Bangladesh vs Ireland

একদিন বাকি থাকতেই টেস্টে বিশাল জয় টাইগারদের – Bangladesh vs Ireland

বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে টেস্ট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেয় আইরিশরা। এই ম্যাচেই আয়ারল্যান্ডের ৬ জন ক্রিকেটারের টেস্টে অভিষেক হয়। তাই তাদের জন্য ম্যাচটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ন। 

আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ওপেনিংয়ে মাঠে নামে জেমস ম্যাককলাম ও মারে কমিন্স। ওপেনিংটা ভালো হয়নি আইরিশদের। ৫ম ওভারে ১০ বলে ৫ রানের রানের ইনিংস খেলে শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয় কমিন্স। এরপর ক্রিজে আসে আন্দ্রে বার্লবির্নে। তাদের জুটিও স্থায়ী হতে দেয়নি এবাদত হোসেন। ১০ম ওভারে ৩৪ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলে শান্তর হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে ওপেনার ম্যাককলাম। বার্লবির্নে অনেকক্ষণ মাঠে টিকে থাকলেও রানের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। ২২তম ওভারে ৫০ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে বার্লবির্নে। 

এরপর চতুর্থ উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলে হ্যারি টেক্টর ও কুর্টিস ক্যাম্পার। দুজনে মিলে এগিয়ে নিতে শুরু করে দলকে। বেশ অনেক সময় উইকেট ছাড়া থাকলে হয় বাংলাদেশের বোলারদের। অবশেষে হ্যারি ও কুর্টিসের জুটি ভাঙে মিরাজ। ৪২তম ওভারে বলে এসে বোল্ড করে হ্যারি টেক্টরকে। ৯২ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলে আউট হয় টেক্টর। এরপর পরের ওভারে নেমেই মাত্র ১ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের শিকার হয় পিটার মুর। এর ২ ওভার পরেই ৭৩ বলে ৩৪ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয় ক্যাম্পার। 

লরকান টাকের ৭৪ বলে ৩৭ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে। ৫৫ বলে ১৯ রানের ইনিংস খেলে আন্দ্রে ম্যাকবির্নে। শেষে একমাত্র বড় ইনিংস খেলে মার্ক আদির। ৫২ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয় মার্ক আদির। ১৬ বলে ২ রানের ইনিংস খেলে মিরাজের বলে বোল্ড হয় গ্রাহাম হুমে। 

এতে ৭৭.২ ওভার খেলে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ২১৪ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫ টি উইকেট শিকার করে তাইজুল ইসলাম। এবাদত হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ একটি করে উইকেট শিকার করে। ১ টি উইকেট শিকার করে শরিফুল ইসলাম। 

২১৪ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিংয়ে নামে তামিম ইকবাল ও নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ওভারেই ৫ম বলে শূন্য রানে বোল্ড হয় শান্ত। এরপর দশম ওভারে ৩৬ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলে মার্ক আদিরের হাত বন্দি হয় তামিম ইকবাল। তার দুই ওভার পরেই ৩৪ বলে ১৭ রানের ইনিংস খেলে মার্ক আদিরের বলে বোল্ড হয় মমিনুল হক। 

চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান দ্রুত রান এগিয়ে নিতে শুরু করে। টেস্ট ম্যাচেও দ্রুত রান তুলতে শুরু করে সাকিব। তাদের জুটি কোনভাবেই ভাঙতে পারছিল না আইরিশ বোলাররা। অবশেষে দলকে আশার আলো দেখায় আন্দ্রে ম্যাকবির্নে। ১৪ চারে ৯৩ বলে ৮৭ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ম্যাকবির্নের বলে লরকান টাকেরের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে সাকিব আল হাসান। 

এরপর লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম দলকে টানতে শুরু করে। লিটনও নেমেই দ্রুত রান তুলতে শুরু করে। ৮ বাউন্ডারিতে ৪১ বলে ৪৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বেনজামিন হোয়াইটের বলে সাজঘরে ফিরে লিটন। এরপর মুশফিককে সঙ্গ দিতে মাঠে আসে মেহেদী হাসান মিরাজ।

মুশফিককে থামাতে সক্ষম হয় ম্যাকবির্নে। ১৬৭ বলে ১২৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে ম্যাকবির্নের বলে কমিন্সের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে মুশফিক। এরপর মিরাজ দলকে এগিয়ে নিলেও কোন সঙ্গ পায়নি অপর প্রান্তে। ১২ বলে ৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হয় তাইজুল ইসলাম। ৭ বলে ৪ রান করে আউট হয় শরিফুল। শূন্য রানেই সাজঘরে ফিরে এবাদত হোসেন। এই প্রান্তে নিয়মিত উইকেট পড়লেও অপর প্রান্তে হাফ সেঞ্চুরি সম্পূর্ণ করে মিরাজ। অবশেষে ৮০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে বেনজামিন হোয়াইটের বলে আউট হয় মেহেদী হাসান। 

মোট ৮০.৩ ওভার খেলে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংস শেষে বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৬৯ রান। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬ টি উইকেট শিকার করে আন্দ্রে ম্যাকবির্নে। মার্ক আদির ও বেনজামিন হোয়াইট দু’টি করে উইকেট শিকার করে। 

