কিডনি ড্যামেজের 35 লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজের ৩৫টি কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার!

কিডনি ড্যামেজের অন্যতম লক্ষণ হলো প্রসাবে রক্ত, ঘনঘন প্রসাব ও প্রসাবের সময় ব্যথা। এছাড়াও আরোকিছু বিষয় নিশ্চিতভাবে কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ ইঙ্গিত করে। 

কিডনি মূলত আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। এটি সঠিকভাবে কাজ না করলে বা ড্যামেজ হলে স্বাভাবিকভাবেই শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। 

এর প্রতিকার ও প্রতিরোধ কী তা জানতে এখনি পড়ে ফেলুন আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি। 

Table of Contents

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

যে সমস্ত বিষয় কিডনি ড্যামেজ এর লক্ষণ প্রকাশ করে তা হলো: 

প্রসাবে রক্ত যাওয়া 

কিডনি ড্যামেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।  

খাবারে অরুচি

অসুস্থ হবার পর খাবারে অরুচি আসতে পারে। কিন্তু ঘন ঘন যদি খাবারে অরুচি আসে তবে এটা চিন্তার বিষয়। কারণ শরীরে বিষক্রিয়া তৈরি হলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। 

শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ফুলে যাওয়া 

কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য এবং অপ্রয়োজনীয় পানি বের করে দেয়। কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করলে এই অপ্রয়োজনীয় পানি শরীর থেকে বের হতে পারে না। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ফুলে যায়। 

ঘন ঘন প্রস্রাব বা কম প্রস্রাব

কিডনি ড্যামেজের আর একটি লক্ষণ হলো ঘন ঘন প্রস্রাব বা কম প্রস্রাব হওয়া। অনেক সময় প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হলেও প্রস্রাব হয় না। কিডনি ফিল্টার ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া কিডনি ড্যামেজের একটি লক্ষণ। 

প্রস্রাবের সময় ব্যথা

কিডনির সমস্যা দেখা দিলে প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভূত হবে। প্রস্রাবে ব্যথা, জালা পোড়া ইত্যাদি মূত্রনালীর সংক্রমণের ফলে হয়। আর এগুলো যখন কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে তখন পিঠের নিচে ব্যথা অনুভূত হয়।

শরীরে ক্লান্তি ভাব

কিডনি যখন তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন শরীরে টক্সিন জমা হতে শুরু করে ফলে রক্তে লোহিত রক্ত কনিকা উৎপাদন কমে যায়। ফলে শরীরে সব সময় ক্লান্তি ভাব আসে।

বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

বমি ভাব বা বমি হওয়া কিডনি ড্যামেজের আর একটি লক্ষণ। কিডনি ড্যামেজ হলে রক্তে বর্জ্য পদার্থ বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলে বমি ভাব হয় বা বমি হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। 

সব সনয় শীত বা ঠান্ডা অনুভব 

কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করলে গরম আবহাওয়াতেও সব সময় শীত বা ঠান্ডা অনুভূত হয়।  

ত্বকের সমস্যা

কিডনি যখন তার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন রক্তে বর্জ্য পদার্থ বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ রক্তে খনিজ এবং পুষ্টি গুলো ভারসাম্যহীনতা হয়। যার ফলে ত্বকে বিভিন্ন সমস্যা যেমন ফুসকুড়ি, চুলকানি ইত্যাদি দেখা দেয়। 

অমনোযোগী হওয়া 

কিডনি ড্যামেজ হলে রক্তে লোহিত রক্ত কনিকা তৈরি হতে পারে না। যার ফলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।। ফলে রোগীকে অমনোযোগী হতে দেখা যায়।

মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যথা

কিডনি ড্যামেজ হলে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায় ফলে মাথা ঘোরা বা মাথা ব্যথা অনুভূত হয় এবং স্মৃতি শক্তি কমে যায়। 

পিঠের নিচে ব্যথা

কিডনি ড্যামেজের আর একটি অন্যতম লক্ষণ হলো পেছনে পিঠের নিচে ব্যথা। কিছু কিছু কিডনি রোগের ক্ষেত্রে শরীর ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি পিঠের নিচে ব্যথা অনুভূত হয়।

