অটিজম কি

অটিজম কি? অটিজম শিশুর জন্য অভিভাবকদের করণীয়!

অটিজম কি তা নিয়ে সংশয় থাকে অনেকের। অটিজম শব্দটি এসেছে মূলত আউটোস শব্দ থেকে। আউটোস একটি গ্রিক শব্দ। যার অর্থ হচ্ছে আত্ম বা নিজ। অটিজম হচ্ছে শিশুদের স্মায়ুবিক একটি সমস্যা। যাকে বলা হয়, ডিসঅর্ডার অব নিউরাল ডেভেলপমেন্ট।

অটিজম হচ্ছে শিশুদের স্নায়ুবিক সমস্যা জনিত রোগ। মাতৃগর্ভে থাকাকালে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ কোনো কারণে বাধাগ্রস্ত হলে শিশু অটিজম নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। এর ফলে শিশুর ভাষার বিকাশ, সামাজিক আচরণ, ইন্দ্রিয়গত সমন্বয়ের সমস্যা, আচরণের দৃঢ়তা ও কল্পনাশক্তির সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। 

প্রাকশৈশব কাল থেকে এই সমস্যাটি শুরু হয়। যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে অটিজমের  লক্ষণগুলাে প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যােগাযােগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান লক্ষণ। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই অটিজম এর লক্ষণ, কারণ ও প্রতিকার। 

অটিজম কি

মূলত অটিজম হচ্ছে শিশুদের একটি মানসিক সমস্যা। এটি সাধারণত শিশুদের স্নায়ুবিক সমস্যাজনিত রোগ। এই রোগে আক্রান্ত শিশুরা অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের তুলনায় ভিন্ন হয়। 

অটিজম রোগটি সাধারণত শিশুর ১ থেকে ৫ বছর বয়সের মধ্যে বেশি দেখা দেয়।  এই রোগটি বেশির ভাগই দেখা দেয় ছেলেদের মধ্যে। অটিজমে আক্রান্তে শিশুদের অটিস্টিক শিশু বলা হয়ে থাকে। 

অটিষ্টিকে আক্রান্ত শিশুরা অন্যান্য শিশুদের মতো স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না। আচরণের দিক থেকেও এদের বিভিন্ন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। 

অটিজমের কারণ 

অটিজম স্নায়ুবিকাশ জনিত রোগ হলেও এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে কিছু  বিষয়কে অটিজমের কারণ হিসেবে দেখা হয়। 

  • বংশে কারও অটিজমের সমস্যা থাকা
  • গর্ভাবস্থায় অধিক দুশ্চিন্তা
  • পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
  • অতিমাত্রায় ঔষধ সেবন
  • মায়ের ধুমপান ও মদ্যপান করা 
  • বেশি বয়সে বাচ্চা নেওয়া
  • গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
  • দুশ্চিন্তা
  • বিষণ্ণতা
  • মৃগীরোগ
  • মনোযোগ-ঘাটতি
  • গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিস
  • ও রুবেলায় আক্রান্ত হলে শিশুর অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। 

সেইসাথে কম ওজনে শিশুর জন্ম নেওয়া, গর্ভাবস্থায় বিষাক্ত সিসাযুক্ত বাতাসে শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়া, প্রসবকালীন সময়ে কোনো জটিলতা, মা ও শিশুর অপুষ্টিজনিত সমস্যা ইত্যাদি কারণেও অটিজম হতে পারে।

অটিজম কি এর বৈশিষ্ট্য ও লক্ষণ

অটিজম আক্রান্ত শিশুদের সবার ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো একরকম হয়না। কেউ কেউ মারাত্মক বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতায় ভোগে। কারও হয়তো সেই ক্ষমতা সীমিতভাবে থাকে। কিন্তু অটিস্টিক শিশুর মধ্যে খুব অল্পবয়স থেকেই অটিজমের কিছু বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। অটিস্টিক শিশুর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো: 

