খুশকি দূর করার উপায় নিয়ে অনেকেই চিন্তাই পড়ে যায়। খুশকি সমস্যায় ভোগেনি এমন মানুষ খুব কমই আছে।
নারকেল তেল, এলোভেরা, কাঁচা আমলকি, নিমপাতা, লেবু, দুর্বা ঘাস, তুলসীপাতা ব্যবহার করে খুশকি দূর করা যায়।
এছাড়াও আরও কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি আছে যা অনুসরন করলে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে কার্যকর ফলাফল পেতে পারেন।
ভিডিওঃ চুল লম্বা এবং ঘন করার সহজ ৪ টি উপায় ।। এবার চুল লম্বা হবেই!
Table of Contents
খুশকি দূর করার উপায় – ১১টি ঘরোয়া পদ্ধতি জানুন
খুশকি প্রতিটি মানুষেরই একটি সাধারন সমস্যা। দীর্ঘদিন মাথায় খুশকি থাকলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন-চুল ঝরে পড়া, মাথার চুলকানি, মাথায় ক্ষতস্হান তৈরি ইত্যাদি। তাই সকলেরই উচিৎ যথাশীঘ্রই খুশকি হতে মুক্তি পাবার ব্যবস্হা গ্রহণ করা। নিচে খুশকি দূর করার উপায় গুলো বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
১. টকদই
খুশকি দূর করতে টকদই অত্যন্ত উপকারি। প্রথমে ৬ টেবিল চামচ টকদই ভালভাবে ফেটিয়ে নিন। এর সাথে ১টেবিল চামচ মেহেদি বাটা মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের আগা থেকে শুরু করে গোড়া পর্যন্ত পুরো চুলে লাগিয়ে আধাঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে ১ দিন ব্যবহার করুন। এতে খুশকি মুক্ত হবে তেমনি চুল হয়ে উঠবে রেশমি ও ঝলমলে।
২. মেথি
মেথি চুলের জন্য একটি উপকারি উপাদান। মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ভেজানো মেথি থেঁতো করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। অথবা নারকেল তেল গরম করে পরিমাণ মতো মেথির গুড়ো মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ঠান্ডা করে পুরো চুলে লাগিয়ে আধাঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। দ্রুত ফল পেতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন মেথি ব্যবহার করুন। চুলপড়া প্রতিরোধক ও চুল নতুন গজানোর ওষুধ কিনুন আমাদের শপ থেকে!
৩. তেতুল
মাথার চুলকানি সারতে এবং খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে তেতুল অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। এক্ষেত্রে তেতুল পানিতে ভিজিয়ে গুলিয়ে নিন। গুলানো পানি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর করতে এ পদ্ধতিটি সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করুন।
৪. ডিমের সাদা অংশ
খুশকি দূর করতে ডিমের সাদা অংশের সাথে ৪ টেবিল চামচ টকদই ভালভাবে ফেটিয়ে ১টা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি মাথার ত্বক এবং চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। মিশ্রণটি সপ্তাহে অন্তত ১দিন ব্যবহার করুন উপকার পাবেন।
৫. অলিভ অয়েল
চুলের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অলিভ অয়েল গরম করে তার সাথে একটি পাতিলেবুর রস মিশিয়ে নিন। চুলের গোড়া থেকে শুরু করে পুরো চুলে লাগিয়ে এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি দূর করার পাশাপাশি চুল কোমল ঝলমলে করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
৬. নারকেল তেল ও লেবু
খুশকি দূর করতে নারকেল তেল ও লেবুর রস ভালো কাজ দেয়। এক্ষেত্রে নারকেল তেলের সাথে সমপরিমাণ লেবুর রস একত্রে মিশিয়ে ভালভাবে ম্যাসাজ করুন। এর পর শ্যাম্পু দিয়ে মাথার ত্বক ও চুল ভালভাবে পরিষ্কার করে নিন। এই পদ্ধতিটি নিয়মিত ব্যবহারে চুলের খুশকি দূর হবে।
৭. পেঁয়াজের রস
দ্রুত খুশকি দূর করতে পেঁয়াজের রস ব্যবহার করুন। পেঁয়াজ থেঁতো করে চুলের গোড়ায় ঘসে ঘসে লাগিয়ে ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ভালভাবে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন পেঁয়াজের রস লাগান এতে খুশকির পাশাপাশি মাথার চুলকানিও কমে যাবে।
৮. অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
খুশকির সমস্যা দূর করতে অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এক কার্যকর পদ্ধতি। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার খুশকি দূর করতে প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। পরিমাণ মতো অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এবং সমপরিমাণ পানি একসাথে মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালভাবে ম্যাসাজ করুন। এরপর ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ভালভাবে ধুয়ে ফেলুন। এ পদ্ধতিটি সপ্তাহে দুই বারের বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
