পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ

পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ কী? জানুন এটি প্রতিকারের উপায়!

পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ জানতে মানুষ বিভিন্নভাবে চেষ্টা করে। ব্যাক পেইন শব্দটি আমরা আজকাল বেশ শুনতে পাই। এই ব্যাক পেইন বা পিঠ ব্যথা সাধারণত নিচের পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদণ্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে তৈরি হয়। পিঠ ব্যথার কারণগুলোর ভেতর সবচেয়ে বেশি থাকে পিঠের পেশিতে চাপ পড়া এবং পিঠের কাঠামোগত সমস্যা।

পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ; প্রাকৃতিক ও অসুস্থতাজনিত সমস্যা 

বেশির ভাগ পিঠের ব্যাথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের হাড়, ডিস্ক, সন্ধি ও স্নায়ুসম্পর্কিত নির্দিষ্ট অংশজুড়ে হয়। আর কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাম পাশে হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক পিঠ ব্যথা বা ব্যাকপেইনের কারণগুলো কী কী।

বাত- বেদনা ,গাউড ও পক্ষাঘাত নিরাময়কারক (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) মেডিসিন কিনুন আমাদের শপ থেকে!

১. পিঠের পেশিতে চাপ: পিঠের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ, ভারী বস্তু ভুলভাবে উত্তোলন এবং ভুল ভঙ্গিতে শরীরের আকস্মিক নড়াচড়াতে প্রায়ই পিঠে ব্যথা করে। অতিরিক্ত কাজ করার ফলেও পেশিতে চাপ পড়তে পারে।

২. কাঠামোগত সমস্যা: কশেরুকা হলো মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা চাকতি আকারের হাড়। এই হাড়গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত। প্রতিটি কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানগুলোতে ডিস্ক নামক টিস্যু থাকে এবং কশেরুকাগুলোকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে। এই ডিস্কে আঘাত পিঠে ব্যথার সাধারণ কারণ।

কখনো কখনো এই ডিস্কগুলো ফুলে যেতে পারে, বেরিয়ে পড়তে পারে হার্নিয়েট হওয়া বা ফেটে যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের স্নায়ুতে চাপ পড়ে থাকে। এগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি ব্যথা হয় হার্নিয়েটেড ডিস্ক বা ডিস্কগুলো কশেরুকা থেকে কোনোদিকে বেরিয়ে গেলে। বেরিয়ে পড়া ডিস্ক স্নায়ুতে চাপ দিলে পিঠ বা কোমর থেকে পা পর্যন্ত ব্যথাসহ শিরশিরে অনুভুতি এবং অল্প থেকে প্রচণ্ড পরিমাণ ব্যথা হতে পারে।

৩. বাত বা আর্থ্রাইটিস: স্পাইনাল অস্টিওআর্থারাইটিস পিঠে ব্যথার একটি সম্ভাব্য কারণ। এই রোগে আপনার পিঠের নিচের জয়েন্টগুলোর কারটিলেজের অবনতি ঘটে যার কারণে মেরুদণ্ড চেপে আসতে পারে বা সংকীর্ণ হতে পারে, যা ব্যথার কারণ।

৪. অস্টিওপোরোসিস: হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস এবং হাড় পাতলা হয়ে যাওয়াকে অস্টিওপোরোসিস বলা হয়। এতে আপনার কশেরুকার ছোটো ছোটো ফাটল হতে পারে যেগুলো গুরুতর ব্যথার কারণ।

৫. ডিজেনারেটিভ স্পন্ডিলোলিস্থেসিস: উপরে দেওয়া কারণগুলোর বাইরেও আরো কিছু কারণেও আপনার ব্যাকপেইন বা পিঠে ব্যথা হতে পারে। একটি একটি কশেরুকা তার নির্দিষ্ট স্থান থেকে সরে গিয়ে কাছাকাছি একটি কশেরুকার দিকে চলে যাওয়া।

৬. কাউডা ইকুইনা সিন্ড্রোম: মেরুদণ্ডের নিচের অংশে স্নায়ুর কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া। মেরুদণ্ডের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ। মেরুদণ্ডে ক্যান্সার বা টিউমার। কিডনি সংক্রমণ বা কিডনি পাথর। এই কারণ গুলোও দায়ী পিঠের মাঝখানে ব্যথা হওয়ার জন্য। 

