কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ

জেনে নিন কুষ্ঠ রোগ কী, কেন হয় এর লক্ষণ এবং চিকিৎসা!

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ : মানুষের ত্বক খুবই সংবেদনশীল একটি জিনিস। অল্পতেই নানা ধরণের ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয় ত্বকে। কুষ্ঠ রোগ এর মতো মরণব্যাধিও ত্বকের ব্যাক্টেরিয়ার কুফল। 

কুষ্ঠ রোগ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য নিয়ে সাজানো আমাদের আজকের আয়োজন। 

কুষ্ঠ রোগ কী 

কুষ্ঠ এক ধরণের দীর্ঘস্থায়ী সংক্রামক রোগ যা দেহের ত্বক ও স্নায়ুকে আক্রমণ করে থাকে। মাইকোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রী (Mycobacterium leprae) নামের ব্যাকটেরিয়া থেকে এ রোগের উৎপত্তি। 

কুষ্ঠ রোগ হলে রোগীর শরীরে চামড়ায় ছোপ ছোপ সাদা দাগ দেখা যায়। ক্রমশ সে দাগ সারা শরীর জুড়ে বিস্তার করে। এবং একসময় আক্রান্ত ব্যক্তির সার শরীর সাদা হয়ে যায়।তবে এতে রোগীর শারীরিক কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু একজন কুষ্ঠরোগী সমাজে ঘৃনিত হয়। যা মোটেই ঠিক নয়। 

কুষ্ঠ রোগ কেন হয়

কুষ্ঠরোগ এর প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। তবে জিনগত পরিবর্তন এবং দেহের প্রতি অসচেতনতা কুষ্ঠরোগের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়। সাধারণত নিঃশ্বাসের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া দেহে প্রবেশ করে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কী কী কারণে কুষ্ঠ রোগ হয়ে থাকে:

  • এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সর্দি হয়ে থাকলে, নাক থেকে নিসৃত তরলের মাধ্যমে এই ব্যাক্টেরিয়া বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে।
  • ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ হওয়াই, বাচ্চাদের মধ্যে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়।
  • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা বৃদ্ধি পায়।

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ

কুষ্ঠ রোগের লক্ষণ ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কয়েকমাসের মধ্যে দেখা দিতে পারে। অধিক রোগজীবাণু সম্পন্ন রোগী কুষ্ঠ রোগ বিস্তারের প্রধান উৎস। জেনে নিন বেরিবেরি রোগ কি? কেন হয়, এর লক্ষণ ও চিকিৎসা!

কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা দেয় তা নিম্নে উল্লেখ করা হল:

  • ত্বকের রঙ পরিবর্তন এবং ফ্যাকাশে দাগ দেখা দেওয়া।
  • ত্বকের উপর জ্বালা এবং যন্ত্রণা অনুভব হওয়া।
  • মাংসপেশী দুর্বল হয়ে পড়া।
  • হাত ও পায়ে ঘা কিংবা অসাড় হয়ে দেখা দেওয়া।
  • ধীরে ধীরে চুল উঠে যাওয়া।
  • ত্বক অধিল পরিমাণে শুষ্কতা অনুভব করা।
  • পায়ের পাতার নীচের অংশে ঘা দেখা দেওয়া।
  • নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবংমনাক দিয়ে রক্ত পড়া।

কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসা 

যে কোনও রোগের সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা করা প্রয়োজন। কুষ্ঠ রোগ ও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই দ্রুত এই রোগের চিকিৎসা না করালে তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক কুষ্ঠ রোগ এর নিরাময়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা:

অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ  

অনেক রোগের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের গুরুত্ব অপরিসীম। কুষ্ঠ রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতেও অ্যান্টিবায়োটিক বিশেষ ভূমিকা রাখে। 

যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধের মাধ্যমে কুষ্ট রোগ নিরাময় সম্ভব তা হলো: 

