আদার উপকারিতা ও অপকারিতা

আদার ২০টি উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন প্রশ্নোত্তর সহ!

আদার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে রয়েছে নানা লোকের নানা মত। তবে এটা সত্যি যে এর উপকারিতার পাশাপাশি অপকারিতাও আছে। আদা সকল রোগের মহৌষধ যা আমাদের দেহে রোগ নিরাময়ে যথেষ্ট ভুমিকা পালন করে।

এতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি৬, ই ও সি এবং আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,  ম্যাঙ্গানিজ, সোডিয়াম, জিঙ্ক এবং ফসফরাস সহ আরও অনেক খনিজ উপাদান। আদা সব বয়সী মানুষের জন্যই উপকারী। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এটি অপকারিতা বয়ে আনে। 

আদার উপকারিতা ও অপকারিতা 

আদা আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী উপাদান। মসলা হলেও নানা পুষ্টিগুণ এবং ভেষজ গুণে ভরপুর এই আদা, যা প্রাচীন কাল থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। আদার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে। চলুন তাহলে প্রথমেই জেনে নেয়া যাক আদার উপকারিতা সম্পর্কে। 

আদার উপকারিতা

১. সাধারণ সর্দি কাশি দূর করতে 

আদায় রয়েছে প্রচুর এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে রক্ষা করে। তাই  সর্দি, কাশি এবং গলা ব্যথা থেকে সহজেই মুক্তি পেতে সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। আর তাই সর্দি, কাশি হলে সকাল বিকাল আদা চা খান উপকার পাবেন। 

২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। যে কোন অসুখের বিরুদ্ধে কাঁচা আদা খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে। সামান্য পরিমাণ আদার রস নানা ধরনের রোগ হতে মুক্তি দিতে পারে। 

৩. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে 

আদাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পটাশিয়াম যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। আদা খাওয়ার ফলে হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে ফলে হার্ট এট্যাকের ঝুঁকি থাকে না। আর তাই আদার উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে আদা খাওয়া শুরু করুন।

৪. ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা

কাঁচা আদায় থাকা এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং জিনজেরল নামক উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভুমিকা পালন করে। আদা খাওয়ার ফলে দেহে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংশ হয়ে যায়। এছাড়াও আদা স্তন ক্যান্সার এবং ওভারির ক্যান্সার রোধে সাহায্য করে থাকে। 

৫. ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আদা বেশ উপকারী। কারন আদা দেহের শর্করা বা চিনি হ্রাস করে এবং দেহে ইনসুলিন তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত আদা খেতে পারেন। 

৬. মাসিকের ব্যথা দূর করতে

মেয়েদের পিরিয়ড বা মাসিকের সময় তলপেট ব্যথা করে। এ ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে আদা। এ সময় আদা চা খেলে অনেক আরাম পাওয়া যায়। এছাড়াও যে কোন ব্যথা দূর করতে আদার রসের উপকারিতা রয়েছে।  

৭. পেটের সমস্যা দূর করতে আদা

পেটের যে কোন সমস্যা দূর করতে আদা একটি ঘরোয়া উপায়। আদা খাওয়ার ফলে পেটের সকল সমস্যা দূর হয়। এমনকি আদা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করে থাকে।

৮. মূত্র জনিত সমস্যায় আদা

মূত্র জনিত যে কোন সমস্যা দূর করতে আদা বেশ কার্যকর। কারন আদাতে রয়েছে ভিটামিন বি৬ যা মলমূত্র জনিত সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমাশয় নিরাময়ে আদা একটি কার্যকর ওষুধ।

৯. বমি ভাব দূর করে আদা

অনেক সময় বমি বমি ভাব হয়। আদা এই বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে। অপারেশন বা কেমোথেরাপির পর অনেকে বমির সমস্যায় ভোগেন। এমন অবস্থায় এক টুকরো আদা সামান্য লবন দিয়ে খেলে উপকার  পাওয়া যায়। 

১০. বদহজমের সমস্যা দূর করতে 

অনেকেই বদহজমের সমস্যায় ভোগেন। বদহজমের কারনে ক্ষুধামন্দা, পেটের ব্যথা, পেটফাঁপা, মুখে টক টক ভাব দেখা দেয়। আদা পেটের অম্লভাব কমিয়ে বদহজমের সমস্যা দূর করতে পারে। আদা রান্নার স্বাদ বৃদ্ধির পাশাপাশি হজমেও সহায়তা করে। 

১১. ক্ষতস্থান শুকাতে

আদা শরীরের যে কোন ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে সাহায্য করে। কারন আদায় রয়েছে এ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এজেন্ট যা শরীরের যে কোন কাটাছেঁড়া বা ক্ষতস্থান সারতে সাহায্য করে। 

