গ্রুপ পর্ব ও সুপার ফোরের সকল বাঁধা পেরিয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে এসেছে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। সুপার ফোরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা একবার মুখোমুখি হলে সেই ম্যাচ জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। তবে ফাইনাল যে সম্পূর্ণ ভিন্ন তা প্রমান করতেই মাঠে নামে পাকিস্তান।
দুবাই ইন্টারন্যাশাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ফাইনালে টসে জিতে বরাবররে মতো প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। বল হাতে পাকিস্তানকে প্রথমেই সাফল্য এনে দেয় নাসিম শাহ্। ইনিংসের তৃতীয় বলেই কুশাল মেন্ডিসকে গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফেরালে মাত্র ২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
আরেক ওপেনার পাথুম নিশানকাও আজ জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়। আস্তে ধীরে ক্রিজে সেট হচ্ছিলো নিশানকা। কিন্তু তাকে দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয়নি হারিস রউফ। বাবর আজমের হাত বন্দি হয়ে ১১ বলে ৮ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নিতে হয় পাথুম নিশানকাকে।
চতুর্থ উইকেটে দলকে টানতে শুরু করে সিলভা ও বানুকা রাজাপাক্সে। তবে সিলভার সঙ্গও স্থায়ী হয়নি বেশীক্ষণের জন্য। ২১ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলে ইফতিখার আহমেদের বলে তারই হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে সিলভা। এরপর দাশুন শানাকা ক্রিজে এসে শীঘ্রই বিদায় নেয়। ৩ বলে ২ রান করে সাদাব খানের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে দাশুন শানাকা।
দলের এই করুন অবস্থায় দলের হাল ধরে বানুকা রাজাপাক্সে ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তাদের অসাধারণ পার্টনারশিপে শ্রীলঙ্কা এগিয়ে যায় অনেকদূর। রাজাপাক্সে ও ওয়ানিন্দুর ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে যায় পাকিস্তান বোলাররা। অসাধারণ শুরু করলেও শেষে এসে বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারছিল না পাকিস্তান।
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে সাজঘরে ফিরিয়ে স্বস্তি এনে দেয় হারিস রউফ। হারিস রউফের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ আউটের শিকার হন হাসারাঙ্গা। সাজঘরে ফেরার পূর্বে একটি ছক্কা ও পাঁচটি চারে ২১ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
এরপর শেষের দিকে রাজাপাক্সেকে সঙ্গে দেয় চামিকা করুনারাত্নে। রাজাপাক্সের অসাধারণ ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৭০ রান। ৪৫ বলে ৭১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেও অপরাজিত ছিল বানুকা রাজাপাক্সে। ১৪ বলে ১৪ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিল চামিকা করুণারাত্নে। অসাধারণ বোলিংয়ে পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ তিনটি উইকেট তুলে নেয় হারিস রউফ।
১৭১ রানের বিশাল টার্গেট নিয়ে মাঠে নামে পাকিস্তান। প্রথম ওভারে শুধু এক্সট্রাতেই ৭ রান পায় পাকিস্তান। দুই ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও বাবর আজম আস্তে ধীরে ইনিংস শুরু করে। ভালো ওপেনিং জুটির স্বপ্ন দেখালেও শীঘ্রই সাজঘরে ফিরে বাবর আজম।
৬ বলে ৫ রানের ইনিংস খেলে প্রামদ মাদুশানের বলে দিলশান মাদুশানকার হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে বাবর আজম। এতে দলীয় ২২ রানে প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। বাবর আউটের পরে ক্রিজে নেমে প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাকে সাজঘরে ফিরে ফখার জামান। বোল্ড আউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে ফখার জামান। হ্যাট্রিকের সুযোগ তৈরি হলেও ব্যর্থ হয় প্রামদ মাদুশান।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
তৃতীয় উইকেটে বেশ ভালো প্রতিরোধ গড়ে তুলে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। দুজনে টিকে থাকলে প্রয়োজনীয় গতিতে এগোচ্ছিল না রানের চাকা। শেষ পর্যন্ত তাদের পার্টনারশিপ ভাঙে প্রামদ মাদুশান। ৩২ বলে ৩১ রান করা ইফতিখারকে সাজঘরে ফেরানোর মাধ্যমে তিনটি উইকেট তুলে দেয় প্রামদ মাদুশান।
এরপর মোহাম্মদ নওয়াজ নেমেও বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হয়। ৯ বলে ৬ রানের ইনিংস খেলে নওয়াজ বিদায় নিলে দিশেহারা হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। অল্প বলে অধিক রান দরকার হওয়ায় বাউন্ডারি খেলার চেষ্টা করে পাকিস্তান।
এটার সুযোগ নিয়েই দ্রুত উইকেট ফেলতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ১৭তম ওভারে এক ওভারেই তিনটি উইকেট শিকার করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। প্রথম বলে ৪৯ বলে ৫৫ রান করা ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফেরায় হাসারাঙ্গা। তারপর তৃতীয় বলে আসিফ আলী গোল্ডেন ডাক ও পঞ্চম বলে কুশদীল শাহ্কে সাজঘরে ফেরালে জয়ের আশা নিভে যায় পাকিস্তানের।
এরপর আর কেউই ব্যাট হাতে দাড়াতে পারেনি লঙ্কান বোলারদের সামনে। হারিস রউফ ৯ বলে ১৩ রান করলেও বাকিদের কেউই দুই অঙ্কের স্কোরের দেখা পাননি। এতে ২৩ রানের জয় পেয়ে এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কার পক্ষে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট শিকার করে প্রামদ মাদুশান। তিনটি উইকেট শিকার করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও দু’টি শিকার করে চামিকা করুনারাত্নে। ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়েছেন বানুকা রাকাপাক্সে। প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছে শ্রীলঙ্কার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা – ১৭০/৬ (২০)
বানুকা রাজাপাক্সে ৭১
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩৬
সিলভা ২৮
হারিস রউফ ৩/২৯
ইফতিখার আহমেদ ১/২১
পাকিস্তান – ১৪৭/১০ (২০)
মোহাম্মদ রিজওয়ান ৫৫
ইফতিখার আহমেদ ৩২
হারিস রউফ ১৩
প্রামদ মাদুশান ৪/৩৪
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩/২৭
চামিকা করুনারাত্নে ২/৩৩