ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান এর পথ খুজতে বর্তমানে অনেকেই গুগল করছেন। ধূমপান বা পরিবেশগত দূষণের কারণে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তবে বেশিরভাগ সময় অনেকেই বুঝতে পারেন তার ফুসফুস ক্রমশ কার্যকারিতা হারাচ্ছে।
অল্পবয়সী অনেকেই ভাবেন, ফুসফুসের সমস্যা বোধ হয় বয়স্কদেরই হয়। তবে এ ধারণা ভুল।তাই আপনি যদি নিজেকে ভালো রাখতে চান তবে আপনাকে ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান উভয় বিষয়ে জানতে হবে।
Table of Contents
ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান; প্রথমেই লক্ষণ জানুন
সব বয়সী নারী-পুরুষের প্রতিই নিচের বার্তা দিয়েছে আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি। তাই জেনে নিন কোন কোন সঙ্কেত পেলে বেশি সাবধান হতে হবে-
- প্রায়ই সর্দি-কাশি হওয়া মোটেও কোন ভালো লক্ষণ নয়। এমনটি হলে বুঝতে হবে শরীরের ভেতরে কোনো সমস্যা হচ্ছে। অনেকের ক্ষেত্রে কাশি হলে সহজে কমতে চায় না। তাই এমন প্রবণতা দেখলে সাবধান হওয়া জরুরি।
- ঘুম থেকে উঠেই কাঁধ ও পিঠে ব্যথা অনুভব করা সাথে সাধারণ ক্লান্তি ভর। এর কারণ হলো শরীরের এক অংশে সমস্যা দেখা দিলে অন্যান্য অংশেও অসুবিধা দেখা দেয়। এই ধরনের ব্যথাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলে ‘রেফার্ড পেইন’।
- সারক্ষণ ক্লান্তবোধ করা সেইসাথে উদ্বেগ ও অবসাদ সাধারণ কোনো সমস্যা নয়। ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সাপ্লাই হয় না। তাই এ থেকেই ক্লান্তি আসতে পারে।
- ইদানিং কি আপনার গলার আওয়াজে কোনো পরিবর্তন এসেছে? অনেকেই মনে করেন সর্দি-কাশির কারণে হয়তো গলার স্বর বদলে গেছে। তবে দিনের পর দিন এমন ভাবে চললে সমস্যা আরও মারাত্মক হতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
- বুকে কফ জমার সমস্যা একসময় ভয়াবহ নিউমোনিয়ার কারণ হতে পারে। এর ফলে ফুসফুস কার্যকারিতা হারায়। তাই বুকে কফ জমলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
ফুসফুসের সমস্যার শুরু যেভাবে
ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান জানতে অনেকেই গুগল করে থাকেন। যেহেতু আমাদের শরীরের একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় অঙ্গ হচ্ছে ফুসফুস, তাই ফুসফুসের যত্ন নেয়া জরুরী।
- সমস্যা – ১: ফুসফুসের মাধ্যমেই আমরা শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে সাধারণত বেঁচে থাকি। কিন্তু এ অঙ্গটি প্রতিনিয়তই বাতাস থেকে বিভিন্ন দূষিত উপাদান ও গ্রহণ করে থাকে।
- সমাধান: ফুসফুসে সংক্রমণ হলে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট, যার ফলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই ফুসফুসকে সুস্থ রাখা জরুরি। ধূমপান না করা, ব্যায়াম করা, বায়ুদূষণ এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি ফসুফুসকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
- সমস্যা -২: বিশেষত যারা ধূমপান করেন এবং বেশি ধুলাবালিময় রাস্তায় বা স্থানে চলাচল করেন,তাদের ফুসফুস সবচে বেশি দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
- সমাধান: অল্পবয়সী অনেকেই ভেবে থাকেন, ফুসফুসের সমস্যা বোধ হয় শুধু বয়স্কদেরই হয়। তবে এ ধারণা ভুল। মনে রাখবেন,রোগ-ব্যাধির কোনো বয়স নেই। এ কারণে সামান্য লক্ষণ দেখলেও আমাদের সতর্ক হতে হবে।
- সমস্যা -৩: বুকে হালকা ব্যথা কিংবা হঠাৎ ঠান্ডা লেগে যাওয়া অনেকেরই তো হয়ে থাকে। তবে এসব লক্ষণ কিন্তু মোটেও ভালো নয়। এটি হতে পারে ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা গুরুতর কোনো ব্রঙ্কাইটিস।