পিঠের মাঝখানে যাদের ব্যথা বেশি হয়

পিঠ ও কোমরব্যথা এখন খুব বেশি পরিচিত একটি সমস্যা। যেকোনো বয়সের মানুষেরই এই ধরনের ব্যথা হতে পারে। পুরুষের তুলনায় নারীদের এই সমস্যায় বেশি ভুগতে দেখা যায়।

  • সাধারণত পুরুষের তুলনায় নারীদের পিঠ ও কোমরব্যথায় বেশি ভুগতে দেখা যায়।
  • দুঃখজনকভাবে গর্ভকালে অধিকাংশ নারীই পিঠ ও কোমরব্যথায় ভোগেন।

পিঠের মাঝখানের ব্যথা কমাতে কী করবেন

ব্যথা কোনো একক রোগ নয়, বিভিন্ন রোগের উপসর্গ। তাই কোনো ব্যথাকেই ছোট-বড় করে অবহেলা করবেন না। যে কোনো ধরনের ছোট-বড় ব্যথায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো রকম ওষুধ সেবন করবেন না। ব্যথার ওষুধ খেয়ে অল্প অল্প ব্যথা দমিয়ে রাখা গেলেও তা পরে তীব্র আকার ধারণ করে আপনাকে আরও বেশি বিপদে ফেলে দিতে পারে।

আর অনেক ক্ষেত্রে এটি বেশ বিপজ্জনকও। কারণ বিভিন্ন জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যথানাশক ঔষধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

তাই ব্যথার কারণ নির্ণয়পূর্বক প্রযোজ্য চিকিৎসা; ইলেক্ট্রোথেরাপি, ম্যানিপুলেটিভ থেরাপি বা আইপিএম শুরু করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার ব্যায়াম করতে হবে। ডায়াবেটিস এবং কিডনি রোগীদের ব্যথার ওষুধ সেবন করা উচিত না।

ঘরোয়া পদ্ধতি:

অনেকেই আবার ব্যথা সহ্য করতে না পেরে মুঠো মুঠো পেইনকিলার সেবন করেন। এতে সাময়িক সময়ের জন্য ব্যথা কমলেও কিন্তু শরীরে অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তার চেয়ে বরং ভরসা রাখতে পারেন ঘরোয়া উপায়ে। মুহূর্তেই পিঠের ব্যথা কমাতে পারেন পাঁচ উপায়ে-

১. পিঠে ব্যথা সারাতে ফুট ম্যাসাজ করুন। কেননা পায়ের সঙ্গে মেরুদণ্ডের যোগসূত্র আছে। এ কারণে কিছুক্ষণ পা ম্যাসাজ করলে পিঠের ব্যথা উপশম হবে অনেকাংশে। এজন্য পায়ের তলায় আঙুলের ডগা দিয়ে কিছুক্ষণ মালিশ করলে পিঠের স্নায়ুতে রক্ত প্রবাহ বাড়বে ও ব্যথাও কমবে।

২. আপনি যদি প্রায়ই পিঠ বা কোমড় ব্যথার সমস্যায় ভোগেন, তাহলে খাদ্যতালিকায় অল্পকিছু অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি খাবার যোগ করুন। এক্ষেত্রে হলুদ দুধ ভীষণ উপকারী। হলুদে বিদ্যামান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি আর্থ্রাইটিক বৈশিষ্ট্য পিঠের ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। এজন্য এক গ্লাস হালকা গরম দুধে হাফ চা চামচ হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে পান করুন। ঘুমের মধ্যেই অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি যৌগ শরীরের বিভিন্ন ব্যথা কমাতে কাজ শুরু করবে।

৩. পিঠের মাঝখানে ব্যথা করলে যত দ্রুত সম্ভব হালকা গরম পানিতে গোসল করুন। এতে মানসিক ও শারীরিক চাপ কমবে এবং আপনি সতেজ বোধ করবেন। সবচেয়ে ভালো হয় ঘুমানোর আগে হালকা গরম পানিতে গোসল করা। এতে পেশি ও জয়েন্টে রক্ত প্রবাহ বাড়ে।

৪. দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার অভ্যাস করুন। অনেক সময় ঘুমের অভাব সেইসাথে মানসিক চাপের কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। ঘুমানোর মাধ্যমে শরীরের টিস্যুগুলো পুনরুদ্ধার হয়। তাই দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম জরুরি।

৫. অনেকের জন্যই এক কাপ গরম কফি ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করা কঠিন! তারপরও সুস্থ থাকতে অতিরিক্ত ক্যাফেইন আসক্তি কাটাতে হবে। তাই আপনি যদি পিঠের ব্যথায় ভুগেন, তাহলে কম কফি পান করুন। কেননা ক্যাফেইন পেশিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে পিঠের নিচের অংশে ব্যথা হতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে এসব ব্যথা দীর্ঘস্থায়ীও হয়। আবার অত্যধিক কফি পান ঘুমের সমস্যাও সৃষ্টি করে।

কোমর ব্যাথায় কখন ডাক্তার দেখাবেন?