১. সামাজিক মিথস্ক্রিয়া

অটিজমে আক্রান্ত শিশুকে নাম ধরে ডাকলে সাড়া দেয় না। এমনকি চোখে চোখ পড়লেও সে তাকায় না। সে হয়তো নামের ব্যাপারটা বুঝতেই পারে না। আবার ডাকের ব্যাপারটা শুনে বুঝতে পেরেও যে কাজ বা খেলায় সে ব্যস্ত ছিলো সেটাই মনোযোগী থাকে।

এছাড়াও অটিস্টিক শিশুরা সমবয়সী শিশুদের সঙ্গে মিশতে বা খেলতে চায় না। অন্য শিশুদের খেলতে দেখলে সে একপাশে সরে যায়। অন্যরা কী করছে, সেটা দেখতে বা তাদের খেলায় অংশ নিতে অনীহা বা বিরক্তি দেখায়। 

কোনো ধরণের আনন্দদায়ক বস্তু বা বিষয় সে অন্যদের সাথে শেয়ার করে না। সাধারণত শিশুরা কোনো খেলনা হাতে পেলে সবাইকে সেটা দেখাতে চায়। কিন্তু অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে এধরণের কোনো ব্যাপার লক্ষ করা যায় না।

স্বাভাবিক শিশুরা কারো কোলে চড়তে বা আদর নিতে পছন্দ করে। কিন্তু অনেক অটিস্টিক শিশুর এই ব্যাপারে অনীহা থাকে। অন্য কারো সংস্পর্শে যাওয়া তারা তেমন পছন্দ করে না। 

২. যোগাযোগ

পরিবেশ ও প্রতিবারের সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা শিশুর বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই গড়ে ওঠার কথা। কিন্তু অটিস্টিক শিশুর ক্ষেত্রে এই যোগাযোগ তৈরি করার ক্ষমতা কমে যায়। ২ থেকে ৩ বছর বয়সে স্বাভাবিক শিশুরা যেসমস্ত শব্দ উচ্চারণ করতে পারে সমবয়সী অটিস্টিক শিশুরা তা পারে না। 

আবার কোনো ক্ষেত্রে অটিস্টিক শিশু স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে। কিন্তু একটি বাক্য শুরু করতে অস্বাভাবিক রকম দেরি হয়। আবার বাক্য শুরু করার পর তা আর শেষ করতে পারে না। এমনও হতে পারে ৩-৫ বছর বয়সেও দু’তিন শব্দের বেশী শব্দ দিয়ে বাক্য গঠন করতে পারে না। 

৩. আচরণ

অটিস্টিক শিশু বিশেষ ধরণের আচরণ বারবার করতে থাকে। যেমন, হাত দোলাতে থাকে, আঙুল নাড়াতে থাকে। খেলনার বাক্স উপুড় করে খেলনা বের করে ফেলে তারপর আবার ঢুকিয়ে রাখে। আবার বের করে, আবার ঢোকায়। এভাবে চলতে থাকে। 

কোন কোন শিশু ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়ে খেলতে চায়। সেক্ষেত্রে দেখা যায় লবণদানি থেকে লবণ ঢেলে বাটিতে রাখছে, আবার সেটা আগের জায়গায় নিচ্ছে। আবার দুটো গ্লাস নিয়ে একটা থেকে আরেকটায় পানি ঢালাঢালি করছে। এই পুনরাবৃত্তি কাজে তারা দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয়। তারা একই কাজ কয়েক ঘন্টা ধরে করতে পারে। 

অনেক অটিস্টিক শিশু আওয়াজ পছন্দ করে না। জোরে কথা বললে বা জোরে শব্দে টিভি চালালে অস্বস্তি বোধ করে। অনেক সময় কান্নাকাটি বা চিৎকার করে।

তবে অটিস্টিক শিশু রুটিন মেনে চলতে ভালোবাসে। দৈনন্দিন যে ধরণের জীবনযাপনে  অভ্যস্ত তার কোন ব্যতিক্রম হলে অটিস্টিক শিশুরা মন খারাপ করে। কাঁদে বা চিৎকার দিতে থাকে। আবার বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও গেলে সে অস্বস্তিতে থাকে। 

