ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

অতিরিক্ত ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে আপনার করণীয় ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১২ উপায় জানুন!  

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়: শরীরের শুধু রোগ হয় না, মনেরও রোগ হয়। কিন্তু আমরা শুধু শরীরের রোগটাকেই প্রাধান্য দেই, খোঁজ রাখি না মনের অসুখের। ভয়াবহ এই মনের অসুখের নাম হলো ডিপ্রেশন। ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা হলো মনের মারাত্মক এক ব্যাধির নাম।

আজকাল কম-বেশি অনেকেই ডিপ্রেশনে ভোগে৷ কিন্তু অবহেলা আর সচেতনতার অভাবে ডিপ্রেশনের বিষয়ে আমরা নজর দেই না। অনেকেই জানে না, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়গুলোর বিষয়ে। চলুন আজ না হয় জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে একজন মানুষ ডিপ্রেশনের ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হতে পারে। 

ভিডিওঃ মানসিক রোগ থেকে মুক্তির উপায় ।। ডিপ্রেশন নিয়ে কিছু কথা…

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে চাইলে সর্বপ্রথম নিজেকে নিজের সহায়তা করতে হবে৷ আপনার ইচ্ছাশক্তি ছাড়া কখনই ডিপ্রেশন থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। 

চলুন না হয় জেনে নেওয়া যাক ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়গুলো সম্পর্কে-

১. নিজেকে এগিয়ে আসা: 

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হলো নিজেকে এগিয়ে আসা। নিজেই নিজের ডিপ্রেশনের কারণ খুঁজে বের করা, উত্তরণের পথ খোঁজা। সর্বোপরি নিজেকে নিজেরই সমর্থন করা, সহায়তা করা। 

২. নিজেকে ব্যস্ত রাখা ও ভালোবাসা:

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির আরও একটি উপায় হলো নিজেকে ব্যস্ত রাখা। সবার আগে নিজের ভালো থাকাটা জরুরি সেটা অবশ্যই নিজেকেই অনুধাবন করতে হবে। যে কাজ করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন সেই কাজটির মাধ্যমে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। 

আবার, যেসব মানুষ নিজেকেই ভালোবাসে না তারাই মূলত সবচেয়ে বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন৷ তাই ডিপ্রেশন কাটাতে নিজেকে ভালোবাসুন। নিজের সাফল্যের জন্য নিজেকে পুরষ্কার দিন। যে বিষয়গুলো আপনাকে ভালো রাখবে সেগুলোর প্রতি যত্নবান হউন।

৩. সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন ও ধর্মচর্চা:

সুশৃঙ্খল জীবন-যাপন ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি দিতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ও বিশৃঙ্খল জীবন ডিপ্রেশন বাড়ায়। তাই আপনি যদি জীবনকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে পারেন তাহলে সহজেই ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। নিয়মিত শরীরচর্চা যেমন- হালকা ব্যায়াম, হাঁটা, দৌঁড়ানো, সাইকেল চালানো, মেডিটেশন করতে পারেন। 

তাছাড়া ডিপ্রেশন কাটানোর অন্যতম উপায় হলো ধর্মচর্চা। এজন্য নিজ ধর্ম ও স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখুন। আপনি যে ধর্মাবলম্বী যেই ধর্ম পালন করুন। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। নিয়মিত নামাজ, রোজা, উপবাস পালন করুন। এতে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো অনুভব করবেন। তাছাড়া নিয়মিত ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করলে জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ে।

৪. মিউজিক থেরাপি নিন:

মিউজিক থেরাপি ডিপ্রেশন কাটাতে একটি অনন্য উপায়। নিয়মিত মিউজিক থেরাপি আপনার মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে আপনি সফট মিউজিক থেরাপি নিতে পারেন। আবার আপনার মস্তিষ্ককে প্রশান্তি দেয় এমন মিউজিক থেরাপি নিন বা পছন্দের কোনো গান শুনতে পারেন। 

৫. সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন:

নেতিবাচক চিন্তা আমাদের মন ও মস্তিষ্কের উপর খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। যারা বেশি নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা করেন তারাই বেশি ডিপ্রেশনে ভোগেন। তাই ডিপ্রেশন কাটাতে হলে নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা সবার আগে বাদ দিতে হবে।

বিশেষ করে নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা; যেমন- আমাকে দিয়ে কিছু হবে না, লোকে কি বলবে এসব বাদ দিতে হবে। সবসময় ইতিবাচক চিন্তা করুন। আমি পারবো, আমাকে দিয়েই হবে- এ জাতীয় ইতিবাচক চিন্তা মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

৬. মোবাইলের ব্যবহার কমিয়ে দিন:

অতিরিক্ত মোবাইলের ব্যবহার থেকে আসক্তির জন্ম নেয়, যা অনেকসময় ডিপ্রেশনে রূপ নেয়। তাই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমিয়ে তা সীমিত করুন। ঘুম থেকে উঠেই মোবাইল ফোন দেখা থেকে বিরত থাকুন। দিনের এমন একটা সময় নির্ধারণ করুন যখন আপনি ফোন ব্যবহার করবেন। তাছাড়া অপ্রয়োজনে ফেসবুক, ইউটিউবসহ সব সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার সীমিত করুন। 

৭. পরিবার ও বন্ধুদের সময় দিন:

