হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে? জানুন হিমোগ্লোবিনের আসল উৎস!

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে তা জানার জন্য হন্য হয়ে গুগল করছেন নিশ্চয়ই। প্রথমেই বুঝতে হবে রক্তের অন্যতম উপাদান হল লোহিত রক্তকণিকা। পরিণত লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে থাকে একধরনের প্রোটিন যা অক্সিজেনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এই প্রোটিনটিই হল হিমোগ্লোবিন। 

একইসঙ্গে দেহের বিভিন্ন অঙ্গের কোষ থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড বের করে নিয়ে আসে। এরপর ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছে দেয় বিষাক্ত গ্যাসটিকে দেহের বাইরে বের করে দেওয়ার জন্য। সুতরাং এককথায়, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার জন্য শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন থাকতেই হবে।

রক্তবর্ধক ওষধ (পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত) কিনুন আমাদের শপ থেকে!

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে;জেনে নিন খাবারের নাম সমূহ 

আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যায়। তাই এ সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত।যেমন –

  • সামুদ্রিক মাছ-এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টির উপাদান আছে। অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় শিকার রোগীদের প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ রাখতে হবে।
  • টকজাতীয় ফল– রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় সব ধরনের রসালো সাইট্রিক ফল। ভিটামিন সি এর সবচেয়ে ভালো উৎস আম, লেবু এবং কমলা। দেহের আয়রন শুষে নেয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে।
  • বেদানা– এই ফলটি আয়রন, ক্যালসিয়াম, শর্করা, ফাইবারে সমৃদ্ধ। বেদানা দেহে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। প্রতিদিন একটি বেদানা খান। এমনকি বেদনার জুস পান করলেও সুফল পেতে পারেন।

ভিটামিন সি– এই ভিটামিনের অভাবে হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে।ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারগুলো হলো-

  • পেঁপে 
  • কমলালেবু 
  • স্ট্রবেরি 
  • গোলমরিচ 
  • সবুজ ফুলকপি
  • টমেটো

লৌহযুক্ত খাবার-শরীরে লৌহের ঘাটতি হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে লৌহ গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। 

  • কলিজা
  • ঝিনুক
  • ডিমের কুসুম
  • কুমড়ার বিচি
  • খেজুর
  • জলপাই
  • কিশমিশ, ইত্যাদি। 

ফলিক অ্যাসিড-ফলিক অ্যাসিড এক ধরনের ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। ইহা লাল রক্তকণিকা তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান। সবুজ পাতাযুক্ত সবজি,বিভিন্ন প্রাণীর কলিজা, ভাত, শিমের বিচি, বাদাম, কলা, সবুজ ফুলকপিতে অনেক ফলিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

ওটস ও বার্লি-খেতে পারেন ওটস ও বার্লি। এগুলো খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে কার্বোগাইড্রেটস ও আয়রন আছে। যা স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। বার্লির শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। এমনকী খেতে পারেন ওটসের খিচুড়ি। তাছাড়া, দুধ দিয়ে ওটস বানিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।

বাদাম-বাদাম খেলে হিমোগ্লোবিন বাড়ে। চীনা বাদাম, কাজু বাদাম, আখরোট খান রোজ। এতে রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়বে। সুস্থ থাকতে বাদাম খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

বিট– হিমোগ্লোবিনের স্তর বৃদ্ধির জন্য বিটের রস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন অনেক চিকিৎসক। আয়রন, ফলিক অ্যাসিড ফাইবার ও পটাশিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস বিট। এটি লাল রক্ত কণিকা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

আপেল– দিনে একটি আপেল খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ তো ঠিক থাকেই, তার পাশাপাশি আরও নানা উপকার পাওয়া যায়। আবার সমপরিমাণে বিট ও আপেলের রস মিশিয়ে পান করতে পারেন। 

ডার্ক চকোলেট-ডার্ক চকোলেটেও থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর তাই, ডাক্তার রাও পরামর্শ দেন প্রচুর পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খেতে।