অধিকাংশ অটিস্টিক শিশুরা পেন্সিল বা কলম ধরে মুঠোবন্দী করে। দু’আঙ্গুল বা তিন আঙ্গুলে পেন্সিল ধরার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কিছু ধরতে পারেনা। অটিস্টিক শিশুরা এই সাধারণ বিষয়গুলো আয়ত্বে আনতে পারে না।

ভিডিওঃ ইসবগুল ও তোকমা দানা খাওয়ার সঠিক নিয়ম জেনে নিন।

অটিজমের চিকিৎসা পদ্ধতি

আমাদের সমাজের প্রচলিত ভুল ধারণা হচ্ছে অটিজম কখনো ভালো হয় না। এই রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা, সঠিক থেরাপি এবং কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে শিশুদের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ জীবনাচরণ স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব। বর্তমানে দেশের অনেক শিশুই অটিস্টিক হবার পরও স্বাভাবিক জীবনের সাথে মানিয়ে চলতে সক্ষম হয়েছে। 

বর্তমানে অটিস্টিক বাচ্চাদের চিকিৎসায় ভালো ফল পাওয়া যায় যদি তা দ্রুত নির্ণয় করা যায়। এই চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে একটি সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি। পেডিয়াট্রিক বিশেষজ্ঞ, নিউরো রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপিস্ট এবং ক্ষেত্র বিশেষে ফিজিওথেরাপিস্টের সহযোগিতায় প্রতিটি অটিস্টিক বাচ্চার জন্য আলাদা আলাদাভাবে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

বাংলাদেশে বিশেষায়িত কয়েকটি স্কুল আছে যেখানে অটিস্টিক শিশুদের বিশেষ ব্যবস্থায় পাঠদান করা হয়। এটা নির্ভর করবে তার অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর পরামর্শের উপর। তিনিই বাচ্চার সক্ষমতা বুঝে সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিবেন কোন স্কুল তার জন্য ভালো হবে।

অনেক অটিস্টিক শিশুর কিছু মানসিক সমস্যা হয়। যেমন অতি চঞ্চলতা, অতিরিক্ত ভীতি, মনোযোগের সমস্যা, ঘন ঘন মনের অবস্থা পরিবর্তন, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় সাইকিয়াট্রিস্টরা ওষুধের ব্যবহার করে থাকেন। 

অটিজম শিশুর জন্য অভিভাবকদের করণীয়

অটিস্টিক শিশুদের পিতামাতার অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে। তাদের প্রতি সুন্দর, সহজ ও সরল ব্যবহার করতে হবে। কোনো কারণে অটিস্টিক শিশুরা কান্নাকাটি চেঁচামেচি করলে সাথে সাথে তাদের চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাদের প্রতি সর্বদা হাসি, খুশি এবং চলাফেরা নিশ্চিত করতে হবে। তাদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। 

কোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত তাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। এদের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা আছে সেই প্রতিভা খুঁজে বের করে তা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে। অটিস্টিক শিশুকে অবহেলা না করে তাদেরকে সেবাযত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে সক্ষম ও কর্মক্ষম করে তোলা সমাজের প্রতিটি মানুষের উচিত।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

উপসংহার 

অটিজম কি এটি জানা যেমন জরূরি তেমনি জরূরি অটিজমে আক্রান্ত শিশুর এক্সট্রা কেয়ার নেয়া। এ ধরণের শিশুরা সামাজিক ভাবে অন্যদের সাথে মিশতে পারে না। চলাফেরা করতে পারে না। তাই এদের জীবনকে সহজ করে তোলার জন্য প্রয়োজন এক্সট্রা এটেনশন এবং কেয়ার। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় থ্যারাপির মাধ্যমে ধীরে ধীরে এরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top