চুলকানির সমস্যা সবারই হতে পারে। চুলকানি একবার শুরু হলে জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। আপনার জীবনকে কিছুটা স্বস্তি দিতে তাই চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন। চিকিৎসা শাস্ত্রে চুলকানিকে বলা হয় প্রুরিটাস। এর মানে হল একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি।
যার ফলে শরীরের নিদিষ্ট জায়গা আঁচড়াতে ইচ্ছে করে। এর থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। আজ আমরা এমন কয়েকটি সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করবো যেগুলি প্রয়োগ করে আপনি চুলকানির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাহলে আসুন শুরু করা যাক।
Table of Contents
চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন
চুলকানি শরীরের ভেতরে বা বাইরে উভয় স্থানে হতে পারে। ঘামাচির মতো, চাকা চাকা হয়ে, লালচে দাগ ইত্যাদির আকারে দেখা যায়। কিছু উপায়ে খুব সহজেই চুলকানি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। চুলকানি দূর করার সহজ কিছু উপায় হলো:
১. লেবু:
লেবু যেকোনো চুলকানি খুব সহজেই দূর করে দেয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধি লেবুতে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি। যা ত্বকের চুলকানি কমিয়ে দিতে সহায়তা করে।
চুলকানির প্রতিকার পাওয়ার জন্য ত্বকের যে স্থানে চুলকানি অনুভূতি হচ্ছে সে স্থানে লেবুর রস লাগিয়ে রাখুন। লেবুর রস শুকিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবেন চুলকানি অনেকটা কমে গেছে। এছাড়াও লেবু টুকরা করে কেটে নিয়ে চুলকানির স্থানে কিছুক্ষণ ঘষুন দেখবেন চুলকানি কবে যাবে।
২. নারিকেল তেল:
নারকেল তেলে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেশন ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল। যা ত্বককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।নারকেল তেল ত্বকে ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ। যে কোন প্রকার চুলকানি, পোকার কামড় বা কোন কারণে ত্বকে চুলকানি হলে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
যে স্হানে চুলকাবে যেখানে অল্প পরিমাণ নারকেল তেল মালিশ করেন। সম্পূর্ণ শরীরে চুলকানি হলে পুরো শরীরে নারকেল তেল মাখতে পারেন। আবার কুসুম গরম পানিতে নারকেল তেল মিশিয়ে গোসলও করে ফেলতে পারেন।চুলকানিসহ ত্বকের সংক্রমণজনিত যেকোনো সমস্যায় খাঁটি নারকেল তেল ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
৩. নিম পাতা:
চুলকানি খুবই একটা অস্বস্তিকর রোগ। চুলকানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নিম পাতা ব্যবহার করতে পারেন। নিম পাতা পিষে বা বেঁটে আক্রান্ত স্থানে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে চুলকানি থেকে মুক্তি পাবেন। এছাড়াও হালকা গরম পানিতে নিমপাতা দিয়ে গোসল করতে পারেন।
নিমপাতা বেটে রোদে শুকিয়ে বড়ি বানাতে পারেন। এই বড়ি প্রতিদিন খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া যায়। চুলকানিসহ কোষ্ঠকাঠিন্য, লিভার সমস্যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।
৪. বেকিং সোডা:
বেকিং সোডায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। যেহেতু এটি ক্ষার বৈশিষ্ট্যের তাই এটি আপনার ত্বককে শুষ্ক করে দিতে সাহায্য করে। যারফলে খুব সহজে চুলকানি দূর করা যায়।
এজন্য পানি এবং বেকিং সোডা দিয়ে একটি পেষ্ট তৈরি করে নিতে হবে। এক অংশ পানির মধ্যে ৩ অংশ বেকিং সোডা দিতে হবে। তারপর চুলকানির জায়গায় এই পেষ্ট লাগান। দেখবেন চুলকানি অনেক কমে গেছে।
এছাড়াও বেকিং সোডা দিয়ে গোসল করতে পারেন। এক বালতি পানিতে ১/২ কাপ বেকিং সোডা মেশাতে হবে। বেকিং সোডা মেশানো পানি দিয়ে গোসল করার পর ৩০ মিনিট শরীর ভেজা শরীরে থাকতে হবে। শরীর পানি না মুছে শুকিয়ে ফেলতে হবে। এতে পুরো শরীরের চুলকানি দূর হয়ে যাবে।