প্রথম ইনিংস শেষে ১৫৫ রানের লিড দেয় বাংলাদেশ। সেই লিড নিয়ে আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ওপেনিংয়ে নামে মারে কমিন্স ও জেমস ম্যাককলাম। গত ইনিংসে সাকিব প্রায় বোলিং না করলেও এবারে প্রথম ওভারেই বলে যায় সাকিব এবং প্রথম ওভারেই শূন্য রানে সাজঘরে পাঠায় ম্যাককলামকে। আরেক ওপেনার কমিন্সকে সাজঘরে পাঠায় তাইজুল ইসলাম। ১২ বলে মাত্র ১ রানের ইনিংস খেলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয় কমিন্স। পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে আরও একটি উইকেট তুলে নেয় তাইজুল। ১২ বলে ৩ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে আন্দ্রে বার্লবির্নে। 

এরপর হ্যারি টেক্টর প্রতিরোধ গড়ে তোলে। কিন্তু অপর প্রান্তে তখনও সঙ্গ দেওয়ার মতো কাউকে পায়নি। ৪ বলে ১ রানের ইনিংস খেলে সাকিবের বলে আউট হয় কুর্টিস ক্যাম্পার। এরপর পিটার পুর হ্যারিকে সঙ্গ দিতে শুরু করে। হ্যারি ও পিটার টিকে থাকলেও রানের তেমন পরিবর্তন হয়নি। ৭৮ বলে ১৬ রানের ইনিংস খেলে শরিফুল ইসলামের বলে লিটন দাসের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে পিটার সাজঘরে এরপর হ্যারিকে সঙ্গ দিতে মাঠে আসে লরকান টাকের। তারা দুজনে মিলে বেশ অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যায় দলকে। অবশেষে ১৫৯ বলে ৫৬ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের বলে এলবিডব্লিউয়ের শিকার হয় হ্যারি টেক্টর।

এরপর দলের হাল ধরে টাকের ও আন্দ্রে ম্যাকবির্নে। তাদের জুটি ভাঙে এবাদত হোসেন। ১৬২ বলে ১০৮ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে শরিফুলের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে লরকান টাকের। 

এবারে ম্যাকবির্নে কে সঙ্গ দিতে আসে মার্ক আদির। মার্ক আদিরের ব্যাট হতে তেমন কোন রান আসোনি। ৪৯ বলে মাত্র ১৩ রানের ইনিংস খেলে তাইজুলের বলে লিটন দাসের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে আদির। অবশেষে ম্যাকবির্নেকেও তুলে নেয় এবাদত হোসেন। ১৫৬ বলে ৭২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে বোল্ড হয় ম্যাকবির্নে। ৫৫ বলে ১৪ রানের ইনিংস খেলে আউট হয় গ্রাহাম হুমে। 

১১৬ ওভার খেলে আয়ারল্যান্ডের মোট সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৯২ রান। বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট শিকার করে তাইজুল ইসলাম। ৩ টি উইকেট শিকার করে এবাদত হোসেন ও ২ টি উইকেট পায় সাকিব আল হাসান। 

১৩৭ রানের লিড নিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে ওপেনিং করে তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এবারেও আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়েই ইনিংস শুরু করে লিটন দাস। ৫ম ওভারেই ১৯ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলে বোল্ড হয় লিটন দাস। এরপর মাঠে নামে নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ইনিংসও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ৯ বলে ৪ রানের ইনিংস খেলে আন্দ্রে বার্লবির্নের বলে আউট হয় শান্ত। এরপর মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবাল দলের হাল ধরে। তাদের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দ্রুতই জয়ের দিকে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। জয়ের কাছাকাছি গিয়ে আউট হয় তামিম ইকবাল। ৬৫ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে বেনজামিন হোয়াইটের বলে কমিন্সের হাত বন্দি হয়ে সাজঘরে ফিরে তামিম। 

এরপর দলকে জয় পর্যন্ত নিয়ে যায় মুশফিক ও মমিনুল হক। ২৭.১ ওভারেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ৪৮ বলে ৫১ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিল মুশফিকুর রহিম এবং ২২ বলে ২০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিল মমিনুল হক। আয়ারল্যান্ডের পক্ষে মার্ক আদির আন্দ্রে ম্যাকবির্নে ও বেনজামিন হোয়াইট একটি করে উইকেট শিকার করে। 

টেস্টের একদিন বাকি থাকতেই ৭ উইকেটে বিশাল জয় পায় বাংলাদেশ। প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ হয়েছে মুশফিকুর রহিম। 

সংক্ষিপ্ত স্কোর :

১ম ইনিংস :

আয়ারল্যান্ড – ২১৪/১০ (৭৭.২)

হ্যারি টেক্টর ৫০ (৯২)

লরকান টাকের ৩৭ (৭৪)

তাইজুল ইসলাম ৫ – ৫৮ – ২৮

মেহেদী হাসান মিরাজ ২ – ৪৩ – ১৭.২

বাংলাদেশ – ৩৬৯/১০ (৮০.৩)

মুশফিকুর রহিম ১২৬ (১৬৭)

সাকিব আল হাসান ৮৭ (৯৩)

আন্দ্রে ম্যাকবির্নে ৬ – ১১৭ – ২৮

মার্ক আদির ২ – ৬৪ – ১৭

২য় ইনিংস :

আয়ারল্যান্ড – ২৯২/১০ (১১৬)

লরকান টাকের ১০৮ (১৬২)

আন্দ্রে ম্যাকবির্নে ৭২ (১৫৬)

তাইজুল ইসলাম ৪ – ৯০ – ৪২

এবাদত হোসেন ৩ – ৩৭ – ১৫

বাংলাদেশ – ১৩৮/৩ (২৭.১)

মুশফিকুর রহিম ৫১ (৪৮)

তামিম ইকবাল ৩১ (৬৫)

মার্ক আদির ১ – ৩০ – ৬

বেনজামিন হোয়াইট ১ – ৪৩ – ৭ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top
Scroll to Top