এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ

এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কী কী? জানুন এটি প্রতিরোধের উপায় জানুন!

এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ জানতে মানুষ বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হলো ভার্মিফর্ম অ্যাপেন্ডিক্সের প্রদাহ। বৃহদান্ত্র ও ক্ষুদ্রান্ত্রের সংযোগস্থলে বৃহদান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত একটি ছোট থলির মতো অঙ্গ থাকে। যাকে অ্যাপেন্ডিক্স বলা হয়। আমাদের দেহে এই অঙ্গের সাধারণত তেমন কোনো কাজ নেই।

তবে বিশ্বের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে এই অঙ্গটি প্রাণঘাতী। আর অ্যাপেন্ডিক্সের এ সমস্যাটি অ্যাপেন্ডিসাইটিস নামে পরিচিত।

এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ

সাধারণ এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ হলো তলপেটের ডানদিকে ব্যথা, জ্বর, বমি ইত্যাদি। তবে ৪০% ক্ষেত্রে রোগী সবগুলো লক্ষণ নিয়ে আসে না। অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে পুরা পেটে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে এবং উদর আবরণী বা পেরিটোনিয়ামের প্রদাহ হয় ও সেপসিস হতে পারে। লক্ষণ সমূহ :

  • অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথায় হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা শুরু হয়।সাধারণত নাভির কাছ থেকে পেটের মধ্য থেকে ব্যথা শুরু হয়ে আস্তে আস্তে তা ডান পাশে গিয়ে স্থায়ী হয়।
  • ক্ষুধা মন্দা তৈরি হয় সাথে বমি বমি ভাব হয় ও বমিও হয়।
  • অ্যাপেন্ডিক্সের কাছাকাছি লসিকা গ্রন্থি ফুলে তীব্র ব্যথা সৃষ্টি করে।
  • পেটের ডান পাশের পেশি বেশ আঁটসাট হয়ে যায়।
  • নড়াচড়া করলে, গভীর ভাবে লম্বা দম নিলে কিংবা হাঁচি বা কাশি দিলে ব্যথা তীব্র ও অসহনীয় হয়ে উঠে।
  • হালকা জ্বর থাকতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শরীরের তাপমাত্রা খুব বেশি হয় না।
  • কোনো কারণে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গেলে সারা পেটজুড়ে সাংঘাতিক ব্যথা অনুভূত হয় এবং পেট ফুলে উঠে।

অনেক সময় এসব ব্যথাকে আমল না দিয়ে নানা রকম ব্যথানাশক এবং অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেয়ে ধামাচাপা দেওয়া হয়। এতে করে পরবর্তী সময়ে রোগীর শরীরে মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস কি?

মানুষের দেহের অভ্যন্তরে বৃহদন্ত্রের সঙ্গে লাগানো কনিষ্ঠ আঙুলের মতো একটি সরু থলের নাম অ্যাপেন্ডিক্স।অ্যাপেন্ডিক্স লম্বায় ২ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি থাকে তলপেটের ডান দিকে। অ্যাপেন্ডিক্স এর সঠিক কাজ যে কী, তা এখনো অস্পষ্ট। কিন্তু এই ছোট্ট থলেতে আকস্মিক ব্যথা হলে দেখা দেয় অসহনীয় যন্ত্রনা এরই নাম অ্যাপেন্ডিসাইটিস।

সাধারণ অস্ত্রোপচার

অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ ও সেইসাথে এন্টিবায়োটিক সেবন অ্যাপেন্ডিসাইটিসের চূড়ান্ত চিকিৎসা। অ্যাপেন্ডিক্স এর গহ্বর বা লুমেন কোনো কারণে বন্ধ হলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয় যেমন ফিকালিথ বা মল দিয়ে তৈরি ক্যালসিফাইড পাথর, পরজীবী, পিত্তাশয় পাথর এবং টিউমার ইত্যাদি লুমেন বন্ধ করে দিতে পারে। 

