বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ

বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ কী? জানুন কারণ সহ প্রতিরোধের উপায়!

বুকে গ্যাস জমা নিয়ে সমস্যায় পড়েননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এটি বেশ পরিচিত একটি সমস্যা। খাবারে অনিয়ম হলে বা অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে এমন সমস্যায় আমাদের পড়তে হয়।

মূলত, একসঙ্গে অতিরিক্ত ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে আমাদের পাকস্থলী সহজে তা পরিপাক করতে পারে না। এর ফলে কিছু খাবার অপরিপাক অবস্থায় থেকে যায়। এই পরিপাক না হওয়া খাবার যখন ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছায় তখন কিছু ব্যাকটেরিয়া তা খেয়ে ফেলে। এরপর সেই ব্যাকটেরিয়াগুলো যখন মরে যায় তখন বুকে গ্যাস সৃষ্টি হয়। 

বুকে গ্যাস একটি সাধারণ রোগ হলেও এটিকে অবহেলা করা ঠিক না। দীর্ঘদিন গ্যাসের সমস্যা হলে তা আলসারে রুপ নিতে পারে। তাই অবহেলা না করে বুকের গ্যাস জমার লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জানা জরুরি। তাহলে চলুন বুকের গ্যাস সম্পর্কিত সকল তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ

একজন সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষের প্রায় ২০০ এমএল গ্যাস থাকে। সাধারণভাবে স্বাভাবিক হজম প্রক্রিয়ার উপজাত হিসেবে কিছু গ্যাস তৈরি হয়। কিন্তু কারো কারো ক্ষেত্রে এই গ্যাস অস্বাভাবিক বেড়ে গেলে বুকে গ্যাস জমে।

আসুন জেনে নিই বুকে গ্যাস জমার লক্ষণগুলো। 

বেশি বেশি ঢেকুর উঠা

বেশি বেশি ঢেকুর উঠা বুকে গ্যাস জমার অন্যতম একটি লক্ষণ। খাবার বদহজমের কারণে বুকে যে গ্যাস জমে তা থেকে বেশি বেশি ঢেকুর উঠে। ঢেকুরের মাধ্যমে বুকের মধ্যে জমে থাকা গ্যাস শরীর বের করে দিতে চায়।

অতিরিক্ত ঢেকুর উঠা আলসারের প্রথম লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়। তাই ঢেকুর উঠা বেশি হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বুকে জ্বালা হয়

বুকে গ্যাস জমলে আপনি যা কিছুই খান না কেন খাবার খাওয়ার পর আপনার বুকে জ্বালা করবে। সাধারণত বুক জ্বালা বুকের ভিতরে মধ্যবর্তী স্থান থেকে শুরু করে গলা পর্যন্ত জ্বালাকর অনুভুতি করে। আবার কখনোও এই জ্বলা শুধু গলায় হতে পারে। আবার গলা ও বুকে উভয় স্হানে হতে পারে। অনেকের বুকে জ্বালার সাথে বুকে ব্যাথ্যা থাকতে পরে।

বুকে গ্যাস জমলে গলার ভেতরে ঝাল, টক বা লবণাক্তের অস্তিত্ব অনুভুত হতে পারে।

পেটফাঁপা

পেট ফাঁপা গ্যাস জমার প্রাথমিক উপসর্গসমূহের একটি। বুকে গ্যাস জমলে সেই গ্যাসের পেট গিয়ে জমা হয় এবং পেট ফুলে উঠে। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হলে অত্যাধিক গ্যাস জমে পেট ফেঁপে বা ফুলে ওঠে। এরপরে শুরু হয় বদহজম। এই পেটফাঁপা ও বদহজম থেকে শুরু হয় কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা। এগুলোর পাশাপাশি কখনো পেটে ব্যথাও থাকতে পারে।

পেটফাঁপা ও অস্বস্তি হলে কখনো শুয়ে থাকবেন না। বরং বসে, দাঁড়িয়ে বা হাঁটাহাঁটির মধ্যে থাকুন। শুয়ে থাকলে পেটের অস্বস্তি ও গ্যাস আরো বৃদ্ধি পায়।

বমি বমি ভাব হয়

যখন গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যাবে তখন বমি বমি ভাব হয়। বুকে যখন অতিরিক্ত গ্যাস জমে তখন সেটা ঢেকুরের মাধ্যমে বমি আকারে বের হতে চায়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে খাবার অপরিপাক থাকার ফলে যে গ্যাস সৃষ্ট হয়, তারজন্য বমি বমি ভাব হয়।

খাবার ইচ্ছা কমে যাওয়া

বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ দেখা দিলে, হঠাৎ করে খাবারে অরুচিভাব দেখা দেয়। এসময় খাবারের প্রতি আগ্রহ হ্রাস পায় বা ক্ষুধা কমে যায়। অনেকক্ষণ খালি পেটে থাকলে বুকে গ্যাসের প্রকোপ বেড়ে যায় যা থেকে অরুচিভাব সৃষ্টি হয়। 

আমাদের অনেকেরই সময়মতো খাওয়া অভ্যাস নেই। এমন বদঅভ্যাস যাদের আছে তাদের খাওয়ার অরুচিভাব ও বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ বেশি দেখা দেয়।

