টি টুয়েন্টি ওয়ার্ল্ডকাপে বাংলাদেশ চতুর্থ ম্যাচে মুখোমুখি হয় ইন্ডিয়ার। দুই দলেরই আগের তিন ম্যাচে দুটিতে জয় ও একটিতে হার ছিল। তাই গ্রুপ পর্বের টপ সেকেন্ড পজিশনের জন্য ম্যাচ টি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ন। এই ম্যাচের জন্য দলেও কিছু পরিবর্তন আনা হয়। সৌম্য সরকারকে বাদ দিয়ে দলে আনা হয় বামহাতি বোলার শরিফুল ইসলাম।
টসে জিতে প্রথমে বল করার সিদ্ধান্ত নেয় টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। বোলিংয়ে প্রথমেই ইন্ডিয়াকে চেপে ধরে বাংলাদেশ। তাসকিনের অসাধারণ বলে ইন্ডিয়ার রানের গতি ছিল খুবই ধীর। তাসকিনের বলে রোহিত শর্মা উড়িয়ে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেয়।
কিন্তু তা ধরতে ব্যর্থ হয় হাসান মাহমুদ। তবে তার পরের ওভারেই হাসান মাহমুদের দ্বিতীয় বলে ইয়াসির আলীর হাত বন্দি হয়ে ৮ বলে ২ রান নিয়ে সাজঘরে ফিরে রোহিত শর্মা। দলীয় ১১ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইন্ডিয়া।
রোহিতের পর মাঠে আসে বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় উইকেটে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে ইন্ডিয়া। তাদের রানও এগোতে শুরু করে দ্রুত। অবশেষে তাদের জুটি ভাঙে সাকিব আল হাসান। হাফ সেঞ্চুরি করার পরেই মুস্তাফিজের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফিরতে হয় রাহুলকে।
এরপর দলকে নিয়ে দ্রুত এগোতে থাকে বিরাট কোহলি ও সূর্যকুমার যাদব। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দিশেহারা হয়ে যায় বাংলাদেশ বোলাররা। প্রথম দিকের ঘাটতি খুব দ্রুতই কভার করে ফেলে ইন্ডিয়া। দলে নতুন যুক্ত হওয়ার শরিফুল ইসলাম সর্বোচ্চ পরিমান রান দেশ। অবশেষে যাদবকে ঠেকাতে সক্ষম হয় সাকিব। ১৬ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলে বোল্ড আউট হয়ে সাজঘরে ফিরে যাদব।
এরপর এক প্রান্তে কোহলি দলকে এগিয়ে নিতে থাকলেও অপর প্রান্ত থেকে সাপোর্ট পায়নি। অপর প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়তে থাকে। হৃতিক পান্ডে, দিনেশ কার্তিক ও পাটেল কেউই দুই অংকের স্কোর দেখেনি।
শেষ পর্যন্ত বিরাট কোহলি ও রবিচন্দ্র আশ্বিনের সংগ্রহ নিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৬ উইকেট হারিয়ে ইন্ডিয়ার সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৮৪ রান। ৮ টি চার ও ১ টি ছক্কায় ৪৪ বলে ৬৪ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিল বিরাট কোহলি। অপর প্রান্তে ৬ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত ছিল আশ্বিন। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩ টি উইকেট শিকার করে হাসান মাহমুদ। দুটি উইকেট শিকার করে সাকিব আল হাসান।
১৮৫ রানের বিশাল টার্গেট নিয়ে ওপেনিংয়ে মাঠে নামে লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম থেকেই ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ইন্ডিয়ার বোলারদের দিশেহারা করে দেয় লিটন দাস। মাত্র ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয় লিটন দাস। অপর প্রান্তে থাকা কেবল টিকে থেকে সঙ্গ দিচ্ছিলো তার ব্যাট থেকে কোন রান আসছিলো না।
সাত ওভার শেষে ৬৬ রান যখন সংগ্রহে তখন বৃষ্টির কারণে বিরতি হয়। বৃষ্টি শেষে ওভার কমিয়ে ১৬ ওভারে আনা হয় এবং টার্গেট আনা হয় ১৫১ রানে। ৫৪ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৮৫ রান। বিরতির পর শুরুতেই আউট হয় লিটন দাস। দুই রান নিতে গিয়ে পিছলিয়ে রান আউট হয় লিটন। ২৭ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংসে ছক্কা ছিল ৩ টি ও চার ছিল ৭ টি।
লিটন আউটের পর শান্ত একটু আশার আলো দেখায়। কিন্তু শীঘ্রই সে সাজঘরে ফিরে। ২৫ বলে ২১ রানের সংগ্রহ নিয়ে সাজঘরে ফিরে শান্ত। তারপর সাকিব আউট হলে জেতার আশা অনেকটা কমে যায়। আফিফ হোসেন, ইয়াসির আলী ও মোসাদ্দেক হোসেন আউটের পরে নুরুল হাসান হোসান ও তাসকিন বাউন্ডারি মেরে জয়ের কাছে নিয়ে যায় দলকে।
শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাড়ায় ১৪৫ রান। এতে ৫ রানে জয় পায় ইন্ডিয়া। ৭ বলে ১২ রান করে অপরাজিত ছিল তাসকিন। অপর প্রান্তে ১৪ বলে ২৫ রান করে অপরাজিত ছিল নুরুল হাসান সোহান। ইন্ডিয়ার পক্ষে আর্শদ্বীপ সিং ও হৃতিক পান্ডে দুইটি করে উইকেট শিকার করে। একটি উইকেট পায় সামি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ইন্ডিয়া – ১৮৪/৬ (২০)
বিরাট কোহলি ৬৪
কেএল রাহুল ৫০
সূর্যকুমার যাদব ৩০
হাসান মাহমুদ ৩/৪৭
সাকিব আল হাসান ২/৩৩
বাংলাদেশ – ১৪৫/৬ (১৬)
লিটন দাস ৬০
নুরুল হাসান সোহান ২৫
নাজমুল হোসেন শান্ত ২১
হৃতিক পান্ডে ২/২৮
আর্শদ্বীপ সিং ২/৩৮
মোহাম্মদ সামি ১/২৫
ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছে বিরাট কোহলি।