পিরিয়ড মেয়েদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পিরিয়ড, মাসিক বা ঋতুস্রাবকে নারী জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলা যায়। প্রতিমাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মেয়েদের পিরিয়ড হয়। যা মেয়েদের গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে তোলে৷ একটা সময়ে পিরিয়ডকে ট্যাবু হিসেবে ধরা হলেও বর্তমান সমাজে এসেছে সচেতনতা। কারণ পিরিয়ড লজ্জা বা সংকোচের বিষয় নয়। পিরিয়ডের সময় মেয়েরা ব্যথা অনুভব করে। তাই প্রতিটি মেয়ের পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় জেনে রাখা উচিত।
Table of Contents
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় – ১০টি ঘরোয়া উপায়
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন নারীরা। এ সময় মাথা ব্যথা, খিটখিটে মেজাজ, তলপেটে ব্যথা, শরীরে ব্যথা হয়ে থাকে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে তলপেটে ব্যথা হয়।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিরিয়ডের এই সমস্যার সমাধানের জন্য ঘরোয়া উপায়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে বা পিরিয়ড বিষয়ক কোনো সমস্যায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
হট ব্যাগ ব্যবহার করুন:
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তলপেটে ব্যথা মেয়েদের খুবই সাধারণ সমস্যা। তবে অনেকের এ ব্যথা তীব্র হয়। সেক্ষেত্রে হট ব্যাগ বা হিটিং ব্যাগ ব্যবহার করতে হয়। হট ব্যাগ না থাকলে গরম সেঁক দিতে পারেন। সেঁক খুবই কার্যকরী যা ব্যথা উপশমে সহায়ক; সেই সাথে হিট বাথ নিতে পারেন।
তেল মালিশ করুন:
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তেল মালিশ করা। নারিকেল বা তিলের তেল এক্ষেত্রে খুবই ভালো। কারণ এতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি গুণ ও লিনোলিক অ্যাসিড। পিরিয়ডের সময় তলপেটে নারিকেল তেল বা তিলের তেল ম্যাসাজ করলে মাংসপেশীর মোচড় কমতে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। এর ফলে সাময়িকভাবে তলপেটের ব্যথা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়।
হার্বাল টি পান করুন:
পিরিয়ডের সময় হার্বাল চা খুবই কার্যকর পানীয়। পিরিয়ডের ব্যথা কম করার জন্য দুধ ছাড়া আদা, তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ দেওয়া চা পান করতে পারেন। যা পিরিয়ডের ব্যথা কমিয়ে সুফল আনতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের সময় গ্রিন টি পান করতে পারেন। এটি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
মানসিক চাপ কমান:
মেয়েদের পিরিয়ডের ব্যথার সাথে কাজ এবং মানসিক চাপের যোগসূত্র রয়েছে। তাই এ সময় ভারী কাজ করা উচিত নয় এতে ব্যথা বাড়তে পারে। আবার যতটা সম্ভব এ সময়ে মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যোগ ব্যায়াম এবং মেডিটেশন করা উচিত।
পর্যাপ্ত ঘুমান:
পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন। এসময় ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। যার ফলে পিরিয়ডের ব্যথা আরও বেশি প্রভাবিত করে। তাই পর্যাপ্ত ঘুম আপনাকে পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে রাতে অন্তত ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
পিরিয়ডের সময় শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। তাই পিরিয়ডের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত৷ এসময় ফ্রিজের ঠান্ডা পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি ব্যথা বাড়িয়ে তোলে। তাই যতটা সম্ভব উষ্ণ গরম পানি পান করুন যা ব্যথা উপশম করে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফলের রস, শরবত, ডাবের পানি এসময় পান করতে পারেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
পিরিয়ডের সময় ভারী ব্যায়াম করা উচিত নয়। তবে এসময় হাঁটাচলা করলে শরীর সচল থাকে যা ব্যথা কমায়৷ তাছাড়া প্রতিদিন না পারলেও
সপ্তাহে তিনদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। যা পিরিয়ডের ব্যথার তীব্রতা হ্রাস করে।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
একজন নারীর জীবদ্দশায় পিরিয়ড একটি স্বাভাবিক প্রোসেস। ঋতুচক্রের এই সময়টাতে একজন নারীর শরীরিক পরিবর্তন দেখা দেয়। তাই এসময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম প্রতিটি নারীর জন্যই প্রয়োজন। বিশেষ করে মাসিকের প্রথম তিনদিন পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং সেই সাথে ভারী কাজ, সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা এগুলো যতটা কম করা যায় ততই ভালো।
