লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ, কারণ ও প্রতিরোধের ২৫ টি উপায়!

মানব দেহের লিভারে তৈরি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার। লিভারের কোষে ক্যান্সারের গ্রোথ শুরু হয় যা ধীরে ধীরে যকৃতে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি শরীরের অন্যান্য অংশেও লিভার ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কী হয় লিভার ক্যান্সার হলে? লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ জানতে হলে পড়ে ফেলুন আজকের লেখটি শুরু থেকে শেষ অব্দি।

বিশেষজ্ঞদের মতে লিভার ক্যান্সার মানুষের দেহে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। প্রাথমিক অবস্থায় এ রোগের তেমন কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা যায় না। তবে ক্যান্সার কোষ বাড়তে থাকলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। আসুন তাহলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই। 

লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ 

অন্যান্য ক্যান্সারের মতো প্রাথমিক অবস্থায় লিভার ক্যান্সারের কোন লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যখন ক্যান্সার কোষ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে তখন লিভার ক্যান্সারের কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন–

১. পেটে অসহ্য ব্যথা

লিভার ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলো পেটে অসহ্য ব্যথা। এ অবস্থায় কোন কারণ ছাড়াই পেটের ডান দিকে ফুসফুসের ঠিক নিচে প্রচন্ড ব্যথা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত পেট ব্যথা হলে তার কারণ নির্ণয় এবং তা নিরাময়ের জন্য একজন অনকোলজিস্ট বা লিভার বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ নেয়া উচিৎ। 

২. অরুচি বা ক্ষুধা কমে যাওয়া 

লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের যখনই ক্যান্সার কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন ক্ষুধা কমে যায় এবং অরুচি দেখা দেয়। 

৩. পেটে জল জমে যাওয়া 

লিভার ক্যান্সারের আর একটি লক্ষণ হলো পেটে জল জমা। বিশেষজ্ঞদের মতে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের পেটে জল জমে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। 

৪. ওজন কমে যাওয়া 

লিভার ক্যান্সার হলে ওজন কমে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ ক্যান্সারের অন্যতম লক্ষণ হলো কোন কারণ ছাড়াই ওজন কমে যাওয়া। 

৫. চোখ এবং প্রসাবের রং হলুদ

লিভার ক্যান্সারে জন্ডিসের কিছু লক্ষণ ফুটে ওঠে। যেমন প্রস্রাবের রং হলদে হওয়া। এই অবস্থায় চোখের মনি হলুদ হয়ে যায়। 

৬. অবস্বাদ বা ক্লান্তি অনুভব 

অনেক সময় অবস্বাদ বা ক্লান্তি অনুভব করা অথবা সামান্য কাজ করলেই পরিশ্রান্ত হয়ে পড়া এবং সেই সাথে যদি জ্বর বা পেটে ব্যথা থাকে তবে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

৭. পেটে ফোলা ভাব

লিভার ক্যান্সার হলে উপর বা নিচের পেট ফুলে যেতে পারে বা পিন্ডের মতো অংশ দেখা দিতে পারে। এমন অবস্থায় পেট ভরা অনুভব হয়। 

৮. জ্বর হতে পারে 

পেট ফোলা বা তীব্র পেট ব্যথার সাথে যদি হালকা জ্বর থাকে তবে তার মূল কারণ নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

৯. জন্ডিস 

লিভার ক্যান্সার ছাড়াও লিভার ড্যামেজের প্রাথমিক লক্ষণ হলো জন্ডিস যা পরবর্তীতে লিভার ক্যান্সারে পরিনত হতে পারে। এমন অবস্থায় ত্বক হলুদ হয়ে যাওয়া, মল ফ্যাকাসে বা প্রস্রাবে কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

১০. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া 

লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে এমনকি বমিও হতে পারে। 

উল্লেখিত লক্ষণ গুলো দেখা দিলে দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

লিভার ক্যান্সার হওয়ায় কারণ; জানুন লিভার ক্যান্সার হওয়ার ৯টি কারণ  

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের বদলে গেছে জীবনাচার এবং সেই সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে খাদ্যাভাসেও। যার ফলে দেখা দিয়েছে নানা জটিল রোগ। নানা জটিল রোগগুলির মধ্যে ক্যান্সার রোগ অন্যতম।

