দিনের দুটো ম্যাচই গড়িয়েছে পেনাল্টিতে; হয়েছে শেষ মুহুর্তের গোল। এক ম্যাচে ছিলো রেফারির নির্লিপ্ততা তো অন্য ম্যাচে বেজেছে ফাউল ও হলুদ কার্ডের অনবরত বাঁশি। এমন একটা রাত যেকোনো ফুটবল ভক্তের জন্যই ছিলো রোমাঞ্চকর; শিহরণ জাগানিয়া তো বটেই।
নেইমারের বিশ্বকাপ অধ্যায় যে রাতে শেষ হলো, সে রাতেই মেসি টিকিয়ে রাখলো তার বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন। চলুন একনজর দেখে নিই এ নাইট অব থ্রিলারের সব খুঁটিনাটি।
Table of Contents
প্রথম ম্যাচ:
শেষ হলো সাম্বা ড্যান্স
কোয়ার্টারে ক্রোয়েশিয়ার কাছে এসে শেষ হলো সেলেসাওদের সাম্বা ড্যান্স। নেইমারের শেষ মুহূর্তে গোল ও ডাচদের অতিরিক্ত মিনিটে ম্যাচ রক্ষা; সবকিছু মিলিয়ে পেনাল্টিতে গড়ায় ম্যাচ। কিন্তু পেনাল্টি শুট আউটে নেইমারের অনুপস্থিতি ও ডাচদের সুনিপুণ কৌশলে এবারের মতো শেষ হলো হেক্সা মিশনে থাকা সৈনিকদের।
- নার্ভাসনেস
কোয়ার্টারে এসে ব্রাজিলের ছন্দপতন যেন একই গল্পের পুনরাবৃত্তি। এই ম্যাচেও গোলশূন্য প্রথমার্ধে ব্রাজিলের সেই চিরচেনা ছন্দের অভাব দেখা যায়। নক আউটের চাপ যেন আজও তাড়া করে বেড়ায় সেলেসাওদের। তাছাড়া ক্রোয়েশিয়া যেভাবে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে সেটাও হয়তো আশা করেনি টিটের শিষ্যরা।
গোলশূন্য প্রথমার্ধে তাই শুধু ক্রোয়েশিয়ার নৈপুণ্যই ধরা পড়ে না, ফুটে ওঠে ব্রাজিলের নার্ভাসনেসও।
- জ্যামিতিক ছকে নেইমার
প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধও ছিলো গোলশূন্য। তবে দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাজিলের নার্ভাসনেস কিছুটা কেটে উঠতে শুরু করে। কিন্তু গোলশূন্য থাকে দুই দলই। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
অতিরিক্ত সময়ের ঠিক ১০৬ মিনিটে ক্রোয়েশিয়ার শক্তিশালী ডিফেন্স ভেদ করে এক জ্যামিতিক ছকে গোল করে নেইমার। সেলেসাওরা তখন সেমিফাইনালের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। কিন্তু কে জানতো বিধাতা তাদের জন্য লিখে রেখেছে পেনাল্টির দুঃস্বপ্ন।
- ব্রাজিলের ৪ মিনিটের আক্ষেপ
অতিরিক্ত সময়ের ঠিক যখন ৪ মিনিট বাকি, তখন ডাচ ফুটবলার পেটকোভিক এক অবিশ্বাস্য গোলে খেলায় সমতা ফেরায়। ঠিক তখনই যেন মানসিকতায় পিছিয়ে পড়ে ব্রাজিল। যার প্রকাশ ঘটে পেনাল্টি শুটআউটে।
- টিটের ভুল
৯০ মিনিটের খেলার শেষ পর্যায়ে ভিনি, রিচার্লিসনের মতো প্লেয়ারদের তুলে নেওয়ার খেসারত ব্রাজিলকে দিতে হয়েছে পেনাল্টিতে। প্লেয়ার তুলে নেওয়ার ফলে উক্ত খেলোয়ারেরা পেনাল্টি শট নিতে পারেনি। প্রফেসর টিটে যদি জানতেন এই প্লেয়ার বদলগুলি টিমের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে তাহলে কী তিনি এটা করতেন! সাধারণ দর্শকের এই প্রশ্নটা থেকেই যায় কোচ টিটের কাছে।
- পেনাল্টিতে নেইমার
পেনাল্টিতে নেইমার যেন আকাঙ্খিতই ছিলো। কিন্তু অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে নেইমার পেনাল্টি নিতে আসলেন না। নেইমারের অনুপস্থিতিতে প্রথম দুই পেনাল্টি ব্রাজিল কেবল মিসই করলো না, বরং এক দুঃস্বপ্নের জন্ম দিয়ে শেষ করলো এবারের বিশ্বকাপ আসর।