- সমাধান: ধূমপানের অভ্যাস না থাকলেও বুকে ব্যথা হলে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, কারণ এসব ফুসফুসের সমস্যার লক্ষণ।
তবে এসবের পাশাপাশি কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো খাদ্য তালিকায় নিয়মিত রাখলে ফুসফুস ভালো থাকে।
ফুসফুস সুস্থ রাখাতে যেসব খাবার গ্রহন করবেন
পুষ্টিবিদদের মতে পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার ফুসফুসের জন্য খুব ভালো। তাই সবুজ শাক, টমেটো, আলু, কলা খেতে পারেন নিয়মিত। দেহে প্রোটিনের জন্য মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, দই, ডাল, ছোলা ইত্যাদি।
ফুসফুসের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে দিনে ২-৩ লিটার পানি অবশ্যই পান করতে হবে।
এছাড়াও কয়েকটি বিশেষ খাবার রয়েছে যা ফুসফুসের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
নিয়মিত আপেল খাবেন
আপেল খাওয়ার ভীষণ উপকারিতা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় বলা হয়, সপ্তাহে যারা কমপক্ষে দুটি থেকে পাঁচটি আপেল খায়, তাদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি ৩২% কমে যায়। আপেলের মধ্যে রয়েছে ফ্লাবোনয়েড। যা শ্বাস নেয়ার পথকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফুসফুসকে ভালো রাখে।
গাজর
গাজর বেটাক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্টের জন্য খুব প্রসিদ্ধ। গবেষণায় বলা হয়, বেটাক্যারোটিন শরীরে প্রবেশ করে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। তাই ফুসফুস ভালো রাখতে গাজর একটি চমৎকার খাবার।
কফি ও গ্রিনটি পান
কি পরিমাণ কফি পান শরীরের জন্য ভালো! এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে কফি ও গ্রিনটি কিন্তু ফুসফুস ভালো রাখতে বেশ সাহায্য করে, বিশেষ করে ব্ল্যাককফি।
কফি পানের চারঘণ্টা পর শ্বাসতন্ত্রের কার্যক্রম খুব ভালো হয়। তাই ফুসফুস সুরক্ষিত রাখতে নিয়মিত কফিপান করতে পারেন।
রসুন খাওয়া
রসুনে রয়েছে অ্যান্টিইনফ্লামেটোরি উপাদান। যা দীর্ঘকাল ধরে বিভিন্ন ভাইরাস জনিত সংক্রমণ প্রতিরোধে রসুন ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
রসুন অ্যাজমা প্রতিরোধ করে সেইসাথে প্রতিরোধ করে ফুসফুসের ক্যানসারও।
ভিটামিন-ডি জাতীয় খাবার
ভিটামিন-ডি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরে ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি দেখা দিলে ফুসফুসের রোগ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
সূর্যের আলো ভিটামিন-ডি এর অন্যতম উৎস্য। তার পাশাপাশি দুধ, ডিম, দই, মাছ, মাংস ইত্যাদি থেকেও পাওয়া যায় প্রছুর পরিমানে ভিটামিন-ডি।
ক্যাপসিকাম
ক্যাপসিকামের ঝাল উপাদান রক্ত সঞ্চালন এবং বিভিন্ন প্রদাহ থেকে দেহকে রক্ষা করতে সহায়ক।
বাদাম
যেকোনো বাদাম ও বীজজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াস থাকে। এগুলো ফুসফুসের স্বাস্থ্যকর কার্যাবলী অক্ষুণ্ন রাখতে সাহায্য করে।
হলদি দুধ
প্রতি রাতে এক গ্লাস দুধে হলুদ মিশিয়ে পান করলে ফুসফুসের প্রদাহ ও রোগবালাই দূরে থাকে।
আদা
আদায় আছে প্রদাহরোধী উপাদান যা ফুসফুস থেকে বিষাক্ত উপকরণ দূর করে। তাই আদা খেতে পারেন কাঁচা অথবা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে।
গুড় ও মধু
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, গুড় ফুসফুসকে উষ্ণ রাখতে ও বিভিন্ন সংক্রমণ হতে রক্ষা করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি মধু ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে কার্যকর পাশাপাশি এটি এন্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিমাইক্রোবিয়াল ও এন্টিইনফ্ল্যামেটরি হিসেবে কাজ করে থাকে।