৫. তুলসী পাতা:
তুলসী পাতায় আছে ইউজেনল যা একটি অ্যান্সথেটিক উপাদান। তুলসী পাতা ত্বকের যেকোনো ধরণের চুলকানি কমাতে সহায়তা করে। এজন্য কয়েকটি তুলসী পাতা নিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর যেখানে চুলকানি হয়েছে সেখানে পাতা গুলো কিছুক্ষণ ঘষুন। দেখবেন চুলকানি কমে গেছে।
এছাড়া কিছু তুলসী পাতা পানিতে দিয়ে সিদ্ধ করে সেই পানি বরফ করুন। এবং কিছুদিন নিদিষ্ট মেনে চুলকানি স্থানে ঘষুন।দেখবেন কমে গেছে।
৬. পেট্রোলিয়াম জেলি:
চুলকানি দূর করার সহজ উপায়গুলো মধ্যে পেট্রোলিয়াম জেলি অন্যতম। যদি আপনি সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারী হন তবে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলির কোনোপার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এছাড়াও জেলিতে কোনো ধরণের বিষাক্ত পদার্থ নেই যা আপনার ত্বকের ক্ষতি করবে।
তাই শরীরের কোনো অংশে চুলকানি হলে আপনি পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে পারেন। কিছুক্ষণের মধ্যে দেখবেন চুলকানি অনেকটা কমে গেছে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
চুলকানি হবার কারণ
চুলকানি দূর করার সহজ উপায়গুলো জেনে নেওয়ার পর এবার আসুন জেনে নিই চুলকানি কী কারণে হয় সে ব্যাপারে।বিভিন্ন কারণে শরীরে চুলকানি সমস্যা হতে পারে। চুলকানি আমাদের দেশে খুব প্রচলিত একটা রোগ।
সঠিকভাবে চিকিৎসা মাধ্যমে দূর করতে না পারলে জটিল আকার ধারণ করতে পারে। বেশিরভাগ ত্বকের সমস্যার কারণেই চুলকানি হয়।শরীরে চুলকানি হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। যার মধ্যে কিছু কারণ নিম্নে দেওয়া হলো:
১. স্ক্যাবিজ:
স্ক্যাবিজ এক ধরনের চর্মরোগ। যা জীবাণু দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। এর প্রধান লক্ষণ হলো শরীরে চুলকানি হয় এবং গুটি গুটি র্যাশ ওঠে। উপসর্গগুলো শরীরের কব্জি, আঙুলের ভেতর বা কোমরের আশপাশে হতে পারে। রাতের বেলা এই রোগের তীব্রতা আরও বাড়ে। এই রোগ ছোঁয়াচে। স্পর্শের মাধ্যমে এই রোগ সাধারণত ছড়ায়। তাছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, বিছানার চাদর ও বালিশ ব্যবহার করলে অন্যের শরীরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
২. ফাঙ্গাল ইনফেকশন:
এটি হচ্ছে একটি সংক্রামক রোগ। আমাদের আবহাওয়ায় অনেক জীবাণু বসবাস করে। যা আমাদের নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে ত্বকে প্রবেশ করে। সাধারণত শরীরের একটি নির্দিষ্ট অঙ্গ প্রথমে আক্রান্ত হয়। চিকিৎসা না করা হলে ক্রমশ শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যারফলে শরীরে বিভিন্ন স্হানে চুলকানি সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, তৈলাক্ত ত্বক, পানির সংস্পর্শে বেশিক্ষণ থাকা ইত্যাদি কারণে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হয়। ত্বকে চুলকানি হয়। ত্বকে জ্বলুনি বা অস্বস্তি দেখা দেয়। ত্বকে ক্রমশ অস্বাভাবিক লাল আভা দেখা দেয়।
৩. লিভারের রোগ:
শরীরের সর্বত্র চুলকানি লিভারের রোগের নীরব লক্ষণ হতে পারে। লিভার শরীরকে বিষমুক্ত করার জন্য সঠিকভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হলে বাইল অ্যাসিডের মতো বাইপ্রোডাক্ট জমতে থাকে। যা চুলকানির উদ্রেক করে। তাই সর্বত্র চুলকানি হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪. কিডনির সমস্যায়:
কিডনি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ও অতিরিক্ত তরল বের করে খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করে। যখন কিডনি রক্তের পুষ্টি উপাদান ও খনিজ লবণের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে না তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে এবং ফেটে গিয়ে ত্বকে চুলকানি তৈরি হয়।