গায়ে রোদ লাগান:
প্রতিটি মানুষের জন্য সকালের রোদ উপযোগী। কারণ সকালে রোদে ভিটামিন-ডি থাকে। আর পিরিয়ডের সময় সেটি আরও বেশি কার্যকরী কারণ অনেক নারীই ভিটামিন-ডি এর অভাবে ভুগে থাকেন। সকালে রোদে অন্তত ১৫ মিনিট থাকা উচিত। এ রোদ পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সহায়তা করে।
খাবারের দিকে নজর দিন:
পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার, চিনি-লবণযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত ক্যাফেইন, চর্বিজাতীয় খাবার, ফাস্টফুড এসময় যতটা সম্ভব কম খেতে হবে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন বি-১ এবং বি-৬ সমৃদ্ধ খাবার এসময় খেতে হবে। গরম দুধ এসময় খেতে পারেন, এটি ব্যথা কমায়। এছাড়া কাঁচা পেঁপে ব্যথা নিয়াময়ে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
পিরিয়ডের সময় ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক। তবে অনেকের অতিরিক্ত ব্যথা হতে পারে। যাদের পিসিও, এন্ড্রোমেট্রিওসিস আছে তাদের সাধারণ ব্যথা বেশি হয়। ব্যথা অসহনীয় বা তীব্র হলে আপনাকে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
পিরিয়ডের ব্যথা হওয়ার কারণ
সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা জরায়ুতে সংকোচনের কারণে হয়ে থাকে। পিরিয়ডের ব্যথা পিরিয়ড শুরু হওয়ার ঠিক মুহুর্তে অথবা কিছুদিন আগে থেকেই হতে পারে। চলুন জেনে নিই এর পেছনের কারণগুলো-
- এন্ডোমেট্রিওসিসের কারণে কোমর ও তলপেটে ব্যথা হয়। তাছাড়া মাসিকের সময় অতিরিক্ত ব্লিডিং, সাত দিনের বেশি পিরিয়ড থাকা, পেটে ব্যথা এবং গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে।
- পিসিওএস নারীদের খুবই কমন একটি রোগ। এ রোগে তলপেটে ব্যথা, শরীরে অতিরিক্ত চুল, ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ, চুল পড়া, ত্বকের কালো দাগ হয়ে থাকে।
- জরায়ুর ভিতরের মায়োমেট্রিয়াম থেকে এক বা একাধিক ফাইব্রয়েড তৈরি হতে পারে। এটি হলে তলপেটে তীব্র ব্যথা, কোমরে ব্যথা, পিঠ ব্যথা, পা ব্যথা, অতিরিক্ত ব্লিডিং,সাত দিনের বেশি পিরিয়ড ইত্যাদি হতে পারে।
পিরিয়ডের ব্যথা কতক্ষণ স্থায়ী হয়
পিরিয়ড শুরু হবার কিছুদিন আগে হালকা ব্যথা ও পিরিয়ড শুরু হবার ১ম দিন থেকে ৩য় দিন পর্যন্ত সাধারণত এ ব্যথা থাকে। এসময় ব্যথা কমে আবার বাড়ে। আবার কখনও চিনচিন করে ব্যথা করে। অতিরিক্ত ব্লিডিং এর সময় ব্যথা বেশি হয়। জীবদ্দশায় পিরিয়ডের শুরুর থেকে মাঝের দিকে ব্যথা তীব্রতা বেশি হলেও মেনোপজের সময় আসলে ব্যথার তীব্রতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
পিরিয়ডের সময় কোমর ব্যথা কমানোর উপায়
পিরিয়ডের সময় তলপেট ব্যথার সাথে কোমর ব্যথাও হয়ে থাকে। অনেক সময় এ ব্যথাও তীব্র হয়। এক্ষেত্রে হিট ব্যাগ বা গরম সেঁক দিলে কিছুটা উপশম হয়ে থাকে। তাছাড়া আদা চা, ফল, ফলের জুস খেতে হবে৷ তবে অতিরিক্ত ব্যথা হলে ডাক্তারের পরে নেওয়া উচিত।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি:
প্রশ্ন: পিরিয়ডের ব্যথা কোথায় হয়?
উত্তর: মাসিক চলাকালীন সময়ের তলপেটে ব্যথা হতে পারে। এটি কোমরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তলপেটে ক্র্যাম্পিং হয় যা অনেক সময় হালকা থেকে তীব্র ব্যথায় পরিবর্তিত হয়।
প্রশ্ন: পিরিয়ডের সময় স্বামীর করণীয় কী?
উত্তর: পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে মেয়েদের মুড সুইং হয় তাই এসময় স্বামীর উচিত মানিয়ে নেওয়া। তাছাড়া স্ত্রীর প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনে আনাও তার কর্তব্য। এছাড়া এসময় প্রতিটি স্বামীর উচিত সংসারের কাজে স্ত্রীকে সাহায্য করা ও তাকে সময় দেওয়া।
প্রশ্ন: একজন মেয়ের কত বছর পর্যন্ত পিরিয়ড চলতে পারে?
উত্তর: ৪০ বছর পার হবার পর একজন নারীর মেনোপজের সময় চলে আসে। মেনোপজের আগে-পরে অনেকের অতিরিক্ত ও অনিয়মিত ব্লিডিং বা অল্প ব্লিডিং সমস্যা হয়। যা অনেকেই একে স্বাভাবিক ভাবে নিলেও তা মূলত জটিল রোগের লক্ষণ। সাধারণত একজন নারীর ৪৫-৫০ বছরে মেনোপজ হয়ে থাকে।
উপসংহার
পিরিয়ড নারী জীবনের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এসময়ে নারীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে৷ পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর উপায় শুধু একজন নারীর নয় বরং তার বাবা, মা, ভাই/বোন এবং স্বামীরও জেনে রাখা উচিত। কেননা, পিরিয়ড সংকোচ নয়, সচেতনতার বিষয়।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!