মাংস- দেহে রক্তের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস যেমন-

  • খাসির মাংস 
  • কলিজা
  • মুরগির মাংস, 

আয়রনের সবচেয়ে ভালো উৎস। 

লাল চাল-আমরা যে সাদা চাল এর ভাত খেয়ে থাকি তা মূলত কয়েকটি ধাপে চিকন করা এবং ঝালায় মালায় করা চাল। বলা যায় চালের মুল উপাদান টাই ফেলে দেওয়া হয় এই ঝালায় মালায় করতে গিয়ে। সাদা চিকন চাল দেখতে সুন্দর হলেও কাজে লাল চালের মত না।

লাল চাল দেখতে সাদা চালের মতো না আবার খেতেও একটু মোটা কিন্তু লাল চালেই উপকারিতা বেশি।লাল চালে আয়রন থাকে তাই এটিও আপনার রক্তের জন্য বেশ উপকারি।

বিছুটি পাতা-বিছুটি পাতাএক কাপ গরম জলে কিছুটা বিছুটি পাতার গুঁড়ো মিশিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এবারে মধু মিশিয়ে ওই মিশ্রণটি দিনে দুবার পান করুন। এতে খুব সহজেই রক্তে হিমোগ্লোবিনের ভারসাম্যকে বজায় রাখা যাবে।

সয়াবিন-সয়াবিনে  প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত ছোলা বা সয়াবিন জাতীয় খাবার খেতে পারেন। উপকার পাবেন।

পালং শাক-পালং শাক ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি ৯, ই, সি, বিটা কারটিন এবং আয়রন রয়েছে পালং শাকে, যা রক্ত তৈরি করে থাকে। আধা কাপ পালং শাক সিদ্ধতে ৩.২ মিলিগ্রাম আয়রন আছে যা নারীদের দেহে ২০% আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে। এক কথায় এ শাককে সুপার ফুট বলা হয়।

যে শারীরিক সমস্যার কারণে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হতে পারে

মরণব্যাধি বা ভয়াবহ রোগ গুলোর প্রকোপে সাধারণত মানবদেহে হিমোগ্লোবিন এর ঘাটতি দেখা দেয়। নিচের অসুখ গুলোর নাম জানলেই ব্যাপারটা বুঝতে সহজ হবে।

  • ক্যান্সার
  • আয়রনের অভাব
  • লিউকেমিয়া 
  • সিরোসিস
  • এইডস্ 
  • অর্শ্বরোগ
  • ভিটামিনের অভাব
  • হেমোলাইটিস

নারী ও পুরুষ ভেদে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ 

পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার রক্তে(blood) হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩০ থেক ১৮০ গ্রাম। নারীদের ক্ষেত্রে ১১৫ থেকে ১৬৫ গ্রাম। এ ক্ষেত্রে পুরুষ কিংবা নারীর প্রতি লিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান ৭০ কিংবা ৮০ গ্রাম হলে তাকে রক্তশূন্যতা বলা চলে।

হিমোগ্লোবিনের সর্বনিম্ন পরিমাণ

রক্তে হিমোগ্লোবিনের সর্বনিম্ন পরিমাণ স্বাভাবিকভাবেই Anemia বা রক্তাল্পতার দিকে ইঙ্গিত করে।রক্তাল্পতা বিভিন্ন ধরনের রয়েছে। যেমন-

  • আয়রনের অভাবজনিত Anemia সবচেয়ে বেশি।এ জাতীয় Anemia হয় তখনই যখন একজন ব্যক্তির শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন না থাকে।
  • আরেক ধরনের Anemia রয়েছে যা মূলত গর্ভবতী মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্কিত।গর্ভধারণের সময় প্রচুর পরিমাণে আয়রনের চাহিদা থাকে।যদি যথেষ্ট পরিমাণ আয়রন তখন সরবরাহ করা না হয় তাহলে Anemia দেখা দেয়।
  • হিমোগ্লোবিনের অভাবে বা মাত্রা কম হওয়ায় মানুষের শরীরে সৃষ্ট আরো কয়েক ধরনের Anemia রয়েছে। যেমন-
  • Aplastic Anemia
  • Hemolytic Anemia
  • Sickle Cells Anemia ইত্যাদি। 

