প্রায় মানুষের কোন না কোন কারণে পেট ব্যথা হয়। তবে পেট ব্যথার যতগুলো কারণ আছে তার মধ্যে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা অন্যতম।
পরিচিত রোগ হলেও সময় মতো চিকিৎসা না করলে এটি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে। আর তাই এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি সেই সম্পর্কে সকলেরই জেনে রাখা জরুরি।
মানব দেহের বৃহদন্ত্র এবং ক্ষুদ্রান্ত্রের সংযোগ স্থলে বৃহদন্ত্রের সাথে সংযুক্ত একটি ছোট থলির নাম হলো এপেন্ডিক্স। এই এপেন্ডিক্স সংক্রমিত হলে যে লক্ষণ গুলি প্রকাশ পায় সেগুলোই এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ।
যে কোনো বয়সের ব্যক্তি হটাৎ করে Appendicitis দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। অনেকে এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথাকে অবহেলা করেন এবং বিভিন্ন ব্যথা নাশক ঔষধ সেবনের মাধ্যমে ব্যথাটা দাবিয়ে রাখেন। কিন্তু পরবর্তীতে এপেন্ডিক্স জটিল আকার ধারণ করে।
তাই এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি সেই সম্পর্কে অবগত হতে হবে এরং তা প্রতিরোধের উপায় জানতে হবে। চলুন তাহলে শুরু করা যাক।
Table of Contents
এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি
আমরা অনেকেই এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথাকে গ্যাসের ব্যথা মনে করে এড়িয়ে যায়। সব ব্যথায় কিন্তু গ্যাসের ব্যথা নয়। অনেক সময় জটিল কোন রোগের কারণেও পেট ব্যথা হতে পারে। তবে এপেন্ডিসাইটিস এর প্রথম এবং প্রধান লক্ষণ হলো পেট ব্যথা। পেট ব্যথার পাশাপাশি এপেন্ডিসাইটিস এর আরও কিছু লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন-
১. এপেন্ডিসাইটিস হলে নাভীর চারপাশে বা নাভীর একটু ওপর থেকে ব্যথা শুরু হবে যা কয়েক ঘন্টা পর পেটের নিচে ডান দিকে ব্যথাটা ছড়িয়ে পড়ে।
২. এ সময় অল্প মাত্রায় জ্বর আসতে পারে। তবে শরীরের তাপমাত্রা খুব একটা বেশি হয় না।
৩. এপেন্ডিসাইটিস হলে কোষ্ঠকাঠিন্য বা পাতলা পায়খানা হতে পারে।
৪. বমি বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৫. খাবার খেলে এবং হাঁটাচলা করলে ব্যথা বাড়তে থাকে।
৬. হজমের সমস্যা দেখা দেয়।
৭. কিছু কিছু ক্ষেত্রে পেট খারাপও হতে পারে।
৮. ব্যথার ওপর চাপ দিলে এবং সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করলে ব্যথা আরও তীব্র হয়।
৯. কোন কারণে যদি এপেন্ডিক্স ফেটে যায় তবে পুরো পেট জুড়ে ব্যথা শুরু হবে এবং পেট ফুলে যাবে।
১০. খাবারে অরুচি বা ক্ষুধা না লাগা এবং গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
১১. এপেন্ডিক্সের কাছাকাছি যে লসিকা গ্রন্থি থাকে তা ফুলে প্রদাহ সৃষ্টি করে।
এই সমস্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের নির্দেশ মোতাবেক চিকিৎসা করতে হবে।
এপেন্ডিসাইটিস কেন হয়
এপেন্ডিক্স মানব দেহের ছোট একটি অংশ। সরু থলের মতো ছোট এই অংশটি তলপেটের নিচে ডানদিকে অবস্থিত। আমাদের শরীরের ভেতরে যে অংশে মল তৈরি হয় তার সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এই এপেন্ডিক্স।
এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে এপেন্ডিক্সের মুখে যদি কোন কিছু আটকে যায় সেখান থেকেই এপেন্ডিক্সের সমস্যা সৃষ্টি হয়।
কোন কারণে যদি এপেন্ডিক্সের ভেতরে খাদ্য, মলের শক্ত টুকরো, হাড়ের গুড়ো এবং কৃমি ঢুকে পড়ে তাহলে সেখানে রক্ত এবং পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। যার ফলে এপেন্ডিক্সে নানা জীবানুর আক্রমণে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এপেন্ডিক্সে প্রদাহ সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা ও যন্ত্রণা শুরু হয়। আর এ পেট ব্যথা থেকেই নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
এপেন্ডিসাইটিস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
এপেন্ডিক্স শনাক্ত করার পর এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা ও ফোলা কমানোর জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে। যেমন-
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
এপেন্ডিক্স সুস্থ ও রোগ মুক্ত রাখতে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন।
২. সবুজ শাক ও সবজি
এপেন্ডিক্স এ আক্রান্ত রোগীর জন্য সবুজ শাক ও সবজি বেশ সুফলদায়ক। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় পরিমাণ মতো সবুজ শাক ও সবজি রাখুন।
৩. মুগ ডাল
