পিরিয়ড কি

পিরিয়ড কি ও কেন? পিরিয়ড না হলে করণীয় কি জেনে নিন!

পিরিয়ড কি : পিরিয়ড হল নারী দেহে বয়ঃসন্ধি কালের সময় সৃষ্টি হওয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় পর পর নারীদের পিরিয়ড হয়ে থাকে। মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতা সৃষ্টিই হয় এই পিরিয়ড শুরুর মাধ্যমে। 

একজন নারীর পিরিয়ড তাকে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। প্রতিমাসে মেয়েদের গর্ভাশয় তার বাইরের আবরণটাকে শক্ত করে যেন গর্ভবতী হওয়ার পর বাচ্চাকে আশ্রয় দিতে পারে। 

চলুন জেনে নিই পিরিয়ড কি এই সম্পর্কে আরো কিছু বিস্তারিত তথ্য। 

পিরিয়ড কি বিস্তারিত ব্যাখ্যা 

নির্দিষ্ট একটি বয়সের পর মেয়েরা যখন প্রজননের জন্য উপযুক্ত হতে থাকে তখন তাদের শরীরে বিশেষ পরিবর্তন হয়। জরায়ু যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং প্রতিমাসে হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্ত ও জরায়ু থেকে নিঃসৃত তরল পদার্থ বের হয়ে আসে তাকে মাসিক বা ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলে। 

পিরিয়ড সাধারণত ২৮ দিন পরপর হয়। এটি দুইরকম ভাবে হয়ে থাকে: স্বাভাবিক পিরিয়ড  এবং অনিয়মিত পিরিয়ড। ২৮ দিনের ৭ দিন আগে বা পরে অর্থাৎ ২১ থেকে ৩৫ দিন পরপর হলেও তা যদি নিয়মিত ব্যবধানে হয় তাকেও স্বাভাবিক হিসেবে ধরা হয়। তবে ২১ দিনের আগে বা ৩৫ দিনের পরে হলে এবং তা যদি ৩ দিনের কম বা ৭ দিনের বেশি স্থায়ী হয়ে থাকে তবে তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে।

ভিডিওঃ টেস্টোস্টেরন হরমোন কি || পুরুষ হরমোন কমে গেলে কি হয় জেনে নিন!

পিরিয়ড কেন হয় 

পিরিয়ড একজন নারীর জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়। নারীকে সন্তানসম্ভবা হতে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করে এই পিরিয়ড  প্রক্রিয়া। 

প্রতি মাসে ডিম্বাশয় একটি ডিম্বাণু উৎপাদন করে। সবচেয়ে পরিপক্ক বা পূর্ণাঙ্গ ডিম্বাণুটি ডিম্বনালির মধ্য দিয়ে জরায়ুতে চলে যায়। প্রতি মাসে নারীর জরায়ু পুরু হয় এবং ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে প্রস্তুতি নেয়। ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে জরায়ু থেকে অনিষিক্ত ডিম্বাণু রক্তের সাথে বেরিয়ে যায়। 

পিরিয়ডের  সাথে গর্ভধারণের বিষয়টি জড়িত। একজন নারীর পিরিয়ড তাকে প্রতি মাসে গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুত করে। তাই পিরিয়ড খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  এই পুরো প্রক্রিয়া গড়ে ২৮ দিনের মধ্যে হয়। মেয়েদের সাধারণত ৯-১৩ বছর বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং ৪৫-৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিমাসে চলতে থাকে। 

পিরিয়ড হওয়ার লক্ষণ 

পিরিয়ড শুরুর  আগে কম-বেশি সব মেয়েরই নানা ধরনের সমস্যা হয়। অনেকের ক্ষেত্রে সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, দৈনন্দিন জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে না। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই এই সমস্যা বেশ ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।  

হরমোনের স্তরে পিরিয়ড শুরুর আগে কিছু পরিবর্তন আসে। তাই পিরিয়ড এর জন্য কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমনঃ

  • ক্লান্তি, মাথাব্যথা, ঘুমের সমস্যা। 
  • পেট ফাঁপা ভাব, বমি বমি লাগা।
  • স্তনবৃত্তে ব্যথা, ব্রণ, হাত-পায়ে যন্ত্রণা। 
  • মুড সুইং, মেজাজ হারানো, বিরক্তিবোধ বা খিটিমিটে স্বভাব। 

পিরিয়ড হলে করণীয় 

মূলত পিরিয়ড একটি মেয়ের জীবনে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। নির্দিষ্ট বয়সে পিরিয়ড হবেই। তাই এতে বিচলিত না হয়ে স্বাভাবিকভাবেই এটি সামলাতে হবে। পিরিয়ড এর সময় শরীরের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। কারণ এ সময় শরীরে নানা রকম পরিবর্তন দেখা যায়। তাই চলুন  পিরিয়ডের সময় করণীয়গুলি জেনে নিই। 