৯. গ্রিন টি
গ্রিন টিতে রয়েছে ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধী উপাদান, যা মাথার ত্বক ভালো রাখতে বিশেষ ভুমিকা পালন করে থাকে।
এক কাপ গরম পানিতে ২টা গ্রিন টি ব্যাগ ২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন। এরপর ঠান্ডা হলে তা মাথার ত্বকে লাগিয়ে আধাঘন্টা অপেক্ষা করুন। এরপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। খুশকি দূর করতে নিয়মিত গ্রিন টি ব্যবহার করতে পারেন।
১০. আমলকি
খুশকি দূর করতে কাঁচা আমলকি বেশ কার্যকর। কাঁচা আমলকি ছেঁচে নারকেল তেলের সাথে মিশিয়ে গরম করে নিন অথবা কাঁচা আমলকি রোদে শুকিয়ে গুড়ো করে তেলের সাথে মিশিয়ে বোতলে ভরে রেখে দিন। এই তেল সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করুন এতে খুশকি কমে যাবে।
১১. কমলা লেবুর খোসা
কমলা লেবুর খোসা খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে সহজ একটি পদ্ধতি। কমলা লেবুর খোসা এসিডযুক্ত। ফলে মাথায় ত্বকের অতিরিক্ত তেল দূর করার পাশাপাশি খুশকিও রোধ করে।
এক্ষেত্রে কয়েকটি কমলা লেবুর খোসা এবং ৪ থেকে ৫ চা চামচ লেবুর রস একত্রে ব্লেন্ড করে একটি হেয়ার প্যাক তৈরি করুন। হেয়ার প্যাকটি চুলে লাগিয়ে আধাঘন্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে খুশকি দূর হয়ে যাবে।
খুশকি হওয়ার কারণ
বিভিন্ন কারনে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। মাথার ত্বকে মৃত কোষগুলো জমে থাকার কারনে খুশকি উৎপন্ন হয়। এছাড়াও আরও বেশকিছু কারন আছে যার ফলে মাথায় খুশকি হয়ে থাকে। চলুন সেগুলো জেনে নিই।
১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকায়
অনেক সময় দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে শরীরে ছত্রাকের সংক্রমন হয় যা মাথার ত্বকে খুশকির সৃষ্টি করতে পারে। যাদের মধ্যে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন সোরিয়াসিস, এগজিমা ইত্যাদি যাদের মধ্যে রয়েছে তারা খুশকি সমস্যায় ভুগে থাকেন।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
খুশকি সৃষ্টি হওয়ার অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত মানসিক চাপ। দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন টেনশনের কারনে মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মাথার ত্বকে খুশকি দেখা দেয়।
৩. শুষ্ক ত্বক
রুক্ষ এবং শুষ্ক ত্বক খুশকির অন্যতম কারন। শীতের আবহাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হওয়ার পাশাপাশি মাথার ত্বকও রুক্ষ ও শুস্ক হয়ে যায়। ফলে শীত মৌসুমে খুশকির প্রবনতা বেশি দেখা দেয়।
৪. চুল অপরিষ্কার রাখা
চুলে পযাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করার কারনে চুল অপরিস্কার থেকে যায় এবং চুলের গোড়ায় মরা কোষ গুলো জমা হয়ে থাকে। এর ফলে মাথার ত্বকে খুশকি উৎপন্ন হতে পারে।
৫. চিরুনি ব্যবহার না করলে
অনেকেই চুলে নিয়মিত চিরুনি ব্যবহার করেন না। চিরুনি দিয়ে নিয়মিত চুল না আঁচড়ানোর কারনেও মাথায় খুশকি দেখা দেয়।
খুশকির লক্ষণ
মাথায় খুশকি সাধারণ সমস্যা হলেও সকলের জন্যই তা বিব্রতকর। খুশকির লক্ষণ গুলো হলো –
১. খুশকির প্রথম লক্ষণ হলো মাথার ত্বকে চুলকানি
২. মাথার ত্বক শুস্ক হয়ে যাওয়া
৩. কানের ওপর, চোখের পাতা, ভ্রু এবং কপালে ত্বক ঝরে পড়া
৪. ত্বক লাল ও চিটচিটে হয়ে যাওয়া
৫. খুশকির কমন এবং সর্বপ্রথম লক্ষণ হলো কালো পোশাকে সাদা ফ্লেক্স পড়া।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
শেষ কথা
খুশকি দেখা দিলেই তা প্রতিকার করার ব্যবস্থা নিতে হবে। নইলে এ থেকে বিরাট সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। খুশকি দূর করার উপায় গুলো অনুসরনের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খুশকি নিরোধক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এবং সেই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, টাটকা শাক সবজি ও ফলমূল গ্রহণ করুন এবং নিজেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন!