কাজু বাদামের উপকারিতা – ছোট থেকে বড় সবাই কাজুবাদাম খেতে ভীষণ ভালবাসে। বিস্কুট, চকলেট, কেক, সেমাই, পায়েশ ইত্যাদিতে কাজু থাকা চাই-ই চাই। ছোট্ট কিডনী আকৃতির কাজুবাদাম খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টগুণে ভরপুর এবং সেইসাথে ভিটামিন -মিনারেলস এর বিপুল ভান্ডার। সুতরাং বলাই চলে যে কাজু বাদামের উপকারিতা অল্প কথায় বর্ননা করে শেষ করা যাবেনা।
কাজু বাদামের উপকারিতা ও পুষ্টিগুন ভিডিও তে দেখতে এখানে ক্লিক করুন
Table of Contents
কাজু বাদামের পুষ্টি উপাদান
বিভিন্নরকমের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদানে ঠাসা কাজু বাদাম। কাজু বাদামে কি কি পুষ্টি উপাদান কতটুকু পরিমানে রয়েছে তা থেকে আমরা খুব সহজেই কাজু বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।
সকল ধরনের অর্গানিক ফুড কিনুন আমাদের শপ থেকে!
ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) এর তথ্য অনুযায়ী প্রতি এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম কাঁচা আনসল্টেড কাজুবাদাম শরীরে ১৫৭ ক্যালরি শক্তি সরবরাহ করে যা নিম্নোক্ত পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ-
পুষ্টি উপাদান | পরিমান |
শর্করা | ৮.৫৬ গ্রাম |
আমিষ | ৫.১৭ গ্রাম |
ফ্যাট | ১২.৪৩ গ্রাম |
চিনি | ১.৬৮ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৯ গ্রাম |
কপার | ৬২২ মাইক্রোগ্রাম |
জিংক | ১.৬৪ মিলিগ্রাম |
আয়রন | ১.৮৯ মিলিগ্রাম |
ফসফরাস | ১৬৮ মিলিগ্রাম |
পটাসিয়াম | ১৮৭ মিলিগ্রাম |
সোডিয়াম | ৩.০০ মিলিগ্রাম |
ক্যালসিয়াম | ১০.০০ মিলিগ্রাম |
ম্যাগনেসিয়াম | ৮৩.০০মিলিগ্রাম |
ভিটামিন কে | ৪% (ডিভি) |
ভিটামিন বি৬ | ৭% (ডিভি) |
মোটামুটি ১৮টা গোটা কাজু এক আউন্সের সমপরিমাণ। কাজুতে যে ফ্যাট রয়েছে তাতে মনোস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমান বেশি এবং কাজু বাদাম সবসময়ই প্রোটিনের খুব ভাল উৎস। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
কাজু বাদামের উপকারিতা
শারীরিক উপকারিতার দিক থেকে কাজু বাদামের কোন বিকল্প নেই। কাজুবাদাম শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, খনিজ এবং ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার। তাই কাজু বাদামের উপকারিতাও অনেক। প্রতিদিন পরিমান মত কাজুবাদাম খেলে শরীরের নানা পুষ্টির ঘাটতি পূরন হয়, সেই সাথে কাজু বাদাম বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
হার্ট সুস্থ রাখেঃ
কাজু বাদামে বিদ্যমান মনোস্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমিয়ে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকসহ হার্টের যাবতীয় সমস্যার ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও, ম্যাগনেসিয়ামের অভাব করোনারি হার্ট ডিজিজের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
কাজু বাদামে পর্যাপ্ত পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরন হয়। তাই নিয়মিত কাজু বাদাম খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। ব্রিটিশ জার্মাল অব নিউট্রিশনের এক গবেষনায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে চার দিনের বেশি বাদাম খান তাদের করোনারি হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি ৩৭% কম তাদের থেকে যারা একেবারেই বাদাম খান না অথবা খুব কম খান।
উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
কাজুবাদামে সোডিয়ামের পরিমান কম এবং পটাসিয়ামের পরিমান বেশি থাকায় এটি উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে রাখে। এছাড়াও কাজুবাদামে থাকা প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল রক্তের গ্লুকোজের ভারসাম্য রক্ষা করে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ
২৮গ্রাম কাজুবাদামে ১৫৭ ক্যালরি থাকে। কিন্তু শরীর কেবল এর ৮৮ শতাংশ ক্যালরি শোষণ করতে পারে। কারন, হজমের সময় কাজুতে থাকা চর্বির একটা অংশ কাজুর ফাইবারে আটকে শরীরে অতিরিক্ত চর্বির শোষন বাধাগ্রস্ত করে। সুতরাং, ওজন নিয়ন্ত্রণে কাজুবাদাম খুব কার্যকরী।
হাড় মজবুত রাখেঃ