কোনো ব্যক্তি এনিমিয়াতে আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তারগণ ব্যক্তির শরীরের কিছু কিছু জায়গা লক্ষ্য করেন।যেমন:

-চোখের কংজাঙ্কটিভার নিচের অংশ

-জিহ্বার পৃষ্ঠদেশ

-মুখের মিউকাস মেমব্রেন

-আঙ্গুলের প্রান্ত,নখ

-হাতের তালুর ত্বক

-পায়ের পাতার ত্বক

-পুরো শরীরের ত্বক

হিমোগ্লোবিনের পরিমাপ বা অভাব নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসমূহ:

  • রক্ত গণনা বা রক্তের প্লাটিলেট কাউন্ট।
  • দেহের ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন বি-৯ পরীক্ষা করা হয়।
  • রক্তে আয়রন ঘাটতির জন্য পরীক্ষা করা ও সবশেষে 
  •  প্রস্রাব পরীক্ষা।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন  আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

হিমোগ্লোবিনের অভাবে সৃষ্ট উপসর্গ  

রক্তে হিমোগ্লোবিনের (Hemoglobin) অভাব শরীরের একটি সাধারণ সমস্যা। এর উপসর্গ গুলো হলো-

১. আয়রনের ঘাটতিজনিত রক্তশূন্যতার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো ক্লান্তি। কারণ তখন শরীর পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রনের অভাবে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে পারে না। পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন টিস্যু এবং পেশিতে পৌঁছায় না। তখন শরীর ক্লান্ত লাগে।

২. শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম হলে ত্বক ফ্যাকাশে দেখায়। এছাড়া কারও শরীরে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে মুখ, মাড়ি, ঠোঁট, নীচের চোখের পাতা এবং নখও ফ্যাকাশে দেখায়।

৩. হিমোগ্লোবিন লোহিত রক্তকণিকার মাধ্যমে সারা শরীরে অক্সিজেন বহন করতে সহায়তা করে। যখন আয়রনের অভাবে দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায় তখন শরীরের টিস্যুগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে অসুবিধা হয়। দেহের পেশিগুলো যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন সরবরাহ পায় না তখন হাঁটতে বা অন্য কোনও কাজ করতে ক্লান্ত লাগে।

৪. শরীরে আয়রনের ঘাটতি হলে হৃত্‍স্পন্দন বেড়ে যায়। সময়মতো চিকিত্‍সা করানো না হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি বাড়ে।

৫. রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবে কোষগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ কম হয়। তখন ত্বক, চুল ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ফল ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, চুল পড়া এবং নখ ভেঙ্গে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

হিমোগ্লোবিনের অভাব রোধ করার উপায়

সাধারণ কিছু নিয়ম মেনেও চাইলে হিমোগ্লোবিনের অভাব রোধ করা যেতে পারে। উপায়গুলো হলো:

  • ডায়েটে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
  • খাবারে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার বেশি বেশি করে গ্রহণ করা উচিত।
  • দৈনিক খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি-১২ এবং ভিটামিন বি-৯ অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করুন।

হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাদ্যের পাশাপাশি করণীয় –

সুষম খাদ্যাভাসের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ে। তখন অনেক বেশি হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়।হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর ক্ষেত্রে যে সকল খাবার পরিহার করা দরকার-

  • চা
  • কফি
  • ঠান্ডা পানীয়
  • মাদক জাতীয় খাবার।

শেষকথা 

হিমোগ্লোবিন বাড়ে কোন খাবারে, প্রোটিন ও আয়রন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হলেইহিমোগ্লোবিনের অভাব রোধ করা যায়। সেইসাথে শরীরের রোগ -প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।তবে,লাল মাংস ও কলিজায় প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকলেও তা সপ্তাহে দুইবারের বেশি গ্রহণ করা অনুচিত।  

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top