ডিপ্রেশন কাটাতে পরিবারের সান্নিধ্য ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত পরিবারের সাথে সময় কাটালে ডিপ্রেশন কেটে যায়৷ ব্যক্তি জীবনে বাবা-মা-ভাই-বোন-আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করুন। বাবা-মা বয়স্ক হলে তাদের সেবা করুন।

এতে মানসিক প্রশান্তি আসবে। তাছাড়া বিবাহিত জীবনে জীবনসঙ্গীর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ও দাম্পত্যকলহ এড়িয়ে চলতে পারলে ডিপ্রেশন নামক সমস্যার সমাধান হয়৷ 

এছাড়া নির্দিষ্ট সংখ্যক বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিন, মজা করুন। এতে মন ভালো থাকবে। তাছাড়া বছরে অন্তত একবার পরিবার বা বন্ধুদের সাথে দূরে ভ্রমণ করুন করলে নতুন উদ্যম ফিরে আসবে।

৮. বই পড়ুন: 

বই মানুষের নীরব বন্ধু। আর তাই বই ডিপ্রেশন নিরাময়ের মাধ্যম। যারা বই পড়তে পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি খুবই কাজের। নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস আপনাকে আরও বিকশিত করবে। যা আপনার ব্যক্তিগত জীবনেও কাজে লাগতে পারে। তাই ডিপ্রেশন কাটাতে ও জ্ঞানচর্চার বিকাশে বইয়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন।

৯. স্ট্রেস কমিয়ে ফেলুন: 

জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে স্ট্রেস থাকবে এটি স্বাভাবিক। হোক তা ব্যক্তিগত জীবনে, ছাত্র বা কর্মজীবনে। স্ট্রেস কমাতে সময়মত কাজ করা জরুরি। তাছাড়া কাজ ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে নির্ধারিত সময়ে সম্পূর্ণ করলে চাপমুক্ত থাকা যায়। 

১০. ইতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখুন: 

ইতিবাচক মনোভাব যেমন ডিপ্রেশন কাটায় ঠিক ইতিবাচক মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখলে আপনার মধ্যে ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পাবে। পজেটিভ মানুষের মোটিভেশন ও পজেটিভ মাইন্ড আপনার ডিপ্রেশন কাটাতে সহায়তা করবে।

১১. আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখুন:

আমাদের আবেগ লাগামহীন ঘোড়ার মতো। আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখলে ডিপ্রেশনকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। সেজন্য অতিরিক্ত আবেগী হয়ে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। 

১২. সম্পর্কে পজেটিভ থাকার চেষ্টা করুন:

অনেকেই বিবাহ বিচ্ছেদ বা প্রেমের বিচ্ছেদের পর ডিপ্রেশনে পড়ে যান। যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। 

সম্পর্ক ও সম্পর্কের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন। সম্পর্ক ভেঙে গেলে তা মেনে নিন। অপ্রয়োজনে নিজেকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

অতিরিক্ত ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে আপনার করণীয়:

প্রতিটি বয়সের মানুষেরই ডিপ্রেশন থাকবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু ডিপ্রেশন যখন দীর্ঘমেয়াদী কোনো মানসিক অসুখে রূপ নেয় সেটা হয় ভয়াবহ। অতিরিক্ত ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে হলে আপনাকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। অতিরিক্ত ডিপ্রেশন থেকে বাঁচতে কাউন্সিলিং খুবই জরুরি।

একজন অভিজ্ঞ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট আপনাকে ব্যক্তিগত বা দলগত কাউন্সিলিং করাতে পারেন। এই পদ্ধতিতে নিজেকেই নিজের ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার উপায় খুঁজে বের করতে হয়। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট শুধু আপনাকে পরামর্শ দিবেন, পথ দেখাবেন।

কাউন্সিলিং করে ডিপ্রেশন কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব। আবার অনেক সময় সাইক্রেটিস্টের পরামর্শ নিতে হয়। উনি প্রয়োজন অনুসারে চিকিৎসা, থেরাপি ও ওষুধ দিয়ে থাকেন। 

ডিপ্রেশন কমানোর খাবার:

ডিপ্রেশন কমাতে সঠিক খাবার গ্রহণ জরুরি। আপনার ডায়েট চার্টে নিয়মিত পুষ্টিকর ও সুষম খাবার রাখতে চেষ্টা করুন। তেল-চর্বি, মশলা জাতীয় খাবার, লাল মাংস, ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত ক্যাফেইন প্রভৃতি গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন বা সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করুন।

নিয়মিত ওমেগা থ্রি, ভিটামিন-এ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্টযুক্ত খাবার, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ওমেগা ফ্যাটি-এসিডযুক্ত খাবার, ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন। ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, সবুজ ও রঙীন ফল ও শাক-সবজী, ডাল, বাদাম,প্রভৃতি পুষ্টিকর খাবার আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন। অবশ্যই নিয়মিত পানি পান করুন।

উপসংহার:

জীবনের যেকোনো পর্যায়ে মানুষ ডিপ্রেশনে পড়ে। তাই ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় নিজেকেই খুঁজে পেতে হয়৷ ডিপ্রেশন জীবনের জটিলতা বাড়ায়। সহজ, স্বাভাবিক ও সুশৃঙ্খল জীবনে ডিপ্রেশন কম থাকে৷ আর আপনার ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনার মাধ্যমেই আপনি জীবনকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top