বিশ্বকাপের ২৩তম ম্যাচে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। ৪ ম্যাচে ৩ জয় নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে থাকা প্রোটিয়াদের এই ম্যাচে লক্ষ্য ছিল জয় দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা।
অন্যদিকে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ জয়ের পর হারের বৃত্ত থেকে যেন বেরই হতে পারছেনা কোচ চান্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। ফলে, আসরে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ের খোঁজে মাঠে নামে বাংলাদেশ।
একাদশে ফিরে অধিনায়ক হিসেবে টসে হেরে বাংলাদেশের পক্ষে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সাকিব আল হাসান। তার পরিবর্তে একাদশ থেকে বাদ পড়েন তাওহীদ হৃদয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার দলেও ছিল এক পরিবর্তন। ইনজুরিতে থাকা লুঙ্গি এনগিডির জায়গায় দলে আসেন লিজাদ উইলিয়ামস। যেখানে, ইংল্যান্ড ম্যাচের ন্যায় এই ম্যাচেও টেম্বা বাভুমার পরিবর্তে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এইডেন মার্করাম।
বাংলাদেশ একাদশ: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), তানজিদ হাসান তামিম, লিটন কুমার দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: এইডেন মার্করাম (অধিনায়ক), কুইন্টন ডি কক, রিজা হেন্ডরিক্স, রাসি ভ্যান ডার ডুসেন, হেনরিচ ক্লাসেন, ডেভিড মিলার, মার্কো জানসেন, জেরাল্ড কোয়েটজে, কেশভ মাহারাজ, কাগিসো রাবাদা, লিজাদ উইলিয়ামস।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের ১ম ইনিংস
দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনিংয়ের সূচনা করেন রিজা হেন্ডরিক্স ও এবারের আসরে ২ সেঞ্চুরির মালিক কুইন্টন ডি কক। বাংলাদেশের বোলারদের জন্য সবচেয়ে শংকার কারণ ছিলেন ডি কক।
রিজা হেন্ডরিক্স ও রাসি ভ্যান ডার ডুসেনকে দ্রুত ফেরাতে পারলেও ডি কককে ফেরাতে ব্যর্থ হন টাইগার বোলাররা । নিজের চেনা মাঠে সাকিব, মিরাজ, শরিফুল, মুস্তাফিজ সকলকেই দেখেশুনে খেলতে থাকেন নিয়মিত আইপিএল খেলা এই তারকা।
অপর পাশ থেকে তাকে যোগ্য দিতে থাকেন অধিনায়ক মার্করাম। দুজনের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলের রান সংগ্রহ বড় হওয়ার পাশাপাশি হাফ সেঞ্চুরিও পূরণ করেন উভয় ব্যাটসম্যান।
৬০ রান করে মার্করাম সাকিবের কাছে ধরাশায়ী হলেও বাংলাদেশের শংকাকে সত্যি করে টুর্নামেন্টে নিজের ৩য় সেঞ্চুরি তুলে নেন কুইন্টন ডি কক। সেঞ্চুরির পর আরেক উইকেটকিপার হেনরিচ ক্লাসেনকে নিয়ে আরও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে থাকেন তিনি।
দুই উইকেটকিপার-ব্যাটারের মারকুটে ব্যাটিংয়ে রীতিমতো আত্মসমর্পণ করে লাল-সবুজের বোলিং লাইনআপ। ফলে, সেঞ্চুরির পর ১৫০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করতেও দেরি করেননি ডি কক। পরের ওভারে নিজের হাফ সেঞ্চুরিও পূরণ করেন তার সঙ্গী হেনরিচ ক্লাসেন।
ফলে, ৪৪ ওভারে ৩০০ রানের পাহাড় গড়ে আফ্রিকার প্রতিনিধিরা। তবে, এখানেই শেষ ছিলনা। ডি কক ১৭৪ করে থামলেও হেনরিচ ক্লাসেনের ৯০ ও ডেভিড মিলারের ৩৪ রানের পর ৩৮২ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
রান তাড়া করতে ২য় ইনিংসে টাইগারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা
৩৮৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে নিয়মিত ওপেনারদের হাতে ভালো শুরুর আভাস পায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেও এই ম্যাচে দ্রুতই মার্কো জানসেনকে উইকেট দিয়ে বসেন জুনিয়র তামিম।
তানজিদের পর ক্রিসে এসে সহজ শিকারে পরিণত হন নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম বলেই গোল্ডেন ডাক করে সাজ ঘরে ফিরেন তিনি। পরের ওভারে অধিনায়ক সাকিবও শান্তর দেখানো পথে পা বাড়ান। মাত্র ১ রান করে লিজাদ উইলিয়ামসকে উইকেট উপহার দেন সাকিব।
এভাবে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতনের শিকার হয় সাকিব বাহিনী। অভিজ্ঞ সাকিবের পর মুশফিকও আস্থার প্রতিদান দিতে ব্যর্থ হন। মাত্র ৮ রান করে আউট হন মিস্টার ডিপেন্ডেবল।
অপরপ্রান্তে লিটন দাসকে যোগ্য সঙ্গ দিতে পারেননি কেউই। ফলে, সতীর্থদের আসা যাওয়ার মিছিলে নিজেও ২২ রান করে নাম লেখান লিটন। দলের হয়ে শেষ ভরসা হিসেবে মাঠে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদী হাসান মিরাজ।
বরাবরের মতো এবারও দলের ব্যাটিংয়ে ভালো অবদান রাখেন মাহমুদউল্লাহ। তবে, ১১ রানে আউট হয়ে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে ব্যর্থ হন মিরাজ।
এরপর, বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার। মিরাজের পর নাসুম ১৯ রানে আউট হলে দলের ব্যাটিং ভরাডুবির মাঝেও নিজের অর্ধ শতক তুলে নেন রিয়াদ।
নাসুমের পর হাসান মাহমুদ ১৫ রানে ডাগ আউটে ফিরলেও মুস্তাফিজকে সাথে নিয়ে বিশ্বকাপের তৃতীয় ও এবারের আসরের প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
রিয়াদের ১১১ রানের ইনিংস থামান জেরাল্ড কোয়েটজে। শেষে, ১১ রানে মুস্তাফিজ আউট হলে ১৪৯ রানের বিশাল জয়ে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে রব ওয়াল্টারের দল।
১৪০ বল খরচে ১৭৪ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে প্রোটিয়াদের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখায় ম্যাচ সেরা হয়েছেন কুইন্টন ডি কক।
ম্যাচ স্কোরবোর্ড
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৮২/০৫ (৫০ ওভার)
কুইন্টন ডি কক – ১৭৪ (১৪০)
হাসান মাহমুদ – ২/৬৭ (৬ ওভার)
বাংলাদেশ ২৩৩/১০ (৪৬.৪ ওভার)
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ – ১১১ (১১১)
জেরাল্ড কোয়েটজে – ৩/৬২ (১০ ওভার)
ম্যাচ সেরা: কুইন্টন ডি কক