চোখের চারপাশে ফোলা 

কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করলে শরীর থেকে প্রোটিন প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যাওয়ার কারণে চোখের চারপাশে ফুলে যায়। 

শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা 

কিডনি ড্যামেজের আর একটি লক্ষণ হলো শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা। কিডনি যখন অকার্যকর হয়ে পড়ে তখন ফুসফুসে তরল পদার্থ জমা হয় এবং রক্ত শূন্যতা দেখা দেয় ফলে নিঃশ্বাসে সমস্যা হয়।

এই লক্ষণ গুলো দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। 

কিডনি ড্যামেজ হওয়ার কারণ

সমগ্র বিশ্বে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে বছরে লক্ষ লক্ষ মানুষ মৃত্যু বরণ করছে। এর কারণ কিডনির সঠিক যত্ন কীভাবে না নেওয়া। আর তাই দৈনন্দিন জীবন যাপনে আমরা এমন কিছু কাজ করি যা কিডনির ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়ায়। 

কিডনি ড্যামেজ হওয়ার ১০ টি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো-

১. পরিমাণ মতো পানি পান না করা 

কিডনি ড্যামেজ হওয়ার প্রথম এবং প্রধান কারণ হলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করা। যেহেতু কিডনির প্রধান কাজ হলো লোহিত রক্ত কনিকার ভারসাম্য রক্ষা করা এবং শরীর থেকে বর্জ্য অপসারণ করা। তাই পরিমাণ মতো পানি পান না করলে কিডনির রক্ত প্রবাহ কমে যায় এবং রক্তে দূষিত পদার্থ জমা হতে থাকে ফলে কিডনি ড্যামেজ হতে শুরু করে। 

২. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া

অতিরিক্ত লবণ আমাদের শরীর এবং কিডনির জন্য ক্ষতিকর। কারণ লবণ আমাদের শরীরে সোডিয়ামের একটি বড় উৎস। অতিরিক্ত লবণ খেলে এই সোডিয়াম প্রক্রিয়াজাত করতে কিডনির ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়।  

৩. অনেকক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা 

দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখা কিডনি ড্যামেজের আর একটি কারণ। অনেকক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে মূত্রাশয় প্রস্রাবে পূর্ণ হয়ে থাকে ফলে কিডনিতে প্রস্রাবের চাপ বেড়ে যায় ফলে কিডনি তার কার্যক্ষমতা হারায়।  

৪. ব্যথা নাশক ঔষুধ সেবন করা

শরীরের কোন অঙ্গ-প্রতঙ্গ ব্যথা হলে অনেকেই ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন করে থাকে। যেহেতু ব্যথা নাশক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে তাই এসব ঔষধ শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ এবং কিডনির জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাথানাশক ঔষধ সেবনের ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। 

৫. কোমল পানীয় পান করা

অনেক সময় আমরা পিপাসা মেটানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয় পান করে থাকি। এসব কোমল পানীয়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ক্যাফেইন থাকে যা শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত রক্তচাপ কিডনির ওপর চাপ প্রয়োগ করে ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

৬. অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকা

ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ঘুমের সময় শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গ  বিভিন্ন কার্যকলাপ সম্পন্ন করে থাকে। ঘুমের সমস্যা থাকলে বা অধিক রাত পর্যন্ত জেগে থাকলে কিডনি এবং শরীরের অঙ্গ-প্রতঙ্গের কার্যকলাপে বাঁধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। 

৭. ওজন বা স্থুলতা বৃদ্ধি 

ওজন বা স্থুলতা বৃদ্ধি পাওয়ায় যেমন শারীরিক নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় তেমনি অতিরিক্ত ওজন কিডনির জন্য ক্ষতিকর। 

৮. মদ্য পান করা 

অনেকের মদ্যপানের অভ্যাস রয়েছে। মদে এলকোহল থাকে। মদ পান করা কিডনির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এলকোহলে টক্সিন থাকে যা শরীর থেকে বের করতে কিডনির ওপর অনেক চাপ সৃষ্টি হয়। 

