আইবিএস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

আইবিএস এর ঘরোয়া চিকিৎসা । ২২ টি লক্ষণ । IBS Treatment

আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম হলো অস্বস্তিকর পেটের পীড়া। এটি একটি পরিচিত ও  বিরক্তিকর সমস্যা যা অনেকেই ভুগে থাকেন। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই একের পর এক চিকিৎসা নিতে থাকেন কিন্তু সুফলদায়ক হন না। 

তাই আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো আইবিএস এর ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে।  

আইবিএস এর ঘরোয়া চিকিৎসা

আইবিএস দীর্ঘমেয়াদী এবং হজম সংক্রান্ত সমস্যা। সমগ্র বিশ্বে আইবিএস রোগের প্রকোপ রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের ভোগান্তির শেষ নেই। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এবং আইবিএস এর ঘরোয়া চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন-

  • নিয়মিত শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করতে হবে। 
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। 
  • খাবার ভালো ভাবে চিবিয়ে খেতে হবে। 
  • প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খেতে হবে। 
  • ভাঁপানো এবং সেদ্ধ খাবার খেতে হবে। 
  • প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কাঁচা পেঁপে রাখার চেষ্টা করতে হবে। 
  • ভাতের চালের রুটি ও আলু খেতে হবে। 
  • পানি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে।
  • মাছ, ডিম ও ডাল এবং আঁশবীহিন সবজি ও ফল খেতে হবে। 
  • প্রোবায়োটিক খাবার হিসেবে দই খেতে হবে। 
  • মানসিক চাপ কমিয়ে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে। 

আইবিএস রোগের লক্ষণ গুলো কি কি   

আইবিএস রোগে আক্রান্ত হলে যে সমস্ত লক্ষণ বা উপসর্গ গুলি দেখা দেয় তা হলো-

১. পেটে অস্বস্তিকর অনুভব করা।

২. অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা কিংবা ক্ষুধা মন্দা হওয়া। 

৩. পেট ফাঁপা বা ভুটভাট শব্দ হওয়া। 

৪. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া। 

৫. ঘন ঘন গ্যাস হওয়া এবং পায়ুপথ দিয়ে গ্যাস বের হওয়া। 

৬. পেট ব্যথা এবং গলা ও বুক জ্বালা পোড়া করা। 

৭. খাওয়ার পর অতিরিক্ত ঢেকুর ওঠা। 

৮. খাওয়ার পর পরই পায়খানার বেগ আসা। 

৯. ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়া এবং মলদ্বার ব্যথা হওয়া। 

১০. কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া এবং অল্প অল্প মল বের হওয়া। 

১১. প্রতিবার মলের সাথে মিউকাস ক্ষরণ।

১২. পায়খানার বেগ সামলাতে না পারা

১৩. শারীরিক দুর্বলতা, হতাসা, অবসাদ এবং কাজে অমনোযোগী। 

১৪. ওজন কমে যাওয়া।

১৫. মাথা ব্যথা, পিঠে ব্যথা এবং কোমড়ে ব্যথা।

১৬. ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ আসা। 

১৭. নারীদের ক্ষেত্রে মাসিক চলাকালীন বা শারীরিক মিলনে ব্যথা।

১৮. পেটে মোচড় দিয়ে ওঠার পরেই পায়খানা। 

১৯. পায়খানার সাথে আম যাওয়া। 

২০. অনেক সময় মল সাদা ফ্যানার মতো হয়।

২১. পেট কামড়ানো, বমি এবং মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়া। 

২২. ঘুমের সমস্যা এবং যৌন ক্ষমতা কমে যাওয়া। 

আইবিএস রোগীর খাবার তালিকা

আইবিএস রোগীর কি কি খাওয়া যাবে না

আইবিএস রোগে আক্রান্ত রোগীদের যে সমস্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে সেই খাবার গুলো হলো-

  • আইবিএস রোগীদের অতিরিক্ত ঝাল বা মসলা যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। 
  • তৈলাক্ত বা চর্বি যুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার যেমন ছানা, মাখন, ঘি, পনির ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। 
  • শক্ত বা আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। 
  • বাসি বা পচা খাবার খাওয়া যাবে না। 
  • ফ্রিজের খাবার খাওয়া যাবে না তবে প্রয়োজনে গরম করে খেতে হবে। 
  • ভাজা পোড়া খাওয়া যাবে না। 
  • অতিরিক্ত শাক সবজি ও সালাদ খাওয়া যাবে না। 
  • গুরুপাক এবং হোটেলের খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  
  • কাঁচা পেঁয়াজ, কাঁচা রসুন এবং শসা খাওয়া যাবে না।
  • পাস্তা, পিজা ও ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 
  • কোমল পানীয়, এলকোহল, কফি, চা এবং তামাক জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। 
  • ধুমপান, মদ্যপান পরিহার করতে হবে। 
  • প্রক্রিয়াজাত ও প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। 