এগুলো ছাড়া আরও কিছু কারণে চুলকানি হতে পারে । যেমন:
- ত্বক খুব শুষ্ক হলে
- বিশেষ করে ত্বকের ময়েশ্চারাইজার কমে গেলে
- রক্তশূন্যতা হলে
- ডায়াবেটিস থাকলে
- হরমোনে সমস্যা থাকলে
- পানির কারণে
- গর্ভাবস্থা চুলকানি হতে পারে
তাই যেকোন চুলকানিকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এলার্জি চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন
অনেক মানুষের ত্বক এলার্জি দ্বারা আক্রন্ত হয়। তাদের শরীরে এলার্জি থেকে দাদ, ছোল, ফুসকুড়ি দেখা দেয়। যা থেকে চুলকানি সৃষ্টি হয়। অনেকেই এলার্জি জনিত সেভাবে গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এর পরিনাম হতে পারে ভয়াবহ। আসুন জেনে নিই এলার্জি চুলকানি দূর কিছু সহজ উপায়:
কর্পূর এবং নারকেল তেল:
যদি আপনার ত্বকে এলার্জি থাকে তাহলে সেই জায়গায় কাপুর এবং নারকেল তেল ব্যাবহার করতে পারেন। কাপুর এবং নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে এলার্জির জায়গায় দিন তাহলে আপনি দ্রুত আরাম পাবেন।এতে এলার্জি কারনে সৃষ্ট হওয়া চুলকানি চলে যাবে
অ্যালোবেরা:
অ্যালোবেরা হলো জীবাণু প্রতিরোধে সক্ষম এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। যা ত্বক জ্বালা কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী। অ্যালোবেরা গাছের পাতাকে বেটে তার রস বার করে নিন এবং সেই রস এলার্জি হওয়া জায়গায় প্রয়োগ করুন। এতে কয়েক মিনিটে এলার্জি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
আদর্শ পানীয়:
তাজা আদা, মৌরি এবং পুদিনা পাতা গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে তা পান করুন। এটি আপনি প্রতিদিন ২-৩ বার পান করতে পারেন। ত্বকের এলার্জি সমস্যা প্রতিরোধে এটি বেশ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
চুলকানি প্রতিরোধের উপায়
চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন, এছাড়াও এটি প্রতিরোধের উপায় জানা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চুলকানি থেকে নিজেকে রক্ষা করা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। শুধু বিশেষ কিছু বিষয়ে যত্ন নিলেই আপনি নিজেকে চুলকানি থেকে দূরে রাখতে পারেন। আসুন জেনে নিই এমন কিছু বিষয়
- প্রতিদিন পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসল করবেন।
- বেশিরভাগ সময় চুলকানি কাপড় থেকে সৃষ্টি হয়। তাই তুলোর কাপড় কাপড় নির্বাচন করুন।যা ত্বকে হালকা লাগবে।
- সিন্থেটিক জাতীয় কাপড়ের কাপড় একেবারেই পরবেন না। এগুলো ত্বকে ঘষে এবং চুলকানির কারণ হয়।
- গৃহপালিত পশু-পাখির এবং বাসস্থান নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। বেশিরভাগ সময় ধুলোবালি থেকে চুলকানি সৃষ্টি হয়।
- বিছানার চাদর, কাঁথা, বালিশ ও লেপের কভার, জানালার পর্দা—এগুলো সপ্তাহে অন্তত একবার গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে চুলকানি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক কমে আসবে। যেসব জিনিস নিয়মিত ধোয়া যায় না সেগুলো যত কম ব্যবহার করা যায়, ততই ভালো।
- ঠাণ্ডা আবহাওয়া থাকলেও খুব গরম পানি দিয়ে গোসল করা উচিত নয়।
উপসংহার
চুলকানি একটি মারাত্মক অস্বস্তিকর রোগ যা সহজে নিরাময়যোগ্য নয়। তাই ঘাবড়ে না গিয়ে চুলকানি দূর করার সহজ উপায় জেনে নিন। এছাড়াও আপনার খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন, শরীরের সঠিক যত্ন নেওয়াও এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার মাধ্যমে আপনি চুলকানির সমস্যা দূর করতে পারেন।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!