নাকের সর্দি দূর করার উপায়

নাকের সর্দি দূর করার ১৬টি ঘরোয়া উপায় জানুন!

নাকের সর্দি দূর করার উপায়: গ্রীষ্ম, বর্ষা কিংবা শীত যে কোনো মৌসুমেই নাকের সর্দির সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যা থেকে মাথাব্যথা, বুকে ব্যথা, বুকে কফ জমে যাওয়া, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। যাদের ঠাণ্ডা অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েন।

সব সময় নাক টানা আর নাক মুছতে মুছতে অনেকেই বিরক্তি হয়ে পড়েন। নাক বন্ধ হয়ে অস্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে তো সমস্যা হয়,পাশাপাশি অনেকের মেজাজটাও খারাপ হয়ে যায়। তাই আমাদের নাকের সর্দি দূর করার উপায় জানা প্রয়োজন।

নাকের সর্দি দূর করার উপায়

নাকের সর্দি বাংলাদেশী মানুষের ক্ষেত্রে একটি অতি পরিচিত নৈমিত্তিক শারীরিক সমস্যাই। ছেলে-বুড়ো-শিশু-যুবা-কিশোর সবাই এই সমস্যায় ভোগেন। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ-হেমন্ত সব ঋতুতেই এই সমস্যা দেখা যায়। তাই আসুন জেনে নেই নাকের সর্দি দূর করার উপায়

আদা

সর্দি ঠেকাতে আদা-চা যে কার্যকর এ কথা সকলেই জানেন। এক টেবিল চামচ আদা কুচি এক কাপ পানিতে মেশান। এ বার এটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ৫-১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। চা ফোটানোর সময় তাতে কিছুটা মধু ও লেবুর রস দিতে পারেন। দিনে অন্তত তিনবার এই পানীয়টি পান করুন। এ ছাড়াও গোল মরিচের গুঁড়ো, এবং লবঙ্গের গুঁড়ো দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে চা পান করতে পারেন। আদা চা শরীরকে গরম রাখতে ও সর্দি দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী।

রসুন

এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট রয়েছে। যা সর্দি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাংগাল উপাদান রয়েছে, যা সংক্রমণ রুখতে পারে।

২-৩টি রসুন থেঁতলে এক কাপ পানিতে ১০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর পানি ছেঁকে কুসুম গরম পানি পান করতে হবে। এছাড়াও আপনি চাইলে চার-পাঁচ কোয়া রসুন ঘিয়ে নেড়ে নিয়ে গরম থাকতে থাকতে খেয়ে নিন। ঘিয়ে ভাজা রসুন তরকারি, স্যুপ বা যেকোনো কিছুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলেও আরাম পাবেন।দিনে দুবার এই পদ্ধতিতে রসুন খেলে দ্রুতই সর্দি ভালো হয়ে যাবে।

তেজপাতা

তেজপাতায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি। যা ঠাণ্ডাজনিত সর্দি সমস্যাগুলোর প্রকোপ কমাতে কাজ করে। বিশেষত সর্দি হলে তেজপাতা খুব ভালো কাজ করে। দেড় গ্লাস পানিতে ৫-৬টি তেজপাতা ১০-১৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। জ্বাল দেয়া শেষে পানি ছেঁকে নিয়ে পান করতে হবে। দিনে ২-৩ বার তেজপাতার পানি পান করতে পারেন।

লেবু এবং মধু 

লেবু জলে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন। মধু শ্বাসযন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এক গ্লাস পরিমাণ পানি, অর্ধেক লেবুর রস ও এক চা চামচ মধু। প্রথমে পানি গরম করে এতে মধু মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। প্রতিদিন ২ বেলা লেবু-মধুর মিশ্রণ খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

গরম পানি

গরম পানি সর্দি সারাতে বেশ ভালো ভূমিকা রাখে। আপনি গরম পানির মধ্যে কয়েক দানা মেনথল দিন। এরপর কান, গলা, মাথা ঢেকে ফেলুন বড় চাদর দিয়ে। তারপর গরম পানির ভাপ নিন। দেখবেন সর্দির সমস্যা কমে গেছে। মেনথল না থাকলে শুধু গরম পানির ভাপ নিতে পারেন।ভাপ নেওয়ার সময় ফ্যান বন্ধ রাখবেন। এছাড়াও গরম পানি দিয়ে গোসল করলে উপকার পাবেন।

অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার

ব্যাকটিরিয়ার আক্রমণ ঠেকাতে আপেল সাইডার ভিনিগার খুবই উপকারী। সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে এক কাপ সামান্য উষ্ণ জলে দুই চা চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে এই পানীয়টি দিনে অন্তত দু’ তিনবার পান করুন। দ্রুত সর্দির সমস্যা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

সর্দি কমাতে সাহায্য করে যে খাবার

আমাদের খুব পরিচিত এবং সাধারণ সমস্যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সর্দি।  বিশেষ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের সময়ে আমাদের অনেকেরই সর্দি হয়ে থাকে। এই মৌসুমি রোগ থেকে স্বস্তি পেতে পারেন ঘরোয়া কিছু খাবার খেয়ে।

কলা

অনেকেরই ধারনা যে ঠাণ্ডা লাগলে কলা খাওয়া যায় না আর এটা সম্পূর্ণই ভুল ধারণা। বরং কলা একটি নন-অ্যাসিডিক খাবার।যা গলা সর্দি কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। এ ছাড়াও কলায় আছে লো-গ্লাইসেমিক খাবার। যা ঠান্ডা-সর্দি ভাব কমায়। এমনকি কলায় থাকা ফাইবার হজমশক্তি বাড়াতে এবং পুষ্টি ও ক্যালোরি সরবরাহ করে সর্দি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।