আইবিএস রোগীদের যে সব খাবার খাওয়া যাবে 

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস রোগীরা সব ধরনের খাবার খেতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইবিএস রোগীরা যে সমস্ত খাবার গ্রহণ করতে পারবেন তা হলো-

  • ভাত, রুটি, অটমিল ইত্যাদি খাবার আইবিএস রোগীরা খেতে পারবেন। 
  • পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। 
  • যে কোন খাবার টাটকা খেতে হবে।  
  • ভাত গরম এবং নরম খেতে হবে।
  • খই, মুড়ি, চিড়া ও ভুট্টার তৈরি ময়দা খেতে পারবে।
  • ভেজিটেবল স্যুপ খেতে পারবে।
  • প্রতিদিন কাঁচা পেঁপের তরকারি বা পাকা পেঁপে খেতে হবে। 
  • ল্যাক্টোজমুক্ত দুধ, বাদামের দুধ এবং নারকেল দুধ খাওয়া যাবে। 
  • কাঁচা পাকা বেল বা বেলের সরবত।
  • ফলের মধ্যে কলা, আপেল, জাম্বুরা, নাশপতি, কমলা, পেয়ারা, লেবু, স্ট্রবেরি ইত্যাদি খেতে পারবে।
  • মাছ, ডিম, বিভিন্ন প্রকার বাদাম যেমন চিনা বাদাম, কাঠ বাদাম, কাজুবাদাম, আখরোট ইত্যাদি খেতে পারবে।
  • সকালে নাস্তার পর যে কোন একটি ফল খাওয়া যাবে। 
  • দুপুরে খাবার পর ২ থেকে ৩ চামচ টক দই খেতে পারেন। 
  • সারাদিনে ১০ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। 

আইবিএস হলে কি কি সমস্যা হয় 

আইবিএস রোগীরা যে সকল সমস্যায় ভোগেন তা হলো-

  • আইবিএস রোগীদের সমস্ত শরীর ব্যথা অনুভূত হয়।
  • ঘন ঘন পাতলা পায়খানা । 
  • মেজাজ সব সনয় খিটখিটে হয়ে থাকে।
  • নিজেকে রোগাক্রান্ত মনে হয়।
  • যৌন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। 
  • বিয়ে করতে অনিহা।
  • মনে অবসাদ এবং কাজে অমনোযোগী বা অলসতা। 
  • নার্ভের সমস্যা হয় এবং কোমড়ে ব্যথা অনুভব হয়। 
  • খাবার খেতে ভয় হয় এবং ওজন কমে যায়। 
  • দুনিয়াতে নিজেকে সবচেয়ে অসহায় বলে মনে হয়। 

আইবিএস থেকে মুক্তির উপায়

ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আইবিএস বড় কোন রোগ নয়। কিছু নিয়ম মেনে চললে এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যেমন-

  • নিজেকে সম্পূর্ণ চিন্তা মুক্ত রাখুন। 
  • প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবেন না।
  • আলো চালের নরম ভাত খান। 
  • খাবার পর অন্তত আধাঘন্টা হাঁটুন। 
  • বিশুদ্ধ পানি পান করুন। 
  • খাওয়ার আধাঘন্টা আগে বা পরে পানি পান করুন। 
  • সারাদিনে এক থেকে দুই বার লিকার বা লাল চা পান করুন। 
  • শুকনো মরিচের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি খাবার এবং ভাজা পোড়া পরিহার করুন। 
  • রাতে ঘুমানোর এক থেকে দুই ঘন্টা পূর্বে খাবার খেয়ে নিন।
  • ঘুমানোর সময় মুখে এক টুকরো কাঁচা আদা রাখুন। 
  • প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে এক গ্লাস পানি পান করুন। 
  • রাতে ত্রিফলা ভিজিয়ে সকালে সেই পানি পান করুন। 
  • ক্ষুধা পেলে হালকা কিছু খাবার ভালভাবে চিবিয়ে খান।
  • নিয়মিত ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করুন। 

উপসংহার 

বিশেষজ্ঞদের মতে আইবিএস জটিল কোন রোগ নয়। তাই এ রোগ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। তবে যেহেতু আইবিএস রোগের নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই তাই রোগের প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। 

চিকিৎসকদের মতে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে নিয়মমাফিক জীবন যাপন করতে হবে। আর তাই আইবিএস এর ঘরোয়া চিকিৎসা মেনে চলুন। অনেকের মতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা এ রোগের জন্য বেশ কার্যকর। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top