এপেন্ডিসাইটিস এর ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মুগ ডাল বেশ উপকারী। ব্যথা ও ফোলা কমাতে এক মুঠো মুগ ডাল সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সেই পানি এক টেবিল চামচ করে সারাদিনে অন্তত তিন থেকে চার বার পান করুন।
৪. তুলসী পাতা
এপেন্ডিসাইটিস এর কারণে যদি জ্বর হয় তাহলে তুলসী পাতা পানিতে সেদ্ধ করে খান। এছাড়াও দৈনিক তিন থেকে চারটি কাঁচা তুলসী পাতা চিবিয়ে খান এতে এপেন্ডিসাইটিস এর উপসর্গ গুলি নিয়ন্ত্রণে আসবে।
৫. রসুন
এপেন্ডিসাইটিস এর ফোলা ও ব্যথা কমাতে রসুন অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান।
৬. পুদিনা পাতা
এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা কমাতে পুদিনা পাতার রস পান করুন। এক্ষেত্রে পুদিনা পাতার কোয়েক ফোঁটা রসের সাথে পরিমাণ মতো পানি মিশিয়ে তিন বা চার ঘন্টা পর পর খেতে থাকুন।
৭. মেথি পানি
এপেন্ডিক্সে পুঁজ ও মিউকাস তৈরিতে মেথি বাঁধা প্রদান করে। এক চামচ মেথি পরিমাণ মতো পানি
দিয়ে ফুটিয়ে সেই পানি ঠান্ডা করে চায়ের মতো পান করুন উপকার পাবেন।
৮. গম
এপেন্ডিসাইটিস এর জন্য একটি কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকার হলো গম চিবিয়ে খাওয়া। এছাড়াও গম হজমের জন্যও বেশ উপকারী।
৯. ঘোল পান করুন
ঘোল দীর্ঘস্থায়ী এপেন্ডিসাইটিস এর ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে উপকারী। কারণ ঘোল এপেন্ডিক্সে ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে থাকে। তাই প্রতিদিন এক লিটার করে ঘোল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
১০. শশা, গাজর ও বিট খান
এপেন্ডিসাইটিস এ আক্রান্ত রোগীর জন্য শশা, বিট এবং গাজর এ তিনটি উপাদান অত্যন্ত উপকারী। একশ গ্রাম একটি শশার রসের সাথে ১০০ মিলি বিটের রস এবং ৩০০ মিলি গাজরের রস মিশিয়ে দৈনিক দিনে দুই বার পান করুন।
১১. লেবুর রস
লেবুর রস এপেন্ডিসাইটিস নিরাময়ের পাশাপাশি বদ হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে থাকে। একটা লেবু থেকে রস বের করে তাতে সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে কয়েক বার পান করতে থাকুন। উপকার পেতে নিয়মিত কয়েক সপ্তাহ পান করুন।
এপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা – Appendicitis treatment
এপেন্ডিক্স একটি পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। অনেক সময় শিশু এমনকি বয়স্করাও এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথার সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারায় পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। এমনকি সময়মতো চিকিৎসা না করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এপেন্ডিসাইটিস এর একমাত্র চিকিৎসা হলো যত দ্রুত সম্ভব আক্রান্ত স্থান বা এপেন্ডিক্স অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে বাদ দেয়া বা ফেলে দেয়া।
এপেন্ডিসাইটিস হওয়ার পরেও যদি অপারেশন করা না হয় তবে দিনে দিনে এপেন্ডিক্স ফুলে ফেটে যেতে পারে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা যা থেকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
এপেন্ডিসাইটিস এর চিকিৎসা শুরু করার আগে রোগীর পেটে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে জটিলতা এড়াতে রোগীকে শক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। এমনকি মুখে খাবার দেয়া বন্ধ করুন।
এপেন্ডিসাইটিস জনিত সমস্যা দেখা দিলেই যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। যদি এপেন্ডিসাইটিস হয় তবে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করতে হবে কারণ অপারেশনই এপেন্ডিসাইটিস এর মূল চিকিৎসা।
শেষ কথা
পরিশেষে বলা যায় এপেন্ডিসাইটিস এর লক্ষণ কি সে সম্পর্কে আমরা বিস্তারিত জানতে পারলাম। এপেন্ডিসাইটিস একটি পরিচিত রোগ যা নারী পুরুষ উভয়ই আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এপেন্ডিসাইটিস হলে ওপরে উল্লেখিত লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে।
এক্ষেত্রে ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চলুন। যদি ঘরোয়া উপায়ে এপেন্ডিক্সের ব্যথা বা যন্ত্রণা দূর না হয় তবে যথাশীঘ্রই আপনাকে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে এপেন্ডিক্স অপারেশন করিয়ে নিতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে দীর্ঘদিন এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যথা নিয়ে থাকলে এপেন্ডিক্স ফুলে ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর এতে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
- Get your favourite Song Lyrics everyday