Download Betwinner App

তিসির গুনাগুন এবং ৯ টি উপকারিতা জেনে নিন!

শুধু ট্রেন্ডি খাবারই নয়, পুষ্টিগুণে ভরপুর তিসির উপকারিতা ব্যাপক। শতাব্দী ধরে তিসি বীজ স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক বৈশিষ্টের জন্য প্রসিদ্ধ।

তিসির উপকারিতা

জানলে অবাক হবেন, চার্লস দা গ্রেট তার প্রজাদের তিসি বীজ খাওয়ার আদেশ দিয়েছিলেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য! সুতরাং বুঝতেই পারছেন এটি প্রাচিনকাল থেকেই বেশ মূল্যবান।

তিসি বীজের এমন কিছু সুবিধা রয়েছে যেগুলো দীর্ঘমেয়াদে অনেক সুফল দেয়। তাই আপনি যত তাড়াতড়ি এটি খাওয়া শুরু করবেন ততটাই লাভবান হবে।

যেমন কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি এর উদাহরণ। আমরা এখানে বিস্তারিতভাবে তিসির উপকারিতা, পুষ্টি উপাদান, খাওয়ার পদ্ধতি এবং আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো আলোচনা করবো, সাথেই থাকুন।

তিসির পুষ্টি উপাদান

সভ্যতার শুরু থেকে বেড়ে ওঠা তিসি অন্যতম প্রাচীন ফসল। এগুলো সাধারণত দুইটি রঙের হয়ে থাকে- বাদামী এবং সোনালী। উভয় রঙের তিসির উপকারতা এবং পুষ্টিগুণ সমান।

এটি বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ। মাত্র এক টেবিল চামচ তিসি প্রোটিন, ফাইবার এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের একটি ভাল পরিমান সরবরাহ করতে পারে।

এক টেবিল চামচ তিসিতে 37 ক্যালোরি, ১.৩ গ্রাম প্রোটিন, ২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১.৯ গ্রাম ফাইবার, ৩ গ্রাম চর্বি পাওয়া যায়।

তাছাড়া এই পরিমান তিসিতে ০.৩ গ্রাম স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, ২ গ্রাম অসম্পৃক্ত চর্বি, ১৫৯৭ মিলিগ্রাম ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। 

আমাদের প্রতিদিনের চাহিদার 8% ভিটামিন বি1, ২% ভিটামিন বি6, ২% ফোলেট এক টেবিল চামচ তিসি থেকে পাওয়া যায়।

এছাড়াও প্রতিদিনের মোট প্রয়োজনের ২% ক্যালসিয়াম, ২% আয়রন, ৭% ম্যাগনেসিয়াম, ৪% ফসফরাস এবং ২% পটাসিয়াম মাত্র এই এক টেবিলচামচ তিসি থেকেই পাওয়া যায়।

তিসির উপকারিতা

পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ দেখেই হয়ত আন্দাজ করতে পারছেন তিসির উপকারিতা কেমন হতে পারে। তারপরেও বিষয়টি কিছুটা বিস্তারিত আকারে নীচে বর্ণণা করছি। 

১. ওজন কমাতে সহায়তা করে

তিসি ফাইবারে পরিপূর্ণ। তিসি খাওয়ার কারণে পরিপাক তন্ত্রে ফাইবারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যেগুলো আমাদের ভরপেট অনুভব করায়। যে কারণে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়।  তাছাড়া এটি হজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে, ফলে অনেক সময় স্ন্যাক্সের প্রয়োজন হয় না। 

২. ব্লাড-সুগার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

গবেষণায় দেখা যায় তিসিতে পাওয়া অদ্রবণীয় ফাইবার রক্ত প্রবাহে সুগারের নিঃসরণকে ধীর করে। তাই ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে তিসির উপকারিতা কার্যকরভাবে প্রমাণিত।

এই গবেষণায় দই এর সাথে তিসি খাওয়া হয়েছিল। এই প্রক্রিয়া ডায়েটে এই বীজগুলো অন্তর্ভুক্ত করার একটি দুর্দান্ত উপায়। 

৩. প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করে

তিসি সহজেই প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করতে পারে, বিশেষ করে যারা মাংস খায় না তাদের ক্ষেত্রে। যারা উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিনের উপর ভরসা করেন তারা নিয়মিত তিসি খেতে পারেন।

এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন আপনার দৈনন্দিন প্রোটিনের চাহিদার বড় একটি অংশ পূরণ করবে। 

. ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে

প্রতিদিন তিসি গ্রহণের মাধ্যমে রক্তচাপ কমে যায়, যেটা প্রমাণিত। অন্যান্য শস্য, ফল এবং শাক-সবজি সাথে তিসি খাওয়ার মাধ্যমে আপনার উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

৫. কোলেস্টেরল কমায়

ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে তিসির উপকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। একটি গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন তিন টেবিল চামচ তিসির পাউডার গ্রহনের মাধ্যেমে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে। 

পরিচ্ছন্ন খাওয়া এবং ব্যায়ামের সাথে প্রতিদিন তিন চামচ তিসি গ্রহণ করলে শরীর ফিট থাকে। তবে সবাই এই মাত্রায় খেতে পারবেন না। পাচনতন্ত্র এটি ধীরে ধীরে গ্রহণ করে। তাই একবারে বেশি পরিমাণ খেয়ে যদি সমস্যা দেখা দেয় তাহলে খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে।

 ৬. বেশি পরিমাণ ফাইবার সরবরাহ করে

তিসিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। আমরা জানি ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি উপাদান। এটি পরিপাক তন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা সহ কোলন ক্যান্সারের মতো সমস্যাগুলো নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা পালন করে। 

৭. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

তিসিতে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়াও লিগনান রয়েছে। এগুলোর ক্যান্সার প্রতেরোধী বৈশিষ্ট রয়েছে। তিসি ক্যান্সার প্রতিরোধে বেশি ভূমিকা রাখে কারণ এতে অন্যন্য উদ্ভিদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি লিগনান থাকে।

এই ক্ষুদ্র বীজ গুলির এই পরিমাণ লিগনান থাকার কারণেই ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে তিসির উপকারিতা অন্যন্য বীজের চেয়ে বেশি। 

৮. হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে

তিসিতে আছে স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিড। আমাদের শরীরের জন্য চর্বি প্রয়োজন, কিন্তু সকল উৎস থেকে পাওয়া চর্বিগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নাও হতে পারে।

এই ক্ষেত্রে তিসিতে থাকা ALA ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো কোলেস্টেরল গঠনের বিরুদ্ধে লড়া্ই করে। যে কারণ হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষ্যায় তিসির উপকারিতা অনেক বেশি। 

৯. পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করে

অপুষ্টি সমস্যা আমাদের দেশে বেশ প্রকট। আমরা খাবার থেকে প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান বেশিরভাগক্ষেত্রেই পাই না। পুষ্টি উপাদানে ভরপুর তিসি আমাদের এই সমস্যা সহজেই দূর করতে পারে।

এতে থাকা উচ্চমানের বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলগুলো আমদের প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের বড় একটি অংশ সরবরাহ করতে পারে।

প্রতিদিন কতটুকু তিসি খাওয়া দরকার

সাধারণবাবে প্রতিদিন এক টেবিল চামচ তিসিই একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে কিছুটা বেশি খেতে পারবেন। মনে রাখবেন পাঁচ টেবিল চামচের বেশি তিসি একদিনে খাওয়া কোনভাবেই উচিত হবে না। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

তিসি খেলে কি ধরণের সমস্যা হতে পারে

সাধারণত পরিমিত মাত্রার তিসি কোন ধরণের সমস্যা সৃষ্টি করে না। তারপরেও যদি কারো এতে অ্যালার্জি থাকে তাহলে তাদের এটি না খাওয়া ভাল। তাছাড়া যদি আপনি অতিরিক্ত তিসি খান এবং কম পরিমাণ পানি পান করেন তাহলে ফুসকুড়ি, গ্যাস, পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়া হতে পারে।

ভিডিওঃ ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।

শেষ কথা

আমাদের দেশে এগুলো কিছু পরিমাণ উৎপন্ন হলেও তিসির উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের ভাল ধারণা না থাকার কারণে এর কোন চাহিদা বা কদর নেই।

কিন্তু ক্ষুদ্র এই বীজগুলো আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা সহ শরীর সুস্থ্য রাখতে বেশ বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের সামান্য সচেতনতার মাধ্যমে তিসি বীজ ব্যবহার করে সহজেই সুস্ব্স্থ্য নিশ্চিত করতে পারি।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top