লিভার ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনও অজানা। তবে কিছু কারণ রয়েছে যেগুলোকে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দায়ী করা হয়। যেমন–

১. হেপাটাইটিস বি

হেপাটাইটিস বি এমন একটি ভাইরাস যা শারীরিক তরল যেমন লালা, বীর্য, যোনিপথের তরল এবং দূষিত রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেউ যদি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তবে তার লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। 

২. হেপাটাইটিস সি

কেউ যদি হেপাটাইটিস সি ভাইরাস দ্বারা দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমিত হয় তবে লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হবে এবং তার লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

৩. অতিরিক্ত এলকোহল পান করা

লিভার এমন একটি অঙ্গ যার সর্বাধিক ক্ষতি সহ্য করার এবং নিজেকে পুনর্জন্ম করতে সক্ষম। কিন্তু আপনি যদি অতিরিক্ত এলকোহল সেবন করেন তবে এটি লিভারের ক্ষতি করে। 

এলকোহল পান করলে লিভার রক্ত থেকে বিষাক্ত এলকোহল বের করে দেয় যার ফলে লিভারের কিছু কোষ মারা যায়। লিভার নতুন কোষ জন্মাতে পারলেও দীর্ঘবছর ধরে প্রচুর পরিমাণ এলকোহল পান করার ফলে লিভার তার কার্যক্ষমতা সম্পূর্ণরুপে হারিয়ে ফেলে। ফলে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।  

৪. লিভার সিরোসিস থাকলে 

লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।  

৫. ডায়বেটিস 

ডায়বেটিস রোগে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। 

৬. ছত্রাক যুক্ত বা বাসি-পঁচা খাবার

ছত্রাকযুক্ত বা বাসি এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খেলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।   

৭. হেমোক্রোমাটোসিস

হেমোক্রোমাটোসিস সম্পর্কিত সিরোসিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে লিভার ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

৮. ফ্যাটি লিভার রোগ থাকলে

ফ্যাটি লিভার রোগে যারা আক্রান্ত তাদের লিভারে চর্বি জমা হয়। উচ্চ মাত্রার চর্বির কারণে লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি হয় ফলে লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। 

৯. নেশায় আসক্ত ব্যক্তি

যে সকল মানুষ দীর্ঘদিন যাবত নেশায় আসক্ত হয়ে আছে সেই সব নেশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে লিভার ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

১০. বংশগত কারণ 

বংশে যদি কারো লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে তবে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধ

লিভার ক্যান্সার অনিরাময়যোগ্য রোগ হলেও কিন্তু ক্ষেত্রে এ রোগ প্রতিরোধযোগ্য। লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে যে পদক্ষেপ নিতে হবে তা হলো স্বাস্থ্যকর জীবনধারা।

যে সকল পরক্ষেপ লিভার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় তা হলো-

  • অতিরিক্ত এলকোহল সেবন এবং ধুমপান বর্জন করুন। 
  • হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি ভাইরাস দ্বারা যেন সংক্রমণ না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। 
  • ওজন বা স্থুলতা ঠিক রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। 

এছাড়াও লাইফ স্টাইল এবং খাদ্যভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। লিভার ক্যান্সার সহ যে কোন রোগ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। 

যে কোন ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হলো এলকোহল সেবন সম্পূর্ণরুপে বন্ধ করা। যদি আপনি এলকোহল সেবন বর্জন করতে না পারেন তবে এ বিষয়ে একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন। 

শেষ কথা 

পরিশেষে বলা যায় ক্যান্সার শব্দটা যেন আতঙ্কের। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে ক্যান্সার জনিত রোগে মৃত্যুর অন্যতম কারণ হলো লিভার ক্যান্সার। পৃথিবীতে  প্রতি বছর প্রায় সারে চার লক্ষ মানুষ লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

তাই লিভার ক্যান্সারের লক্ষণ সমূহ দেখা দিলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কারণ প্রথম স্টেজে এই রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব হতে পারে। তবে ক্যান্সার প্রতিরোধের পদক্ষেপ গুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top