ইসিজি রিপোর্ট বোঝার উপায়

ইসিজি রিপোর্ট বোঝার ১০টি উপায় ও ইসিজি নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তর!

ইসিজি রিপোর্ট বোঝার উপায় কি?  সাধারনত  আমাদের যখন ইসিজি করার প্রয়োজন হয় তখন এই প্রশ্নগুলি প্রথমে মনে আসে। ইসিজি কি? । আমরা যখন হূদরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে যাই যদি তারা মনে করেন তাহলে আমাদেরকে  ইসিজি করতে বলেন।

মূলত ইসিজি হচ্ছে একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা।  অর্থাৎ,  এই পরীক্ষাটি করতে আপনাকে কোন অপারেশনের মাধ্যমে শরীরের ভিতরে কিছু প্রবেশ করানোর কোন প্রয়োজন নেই।  আনন্দ সংবাদ  হল,  খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি এই ইসিজি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারেন।

ইসিজি রিপোর্ট বোঝার উপায়

সাধারণত  অনেক আগে থেকেই ইসিজি রিপোর্ট গ্রাফ আকারে তৈরি করা হয়।  কিন্তু বর্তমানে ইসিজির অনেক অত্যাধুনিক মেশিন এর উদ্ভাবন হয়েছে যেখানে আপনি ডিসপ্লেতেও ইসিজি রিপোর্ট দেখতে পারবেন। 

ইসিজি রিপোর্ট বোঝার আপনার জন্য খুব একটা সহজ হবে না।  ইসিজি রিপোর্ট বোঝার জন্য আপনাকে সঠিকভাবে কিছু বিষয় পর্যালোচনা করতে হবে এবং প্রয়োজনে আপনাকে ছোটখাটো কোনো প্রশিক্ষণ নিতে হতে পারে।  চলুন এক নজরে দেখে নেই ইসিজি রিপোর্ট বোঝার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উপায় গুলো কি কি হতে পারেঃ

১।  12 লিড ইসিজি ট্রেসিং

ইসিজি ট্রেসিং হচ্ছে ইসিজি পরীক্ষণের একটি মৌলিক ধাপ।  ইসিজি ট্রেসিং এর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ইসিজি পরীক্ষার একটি স্বাভাবিক ধারণা পেয়ে যাবেন।  তাই ইসিজি রিপোর্ট সম্পর্কে নিজেকে ধারণা পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই  12 লিড ইসিজি ট্রেসিং বিষয়টি অনেক ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। 

২।  ইসিজি অক্ষর নির্ধারণ

মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসিজি অক্ষর নির্ধারণের জন্য বেশ কিছু শর্টকাট পদ্ধতি রয়েছে।  ইসিজির অক্ষর ভালোভাবে পর্যালোচনা করতে পারলে আপনি খুব সহজেই রোগটির অবস্থান সম্পর্কে  বুঝতে পারবেন। 

৩।  ইসিজি হার্ট রেট

ইসিজি দেহা হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক গতিতে আছে কিনা সেটা নির্ধারণ করার জন্য টাকাইকার্ডিয়া এবং ব্রাডিকার্ডিয়া  পর্যালোচনা করা অন্যতম।  এই কৌশলগুলোকে  এট্রিয়াল রেট বলা হয়।  এই রেট কে পরিমাপ করা হয় পি তরঙ্গের মাধ্যমে।

৪।  অস্বাভাবিক হার্ট স্পন্দন

সাধারণ সাইনাস ছন্দ শেখাটা প্রাথমিক পর্যায়ে পড়ে।  আপনাকে প্রথমে সাধারণ ছন্দটা আয়ত্ত করা শিখতে হবে।  অস্বাভাবিক হার্ট স্পন্দন বুঝতে হলে আপনাকে পরবর্তীতে আরো কিছু প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করতে হবে-

  •  অ্যাট্রিয়াল ফ্লটার ইসিজি
  •  অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন  ইসিজি
  •  ঢাকাইকার্ডিয়া ইসিজি
  •  এ  ভি আর টি সি জি
  •  এক ট্রপিক এট্রিয়াল ইসিজি
  •  এট্রিও ভেন্ট্রিকুলার ব্লক

৫।  একিউট এম আর আই

এটি হচ্ছে তীব্র এম আই ইসিজি ফলাফল।  এই প্রক্রিয়াটিকে সূক্ষ্ম এবং জটিল ইসিজির ফলাফলকে নির্ধারণ করে দিতে  সক্ষম।  বিশেষত, একিউট এম আর আই পদ্ধতিটি বেশ মজার মনে হতে পারে আপনার কাছে।

