Download Betwinner App
ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন | ইতিহাস সহ বিস্তারিত জেনে নিন!

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন – আমাদের দেশে শীতকালীন সময়ে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন এর পাশাপাশি  ভলিবল খেলাও বেশ জনপ্রিয়। শহরের সৌখিন মানুষদের মাঝে ভলিবল খেলার প্রচলন তো রয়েছেই। পাশাপাশি গ্রাম অঞ্চলেও ভলিবল খেলার অস্তিত্ব নজরে পড়ে।

ভলিবল খেলার সকল নিয়ম ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন!

বহিঃবির্শ্বে ভলিবল খেলার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা। ছোটদের পাশাপাশি বড়রাও এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। এছাড়াও পেশাদার ভলিবল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র তো আছেই। এই খেলার মজাদার সব নিয়মকানুনই বোধহয় এনে দিয়েছে এর অনন্য জনপ্রিয়তা। শরীরকে চাঙ্গা রাখতে যেমন অনেকেই ভলিবল খেলে থাকে, তেমনি কেউ কেউ পেশা হিসেবে এই খেলাকে বেছে নিতেও  কুন্ঠিত বোধ করে না। 

আজকের প্রবন্ধটি আমরা চিত্রায়িত করবো ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন নিয়ে। কে জানে, হয়তো অপরিজ্ঞাত এই খেলাটিকে ভালোবেসে ফেলতে পারেন আপনিও। 

গোড়ার কথাঃ

আপনি হয়তো জানেন যে, ভলিবল খেলার উৎপত্তি আমেরিকায়। ১৮৯৫ সালে উইলিয়াম জি মরগান আবিষ্কার করেন খেলাটি। শুরুর দিকে ভলিবল খেলার নাম ছিলো ‘মিনটোনিটি’। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ‘মিনটোনিটি’ থেকে ‘ভলিবল’ নামকরণ করা হয়। ধীরে ধীরে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভলিবল খেলা  বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।  

এই ভলিবল খেলার প্রতি আগ্রহ ও চাহিদা দেখে ১৯৪৭ সালে মোট ১৩ টি দেশ নিয়ে আন্তর্জাতিক ভলিবল ফেডারেশন গঠন করা হয়। অনেকেই ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন সঠিকভাবে না জেনে থাকলেও খেলাটি বেশ উপভোগ করেন। আপনাদের উপভোগের মাত্রাটা আরেকটু বাড়িয়ে দিতেই ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন নিয়ে আমাদের এই ছোট্ট প্রয়াস।

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন :

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন

১৮৯৭ সালে প্রথম ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন প্রকাশ করা হয়। কিন্তু ১৮৯৭ থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ ভিন্ন ভিন্ন নিয়মরীতি তৈরী করে এবং সেই অনুযায়ী দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা শুরু করে।  ১৯৬৪ সালের দিকে ভলিবল খেলাকে টোকিও অলিম্পিকে ইন্ডোর গেমস হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন নির্ধারন করা হয়। 

কোর্টঃ

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন এর সর্বপ্রথম বিষয়টি হলো কোর্ট। চলুন দেখে নিই কোর্ট সম্পর্কিত খুঁটিনাটি বিষয়।

  • নেটের সর্বোচ্চ উচ্চতাঃ- ৮ ফুট (মাটি থেকে)
  • কোর্টের মাপঃ- ৬০ ফুট/৩০ ফুট
  • প্রতি পোস্টঃ ৯-৫০ মিটার লম্বা। 
  •  চওড়ায়ঃ- ১ মিটার
  • বর্গাকার জালের পরিমাপঃ- ১০ সে. মি.

মাটি থেকে জালের মাঝখানের উচ্চতাঃ-

  • পুরুষ (২.৪৩) মিটার
  • মহিলা (২.২৪)  মিটার

বলঃ

ব্যাডমিন্টন খেলায় যেমন শাটল  প্রয়োজন ঠিক তেমনি ভলিবল খেলায় ‘ভলিবল’ অপরিহার্য একটি বস্তু। ভলিবল তৈরি করা হয় গোলাকার চামড়া বা সিন্থেটিক বস্তু ও তেরঙ্গা দিয়ে। ভলিবল সাধারণত তিন রঙের হয়ে থাকে।  যেমনঃ- হলুদ, সাদা, নীল।

আরো পড়ুন- ব্যাডমিন্টন খেলার নিয়ম কানুন – ইতিহাস সহ বিস্তারিত জানুন!