এর ফলে অ্যাপেন্ডিক্সের টিস্যুতে রক্ত চলাচল কমে গিয়ে সহজেই ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন হয়। ব্যথার ফলে অ্যাপেন্ডিক্স অনেক ফুলে যায় ফলে এর টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে মরে যেতে থাকে।সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রদান না করলে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে ব্যাক্টেরিয়া পুরা পেটে ছড়িয়ে পড়ে, এ থেকে তীব্র ব্যথা হয়।

অ্যাপেন্ডিক্স নির্ণয়

রোগীর লক্ষণসমূহ পর্যবেক্ষণ করেই অনেকাংশে  অ্যাপেন্ডিক্স রোগ নির্ণয় সম্ভব। রোগের লক্ষণ ও শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় সম্ভব না হলে রেডিওগ্রাফিক চিত্র যেমন সিটি স্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি এবং ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হয়। এক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাফির তুলনায় সিটি স্ক্যান বেশি নির্ভুল রিপোর্ট দেয়।  তবে শিশু ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে আল্ট্রাসনোগ্রাফি বেশি উপযোগী কারণ সিটি স্ক্যানে তেজস্ক্রিয়তাজনিত ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।

এপেন্ডিসাইটিস এর প্রধান চিকিৎসা  

অ্যাপেন্ডিসেক্টোমি বা শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স কেটে ফেলা এই রোগের সমাধান। এছাড়া ল্যাপারোটোমি বা ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে এই অপারেশন করা যায়। সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত সার্জারি এই রোগের জটিলতা বা অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে গিয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমিয়ে আনে। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার এসময় ইনফেকশন কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।

সময়মতো অস্ত্রোপচার করা না গেলে বা সমস্যা ধরা না পড়লে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে মৃত্যুও হতে পারে। এই জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে ‘সার্জিক্যাল ইমার্জেন্সি’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তাই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের সমস্যা কখনোই অবহেলা করা উচিত নয়।

অ্যাপেন্ডিসাইটিস কেন ও কীভাবে হয়?

কোনো কারণে অ্যাপেন্ডিক্সে খাদ্য বা ময়লা ঢুকে গেলে সেখানে রক্ত ও পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। এরপর সেখানে নানা জীবাণুর আক্রমণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অ্যাপেন্ডিক্সে ব্যথা হতে শুরু করে।

কেমন এই অ্যাপেন্ডিসাইটিস ব্যথা?

অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা সাধারণত নাভির চারপাশে বা নাভির একটু উপর থেকে শুরু হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর তলপেটের ডান দিকের অংশে ব্যথাটা স্থায়ী হয়। থেমে থেমে ব্যথা ওঠে সেটা তীব্র ও হালকা এই দুই রকমেরই হতে পারে। 

এছাড়া এসময় বমি বমি ভাব বা দু-একবার বমি হতে পারে। সাথে হালকা জ্বরও থাকতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। ব্যথা তীব্র আকার  হলে রোগী হাসপাতালে আসতে বাধ্য হয়। তবে এসব ক্ষেত্রে হালকা ব্যথা হলেও সতর্ক হতে হবে। 

কেননা, পরবর্তী সময়ে রোগীর অ্যাপেন্ডিক্সের চারদিকে বিভিন্ন উপাদান জমে পেটে একটি ফোঁড়া তৈরি হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে অ্যাপেন্ডিক্স ছিদ্র হয়ে খাদ্যনালির ভেতরের বিভিন্ন উপাদান, পরিপাক হয়ে যাওয়া খাবারের অংশ ও মল বেরিয়ে পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর ফলে পেটের ভেতরে, এমনকি রক্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে গুরুতর সংক্রমণ। এ ধরনের ঘটনায় রোগীর জীবনের আশঙ্কাও দেখা দেয় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

অ্যাপেন্ডিক্স এর ঘরোয়া চিকিৎসা

প্রাথমিকভাবে অ্যাপেন্ডিক্স শনাক্তকরণের পর কিছু ঘরোয়া উপায়ে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা ও ফোলা কমানো যায়। ঘরোয়া প্রতিকার গুলো হচ্ছে :

  • অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ঘরোয়া প্রতিকার হলো মুগ ডাল । এক মুঠো মুগ ডাল এক বাটি পানিতে ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিবেন। এরপর সকালে মিশ্রণটি থেকে এক টেবিল চামচ পরিমান পান করুন। কার্যকরী ফল পেতে দিনে অন্তত তিন বার গ্রহণ করুন।
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিরাময়ে রসুন অনেক কার্যকরী উপাদান, ইহা অ্যাপেন্ডিক্সের ফোলা কমাতে পারে।
  • অ্যাপেন্ডিক্সে আক্রান্ত রোগির জন্য বেশি করে সবজি খাওয়া ভালো। ১০০ গ্রাম শশা ও ১০০ মিলিলিটার বিটের রসের সাথে ৩০০ মিলিলিটার গাজরের রস একসাথে মিশিয়ে দিনে দুই বার পান করলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিরাময়ে অত্যন্ত উপকারি।
  • ব্যথা কমানোর জন্য একটি ভেজা কাপড় পেটের উপর জড়িয়ে এর উপরে শুষ্ক পশমী কাপড় শক্ত করে বেধে রাখুন। 
  • অ্যাপেন্ডিক্স সুস্থ রাখতে সারাদিনে প্রচুর পানি পান করুন।
  • গম চিবিয়ে খাওয়া অ্যাপেন্ডিসাইটিসের জন্য কার্যকরী ঘরোয়া প্রতিকার এবং এটি হজমের জন্য ও উপকারি।
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগীদের জ্বর হলে তুলসি পাতা পানিতে সিদ্ধ করে খাওয়ান। একমুঠ পরিমাণ তুলসি পাতার সাথে এক টেবিল চামচ আদার পেস্ট এক কাপ পানিতে মিশিয়ে চুলায় জ্বাল দিতে থাকুন যতক্ষণ না মিশ্রণটি অর্ধেক হয়ে যায়। এই মিশ্রণ বদহজম এবং গ্যাসের সমস্যা দূর করতে পারে। প্রতিদিন ৩-৪টি কাঁচা তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। 
  • পুদিনা পাতার কয়েক ফোঁটা রস পানিতে মিশিয়ে ৩-৪ ঘন্টা পর পর নিয়মিত পান করলে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা কমে যায়। 
  • অ্যাপেন্ডিসাইটিস নিরাময়ে লেবুর রস ভীষণ উপকারি। লেবুর রস ব্যথা কমাতে এবং বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে উপকার করে। একটি লেবুর রস বের করে নিয়ে এর সাথে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে নিন। দিনে কয়েকবার মিশ্রণটি পান করুন। উপকার পেতে কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত পান করুন।
  • এক চামচ মেথি ঠান্ডা পানিতে মিশিয়ে নিয়ে মিশ্রণটি কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নিবেন। এরপর মিশ্রণটি ঠান্ডা করে চায়ের মত পান করুন। এই মিশ্রণ অ্যাপেন্ডিক্সের ভিতরে পুঁজ ও অত্যধিক মিউকাস উৎপাদনে বাঁধা প্রদান করে। তাই ইহা নিয়মিত পান করুন।
  • দীর্ঘস্থায়ী অ্যাপেন্ডিসাইটিস এর ক্ষেত্রে প্রতিদিন এক লিটার ঘোল পান করলে উপকার পাবেন। এটি অ্যাপেন্ডিক্সের ভিতরে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

শেষকথা

এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ তো জানলেন, অ্যাপেনন্ডিসাইটিস আপনার শরীরের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। উপরোক্ত ঘরোয়া চিকিৎসার মাধ্যমে অ্যাপেনন্ডিসাইটিসের ব্যথা ও জ্বলন কমানো যায়। যদি এগুলো কিছুদিন ব্যবহার করার পরও আপনি অ্যাপেনন্ডিসাইটিস ব্যথা থেকে মুক্ত হতে না পারেন তাহলে আপনাকে অপারেশনের মাধ্যমে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করিয়ে ফেলতে হবে।

এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে অপারেশনের প্রস্তুতি নিতে হবে।মনে রাখবেন খুব বেশিদিন অ্যাপেনন্ডিসাইটিসের ব্যথা নিয়ে অপেক্ষা করা ঠিক নয় কারণ এতে অ্যাপেন্ডিক্স ফেটে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!        

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top