পিঠ ব্যথা হয়

অতিরিক্ত বেশি এসিড জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে দেহে এসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়। যা থেকে বুকে গ্যাস জমে। বুকে গ্যাস জমা দীর্ঘমেয়াদি হলে তা থেকে ধীরে ধীরে পিঠে গ্যাস জমা শুরু হয়। যা পরবর্তীতে পিঠে ব্যাথা সৃষ্টি করে।

বুকের গ্যাস থেকে মুক্তি পাওয়ার ঘরোয়া উপায়

বুকে গ্যাসের সমস্যা নতুন কিছু নয়। এ সমস্যা থেকে প্রতিকারের জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবন করে থাকি। যেগুলোর ব্যাপারে আমরা অবগত থাকি না। যারজন্য পরবর্তীতে আমাদের বিভিন্ন শারিরিক সমস্যা ভুগতে হয়। তবে আপনি চাইলে ঔষধ না খেয়ে ঘরোয়া উপায়ে বুকে গ্যাসের সমস্যা দূর করা যায়। তাহলে আসুন জেনে নিন গ্যাসের সমস্যা দূর করার সহজ

আদা

বুকে গ্যাসের সমস্যা সমাধানের জন্য আদা হলো অনেক ভালো প্রাকৃতিক উপাদান। এছাড়া আদাকে আয়ুর্বেদে একটি অত্যন্ত উপকারী উপাদান হিসেবে দেখা হয়েছে। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্ত রাখে।

গ্যাসের সমস্যা হলে খানিকটা আদা কুড়িয়ে নিন। এরপর সেই আদা এক চামচ লেবুর রস বা মধু সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। আবার আদা চা খেতে পারেন। এগুলো খেতে না পারলে আদা পানিতে ফুটিয়ে এক চিমটি লবণ মিশিয়ে খেতে পারেন।

আদা নিয়মিত খেলে অতিরিক্ত গ্যাস জমে না এর পাশাপাশি বদহজমও দূর করতে সাহায্য করে।

কলা

কলায় রয়েছে পটাশিয়াম। যা  প্রাকৃতিকভাবে অ্যান্টাসিড এর কাজ করে। তাই কলা খেলে আপনাকে আলাদা করে অ্যান্টাসিড খেতে হবে না। এছাড়া কলায় থাকা অ্যাসিড  রিফ্লাক্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। যা দ্রুত গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। 

এছাড়াও কলায় রয়েছে স্যালুবল ফাইবার। যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সাহায্য করে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে একটা করে কলা খান। কিছুদিনের মধ্যেই আপনি এর উপকার ভোগ করবেন। তবে দিনে ২টির কলার বেশি খাওয়া ঠিক নয়।

পানি

গ্যাসের সমস্যা সমাধানের অনেক প্রাচীন পরিচিত একটি উপায় হচ্ছে পানি পান করা। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে তা খাবার হজমে সাহায্য করে। যারফলে গ্যাস কম জমে। এছাড়া পানি বেশি খেলে পেটের অন্য অন্য গ্যাসের পরিমাণ কমে যায়। তাই গ্যাস্ট্রিক বা গ্যাস সমস্যায় পানি খাওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

পানি গ্যাসের সমস্যা কমানোর পাশাপাশি আরও অনেক রোগের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে। এ জন্য নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮  গ্লাস পানি পান করতে হবে।

জিরা

জিরার মধ্যে রয়েছে এসেনশিয়াল অয়েল বা মৌলিক তেল। যা স্যালিভারি গ্ল্যান্ডকে আরও সক্ষম করে তোলে। যারফলে খাবার আরো ভালোভাবে হজম হয়। যারজন্য খাবার থেকে অতিরিক্ত গ্যাসও সৃষ্টি  হয় না।

তাই পেট গ্যাস হলে এক টেবিল চামচ জিরে নিয়ে দুই কাপ পানির মধ্যে দিয়ে ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর এই পানি ঠান্ডা খেতে খাবেন। উপকার পাবেন।

এছাড়া আপনি চাইলে ১০০ গ্রাম জিরা ভেজে ফেলুন। এবার এটিকে এমন ভাবে গুড়া করুন যেন একদম গুঁড়া গুঁড়া না হয়ে যায়, একটু ভাঙা ভাঙা থাকে। এরপর এই গুড়াটি একগ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন খেতে পারেন। এই উপায়ে প্রতিদিন জিরা খেলে গ্যাসের সমস্যা থেকে দূরে থাকা যায়।

দুধ

গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করে গ্যাস থেকে মুক্তি দেয় দুধ। দুধের মধ্যে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা পাকস্থলীর এসিড কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া ক্যালশিয়াম শরীরের অম্ল শুষে নিতে সাহায্য করে। 

তাই গ্যাসের সমস্যা হলে ঠান্ডা দুধ খান। দুধ গরম করার পর সহনশীল পর্যায়ে আসলে তা খেতে হবে। কারণ দুধ শরীরে সহ্য না হলে তা গ্যাসের সমস্যা বাড়ায়।

 উপসংহার

বুকে গ্যাস জমার লক্ষণ সাধারণ একটি সমস্যা হলেও এটি একটি কষ্টদায়ক সমস্যা। প্রতিনিয়ত অনেকেই এই সমস্যা ভুগছেন। শুধু মাত্র আমাদের ভুলে জন্য এই সমস্যা ভুগে থাকি৷ তাই আমাদের উচিত এখনই সচেতন হওয়া।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top