ইসিজি রিপোর্ট সঠিকভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আয়ত্ত করতে হলে আপনাকে এই প্রক্রিয়া গুলি ছাড়াও আরও বেশ কিছু প্রক্রিয়ায় দক্ষ হতে হবে।  সঠিক দক্ষতা অর্জন ব্যতীত ইসিজি রিপোর্ট গুলি যথাযথভাবে পর্যালোচনা করা প্রায় অসম্ভব। 

৬। QRS কমপ্লেক্স

  • প্রস্থ: 1.5-3 ছোট বর্গক্ষেত্র বা .06-.12s
  • প্রশস্ত QRS জটিল ক্ষেত্রে পাওয়া যেতে পারে:
  • ডান বান্ডিল শাখা ব্লক
  • বাম বান্ডিল শাখা ব্লক
  • ভেন্ট্রিকুলার অ্যারিথমিয়া যেমন ভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া
  • সংকীর্ণ QRS কমপ্লেক্স পাওয়া যায়
  • সুপারভেন্ট্রিকুলার টাকাইকার্ডিয়া

৭। ‘Q’ তরঙ্গ

  • প্রস্থ: <১ ছোট বর্গক্ষেত্র
  • গভীরতা: <2 ছোট বর্গক্ষেত্র

প্যাথলজ স্বাভাবিক কিউ ওয়েভ এর কারণ ওল্ডএমআই

৮। R’ তরঙ্গ

R তরঙ্গ অন্য লিডের মধ্য থেকে ভিন্ন। এর বিশেষ বৈশিষ্ট V1 লিডে এটি খুব ছোট

যেটা পর্যায় লিড V1-V6 এ বড় হতে পারে।

লিড V4 এ R তরঙ্গ, S তরঙ্গ থেকে বড় হয়। লিখা বলা হয়

R তরঙ্গের অগ্রগতি, যদি V4 বা V5 লিডে R তরঙ্গ S তরঙ্গ থেকে বড় না হয় তখন তাকে বলা হয় R তরঙ্গের দুর্বল অগ্রগতি।

৯। S’ তরঙ্গ

S তরঙ্গ R তরঙ্গ এর ঠিক বিপরীত. বিপরীত V1 এ

সবচেয়ে বড় হয় যা ছোট হতে পারে এবং V6 এ S তরঙ্গ নাও হতে পারে।

১০। ST বিভাগ

ST সেগমেন্ট খুব গুরুত্তপূর্ণ বিষয়। নরমালি ST সেগমেন্ট

• আইসোইলেকট্রিক লাইন থাকে। সাধারণ দুই ব্যাতিক্রম দেখা যায় ST সেগমেন্ট এ।

ST উচ্চতা পাওয়া যায় পানি কন্ডিশন,

  • তীব্র এমআই
  • তীব্র পেরিকার্ডাইটিস
  •  অ্যানিউরিজম
  • এসটি বিষণ্নতা পাওয়া যায়,
  • তীব্র ইসকেমিয়া

ইসিজি কেন করা হয়?

ইসিজি হৃদরোগের প্রাথমিক পর্যায়ের টেস্ট। 

ইসিজি মূলত শরীরের কিছু কার্যপ্রক্রিয়ার অবস্থা সম্পর্কে বোঝার জন্য প্রয়োজন হয়।  যেমনঃ

  •  হৃদপিণ্ড কোথায় অবস্থান করছে
  •  হৃৎপিণ্ডটি স্বাভাবিক ভাবে কাজ করছে কিনা
  •  হৃদপিন্ডের কোন অংশে অতিরিক্ত মেদ জমেছে কিনা
  •  স্বাভাবিক রক্তের প্রবাহ চলমান আছে কিনা

মেশিন কর্তৃক ইসিজি রিপোর্টিং

সমতল একটি বিছানায় রোগীকে শুইয়ে দুই হাত, দুই পা এবং হৃদপিন্ডের কাছাকাছি ছয়টি নির্ধারিত স্থানে ইলেকট্রোড বা তড়িৎদ্বার লাগানো হয়। পরিবাহীতা বৃদ্ধির জন্য চামড়ায় বিশেষ ধরনের জেলও লাগানো হয় অনেক সময়। এতে ভয়ের কিছু নেই।