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন

খেলার স্থানঃ

ভলিবল খেলার জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ  একটি  বিষয় । যেকোনো ফাঁকা জায়গাতেই ভলিবল খেলা যেতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক নিয়মানুসারে তিন ধরনের মাঠে ভলিবল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। সেগুলো হলোঃ- বীচ ভলিবল, ইনডোর ভলিবল এবং ঘাস ভলিবল। 

খেলোয়াড়ঃ

ভলিবল খেলার অনস্বীকার্য একটি বিষয় হলো খেলোয়াড়। ১২ জন সদস্য নিয়ে ১ টি  ভলিবল দল গঠন করা হয়। প্রতি দল থেকে ৬ জন খেলোয়াড় মাঠে নামেন। প্রত্যেকটা সেটে সর্বোচ্চ ৬ জন খেলোয়াড় কে বদলি করা যায়। খেলা শুরুর পূর্বে সামনের সারিতে ৩ জন এবং পেছনের সাইডে ৩ জন খেলোয়াড়কে পজিশন নিতে হয়। 

খেলা পরিচালনাঃ

ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন ও খেলা সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে ১ জন রেফারি, ১ জন আম্পায়ার, ১ জন স্কোরার ও ২ জন লাইন জার্জ দ্বারা খেলা পরিচালনা করা হয়। 

ভলিবল খেলার মৌলিক নিয়মাবলীঃ

খেলা শুরুর পূর্বে প্রত্যেক দলের খেলোয়াড়দের ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন, বিধি নিষেধ মেনে খেলায় অংশগ্রহণের জন্য প্রস্তুত হতে হয়। প্রথমে দুই দলের মধ্যে টস অনুষ্ঠিত হয়। টসে বিজয়ী দল কোর্ট নির্ধারন করার অথবা সার্ভিস করার সিদ্ধান্তটি বেছে নেওয়ার সুযোগ পায়।

  • সার্ভিস করার নিয়মঃ- সার্ভিস করার মাধ্যমে ভলিবল খেলা শুরু হয়। সার্ভিস অঞ্চলে দাঁড়িয়ে একজন খেলোয়াড় বলশূন্যে তুলে আঘাত করে বিপক্ষে দলের কোর্টে প্রবেশ করাতে হয়। সার্ভিস করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত  খেলোয়াড়  কোর্টে প্রবেশ করতে পারে না। 
  • রিসিভিং দল সার্ভিস গ্রহণ করলে, রিসিভিং দলের সকল খেলোয়াড় ঘড়ির কাটার ন্যায় ঘুরে ঘুরে নিজ নিজ অবস্থান পরিবর্তন করবে। এটাকে খেলার ভাষায় রোটেশন পদ্ধতি বলে। 
  • খেলা চলাকালীন অবস্থায়  বলকে বিপক্ষের কোর্টে পাঠানোর জন্য সর্বোচ্চ তিনবার স্পর্শ করা যায়। ব্লকের মধ্যে বল কে স্পর্শ করা হলে তা গণনার বাইরে। একটা খেলোয়াড় বলকে পরপর দুইবার স্পর্শ করতে পারে না। 
  • একজন খেলোয়াড় তার শরীরের যেকোনো অঙ্গ দ্বারা বলকে আঘাত করতে পারবে। সার্ভিস করা বল যদি নেট স্পর্শ করার পর ও বিপক্ষ দলের কোর্টে গিয়ে পৌছাই তবে সেটাকে রাইট বল হিসেবে ধরা হবে। 
  • ভলিবল খেলাই সাধারণত  ৫ টি সেট হয়ে থাকে। ৫ টি সেটের মধ্যে যে দল তিনটিতে জয়লাভ করবে সেই দলকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।
  • কোন দল ভলিবল খেলার নিয়ম কানুন বহির্ভূত কোনো কাজ করলে সার্ভিস হারাবে। এক্ষেত্রে বিপক্ষ দল সার্ভিস পাবে এবং তাদের স্কোরে ১ টি পয়েন্ট  যোগ হবে। 
  • যে দল পূর্বে ২ পয়েন্ট ব্যবধানে ২৫ পয়েন্ট লাভ করে সেই দলকে উক্ত সেটের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। উভয় পক্ষের পয়েন্ট ২৪-২৪ অবস্থানে থাকলে ডিউস হবে। ২ পয়েন্টের ব্যবধান না হওয়া অব্দি খেলা চলতে থাকবে। 

পরিসমাপ্তিঃ

ভলিবল আমাদের দেশে অতি পরিচিত খেলা না হলেও ভবিষ্যতে এটির জনপ্রিয়তার আকাশচুম্বী হতে পারে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছাতে একটি খেলার যতটুকু রোমাঞ্চকর বৈশিষ্ট্যের প্রয়োজন তার সবগুলোই ভলিবল খেলায় লক্ষ করা যায়। আশা করি, এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনি ভলিবল খেলা সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন। আপনার পাঠক-মনকে কিছু সময়ের জন্য আনন্দিত করতে পারাটা আমাদেরও স্বার্থকতা।  

লেখকঃ ইবরাহিম আরিয়ান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top