চোখ উঠলে করণীয় কি

চোখ উঠলে করণীয়; জেনে নিন চোখ ওঠার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার

চোখ উঠলে করণীয় কি? চোখ ওঠার কারণ, লক্ষণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো। চোখ ওঠা একটি সংক্রমণ যা শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। 

সাধারণত ভাইরাস এবং ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে চোখ ওঠা রোগ হয়ে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় একে কনজাংটিভাইটিস বলে। রোগটি ছোঁয়াচে। বাতাসের আদ্রতা যে মৌসুমে বেশি থাকে সে সময় এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। 

চোখ উঠলে করণীয় কি

চোখ ওঠা একটি ছোঁয়াচে রোগ। পরিবারের একজন এ রোগে আক্রান্ত হলে অন্যদেরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত জিনিস পত্র কোনো সুস্থ ব্যক্তি ব্যবহার করলে তারাও সংক্রমিত হবে। চলুন তাহলে জেনে নিই চোখ উঠলে করনীয় কি, চোখ ওঠার কারণ, লক্ষণ এবং ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে।

চোখ উঠলে যা করনীয় তা হলো-

  • চোখ উঠলে সারাদিনে কয়েক বার চোখ পরিস্কার করতে হবে। 
  • সব সনয় হাত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং কিছুক্ষণ পর পর সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। 
  • হাত দিয়ে চোখ চুলকানো যাবে না 
  • টিস্যু বা রুমাল দিয়ে চোখ পরিস্কার করতে হবে এবং ব্যবহৃত রুমাল বা টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। 
  • নিজের ব্যবহৃত কাপড় চোপড় ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে এবং অন্য কারও ব্যবহার করা যাবে না। 
  • ধুলোবালি, ধোঁয়া এবং বাতাস থেকে চোখ দূরে রাখতে হবে। 
  • চোখ কচলানো বা ঘষে চুলকানো যাবে না। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে। 
  • অন্যের ব্যবহৃত আই ড্রপ চোখে দেয়া যাবে না। 
  • ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে এবং অন্যদের থেকে নিজেকে দূরে থাকতে হবে। 
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার এবং সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে। 
  • চোখ উঠলে কোনো প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। 
  • প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। 

চোখ ওঠার কারণ

চোখ ওঠা ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত একটি ছোঁয়াচে রোগ। অনেক সময় এলার্জি জনিত কারণেও চোখ ওঠে। গরম এবং বর্ষা ঋতু বিশেষ করে যে মৌসুমে বাতাসে আদ্রতা বেশি থাকে সে মৌসুমে এ রোগ বেশি হয়। এছাড়াও অপরিচ্ছন্ন এবং অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন চোখ ওঠার অন্যতম কারণ। 

এছাড়াও যারা নিয়মিত বাসস্ট্যান্ড, ট্রেন,  লঞ্চঘাট, স্টেশনে চলাচল করেন তারা সহজেই চোখ ওঠা সংক্রমণে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এমনকি চোখ ওঠা ব্যক্তির আশেপাশে যারা থাকে, তাদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

চোখ ওঠার লক্ষণ 

চোখ ওঠার সাধারণ লক্ষণ গুলি হলো:

  • চোখ খচখচ করে বা চোখে অস্বস্তিবোধ অনুভব হয়। 
  • চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করে এবং চোখের নিচের অংশ ফুলে যায়।  
  • প্রথমে এক চোখ লাল হয় পরে দুই চোখই লাল হয়ে যায়। 
  • চোখে ব্যথা হয় এবং হালকা জ্বালাপোড়া করে। 
  • চোখে আলো সহ্য হয় না এবং চোখের পাতা ফুলে যায়।  
  • চোখে পিচুটি দেখা দেয় এবং সাদা ময়লা আসে। 
  • ঘুম থেকে ওঠার পর তাকানো যায় না চোখের পাতা লেগে থাকে।
  • কারো কারো চোখের কর্নিয়া আক্রান্ত করে ফলে সে চোখে ঝাপসা দেখে। 

এই সমস্ত লক্ষণ গুলি দেখা দিলে বুঝতে হবে আপনার চোখ সংক্রমিত হয়েছে। তাই অবহেলা না করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। 

কীভাবে এ রোগ ছড়ায় 

যেহেতু চোখ ওঠা একটি ছোঁয়াচ রোগ তাই দ্রুত এ রোগ অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে চোখ ওঠা রোগীর ব্যবহৃত জিনিস পত্র যেমন চশমা, তোয়ালে, টিস্যু বা পেপার, গামছা, রুমাল, এবং কোনো প্রসাধনী যদি সুস্থ কোন ব্যক্তি ব্যবহার করে তবে সেই ব্যক্তি এ রোগে আক্রান্ত হবে। 

মূলত চোখ ওঠা রোগীর ব্যবহৃত জিনিস পত্র ধরার পর কেউ যদি হাত না ধুয়ে চোখে হাত দেয় তবে সেও এ রোগে আক্রান্ত হবে। আবার চোখ ওঠা রোগীর সাথে হ্যান্ড টু আই কন্টাক্ট অর্থাৎ হাত না ধুয়ে চোখ ছুৃঁলে এ রোগে আক্রান্ত হয়।

চোখ ওঠার ঘরোয়া প্রতিকার 

চোখ উঠলে করণীয় হিসেবে কিছু ঘরোয়া প্রতিকার আছে। চোখ উঠলে এক টুকরো পরিস্কার তুলা বা নরম সুতি কাপড় হালকা গরম পানিতে ডুবিয়ে ভালো ভাবে চেপে চোখের পাতা এবং পাপড়ি পরিস্কার করতে হবে। সারাদিনে তিন থেকে চার বার এ কাজটা করা যেতে পারে। এভাবে গরম সেঁক দেওয়ার পর কয়েক মিনিট পরে ঠাণ্ডা পানিতে কাপড় বা তুলা ডুবিয়ে সেঁক দেয়া যেতে পারে। 

চোখ উঠলে চোখের ওপর চাপ পড়ে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। কম্পিউটার বা ল্যাপটপ, মোবাইল এবং টেলিভিশন থেকে দূরে থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। 

পরিশেষ

শেষ কথায় বলা যায় চোখ ওঠা রোগটা মূলত ভাইরাস জনিত এবং ছোঁয়াচে। তবে এ রোগ নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই। কারণ এটি স্বল্পমেয়াদি রোগ। তাই সঠিক নিয়ম মেনে চললে খুব দ্রত বিশেষ করে সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে এ রোগ সেরে যায়।

যেহেতু রোগটা সংক্রামক তাই রোগীকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। চোখ ওঠার লক্ষণ গুলি দেখা দিলে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ওপরে উল্লেখিত চোখ উঠলে করনীয় গুলো ঠিকমতো মেনে চলতে হবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top