ভুল রিপোর্ট এড়াতে করণীয়

প্রায়ই দেখা যায় ইসিজি ভুল রিপোর্ট করে।  নবীন ও জুনিয়র চিকিৎসকদের এটি বিড়ম্বনায় ফেলে। ইসিজি’র গায়ে রোগীর নাম ও তারিখ অবশ্যই হাতে লিখতে হবে। নার্স বা টেকনিশিয়ানকে এ ব্যাপারে পরিষ্কার নির্দেশনা দিতে হবে। কেননা মেশিন আপডেটেট করা না থাকলে এলোমেলো তারিখ দেখাতে পারে। রোগীর নাম পরিষ্কার করে না লিখলে এক রোগীর ইসিজি ভুল করে অন্য রোগীর ফাইলে চলে যেতে পারে। সতর্ক না হলে তার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ, এবং জীবন মরণ ব্যাপার হয়ে উঠতে পারে।

সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন হেলদি-স্পোর্টস শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com

ইসিজির আগে রোগীর প্রস্তুতি 

  • দৌড়ে বা হেটে এসে অথবা শারীরিক পরিশ্রমের কোনো কাজ করে সরাসরি ইসিজি করবেন না। এতে হার্টবিট বেশী আসতে পারে,যা সঠিক নিরীক্ষণে ব্যাঘাত ঘটাবে। তবে ইমার্জেন্সী অবস্থানে হলে ভিন্ন কথা। 
  • সোনা,রূপা,গোল্ড বা অন্য কোনো মেটাল রাখা যাবেনা, থাকলেও ইসিজির পূর্বে খুলে ফেলতে হবে।
  • টাইট ফিট পোশাক এড়িয়ে চলতে হবে,পরীক্ষার সময় অবশ্যই ঢোলা কাপড় পড়তে হবে।
  • আংটি, বেল্ট, রাবার বা অন্য বাড়তি সামগ্রী খুলে রাখতে হবে। 
  • ইসিজির পূর্বে ভুলেও ঠান্ডা পানি পান করা যাবেনা। 

ইসিজি নিয়ে কমন কিছু প্রশ্নোত্তর

দূর্ভাগ্যজনক সত্যিটা হলো বাংলাদেশের অধিকাংশ ইসিজি টেকনিশিয়ান ডিগ্রিধারী নয়। তাই বুঝে শুনে ভালো জায়গায় ইসিজি করবেন। 

*কারো ইসিজি স্বাভাবিক হলে CXR P/A View পরীক্ষার ভূমিকা কী?

– ইসিজি স্বাভাবিক হলেও অনেক সময় বুকে ব্যথার অন্যান্য কারণ যেমন- ফুসফুসের Pathology-এর সমস্যা নিরূপণের জন্য CXR P/A View পরীক্ষা করানো হয়।

* ইসিজি স্বাভাবিক হলেও কি রোগীর হার্টে মারাত্মক সমস্যা থাকতে পারে?

– জি হ্যাঁ, ইসিজি স্বাভাবিক থাকলেও কোনো কোনো রোগীর হার্টে মারাত্মক সমস্যা থাকতে পারে।

শেষকথা 

ইসিজি রিপোর্ট বোঝার আগে জেনে নিন ইসিজি একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা, অর্থাৎ রোগীর শরীর কাটা-ছেঁড়া করে ভেতরে কিছু প্রবেশ করানোর প্রয়োজন হয় না। বিভিন্ন তরঙ্গের মাধ্যমে সহজেই সম্পন্ন হয় এই টেস্ট।

প্রাথমিকভাবে রোগীকে চেক করার পর প্রয়োজন মনে হলে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞগণ প্রথমে যে টেস্ট করাতে বলেন সেটি হচ্ছে ইসিজি বা ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফি। অনেকে একে ইকেজি-ও বলে থাকেন।

মোটামুটি পাঁচ মিনিটের মত সময় লাগে টেস্ট  করতে। হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক ছন্দে কাজ করছে কিনা, হৃদপিন্ডের অবস্থান সঠিক কিনা, হৃদপেশীর কোন অংশ অতিরিক্ত পুরু হয়ে গেছে কিনা, হৃদপেশীর কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা এছাড়াও রক্ত প্রবাহে কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা ইত্যাদি বিষয়  বৈদ্যুতিক ক্রিয়া পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করা হয় ইসিজি দ্বারা ।।

আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে করুন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top