  • ড্যাপসন (Dapsone)
  • রিফাম্পিসিন (Rifampicin)
  • ক্লোফাজামিন (clofazimine)
  • ম্যাক্রোলাইডস (Macrolides)
  • মাইনোসাইক্লিন (Minocycline)

তবে এই সব ঔষধ সেবন এর আগে অবশ্যই চিকিৎসক এর পরামর্শ নিতে হবে। 

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধ  

বেরিবেরি রোগের কারণে শরীরে ক্ষত সৃষ্টি হয়। যা প্রচণ্ড জ্বালা, যন্ত্রণার ও ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই জন্য অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি ঔষধের ব্যবহার ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ব্যথা কমায়। পারকিনসন রোগ কি? এটি কেন হয়,এর লক্ষণ ও প্রতিরোধ জানুন!

এই ঔষধের মধ্যে একজন কুষ্ঠ রোগীর যা প্রয়োজন তা হলো: অ্যাস্পিরিন (Aspirin), প্রেডনিসোন (Prednisone) এবং থালিডোমাইড (Thalidomide) ।  

কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে খাদ্যভ্যাস

নিয়মিত খাদ্যভ্যাস ও পুষ্টিকর খাবার আমাদের যেকোনো রোগ থেকে দূরে রাখে। দেহে কুষ্ঠ রোগ এর মতো ভয়াবহ রোগ দেখা দিলে পুষ্টিকর খাবার অত্যন্ত জরুরি।

চলুন জেনে নেওয়া যাক কুষ্ঠ রোগ নিরাময়ে পুষ্টিকর খাবার সমূহ: 

বাদাম জাতীয় খাবার

বাদামে থাকে ফ্যাট এবং ক্যালরি যা শরীরে চর্বির চাহিদা মেটায়। আরও নানা ধরনের উপাদান আছে যেমন- প্রোটিন, ভিটামিন, ফসফরাস ইত্যাদি। যা কুষ্ঠ জাতীয় রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।

সিজেনল ফলমূল

সিজেনাল ফলে রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। তাই এইসব রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য অবশ্যই সিজেনাল ফলমূল খেতে হবে।

মাছ ও মাংস 

মাছ ও মাংস জাতীয় খাবার কে বলা হয় প্রোটিন জাতীয় খাবার। এই প্রোটিন ত্বকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেকোনো প্রকারের রোগ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তাই দৈনন্দিন পরিমাণমতো মাছ কিংবা মাংস খাওয়া উচিৎ।

সবুজ শাক-সবজি

সবুজ শাক-সবজি দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক কার্যকরি ভূমিকা রাখে। শাক সবজীতে রয়েছে- প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা ত্বকের বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখে।

কুষ্ঠ রোগ থেকে দূরে থাকার কিছু সহজ টিপস

কুষ্ঠ খুবই জটিল একটি রোগ। তাই সবাই এটি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কিছু মূল্যবান উপায় অবলম্বন করলে এই রোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক কুষ্ঠ রোগ থেকে দূরে থাকার প্রয়োজনীয় কিছু টিপস:

১. হাঁচি কিংবা কাশি হলে অবশ্যই রুমাল ব্যবহার করতে হবে।

২. যদি এই রোগে কেউ অাক্রান্ত হয়ে থাকে। তাহলে, সেই ব্যক্তির থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

৩. হাতে যেন ব্যাক্টেরিয়া না জমতে পাড়ে, তাই নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

৪. পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করতে হবে। কারণ পুষ্টিকর খাবার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। 

৫. নিয়মিত ১ থেকে ২ ঘন্টা শরীরচর্চা  করতে হবে। এর ফলে যেকোনো রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

ভিডিওঃ রক্ত আমাশয় নিরাময়ে কুচিলার মাধ্যমে ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি।

শেষ কথা 

দেহকে কুষ্ঠ রোগ এর মতো ভয়াবহ রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য, প্রতিরোধ এবং সচেতনতার সঠিক পরিচর্যা করা দরকার। আশাকরি, উপরোক্ত তথ্যের মাধ্যমে তা পূরর্ণ করতে আপনি সক্ষম হবেন।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top