কালোজিরা
ফুসফুস ভালো রাখতে কালোজিরা অনেক উপকারী। কালোজিরার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শ্বাসনালির প্রদাহ রোধ করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন হাফ চা চামচ কালোজিরার গুঁড়া এক চা চামচ মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে ফুসফুস ভালো থাকে।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
ফুসফুস ভালো রাখার ব্যায়াম
ঘরোয়া ভাবে ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান করতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই।
গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া: শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম উপায় লম্বা শ্বাস নেওয়া, ইহা সবচাইতে সহজ পদ্ধতিও। প্রতিদিন ‘ইয়োগা’ করাও এসব ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোজা হয়ে বসুন: সোজা হয়ে বসে আপনার হাত দুটি উরুর ওপর রাখুন, মুখ খুলে যতটা সম্ভব বাতাস একবারে টেনে নিন, ঠোঁট চেপে রাখুন।
শরীরচর্চা: সব রকমের শরীরচর্চাই শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্ষমতা বাড়াতে উপকারী। এক্ষেত্রে সাঁতার কাটা, দৌড়ানো, পাহাড় ট্রেকিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডেও উপকার মিলবে।
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নাবলি:
প্রশ্ন: ফুসফুস সুস্থ আছে বোঝার উপায়
উত্তর: যতক্ষণ সম্ভব তত সময় ধরে শ্বাসটা শরীরের মধ্যে রেখে দিন। এরপর আপনি কতক্ষণ শ্বাস ধরে এটি আটকে রাখতে পারেন তার ওপর আপনার ফুসফুসের সুস্বাস্থ্যের দিকটি নিশ্চিত হয়।
যে কেউ এটি প্রথমে ঘন্টা খানেক ধরে পারে তারপর আরো বেশি সময় ধরে এই ব্যায়াম করতে পারেন। যাঁরা একটানা ২৫ সেকেন্ড শ্বাস আটকে রাখতে পারেন তাদের কোনো সমস্যা নেই।
প্রশ্ন: ফুসফুসের সমস্যার প্রাথমিক লক্ষণ কি?
উত্তর: বুকে হালকা ব্যথা কিংবা মাঝে মধ্যেই ঠান্ডা লেগে যাওয়া ফুসফুসের সমস্যার অন্যতম লক্ষণ। তবে সকলের ক্ষেত্রে একই ধরণের লক্ষণ নাও হতে পারে।
প্রশ্ন: ফুসফুসের সমস্যা দূর করার ঘরোয়া উপায় কি?
ফুসফুস সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে নিয়মিত গরম পানির ভাঁপ নিতে পারেন। যখন গরম ভাঁপ নেবেন; তখন ফুসফুসের ড্রেনে জমে থাকা শ্লেষ্মা গলে যাবে এবং ভালোভাবে বুকভরে নিশ্বাস নিতে পারবেন। সেই সাথে আপনার খাবার তালিকায় যুক্ত করতে হবে পুষ্টিকর সুষম খাবার।
শেষ কথা
ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে আশা করি জানতে পেরেছেন। আমাদের শারীরিক সমস্যাকে সর্বদা সব কিছুর আগে প্রাধান্য দিয়ে ফুসফুস থেকে শুরু করে যে কোন শারীরিক সমস্যায় একদম হেলামি করা যাবেনা।
কেননা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শারীরিক সমস্যাকে অবহেলা করার কারণে দেহে বাসা তৈরি হতে পারে বড় ধরণের রোগ। ফুসফুস আমাদের দেহের ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। তাই আমাদের উচিত ফুসফুসের সমস্যা দূর করার উপায় জেনে সঠিক ভাবে চলাচল করা।
বিঃদ্রঃ ফুসফুসের সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কে ১০০% সঠিক তথ্যের জন্য অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। কেননা আমারা এখানে আপনাকে ফুসফুস সম্পর্কে বেসিক ধারনা দেয়ার চেষ্টা করেছি।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!