পর্যাপ্ত পরিমানে কপার পাওয়া যায় এমন খাবারের সংখ্যা খুব কম। কপারের অভাব অস্টিওপরোসিস এর ঝুঁকি বাড়ার সাথে সম্পর্কিত এবং কপারের অভাবে হাড় মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজুবাদামে প্রচুর পরিমানে কপার থাকায় নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে অস্টিওপরোসিস এর ঝুঁকি একেবারেই কমে যায়।
এছাড়াও, কাজু বাদামে প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করে হাড়কে মজবুত এবং সুস্থ রাখে।
পিত্তথলি সুরক্ষিত রাখেঃ
আজকাল পিত্তথলিতে পাথর অনেক বড় সমস্যা। পাথর হলেই সার্জারী করে পিত্তথলি কেটে ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। কিন্তু কাজুবাদামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা পিত্তথলিতে পাথর জমানো রোধ করতে সক্ষম।
রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ
আয়রনের ঘাটতি রক্তস্বল্পতার প্রধান কারন। কাজুবাদামে বেশ ভালো পরিমানে আয়রন পাওয়া যায়। তাই নিয়মিত কাজুবাদাম খাওয়ার ফলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি পূরন হয় এবং লোহিত রক্ত কনিকার উৎপাদন বেড়ে যায়। এতে শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
চোখ ভাল রাখেঃ
কাজুতে প্রচুর পরিমান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এর মধ্যে লুটেন এবং জিয়াক্সাথিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আলোর ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করে। এছাড়াও কাজু বাদাম চোখের ছানি পড়া রোধ করে চোখ সুস্থ রাখে।
মেধাশক্তি বৃদ্ধি করেঃ
কাজু বাদামকে ব্রেনের পাওয়ার বুস্টার বলা হয় কারন কাজুতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম নার্ভের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে মস্তিষ্কের কোষে শক্তি জোগায়। ফলে মস্তিষ্কের কগনিটিভ ফাংশন আরো সক্রিয় হয় এবং মেধাশক্তি বৃদ্ধি পায়।
সবধরনের অর্গানিক ফুড, ২০০+ আয়ুর্বেদ ঔষধ ও খেলার সামগ্রী ঘরে বসেই অর্ডার করুন আমাদের শপ থেকে- https://shop.healthd-sports.com
চুল ও ত্বক সুন্দর করেঃ
চুলের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে এবং চুল মজবুত করতে কাজু বাদামে থাকা কপার বিশেষ ভুমিকা পালন করে। কাজুতে প্রচুর পরিমানে কপার থাকায় এটি শরীরের ভেতরে এমন কিছু এনজাইম উৎপাদন বাড়িয়ে দেয় যা আপনার চুল গোড়া থেকে মজবুত হয় এবং চুল পাকা রোধ করে চুল কালো রাখে দীর্ঘদিন।
আবার কাজুবাদামে থাকা জিংক, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে সুস্থ, কোমল ও উজ্জ্বল রাখে। এছাড়াও, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কার্যকরী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়ঃ
কাজুবাদামে প্রচুর পরিমানে জিংক পাওয়া যায় আর জিংক শরীরের ইমিউনিটি বাড়িয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। ফলে ভাইরাসজনিত সংক্রমণ থেকে শরীর মুক্তি পায়।
আপনার মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এখানে ক্লিক করুন!
কাজু বাদাম যেখাবে খাবেন
পরিপূর্ণভাবে কাজু বাদামের উপকারিতা পেতে কাজু খাওয়ার কিছু উপকারী টিপস জেনে নিন।
- বিভিন্ন ফল অথবা সবজি সালাদের সাথে কাজুবাদাম মিশিয়ে নিন।
- মাছ-মাংস ভুতায় কাজু বাদাম টুকরো টুকরো করে কেটে রান্না করতে পারেন।
- কাজুবাদামের সাথে অন্যান্য আরো বাদাম এবং ড্রাই ফুড মিশিয়ে বিকালের নাস্তায় খেতে পারেন।
- কাজুবাদাম ব্লেন্ডারে গুড়ো করে পিনাট বাটারের মত করে বাটার বানিয়ে নিন। সুস্বাদু এই কাজু বাটার আপনি সকালে নাস্তায় খেতে পারবেন।
কাজুবাদাম নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাই বলে কাজু বাদামের উপকারিতা দেখে লোভের বশে বেশি বেশি খাবেন না। এতে হীতে বিপরীত হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত কাজু বাদাম খাবার ফলে সাংঘাতিক অ্যালার্জিক রিয়েকশন দেখা দেয়। তাই আপনার ডায়েট চার্টে কাজু বাদামকে পরিমিত পরিমানে রাখুন এবং আপনার সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করুন।
>> তাছাড়া আরও পড়তে পারেন কাঠবাদামের এবং নিয়মিত বাদাম খেলে কী হয়?