  • পিরিয়ডের সময় কেবলমাত্র পরিচ্ছন্নতা এবং সচেতনতার অভাবে নারীর প্রজনন স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নারীরা এসময় যে দুটো জিনিস মূলত ব্যবহার করে তা হচ্ছে পুরনো কাপড় বা স্যানিটারি ন্যাপকিন। কাপড় অবশ্যই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই সবসময় স্যানিটারি প্যাড বা ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। কারণ এটি স্বাস্থ্যসম্মত এবং ব্যবহার করাও সহজ। 
  • অন্তত চার ঘণ্টা অন্তর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলে ফেলা উচিত।  সাধারণত রক্ত প্রবাহের উপরে নির্ভর করে প্যাড বদলের সময়সীমা। এই প্রবাহ এক একজনের ক্ষেত্রে এক এক রকম। প্রবাহমাত্রা বেশি থাকলে অস্বস্তি এড়াতে আগেভাগেই প্যাড বদলে নিতে হবে।  তবে প্রবাহমাত্রা কম থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই প্যাড ব্যবহার করা যাবে না।  এতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। 
  • পিরিয়ডের রক্ত শরীরের জন্য অপকারী। বেরিয়ে আসা রক্তের সঙ্গে জীবাণুও থাকে। বেশি সময় একই প্যাড পড়ে থাকলে যোনিপথে চুলকানি, প্রদাহ, এলার্জি সহ নানা রকম সমস্যা হতে পারে। তাই মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত ত্বকে লেগে থাকলে অবশ্যই নিয়মিত ধুয়ে ফেলতে হবে। পিরিয়ডের সময় যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • এই সময়ের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন আর মিনারেল থাকা একান্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে ভিটামিন ডি, ই আর বি6 পিএমএসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন ম্যাগনেশিয়ামেরও। মুড ভালো থাকলে শরীরও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বিনস, ডাল, মুরগির মাংস, মাছ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া উচিত নিয়ম করে। প্রচুর পানি পান করতে হবে। ফলের রস খাওয়া উচিত বেশি করে। বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক সবজি খেতে হবে। পিরিয়ড হলে চা,  কফি, কোল্ড ড্রিংকস, জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। 
  • পিরিয়ডের  সময় একটা প্রচলিত সমস্যা তলপেটে ব্যথা। এই ব্যথা কিছু নিয়ম মেনে চললে কিছুটা নিরাময় করা যায়। যেমন- তলপেটে ব্যথা অনুভব হলে ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি নিয়ে ছ্যাঁক দেওয়া। তাছাড়া এসময় কুঁজো বা উপর হয়ে ঘুমানো উচিত নয়। বেশি হাঁটা কিংবা দৌড়াদৌড়ি করা উচিত নয়। কেননা এই সময় গর্ভাশয় খুবই সেনসিটিভ থাকে।

পিরিয়ড না হলে করণীয় 

অনেক কারণে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে। যেমন:- 

  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ
  • শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া
  • হঠাৎ ওজন অনেক কমিয়ে ফেলা
  • মাত্রাতিরিক্ত শরীরচর্চা বা শারীরিক শ্রম
  • পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম
  • জরায়ুর টিউমার
  • থাইরয়েডের সমস্যা
  • জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ইত্যাদি।

পিরিয়ড না হলে প্রথমত অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। তার পরামর্শ নিয়ে পিরিয়ড স্বাভাবিক করতে হবে। 

এছাড়া  নিয়মিত পিরিয়ড যেন হয় সেজন্য কিছু করণীয় অবশ্যই পালন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর জীবনাচরণে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমাতে হবে।  নিয়মিত শরীর চর্চা, সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে এবং ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে । 

ওজন বেশি থাকলে ওজনও কমাতে হবে। নিয়মিত কাঁচা পেপে খেলে অনিয়মিত পিরিয়ডের জন্য অনেক উপকারী। তবে যারা গর্ভবতী তাদের কাঁচা পেপে না খাওয়াই ভাল, এতে গর্ভপাত হতে পারে। পিরিয়ডের  সময় প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও আয়রনের চাহিদা তৈরি করে। তাই সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। এতে পিরিয়ড আবার নিয়মিত হতে শুরু করবে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

উপসংহার 

পিরিয়ড কি তা এতক্ষণে নিশ্চয় আপনারা জানতে পেরেছেন। এটি প্রত্যেকটি মেয়ের জীবনের অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। কিন্তু আমাদের দেশে পিরিয়ড নিয়ে এখনো বিভিন্ন কুসংস্কার বিদ্যমান। তাই সকলের উচিত এই বিষয়টিকে সহজভাবে নেওয়া এবং বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে সবার কাছে সহজ প্রক্রিয়া হিসেবে করে তোলা।

প্রত্যেক নারীকে পিরিয়ডের সময় শারীরিক ও মানসিক কিছু সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তাই এসময় নিজেকে নিয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং যত্ন নিতে হবে।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top