চিকেন স্যুপ 

সর্দি কমাতে গরম পানীয়ের ব্যবহার প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। এই তালিকার মধ্যে পড়ে চিকেন স্যুপও। কারণ চিকেন স্যুপে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান। যা সর্দির জন্য দায়ী ভাইরাস এবং মিউকাস কমায়। এছাড়াও এটি শরীরকে পর্যাপ্ত অনুপাতে পুষ্টি দিয়ে এবং শরীরে তরল সরবরাহ করে। যা জ্বর সর্দি থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।

এলাচ

প্রত্যেকের বাড়ির রান্নাঘরেই থাকে এলাচ৷ মশলা হিসেবে নয় সর্দি, কাশি এবং ঋতু পরিবর্তনের সমস্যা থেকেও মুক্তি দিতে পারে এলাচ৷ অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরা এলাচ জীবানুনাশকও৷ সর্দি, নাক বন্ধ,  শুকনো কাশি হলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে এলাচকে কাজে লাগান৷ এক কাপ পানি নিয়ে গরম করতে দিন। এরপর তাতে মধু এবং বেশ কয়েকটি ছোট এলাচ দিন৷ ফুটে গেলে এলাচ ছেঁকে ওই পানি পান করুন৷ এই পানি কয়েকদিন খেলেই কমে যাবে সর্দি৷ রেহাই পাবেন শুকনো সর্দি-কাশি থেকেও৷ এছাড়াও ছোট এলাচ মুখে রাখলেও শুকনো সর্দি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব৷ 

সিদ্ধ গাজর 

গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড। গাজরে থাকা ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। স্বাভাবিক কারণেই হুট করে মৌসুমি সর্দির মতো রোগগুলো ধরে না। তবে ঠান্ডা লাগলে কাঁচা গাজর না খেয়ে সেদ্ধ করেই গাজর খাওয়া উচিত।

ডাবের পানি

সর্দি হলে শরীর আর্দ্র রাখার প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। এই আর্দ্রতা ধরে রাখে ডাবের পানি। এই সময় বেশি করে পানি খাওয়ার কথা বলে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে পানি খাওয়ার পাশাপাশি দ্রুত সুস্থ হতে খেতে পারেন ডাবের পানও। বিভিন্ন পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই পানীয় সর্দি সঙ্গে লড়তে দারুণ সাহায্য করে।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

বাচ্চাদের নাকের সর্দি দূর করার উপায়

শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রাপ্তবয়স্কদের মতো ততটা শক্তিশালী নয়। এজন্য শিশুদের সর্দি বা ফ্লুর সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। আর সর্দি হলে সহজে সারতেই চায় না। শিশুদের এই নাকের সর্দি দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায়-

কমলালেবু

বাচ্চাদের কাছে একটি পছন্দের খাবার কমলালেবু। কমলালেবুতে থাকা ভিটামিন “সি” রক্তকোষের উৎপাদন বাড়ায়। যা সর্দি জীবাণুদের সাথে যুদ্ধ করে সর্দি উপশম করে। এছাড়াও এটা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

সরিষার তেল

সরিষার তেলের উপকারিতার কথা অনেকেই জানেন। বড়দের ক্ষেত্রেও সরিষার তেল উপকারী। তেমনি বাচ্চাদের সর্দি সারানোর ক্ষেত্রে সরিষার তেল কার্যকর। দুই কোয়া রসুন এবং কিছু কালোজিরা বীজ দিয়ে সরিষার তেল গরম করুন। এই তেল দিয়ে আপনার শিশুর পায়ের পাতা, পিঠ, হাতের তালু এবং বুকে মালিশ করুন। এমনকি রাতে  শোওয়ার আগেও বাচ্চার পায়ের তলায় এবং গলায় ওই তেলটি দিয়ে মালিশ করুন। সর্দি থেকে উপশম হবে।

দুধে জায়ফল

সর্দি সারাতে দুধে জায়ফল দুর্দান্ত ঘরোয়া উপায়। কয়েক চামচ দুধ নিন এবং তাতে এক চিমটি জায়ফল পাউডার দিয়ে একটু ফোটান। এরপর ঠাণ্ডা করে শিশুকে খাওয়ান। শিশু উপকৃত হবে। এটি আপনার সন্তানকে তাৎক্ষণিক সুস্থ করার একটি দুর্দান্ত উপায়।

মায়ের বুকের দুধ

বলা হয়, “Breast milk is the best milk for children”. নবজাতকের জন্য এটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বিশেষকরে শিশু যখন অসুস্থ হয়। তাই শিশু অসুস্থ হলে বেশি বেশি করে বুকের দুধ খাওয়ান।

মায়ের বুকের দুধ সব পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। যা বাচ্চাদের যেকোনো রোগবালাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। ৬ মাসের ছোট বাচ্চাদের সর্দিকাশি নিরাময়ে ঘরোয়া উপায় অনুসরণ না করে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পান করান। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

আপনার বাচ্চার যদি উপরে বর্ণিত কোনও ঘরোয়া প্রতিকারমূলক পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাল বোধ না হলে চিকিৎসার  প্রয়োজন। এক্ষেত্রে দেরী না করে চিকিৎসক পরামর্শ নিন।

উপসংহার

নাকের সর্দি দূর করার উপায় এই  উপশম  আমাদের জেনে রাখা দরকার। নাকে সর্দি দেখা দেওয়া মাত্রই আমাদের দূর করার ব্যবস্হা নিতে হবে। নাহলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে শ্বাসযন্ত্রেও। সেক্ষেত্রে অসুস্থ ব্যাক্তির অবস্থা আরে গুরুতর হতে পারে।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top