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

আদার অপকারিতা

আদার উপকারিতা থাকলেও অতিরিক্ত আদা খেলে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অপকারিতা। আসুন জেনে নিই আদার অপকারিতার দিকগুলি:

  • পরিমাণের বেশি আদা চা খেলে মাইগ্রেনের সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। এমনকি অনিদ্রার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই পরিমাণ মতো আদা চা পান করুন।
  • গর্ভাবস্থায় আদা খাওয়া উচিৎ নয়। কারন আদা শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। গর্ভাবস্থায় আদা খেলে শিশু প্রিম্যাচিউর হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। তাই গর্ভবতী নারীদের আদা খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিৎ। 
  • যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের জন্য ওষধ সেবন করেন, তারা আদা খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারন আদার পরিমাণ বেশি হলে সমস্যা আরও দিগুন হতে পারে।  
  • এ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে যাদের, তারা আদা খেলে শরীরে চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি শরীর ও মুখ ফুলে যেতে পারে। 

এছাড়াও পরিমাণের বেশি আদা খেলে ডায়রিয়া, পেট ব্যথার সমস্যা হতে পারে।  

আদা খাওয়ার নিয়ম 

আদা ঔষধি গুণ সম্পুর্ন একটি ভেষজ খাদ্য। এই আদা খাওয়ার রয়েছে অনেক নিয়ম। তবে এমন কিছু নিয়ম আছে যা অনুসরন করে আদা খেলে অনেক উপকার পাবেন।  

  • আদা একটি মসলা জাতীয় খাদ্য। এটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায়। কাঁচা আদা ছেঁচে লিকার চায়ের সাথে মিশিয়ে খেলে অনেক উপকার হয়।  
  • আদা-পানির সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। এমনকি আদা-পানির সঙ্গে লেবুর রস এবং মধু দুটোই একত্রে মিশিয়ে খেতে পারেন। 
  • এছাড়াও এক টুকরো কাঁচা আদা সামান্য লবণ দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। অনেকে আদা পিষে ফ্রিজে রেখে খান। ফ্রিজে রাখা আদা খেলে এর ঔষুধি গুণ পুরোপুরি পাওয়া যায় ন।

আদার পুষ্টিগুণ

আদায় রয়েছে অসংখ্য পুষ্টিগুণ। প্রতি ১০০ গ্রাম আদায় থাকে: 

  • পটাশিয়াম – ৪১৫ মিলিগ্রাম 
  • ফসফরাস – ৩৪ মিলিগ্রাম 
  • কার্বোহাইড্রেট – ১৭ গ্রাম 
  • এনার্জি – ৮০ ক্যালরি
  • ফ্যাট – ০.৭৫ গ্রাম 

সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি 

প্রশ্ন: রাতে আদা খেলে কী হয়? 

উত্তর: রাতে আদা খেলে শরীর গরম থাকে। তাই শীতের রাতে শরীর গরম রাখতে আদা খাওয়া খুবই উপকার। এছাড়াও যাদের হাঁপানি রোগ আছে, তারা রাতে আদা খেলে শরীর গরম থাকে।   

প্রশ্ন: আদা কখন খেতে হয়? 

উত্তর: আদা মসলার মধ্যে অন্যতম। শুধু স্বাদে নয় গুণেও। তাই সঠিক ফলাফল পেতে আদা প্রতিদিন খেতে পারেন। তবে নিয়ম মেনে খেতে হবে। 

রুচি বৃদ্ধির জন্য সামান্য পরিমাণ আদা লবণ দিয়ে খেতে পারেন। আবার প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে আদা-চা খেতে পারেন। শীতের রাতে শরীর গরম রাখতে আদা বেশ কার্যকর। 

এছাড়াও প্রতিদিন আদা-পানি তৈরি করে তার সাথে লেনুর রস ও মধু মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে আদা যখনই খাবেন ছেঁচে বা পিষে খেতে হবে।  

প্রশ্ন: সহবাসের সময় আদা খেলে কী হয়? 

উত্তর: অনেকের মধ্যে যৌন সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে বিভিন্ন ঔষধ সেবন করে থাকে। যার ফলে দেহে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। 

আদায় থাকা নানা ঔষধি গুণ যৌন দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে এবং যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তাই সহবাসের সময় যৌন শক্তি বৃদ্ধি করতে এবং সহবাসের সময় দীর্ঘ করার জন্য সহবাসের সময় আদা খাওয়া উচিৎ। 

পরিশেষে

পরিশেষে বলা যায়, আদা শুধু রান্না বা কাঁচা খাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে। যেহেতু আদার উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে তাই পরিমাণের বেশি আদা খাওয়া উচিৎ নয়।  তাই সীমিত পরিমাণে আদা খান এবং এর ঔষুধি গুণে সুস্থ থাকুন।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top