত্রা কম থাকে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পেপে একটি আদর্শ ফল। যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা প্রতিদিন পেপে খেয়ে ডায়বেটিস প্রতিরোধ করতে পারেন।
১১. চুলের যত্নে
চুলের যত্নে পেপের উপকারিতা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। কয়েক টুকরো পাকা পেপে টকদইয়ের সাথে মিশিয়ে মাথায় দিলে চুলের গড়া মজবুত হয়, চুল ঝরা বন্ধ হয়, এবং চুল সিল্কি ও ঝলমলে হয়।
১২. হারানো স্বাস্থ্য ফিরে পেতে
অনেক সময় কোন কারণ ছাড়াই স্বাস্থ্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে শরীরে অবসাদজনিত ক্লান্তি আসে, মনমরা হয়ে যায়, পড়াশোনায় অমনোযোগী, কাজেকর্মে অনিহা ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এক্ষেত্রে পেপে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। এমন অবস্থায় অন্তত একমাস দৈনিক সকাল ও বিকেলে কাঁচা বা পাকা পেপে কয়েক টুকরো করে খেতে থাকেন।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
কাঁচা পেপে খাওয়ার নিয়ম
পেপে আমাদের দেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। পেপে একটি বারোমাসি ফল যা কাঁচা পাকা দুই অবস্থাতেই খাওয়া যায়। নানা রোগের মহৌষধ হলো এই পেপে।কাঁচা পেপে সবজি, সালাদ বানিয়ে খাওয়া যায়।
কাঁচা পেপে সাধারণত রান্না করেই খাওয়া হয়। যেকোনো সবজির সাথে মিশিয়ে রান্না করা যায়। কাঁচা পেপে চিবিয়েও খাওয়া যায়। এছাড়াও কাঁচা পেপে সিদ্ধ করে ভর্তা বানিয়ে খাওয়া যায়। আমাদের দেশে কাঁচা পেপের হালুয়া বেশ জনপ্রিয়।
প্রতিদিন দুপুর ও রাতে এক টুকরো কাঁচা পেপে চিবিয়ে খান এবং সেই সাথে এক গ্লাস পানি পান করুণ। এতে পেট পরিস্কার হবে, গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের সমস্যাও দূর হয়ে যাবে।
পাকা পেপে খাওয়ার সঠিক নিয়ম
পাকা পেপে অধিকাংশ মানুষের কাছেই প্রিয়। তবে অনেকেই জানে না পাকা পেপে খাওয়ার সঠিক নিয়ম। তাই পেপে খাওয়ার সঠিক নিয়ম সকলেরই জেনে রাখা উচিৎ।
মুলত পাকা পেপে যেকোনো সময় খাওয়া যেতে পারে। তবে এর সঠিক সময় হলো সকাল ও দুপুরে খাবার পর। কারন ভরা পেটে পাকা পেপে খেলে এর উপকারিতা কাজে লাগে।
এছাড়াও পাকা পেপে জুস করেও খাওয়া যায়। পাকা পেপেতে পরিমাণ মতো কাঁচা লঙ্কা এবং স্বাদমতো লবণ মিশিয়ে জুস করে খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।
পেপের অপকারিতা
পেপের উপকারিতা যেমন আছে, তেমনি রয়েছে অপকারিতা। পেপে কাঁচা পাকা দুটোই খাওয়া হলেও এর কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন-
- শিশুদের পেপে খাওয়া উচিৎ নয়। কারণ পেপে ফাইবার যুক্ত ফল যা শিশুদের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষ করে এক বছরের কম বয়সী শিশুদের কাঁচা অথবা রান্না করা কোন অবস্থাতেই পেপে খাওয়া উচিৎ নয়।
- শ্বাসকষ্ট বা এ্যাজমা রোগীদের পেপে থেকে বিরত থাকা ভালো। কারণ পেপে খেলে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পেপে খাওয়া উচিৎ। কারন বেশি পেপে খেলে বুক ধরফর, কিডনির পাথর এবং এ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য পেপে ক্ষতিকর। কারণ কাঁচা পেপেতে প্যাপেইন নামক উপাদান রয়েছে যা ঝিল্লি ক্ষতিগ্রস্ত করে। এছাড়াও পেপেতে থাকা ল্যাটেক্স জরায়ুর সংকোচন, রক্তপাত এমনকি গর্ভপাতও ঘটাতে পারে।
পেপে আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টিকর ফল হলেও উল্লেখিত বিষয় গুলো খেয়াল রেখে পেপে খাওয়া উচিৎ।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় পেপে সকলেরই পরিচিত এবং সুস্বাদু একটি ফল যা কাঁচা পাকা দুটোই খাওয়া যায়। অস্বাধারন গুনাগুনের জন্য পেপেকে ফলের রাজা বলা হয়। তাই শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতে অন্যন্য ফলের পাশাপাশি পেপে রাখা উচিৎ। কারন পেপের উপকারিতা আমাদের দেহের জন্য অতুলনীয়। তবে কাঁচা হোক বা পাকা পরিমাণ মতো পেপে খেতে হবে। কারন পরিমাণের বেশি খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!