৯. বিশ্রাম না নেওয়া

কিডনি থেকে শুরু করে শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখতে বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। অনেকেই আছেন অসুস্থতার সময়ে প্রয়োজন মতো বিশ্রাম নেই না। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে পরিশ্রমের পাশাপাশি বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। 

১০. ধুমপান করা 

কিডনি ড্যামেজের আর একটি কারণ হলো ধুমপান করা। ধুমপান শুধু কিডনি নয়,শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে কিডনি রোগের সাথে ধুমপানের সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং কিডনি সুস্থ রাখতে হলে ধুমপান বর্জন করতে হবে।  

কিডনি রোগের প্রতিকার

আমাদের দেশে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং নেফ্রাইটিস এই তিনটি কারণে শতকরা ৮০ ভাগ কিডনি ড্যামেজ হয়ে থাকে। এই তিনটি রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে কিডনি রোগের প্রতিকার করা সম্ভব। 

এছাড়াও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে কিডনি ড্যামেজ হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে। যেমন-

নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করুন

কিডনি ভালো রাখতে হলে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। কারণ নিয়মিত শরীর চর্চা করলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকে।  

পরিমাণ মতো পানি পান করুন

কিডনি ভালো রাখার আর একটি উপায় হলো  পরিমিত পানি পান করা। খুব কম বা বেশি পানি পান করা কিডনির জন্য ক্ষতিকর। 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন 

আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। কারণ অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যেহেতু ওজন থেকেই ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের সৃষ্টি হয় তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।কারণ শতকরা ৩০ ভাগ কিডনি ড্যামেজ হয় ওজন বৃদ্ধি জনিত কারণে। 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন

যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। 

কোলেস্টেরল কমাতে হবে

যাদের রক্তে কোলেস্টেরল যেমন ট্রাইগ্লিসারাইড, এলডিএল বেশি পরিমাণে থাকে তাদের খাদ্যাভাসের মাধ্যমে কোলেস্টেরল কমাতে হবে। এক্ষেত্রে চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন

যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তারা তাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন।    

পেইনকিলার সেবন বন্ধ করুন

পেইনকিলার বা ব্যথা নাশক ঔষধ সেবন বন্ধ করুন। কারণ অতিরিক্ত পেইনকিলার সেবনে কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে।  

ধুমপান বর্জন করুন 

ধুমপান বর্জন করতে হবে। কারণ ধুমপান কিডনি ক্ষতি করার পাশাপাশি ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি করে।  

কিডনি রোগের চিকিৎসা 

বর্তমানে কিডনি রোগীর সংখ্যা আশঙ্কজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সময় মতো সঠিক চিকিৎসার অভাবে কিডনি ড্যামেজ হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ কিডনি তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। কিডনি রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি খাদ্যাভাসে পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সকল অঙ্গ-প্রতঙ্গের মধ্যে কিডনি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সময় মতো উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে। 

পাঁচটি ধাপে কিডনি ড্যামেজের দিকে অগ্রসর হয়। প্রথম থেকে শুরু করে চারটি ধাপ পর্যন্ত সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি রোগ নিরাময় করা যায় অথবা কিডনির ক্ষয় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু কিডনি রোগ যদি পাঁচ নম্বর ধাপে চলে যায় তবে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় হলো কিডনি প্রতিস্থাপন বা ডায়ালাইসিস

তবে কিডনি রোগের এই সব চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে আমাদের দেশের শতকরা ১০ ভাগ লোকের এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভবপর নয়। তাই এ মরনব্যধি রোগ থেকে মুক্তির উপায় হলো কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধ করা।  

শেষ কথা 

পরিশেষে বলা যায় কিডনি আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনি আমাদের শরীরে প্রাকৃতিক ছাকুনি হিসেবে বিশেষ ভুমিকা রাখে। আমাদের সচেতনার অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি বিভিন্ন কারণে অকার্যকর হয়ে পড়ে। 

তাই কিডনি সুস্থ রাখতে উল্লেখিত কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে অতি শীঘ্রই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ সামান্য অবহেলা আমাদের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে।   

1 thought on “কিডনি ড্যামেজের ৩৫টি কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার!”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top