দ্বিতীয় ম্যাচ:
সেমি ফাইনালে মেসি
ব্রাজিল যখন সেমিফাইনালের স্বপ্নভঙ্গে জর্জরিত তখন কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই আর্জেন্টিনা নেমেছিলো তাদের সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে। সেই স্বপ্নে তারা সফল হয়েছে বটে, তবে এই জয়ের পেছনে ঘটে গেছে অসংখ্য কাহিনি।
- মেসির অসাধারণ এসিস্ট
ম্যাচের ৩৫ মিনিটে মলিনহার দিকে এগিয়ে দেওয়া এক অসাধারণ পাসে গোল পায় আর্জেন্টিনা। তবে এই গোলের অন্যতম বিষয় হলো মেসির এক অসাধারণ এসিস্ট। ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, মানুষটা মেসি বলেই এমন এসিস্ট করা সম্ভব।
সেইসাথে ম্যাচের ৭৩ মিনিটে মার্কুস আকুনাকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। পেনাল্টি কিক নেন মেসি এবং গোল করে বিশ্বকাপের রেকর্ডে ম্যারাডোনাকে ছাড়িয়ে যান।
- আর্জেন্টিনার ডিফেন্সিভ ট্যাকটিক
আর্জেন্টিনা দুটো গোলে লিড থাকলেও যে বিষয়টি দলের মধ্যে বেশি পরিলক্ষিত হয় তা হলো ডিফেন্সিভ ট্যাকটিক। ৫ ডিফেন্সিভ নিয়ে সাজানো আর্জেন্টিনার ফরমেশন ডিফেন্সিভ মাইন্ড সেট-আপ এরই ইঙ্গিত দেয়। তবে যে দল জিতে সেই দলের পরিকল্পনাকে ডিফেন্সিভ হলেও সফল বলে ধরা হয়।
- হলুদ রেফারি, কালো কার্ড
আর্জেন্টিনা-নেদারল্যান্ড ম্যাচে আরো একটি যে বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে তা হলো রেফারি। এই ম্যাচে রেফারি আন্টনি ম্যাথিউ ফাউলের বাঁশি বাজিয়েছেন মোট ৪৮ বার। হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন দু’দলের খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফসহ মোট ১৮ জনকে। অথচ রেফারির এমন কার্যক্রম একেবারেই ফিকে ছিলো ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়া দ্বৈরথে।
- শেষ মুহুর্তের নাটকীয়তা
দুই গোলে এগিয়ে থাকলেও সেমি ফাইনাল নিশ্চিত হয় না নীল আকাশীদের। ম্যাচের ঠিক ৮৩ মিনিটে ওয়েঘোর্স্ট এর কল্যাণে একটি গোল শোধ করে ডাচরা। ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ৯০ মিনিট শেষ করে আর্জেন্টিনা।
অতিরিক্ত সময়ে সেই ওয়েঘোর্স্টই আবার যমদূত হিসেবে হাজির হয়। গোল করে বসেন ম্যাচের একদম শেষ সময়ে। তুমুল নাটকীয়তায় ২-২ ব্যবধানে অতিরিক্ত সময় শেষ হয়। এরপর ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শুটআউটে।
- ক্রাতা মার্টিনেজ
পেনাল্টি শুট আউটে আর্জেন্টিনার গোলকিপার মার্টিনেজ ক্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। আরো একটি ম্যাচে রক্ষা করে আর্জেন্টিনাকে। নাটকীয়তায় ভরপুর ম্যাচে মেসিকে ছাপিয়ে আরো একবার নায়ক বনে যান এই আর্জেন্টাইন তারকা।
এত এত ঘটনার মধ্যে দিয়ে শেষ হয় গতকালের রোমাঞ্চকর রাত৷ এই কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে যা কিছু হয়েছে তা দীর্ঘদিন মনে রাখবে ফুটবল ফ্যানেরা।
লিখেছেন- Ariful Abir