ব্যাকপেইন বা কোমড় ব্যাথা যন্ত্রণাদায়ক এবং এটি কাজের ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। তাই আপনি যদি বেশ অনেকদিন ধরে ঘনঘন পিঠের ব্যথা অনুভব করেন তবে একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করতে ভুলবেন না।

কোমড়ের ব্যথা ও কিডনিজনিত ব্যথার তফাৎ

আমাদের দেশে অনেক রোগীই কোমরব্যথা এবং কিডনিজনিত ব্যথা এক করে ফেলেন বা বুঝতে পারেন না ব্যথার আসল কারণ কী। এতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। 

বেশির ভাগ কোমরব্যথা সাধারণত মাংসপেশি, মেরুদণ্ডের হাড় বা ডিস্ক, সন্ধি এবং স্নায়ুসম্পর্কিত এটি নির্দিষ্ট অংশজুড়ে হয়। মেরুদণ্ডের নড়াচড়া, যেমন ধরুন ওঠাবসা, সামনে ঝোঁকা, হাঁটা বা দাঁড়ানো, অনেকক্ষণ ধরে কাজ করা বা শুয়ে-বসে থাকার সঙ্গে এই ব্যথা বাড়ে-কমে। 

অপরদিকে কিডনিজনিত ব্যথা সাধারণত মেরুদণ্ড থেকে একটু দূরে ডান বা বাঁ পাশে হয়। এটি পেছনের পাঁজরের নিচের অংশে অনুভূত হয় সাধারণত।তবে এই ব্যথা নড়াচড়া করে এবং কোমরের দুই পাশেও যেতে পারে। তবে দূর্ভাগ্যজনকভাবে এই ব্যথায় শোয়া-বসা বা কোনো কিছুতেই আরাম মেলে না।’

কোমর ব্যথার জন্য দায় কিসে?

খুব সাধারণ কিছু বদঅভ্যাস থেকে পিঠ ও কোমরব্যথা হতে পারে। আমাদের হাঁটা-বসা-ঘুম, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভুল অভ্যাসজনিত অঙ্গভঙ্গি এবং ব্যবহৃত সামগ্রী থেকেই এসব সমস্যার সূত্রপাত। 

নরম বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে সবারই মন চায়। অথচ কোমরে ব্যথার জন্য দায়ী নরম বিছানা মোদ্দকথা ত্রুটিপূর্ণ শয়নব্যবস্থা। আবার ধরুন আমাদের বসার চেয়ার। চেয়ারের ডিজাইন অনেক ক্ষেত্রেই কোমড় ব্যথার জন্য দায়ী। 

চেয়ার হতে হবে এমন, যাতে আপনার পিঠের স্বাভাবিক বঙ্কিমতা বা বাঁকানো ভাব একদম স্বাভাবিক থাকে। পিঠের নির্দিষ্ট কোথাও যেন বিশেষ কোনো অস্বাভাবিক চাপ দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী না হয়। তাহলেই অসুবিধা হবেই। 

আবার ঘুমানোর ক্ষেত্রে, অনেকেরই কোনো বাছবিচার নেই বললেই চলে।কেউ উপুড়, কেউবা হযবরল অবস্থা করে হাত-পা এলোমেলো করে ঘুমান। এটা ঠিক নয় কেননা ঘুমানোরও রয়েছে সঠিক অঙ্গভঙ্গি।’

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

শেষকথা 

পিঠের মাঝখানে ব্যথা কারণ বেশ কিছু বিষয় দায়ী। হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ প্রায়শ পিঠের ব্যথা অনুভব করে থাকে সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনের কারণে। 

এছাড়াও পুষ্টির অভাব, সুষম খাদ্য না খাওয়া, কাজের অতিরিক্ত চাপ, স্বাস্থ্য অসচেতনতা প্রভৃতি কারণে আমারা নিয়মিত পিঠে ব্যথা অনুভব করি।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top